রবিবার, ৩১ মে, ২০২০

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || প্রাত্যহিক বই আলোচনা

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার 

সেদিন ও এদিনের কবিতা । কেষ্ট চট্টোপাধ্যায় । শ্রমশ্রী প্রকাশনী । একশো টাকা ।

পাঁচ ফর্মার পেপার ব্যাক এই কাব্যগ্রন্থ স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণ বামপন্থী কবি কেষ্ট চট্টোপাধ্যায়ের পুরনো ও নতুন কবিতার মেলবন্ধনের প্রয়াস বলতে পারা যায় । তাঁর  'সেদিন ও এদিনের কবিতা ' -র ভেতরে সে স্বাদ পুরোদস্তুর । শুরু হয়েছে ১৯৮৯ সালে লেখা 'কবিতার অন্দরমহলে 'র মাধ্যমে । তাতে চমকে ওঠার মতো না হলেও ভাবনার কথা তিনি রেখে যান: ' আমি এইমাত্র শ্মশানে পুড়িয়ে এলাম প্রথম সত্তা ।' কবি বইটির অবশ্য বাম ভিত্তিক তা ' কিছু কথা'-তে পাই: ' আমাদের বিশ্বাস বাঁ দিক ঘেঁষে যেতে চায় ।'
               সে কারণে  তাঁকে লিখতে দেখি কটাক্ষ করে: ' ' কবিরা ইলিশ উৎসব করে/ কবিতায় নেই । কবিরা বিশ্ব কবিতায়  ঘোরে/ পা মাটিতে নেই । ' কিংবা তাঁর অনু কবিতা  : মশাই- /টাকার পেছনে ছুটিনি/  মিছিলে গিয়েছি /।নেতাও হতে চাইনি/  কবিতা লিখেছি।'
           বামপন্থী কবিদের মন খারাপ হলেও বলতে হয় তাঁরা  নিজেদের সমালোচনার পথে যান না । বামপন্থী সময় বাদ দিয়ে তিনি এসময় নিয়ে কটূক্তি করেছেন, যেমন:  ' শুনেছো- / গৌতম দেবের ছেলে নাকি যাচ্ছে তৃণমূলে / রমলাও যাচ্ছে/ কাল আসছে কার্ল মার্কস/
সেও কি ঘাসফুলে যাবে? '
           কেষ্ট চট্টোপাধ্যায়ের জীবন কবিতা সম্পৃক্ত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিসরলীকরণের কারণে বইটি জমলো না । তবু তাঁর এবয়সে লেখিলিখি আমাদের বড় প্রাপ্তি । সন্ঞ্জীব  চৌধুরীর প্রচ্ছদ সেকেলে স্টাইল তুলে ধরেছেন মার্জিত ভাবে ।

সূর্যসন্তান || হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় || কবি শম্ভু রক্ষিত স্মরণে

সূর্যসন্তান
-------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


( প্রিয় কবি শম্ভু রক্ষিতকে )


ছুটি হয়ে গেছে অনেকক্ষণ
সূর্য পেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা দেখিয়েছিল যে ছেলেরা
তারা এই কিছুক্ষণ আগেও স্কুল বারান্দায়
খুব একচোট দৌড়ঝাঁপ করেছে
দু'একজন জানলাও খুলতে চেয়েছিল
বাতাসের যন্ত্রযানে খই ফোটানো কিছু অভ্যস্ত মুখ
আর জানলার হাওয়ায় জামার বোতাম খোলায়
কিছু অনভ্যস্ত শরীর গুটিয়ে গিয়েছিল
ঝলসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি হাত

জানলায় মুখ রেখে সবুজ দেখছিল সূর্যসন্তান
শুধুমাত্র বদলে ফেলার তীব্র ইচ্ছায়
অস্থির পায়চারি কাঁপিয়ে দিচ্ছিল পার্থিব পৃথিবী
ছেনি হাতুড়ির স্পর্ধিত সংলাপে কেটে নিচ্ছিল
যন্ত্রণাকাতর মায়ের নিজস্ব ভুগোল
আর ধিক্কার দিচ্ছিল সেইসব বৃত্তগত শরিকদের
যারা চেনা হাওয়ায় হাত পা ছুঁড়ে
আত্মশ্লাঘায় রঙিন হয়ে উঠছিল

সূর্যের ক্যানভাসে সে ছুঁড়ে দিচ্ছিল ইচ্ছের রঙ
তারপরে হলুদ রঙের থেকে বেরিয়ে আসছিল
অগণন বিদ্রোহের রেখা
যাদের গতিপথ চেনার মতো মাথা
এখনও পৃথিবীতে আবিষ্কার হয় নি ।



৪টি আটপৌরে কবিতা || অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ||

আটপৌরে কবিতা
          ------  অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়


   
         করোনা
         -----------

বিচারক নাকি করোনা ;
আদালত,
প্লিজ মিথ্যা সাক্ষ্য ধোরোনা ।

            আমপান
            --------------

আমপান নাকি খেলা ;
পাণ্ডবসখা,
সবই ছিল নির্ধারিত অবহেলা !

            কালবোশেখী
            --------------------

বোশেখ মাসের ঝঞ্জা--
প্রতিযোগহীন।
তবুও সুতোয় দিয়েছে মাঞ্জা ।


              পঙ্গপাল
               ------------

জোট পঙ্গপালের বিহার --
নির্দয়ভাব ।
শুধু জন্মটা বোঝে আহার ।

ছোটোগল্প || রুদ্র কিংশুক || মীনমঙ্গল

ছোটোগল্প

 রুদ্র কিংশুক

 মীনমঙ্গল


সতু বলেই সবাই তাকে ডাকে। তার ভালো নাম সত্যপ্রসাদ। সমুদ্রগড়ের কাছে একটা গ্রাম। রামেশ্বরপুর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খড়িনদী।অন্য পাশে রয়েছে ছোট্ট আর একটা নদী । গুরজোয়ানি। অদ্ভুত নাম।নান্দাই গাবতলার কাছে গুরজোয়ানি মিলেছে খড়িতে।তারপর দুজনে হাত ধরাধরি করে ঝাঁপ দিয়েছে ভাগীরথী প্রবাহে।খড়িনদীর পাড়েই সতুর  বাঁশকাবারি ঘর ।নদীর জলো হাওয়া সবসময় ঘরে ঢুকছে।সতু মস্ত বড়ো মেছুয়া। রাতদিন মাছ-ধরাই তার কাজ, তার নেশা।সামান্য একটু জমি আছে। সেটা কোনরকমে চাষাবাদ করে। আর বাকী সময় সে মাছ ধরে বেড়ায় খাল-বিল-নদীতে।কখনো জালে, কখনো ছিপে, কখনো বর্শা দিয়ে। মাছকে কেন্দ্র করেই তার জীবন ঘুরপাক খায়। সে সারারাত মাছেদের স্বপ্ন দেখে। গ্রামের লোক বলে সাতুর গায়ে অদ্ভুত একটা গন্ধ আছে, যেটা মাছেদের খুব পছন্দ । সতু জলের ধারে দাঁড়ালে নাকি মাছেদের শরীরমনে একটা অস্থির ভাব দেখা যায়। তারা নাকি সতুকে ধরা দেবার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে । অনেকে বলে সতুর শরীরে একটা ব্রহ্মদৈত্য আছে, যার ইচ্ছেতেই এসব হয়। এইজন্য সতুর কাছ থেকে অনেকে দূরে থাকে। অদ্ভুত চেহারা তার। কালো কুচকুচে শরীর। বিরাটাকার। মাথার ঝাঁকড়া চুল। যত্নহীন।চোখগুলো বড়ো বড়ো। লাল ।সদ‍্য রং-ধরা করমচা।

আজ সন্ধ্যেবেলা থেকেই প্রবল বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে‌। বৃষ্টির এই গানে সব মানুষের ঘুম পায়। কিন্তু এই বৃষ্টিগান সতুকে পাগল করে তোলে,  টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় ঘরের বাইরে। সতু তার ছাতা-ভাঙ্গা শিক দিয়ে বানানো বর্শা নিয়ে বেরুচ্ছে ।
তার বউ বলল --- আজ আর বেরুতে হবে না। আমার শরীরটা ভাল নেই ।
সতুর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সতু কোনো কথা কানে নিল না ।আমি এখনই আসছি---  বলেই বেরিয়ে গেল। গ্রামের মোড়লদের পুকুরটায় প্রচুর শোল-মাগুর মাছ হয়েছে। বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে মাছেদের শরীরে নাচ জেগে উঠবে। রাস্তার জল যেখান দিয়ে পুকুরে নামছে, সেখানকার জলরেখা ধরে এই মাছেরা উঠে আসবে ডাঙ্গায়। যদি উঠে না-ও আসে, তারা তীর সংলগ্ন দলদামে ঘোরাঘুরি করবে। বর্শার ঘায়ে এইসব মাছেদের গেঁথে তোলা কী এমন কঠিন কাজ। তালপাতার পেখে মাথায় বর্শা হাতে সতু পুকুরপাড়ে উপস্থিত।পুকুরপাড়ে তালগাছেরা ভিজছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎচমকের আলোয় গাথেদের মাথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জল নামছে যে জায়গাটায়, সেখানটায় কী একটা লাফালো। সতু কালবিলম্ব না করে বর্শাটা ছুড়ে মারলো আর তা তোলা মাত্র সে অন্ধকারে বুঝতে পারলো একটা কেজিখানেক মাছ। বিদ্যুৎ চমকালো বুঝল একটা মাগুরমাছ ।মাছটাকে বর্শামুক্ত করে সে রাখলো বাঁহাতে ধরা ঝোলায়। তার পর সে পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। বাড়ি এসে হ্যারিকেনের আলোর কাছে সতু মাছটাকে ছুড়ে দিল‌। সতুর বউ দেখল মাছটার পেটের নিচ দিয়ে রক্তধারা বার হচ্ছে তখনও । হাতে নিয়ে সে দেখল মাছটার পেটভর্তি ডিম। আর কিছুদিন পরেই মাছটা  ডিম ছাড়তো। সতুর বউয়ের শরীরটা ঝাঁকুনি দিল।  পেটের ভেতর তার একটা প্রাণ লাফাচ্ছে। চোখ বুঝে সে দেখতে পেল অসংখ্য মৎস্যসন্তান জলের ভেতর খেলছে। তার শরীরটা ঝাঁকুনি দিল। পেটের ভেতর তারও একটা প্রাণ চঞ্চল।  মাছটা তখনও হ্যারিকেনের আলোয় লাফাচ্ছে।
 সে বলল---তোমার কাছে একটা অনুরোধ‌ রাখবে ?
 সতু বললো--- কী?
 বউ বলল---মাছটার  পেটভর্তি ডিম। তুমি ওকে ছেড়ে দিয়ে এসো। ও ঠিক বেঁচে যাবে ।
সতু বলল--- কী বলছো! এত কষ্ট করে ধরলাম। আগেও তো এমন ডিমওয়ালা মাছ কত  ধরেছি ।
সতুর বউয়ের চোখে জলে চিকচিক করছে।
 সে বলল --- আগে কি আর এ মন আমার ছিল?

সতু মাছটার মাথা ধরে আবার বাড়ির বাইরে গেল। বাড়ির পাশে খড়িনদী বর্ষার জলে এখন গান ছলছল ।সেই প্রবহমান জলে মাছটাকে ম
ছেড়ে দিয়ে সতু বলল ---- যাও অসংখ্য মীনসন্তানের জন্ম দাও । আমি কি আর এতকিছু বুঝি? আমাকে কিন্তুক তুমি ক্ষমা করে দিও।

 একটা পেঁচা বর্ষারাতের জলভরা মেঘের ভেতরে ভাসিয়ে দিল তার গান।

গল্প || পরিযায়ী || কমল কৃষ্ণ কুইলা

গল্প || পরিযায়ী
কমল কৃষ্ণ কুইলা 

ডাইনিং টেবিল।
মা প্রতিমা আর ছোট ছেলে রাজু পাশাপাশি বসে আনন্দে রাতের আহার গ্রহণ করছেন।
মা আর একটা মাছ হবে.....রাজু বলল।
ওটা তোর দাদার জন্য তোলা আছে।
কি যে বল মা। দাদা এখন গুজরাটে। ফিরবে তবে তো।
মা কারুর কথায় কান দেয় না। রোজই মা বড় খোকার জন্য রান্না করা খাবার তুলে রাখে। বাসি হলে পুকুরে ফেলে দেয়। কাউকেই দেয়না।
এতোটাই ছেলেকে স্নেহ করেন মা।

মা মনে আছে তো। কাল সকালে কোথায় যাব।
ও হ‍্যাঁ ভালো কথা বলেছিস বাবা।

খাওয়া শেষ হলে ফোনটা নিয়ে আয়। রমাপদ বাবুর সঙ্গে রাতেই কথা সেরে নিই।

অতঃপর খাওয়া শেষ করে রাজু রমাপদবাবুকে কল করে মাকে ধরিয়ে দেয়।
এই নাও মা রিং হচ্ছে কথা বল।

হ‍্যালো আমি প্রতিমা বলছি। কেমন আছেন।
আমরা সবাই ভালো আছি।
সকালেই আমরা আসছি। আপনার মেয়েকে রেডি রাখুন। দেখে একেবারে পাকা কথা সেরে আসব চিন্তা নেই। গিয়ে বাকী কথা হবে কেমন। ওকে।
নমস্কার। রাখছি দাদা। শুভরাত্রি।

পরেরদিন রাজুকে এবং গ্রামের দুজন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
দুবার গাড়ি পাল্টানোর পর অবশেষে মেয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছান।

এদিকে রমাপদবাবু উঠোনেই পাইচারি করছিলেন।
কখন আসবে সবাই।
দেখতে দেখতে সবাই এসে পৌঁছে যান।
অতিথি আপ‍্যায়নের সব ব‍্যবস্থাই করে রেখেছিলেন রমাপদবাবু।

সবাই পায়ে জল দিয়ে পা মুছে বাড়িতে প্রবেশ করেন।

মেয়ের মা নিজের হাতে সবাইকে সরবত পরিবেশন করেন। এবং সবাই তৃপ্তিভরে তা পান করেন।

এবার রমাপদবাবু তার মেয়েকে নিয়ে আসেন। সুন্দর সাজগোজ ও শাড়িতে খুবই সুন্দরী দেখাচ্ছিল সোমাকে।

সোমা এসে সকলকে ভক্তিভরে প্রণাম করার পর নম্রতার সঙ্গে মাথা নিচু করে বসে থাকে।

এদিকে একে একে জিজ্ঞাসা পর্ব শেষ হবার পর পুনরায় সোমা সবাইকে প্রণাম সেরে প্রস্থান করে।

মেয়ে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় প্রতিমা দেবী খুবই খুশী।
বলল তার বড় ছেলে ফিরলেই আশীর্বাদের ডেট জানিয়ে দেবে।

স‍ৌজন‍্য বিনিময়ের প্রতিমা দেবী সবাইকে নিয়ে রওনা দেন।
খোকা পা চালিয়ে চল্। তোর দাদা কতদূর এলো ফোন করতে হবে। বাড়িতে ফেরা আশীর্বাদ পর্ব সেরে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে নেব।
তোর দাদার বিয়েটা দিতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত হই। না কি বলিস খোকা।

ঠিকই বলেছ মা। আমিও চাই খুব তাড়াতাড়ি দাদার বিয়েটা হয়ে যাক্। বৌদি বাড়িতে আসুক।

সন্ধ্যায় রাজু তার দাদাকে ফোনে ধরিয়ে মাকে দেয়।
হ‍্যালো হ‍্যালো আমি তোর মা বলছি। আর কতদূর?

অন‍্যদিকে মাকে হ‍্যালো টুকু বলার পরেই বিমলের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কেননা মোবাইলে চার্জ শেষ।

মা চিন্তা করবে এই বিমল তার সমস্ত কষ্টের কথা লুকিয়ে যায়। কোনো গাড়ি না পেয়ে পা-গাড়িতেই ভরসা করে রেল লাইন ধরে হাঁটতে থাকে।

সমস্ত দোকান পাট বন্ধ। খাবার কোথাও মেলেনি। বোতলে একটু জল আছে। খিদে পেলেই সে একটু করে জল পান করে।
খালি পেটে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে শরীর এতোটাই ক্লান্ত যে। পা ফেটে রক্ত পড়ছিল।

বাধ্য হয়ে অন্যান্য সঙ্গীদের সঙ্গে সেও রেললাইনের উপর বসে পড়ে। একটু জিরিয়ে নেওয়া যাকে বলে। কেননা আবার হাঁটা যে শুরু করতে হবে।

বসতে বসতে কখন যে সবার চোখ লেগে গেছে কে জানে। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

এমন সময় কোন্ অজানা ট্রেন হঠাৎ করেই এসে পড়ে তাদেরকে পিষে দিয়ে চলে যায়।
ঘুমের ঘোরে কারুরই হর্নের শব্দ কানে আসেনি।

দেহ খন্ড বিখন্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

পরে লোকাল থানার পুলিশ এসে দেহখন্ডগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করে।

এদিকে ফোনে না পেয়ে মায়ের খাওয়া ঘুম বন্ধ। মায়ের মন অজানা আশঙ্কায় কাঁদতে থাকে।

দুদিন পর পুলিশ এসে খবর দেয় যে বিমল আর বেঁচে নেই। রেল লাইন ধরে হাঁটতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। পুলিশ সত্য ঘটনা চেপে যায় গণবিক্ষোভের ভয়ে।

বিমলের প‍্যাকিং করা ডেডবডি এসে পৌঁছায়। সঙ্গে সমস্ত গ্রামবাসীরাও।
সবাই বলাবলি করছে ছেলেটা বাড়িতে ফিরলেই বিয়ে দেওয়ার জন্য তার মা সব আয়োজন পাকা করে ফেলেছিল। আসলে ওর কপালে নেই আর কি করা যাবে। কপালের লিখন কেউই খন্ডাতে পারেনা।

ছেলের ডেডবডি দেখার পর মায়ের যা মূর্ছা গেছে। আর জ্ঞান ফিরল না। ডাক্তার হাজার চেষ্টা করেও ব‍্যর্থ হলেন। একসময় নাড়ি স্পন্দনও স্থির হয়ে গেল।

পুত্রশোকে মা পরলোক গমন করলেন। রাজ দুজনের মুখেই আগুন দিল। হারাল মা এবং দাদাকে। এখন সে পুরোপুরিই একা। একাকী নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। সে আর দাদার ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। ভিনরাজ‍্যে কাজে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার ইচ্ছে তার নেই।
সে মনে মনে শুধু নিজের দারিদ্র্যতাকেই ধিক্কার জানাতে থাকে।


প্রভাত চৌধুরী || সৌমিত্র রায়- এর জন্য গদ্য || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায়-এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

২৯.
প্রথম বর্ষ পূর্তি থেকে দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তির দূরত্ব মাত্র এক বছর। এটা পাটিগণিতের হিসেব।জ্যামিতি এবং কো-অর্ডিনেট জিওমেট্রিতে দূরত্ব কতটা বাড়বে না কমবে তা মেপে দেখার সুযোগ নেই।
প্রথম বর্ষ পূর্তি : 24 এপ্রিল 1994 |আদ্রা ,পুরুলিয়া
দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি :23 এপ্রিল 1995 | বাজোরিয়া গেস্ট হাউস, লালবাজার , বাঁকুড়া।
কবিতাপাক্ষিক ৪৯ - এ কবিতা সংবাদ  শুরু করেছিলাম :
বাঁকুড়ার কড়া রোদ এত লাবণ্যময় মনে হল কেন  ?   এই কেন-র উত্তর তখন দেওয়া হয়নি। এখন ঢাক পিটিয়ে বলতে পারি কবিতার নিয়মিত পাক্ষিক পত্রিকা তখন পর্যন্ত টানা দু-বছর প্রকাশের কোনো ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাঁকুড়া লালবাজার মোড়ে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিতে সমবেতভাবে গিয়েছিলাম। মাল্যদান করেছিলেন উৎসব কমিটির পক্ষে মোহন সিংহ এবং আমি।
দেবনাথ কুণ্ডু-র পরিচালনায় ভারতীয় সংগীত বিদ্যাপিঠের ছাত্রীদের রবীন্দ্রগান দিয়ে শুরু হয়েছিল কবিতাউৎসব।
মঞ্চের নাম : শক্তি চট্টোপাধ্যায় সুনীর বসু মঞ্চ।
উদ্বোধক-সভাপতি : কবি অবনী নাগ।
প্রধান অতিথি : পবিত্র মুখোপাধ্যায়।
স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ : সমরেন্দ্র দাশ।
লেখক প্রভাত চট্টোপাধ্যায় এবং কবি রবি গঙ্গোপাধ্যায় - কে ঢোকরার পঞ্চপ্রদীপ এবং উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
 এই উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছিল  ভূদেব কর-এর কবিতার বই। তাছাড়া  প্রকাশিত হয়েছিল বাঁকুড়া জেলার বিশিষ্ট পত্রিকা কলম্বাস ,সত্যসাধন চেল সম্পাদিত ভোরবেলা , প্রলয় মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত উদ্ভিদ , আশিসকুমার রায় সম্পাদিত যামিনী তৎসহ বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থেকে শৈলেন গড়াই সম্পাদিত জীবন।
বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় রাজকল্যাণ চেল পরিকল্পিত কবিতা উৎসব কমিটির স্মারকগ্রন্থ। যার মূল বিষয় : বাংলাকবিতার পাঠক পুনরুদ্ধার।
কবিতাপাঠের সঞ্চালক : জ্যোৎস্না কর্মকার।
এসব কথা আমি ভুলে যেতেই পারি , কিন্তু যা একবার লেখা হয়ে যায় তা মুছে ফেলার ক্ষমতা যেকেবল আমার নেই , এমনটা ভেবে আমাকে দুর্বল ভেবে বসবেন না। ইতিহাস-কে মুছে ফেলার ক্ষমতা কারোই নেই।
কবিতাপাঠের ইতিবৃত্ত আগামীকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখলাম , কিন্তু নৈশাহারের বৃত্তান্ত আজই পেশ করছি।
বাঁকুড়া-র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পৃষ্ঠপোষক বাবুলাল জালানের বাড়িতে আমন্ত্রণ ছিল সকলের।
বুফে ডিনার। জালানের বাড়ির মহিলা এবং পুরুষেরা সকলে মিলে যে আপ্যায়ন করেছিলেন তার কথা আজও ভুলে যাইনি। ঠিক এরকম অভ্যর্থনা আর কোথাও পেয়েছি তেমনটাও মনে পড়ছে না।
তবে একটা কথা এখনো ভুলে যাইনি । একজন কবি পরিবেশিত একটি খাদ্যকে শনাক্ত করতে পারছিলেন না। আমি বলেছিলাম--- মুগের ডাল। অরিজিন্যাল সোনামুগের ডাল। ওই কবি বিস্মিত হয়েছিলেন। নাম জানানো যাবে না।

রম্যরচনা || ঘুষ একটি জাতীয় খাদ্য || কাশীনাথ সাহা

রম্যরচনা

ঘুষ একটি জাতীয় খাদ্য 
কাশীনাথ সাহা 

বিষয়টা নিয়ে ভাববার আছে। আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত আছে, জাতীয় পতাকা আছে, জাতীয় পশু আছে, জাতীয় পাখি আছে, বহু কিছুই জাতীয় আছে, কিন্তু জাতীয় খাদ্য বলে কোন কিছু খাবারকে জাতীয় খাবার হিসেবে এখনো তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়নি। বাঙালির একরকম খাবার, পাঞ্জাবির আর একধরনের খাবার, দক্ষিণ ভারতীয়দের আরও একরকম। নানা জাতি নানা ভাষাভাষীর এক এক বৈচিত্র্যময় খাবার । কেউ ঝাল খায়,কেউ টক, কেউ মিষ্টি,কেউ আমিষ কেউ নিরামিষ । না এতোবড় একটা দেশে একটা জাতীয় খাদ্য অবশ্যই হওয়া,উচিত ছিল । কিন্তু এই ভাবনাটাই কোন সরকারের মাথা থেকে কেন যে বের হয়নি বুঝতে পারলাম না।  এই ব্যাপারে সর্বধর্ম সমন্বয়ের খাদ্য  ঘুষ।হিন্দু মুসলিম পার্শি খ্রিস্টান শিখ, বাঙালী বিহারী, পাঞ্জাবী মারাঠি ঘুষ খায় না এমন পাবলিক পাবেন না। স্থান ভেদে ঘুষের মহিমা পাল্টে যায়। কোথাও ঘুষ তো কোথাও প্রণামী কোথাও সেলামী কোথাও ডোনেশন।
শিক্ষক অবসর নিয়ে ডি আই  অফিসে গিয়েছেন পেনশন তুলতে, গিয়ে শুনলেন ফাইল হারিয়ে গেছে। বেচারি জাতির মেরুদন্ড অফিসে নিজের মেরুদণ্ডটাই হারিয়ে ফেললেন। এখন উপায়? আছে, পিওন বুঝিয়ে দিল নিরুদ্দিষ্ট ফাইল স্বস্থানে ফিরে আসবার পদ্ধতি। শিক্ষক করুন ভাবে জিজ্ঞেস করলেন ফাইলটা,পাওয়া যাবে তো! পিওন টেবিলে থাপ্পড় মেরে বলল স্যর আমাদের এখানে কোন দুনম্বরী পাবেন না। এক নম্বর পথে হাজার পাঁচেক টাকা খসিয়ে হারানো ফাইল যথাস্থানে অধিষ্ঠিত হলো।
চৌরাস্তার মোড়ে ট্রাফিককে কুড়ি টাকা নিতে দেখে যে ভদ্রলোক নির্বিবাদে গালিগালাজ করেন তিনি নিজের অফিসে দশ বিশ হাজার বাঁহাতে বুক চিতিয়ে নিতে দ্বিধা করেন না।
আমলা মন্ত্রী মন্ত্রীর ভাই ভাইপো ঘুষ খেয়ে কাউকে বদহজম হতে কক্ষনো দেখিনি। ঘুষ বেশ সহজপাচ্য খাবার। তবে ঘুষ খাওয়ারও একটা সিস্টেম আছে তার বাইরে বেলাইন হলেই হাজতবাস। সেটাও মন্দ নয়, জেল ফেরত মন্ত্রীদের কদরই আলাদা,। তখন শহীদের তকমা কপালে।
সাধুসন্ত মহাপুরুষ পীর পয়গম্বর মহামহিমান্বিত সজ্জন মানুষেরাও এখন নির্বিবাদে ঘুষ খায়। তবে খেলাটা আলাদা। একটু ভক্তি রসের সাথে ভোজবাজির মিশেল না,দিতে জানলে পা হড়কে যাবে।
স্বামী ঘুষ খায় স্ত্রী ঘুষ খায় রাজা খায় প্রজা খায় এমনকি ঠাকুর দেবতারাও খায়। কোথাও বাতাসা নাড়ু তো কোথাও কালো পাঁঠা।
কাজের মেয়ে পদ্মা বলল, দাদাবাবু কাল সন্ধ্যায় আপনাকে মহব্বত পার্কে দেখলাম বেশ সুন্দর একটা দিদিমণিকে নিয়া ঘুরতাছিলেন। দাদাবাবুর মুখ ফ্যাকাশে, তুই কোথায় ছিলি? আমিও ঘুরতাছিলাম।  তোর দিদিকে কিছু বলিস না যেন!
না বলবো না, তবে একটা ভাল শাড়ি কিনে দিতে হবে কিন্তু! নতুন শাড়ির আঁচলে মহব্বত পার্ক ঢাকা পড়ে যায়।
সুযোগ আছে অথচ ঘুষ খায়নি এমন মানুষ জাদুঘর ছাড়া পাওয়া যাবে না।
ডানপন্থী বামপন্থী চরমপন্থী মধ্যপন্থী উদারপন্থী উগ্রপন্থী সক্কলেই ঘুষ খায়। ঘুষে অরুচি এমন পন্থী বিরল।
সব কঠিন কাজেরই সহজ সমাধান  ঘুষ। সঠিক জায়গায় ঠিক মতো হাতে ধরিয়ে দিতে পারলে পাঁচ ঘন্টা লম্বা লাইনে না  দাঁড়িয়ে দেবতার দর্শনও সহজলভ্য।
দারোগাবাবু বললেন এটা মার্ডার কেস। কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। যাবজ্জীবন ফাঁসি! নিরীহ মুখে ভদ্রলোক বললেন, আহা লোকটা এখনো মরেনিতো পায়ে চোট লেগেছে, রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছিল আমি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি এতে আমার অপরাধটা কোথায়!  দারোগাবাবু চোখ পাকিয়ে বললেন তিনহাজার তিনশ পঁয়ষট্টি ধারায় চার্জ। যাবজ্জীবন না হলেও অন্তত আট বছর ফাঁসি হবেই। তাহলে উপায়?  উপায় আছে। রায় ও মার্টিনের সহজ ফর্মুলা!  ফেল কড়ি মাখো ফরচুন তেল, আমি কি তোমার পর।
বেকার শিক্ষিত চাকরি নেই?  চাকরির আশাও নেই?  আছে?  দশ বিশ লাখ জনসেবক জননেতার হাতে গুঁজে দাও। লিস্টে নাম বেরিয়ে যাবে।
তাই অনেক গবেষণা করে ভেবেচিন্তে মনে হলো ঘুষকে সর্বভারতীয় জাতীয় খাদ্য হিসেবে মান্যতা দেওয়া যেতেই পারে। এই ব্যাপারে ঘুষের বিপক্ষে হাত তুলবে এমন কেউ আছেন নাকি?

আটপৌরে কবিতা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা 

নীলাঞ্জন কুমার 


২৪১

ধারা  / প্রথা/ সংস্কার 
   ) পরম্পরা  (
চরিত্র গড়ে দিয়ে যায় ।

২৪২

দেয়ালা/  আধোআধো /অশুদ্ধ 
       )  উচ্চারণ  (
শিশুদের  মুখে পরম আরাম ।

২৪৩

খিস্তি/ গালাগালি/ স্ল্যাং 
       ) অশিষ্ট  (
যারা বলে করুণা হয়! 

২৪৪

কানমোলা/  নীলডাউন/  ওঠবোস 
         ) অপমান  (
  আদৌ কি শুধরে দেয় ।

২৪৫

ফাঁসি/ কারাদণ্ড/ জরিমানা 
      ) অপমান  (
আদৌ কি শুধরে দেয় ।

শনিবার, ৩০ মে, ২০২০

জন্ম || নাসের হোসেন || কবিতা

জন্ম
নাসের হোসেন

জীবনটা মোটেই জটিল কিছু নয়, তবু তা জটিল
ওপর- ওপর দেখতে বড়োই সরল মনে হয়
জীবনের অনেক সেকটর, প্রতিটি সেকটর- ই
কর্মব্যস্ত,তুমি যদি মনে করো অমুক সেকটর

মটকা মেরে ঘুমোচ্ছে, সেটা মটকা- ই,কারণ
আসলে সে ঘুমোচ্ছে না,কেননা এত কর্মব্যস্ততার
মাঝে ঘুম---একটা নির্ভেজাল নি:শব্দ ঘুম---আসে না
মস্তিষ্ক সর্বদাই সজাগ,কোথাও কোনো অঘটন

ঘটলো না তো? ওই ডেকে উঠছে কোকিল
ওই ডেকে উঠছে কাক,একজন সুরের রাজা
অন্যজন বেসুরের রাজা,দু- জনের দ্বৈরথ থাকলেও
বেসুরের অশোভন বাসাতেই তো সুরের শাবকেরা জন্ম নেয়

বিচার || ইয়াসিন খান || কবিতা

বিচার 
ইয়াসিন খান

পরিযায়ী জীবন পরিচয়
আঁধার নামে বুকে
শোষণের মায়াজাল
মৃত মায়ের শাড়ি শিশুর টানে

নীরব কথনে গায়কী
রাজপথে রাখাল ছুটে
অসহায় ধরা আমার
স্বপ্ন হারা আমি

কে নেবে ভার?
মৃত লাশেরা দুর্বার
নীতি মালার খসড়া
পরিকল্পনা হীন

শুধুই নাম আর সূর্য অভিলাষ
পুড়ে ছাই হয়ে যায় স্বপ্ন
পরিযায়ী পাখি
পরিযায়ী মানুষ

কে করে বিচার?
আদিমতম বেদনায়
না- মানুষ ও জীবন
হাজার আশ্রয় নিভিয়ে

প্রকৃতির বিচারে সব
 অবিচার কত 
অনুভব অস্থির
বেদনা ছুঁয়ে

আর নয় বিলাপ
পরিবেশ সখি পরিকল্পনায়
জনতাই হোক
নীতি মালার সংলাপ

বিচার বোধ নূরে
জনতা ও প্রকৃতি
রায় হোক রাজপথে
পরিযায়ী ও  রাখাল  নিশান

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || মায় বান ফান-- এর কবিতা

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 
মায় বান ফান-- এর কবিতা

মায় বান ফান (Mai Van Khan, 1955)-- এর জন্ম উত্তর ভিয়েতনামের নিন-বিন প্রদেশে।১৯৭৪--এ তিনি
প্রথম সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৮৩-তে তিনি হানয় কলেজ অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ -এর ডিপার্টমেন্ট অফ লিঙ্গুইস্টিকস অন্ড রাশিয়ান কালচার- এ পড়াশোনা করেন। তাঁর কবিতায় জাপানি হাইকু প্রভাব রয়েছে।



১. সূর্যের দিকে

উষ্ণ
এবং তরুণ পাতা
 খুব কাছেই

২. ঝড়ের সময়

একটা ফোয়ারা
মুখোমুখি
পাহাড়ের সাথে

৩ মাটি

আঁকড়ে ধরে শিকড়
পাতাগুলো আকাশ তাদের মুখে
রসধারা ওঠে আর নামে

৪.একটা সিম বীজ
কাঁচের শিশিতে
খোলা জানালার কাছে
সন্ধ্যাতারা

৫.বৃষ্টি

ভাগ করে দেয় প্রতিটি ফোঁটা
সমানভাবে
আমি এবং আমার ঘোড়ার ভেতর

৬. মোষের বাছুর

দুধ খেয়ে তৃপ্ত
তাকায় সবুজ ঘাস
আর মায়ের দিকে

৭. নতুন ঋতু

পাতার তাঁবু
 শিশির জমে
গাছটি ঘামে

৮.  শীতের প্রথম

পাখি
ডাকে
বাসন্তী গানে

৯.  নতুন রোপিত গাছ

জল দেয়া হয়
সিঞ্চিত হয়
আশা নিয়ে

১০. সূর্যালোক চিহ্ন

সোনালী উজ্জ্বলতা
প্রতিটি কিরণ
আমার হাতের উপর

১১.দক্ষিণা বাতাস

বইছে
যত্ন নিতে
প্রতিটি ঘাসপাতার

প্রভাত চৌধুরী || সৌমিত্র রায়- এর জন্য গদ্য || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায়- এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

২৮.
কথা ছিল দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি উৎসবের কথা লিখব এই কিস্তিতে। কিন্তু পালটে গেল সেই সিদ্ধান্ত। বিকেলে নাসের-এর সঙ্গে কথাবার্তা হয়। সেই বার্তা-বিনিময়ে উঠে এল বইমেলা দৈনিক - এর কথা। পুরো হল :
কবিতাপাক্ষিক বইমেলা দৈনিক।
দৈনিক বাংলা-র জন্য এই লেখাটিতে বইমেলা দৈনিক-এর কথা বাদ পড়ে যাওয়াটা ক্ষমারও অযোগ্য। তা হোক ।দেরিতে এল। যা না-আসার থেকে শ্রেয়।
কবিতাপাক্ষিক ১৬- তে  ৯ পৌষ ১৪০০ বা 25 ডিসেম্বর 1993 , ব্যাক কভারে ঘোষণা করেছিলাম :
26 জানুয়ারি  1994 থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা বইমেলা।
28 জানুয়ারি থেকে 06 ফেব্রুয়ারি  , এই দশদিন প্রকাশিত হতে চলেছে : কবিতাপাক্ষিক বইমেলা দৈনিক।
কী কী থাকবে তার দশদফা সূচি।
এই দৈনিক- এ নাসেরকে এডিটোরিয়াল টিমে যুক্ত করা গিয়েছিল। যদিও নাসেরের মৃদু আপত্তি ছিল।
দৈনিকের সাইজ ঠিক হয়েছিল ট্যাবলয়েড। যা সংবাদ দৈনিকের অর্ধেক।
সিদ্ধান্ত হয়েছিল যেখানে বা যে মেশিনে দৈনিক সংবাদপত্র ছাপা হয় , বইমেলা দৈনিকও সেই মেশিনেই ছাপা হবে। এজন্য সংবাদ প্রতিদিনের সঙ্গেও কথা বলিছিলাম। শেষে বন্ধু কবি শ্যামল বসু-র যোগাযোগে ঠিক করেছিলাম চৌরঙ্গি-র একটি প্রেস। যেখানে তখন গণশক্তি , ওভারল্যান্ড প্রভৃতি দৈনিকগুলি ছাপা হত।
এর জন্য নিউজপ্রিন্টের একটা গোটা রোল তুলে দিয়েছিলাম প্রেসকে।
আর পেজ মেকাপের দায়িত্ব পালন করেছিলেন শিল্পী রমাপ্রসাদ দত্ত। তিনি নিজ দায়িত্ব নিয়ে পুরো কাজটা করেছিলেন। এবং ছাড়া-র অলংকরণের জন্য দুই তরুণ শিল্পীকে নিয়ে এসেছিলেন। বলা উচিত নয় , তবু বলছি , এই সম্পূর্ণ কাজের জন্য রমাপ্রসাদ দত্ত- কে এক টাকা দেবারও সাহস দেখাতে পারিনি। রমাপ্রসাদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আমরা সেই যুদ্ধে জয় লাভ করেছিলাম।
কাজটা চলছিল 36 ডি , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কবিতাপাক্ষিক তথা আমার গৃহকোণে। রমাপ্রসাদ জানালেন কাজের জায়গাটা ছোটো হয়ে যাচ্ছ

কাজটা চলছিল 36 ডি , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কবিতাপাক্ষিক তথা আমার গৃহকোণে। রমাপ্রসাদ জানালেন কাজের জায়গাটা ছোটো হয়ে যাচ্ছে। তা শুনে কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন প্রস্তাব দিলেন ওঁর ফ্ল্যাটে করা যেতে পারে। অতএব সূর্যতোরণ , সি আই টি রোড , ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকাল কলেজের পাশে উঠে এল কাজের জায়গা।

এই পত্রিকার যাবতীয় ড্যামি শিটগুলি পেয়েছিলাম প্রতিদিন মারফৎ।এবং তা কথাসাহিত্যিক প্রফুল্ল রায় -এর সৌজন্যে
আগে ম্যাটার ডি টি পি করে আর্টপুল বানিয়ে ড্যামিশিটে কেটে কেটে পেস্ট করতে হত।অলংকরণ সহ। পুরো পাতা মেকাপ করতে হত। প্রতিদিন চার পৃষ্ঠা। দশদিনে 4×10 =40 পৃষ্ঠা। এই অযোগ্য কবিরা এটা করতে সমর্থ হয়েছিল একটি মাত্র শব্দের ওপর ভিত্তি করে। শব্দটি হল : সংকল্প । আমরা করবই।আমাদের পারতেই হবে।  মাত্র ১৬ টি পাক্ষিক সংখ্যা বা আট মাসের কার্যক্রম থেকে দশদিন দৈনিক প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না ভুল তার বিচার করা হত। কিন্তু এখনো হয়নি। না হবার কারণ আমার 'সাক্ষাৎকার ' পর্বের কবিতাগুলি লেখা। এখন আপশোশ করি , কেন লিখতে গিয়েছিলাম সাক্ষাৎকার। কেন লিখেছিলাম , কীভাবে , কোন পরিস্থিতিতে লিখেছিলাম , এই লেখাতেই সেসব জানিয়ে দেব। কথা দিলাম।
চৌরঙ্গি থেকে পার্ক স্ট্রিট বইমেলার হাঁটাপথ।তাও ট্যাক্সিতেই ভরসা রেখেছিলাম ।
সেবার কবিতাপাক্ষিক -এর নিজস্ব স্টল কিংবা টেবিলও ছিল না।আমরা বসেছিলাম সমীরণ মজুমদারের ' অমৃতলোক '- এর টেবিলে এবং তার সামনের মাঠে। ভেবেছিলাম মেলার মধ্যে কিছু হকারের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা যাবে। সেটা পারা যায়নি।কিন্তু কবিকৃতি , কবিপত্র এবং প্রো রে নাটা-র টেবিলে বিক্রি করেছিল এই পত্রিকাগুলি। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল , মহাদিগন্ত-সম্পাদক কবি উত্তম দাশ তাঁর স্টল থেকে বইমেলা দৈনিক বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ,যিনি শুধুমাত্র মহাদিগন্ত স্টলের গেটে দাঁড়িয়ে বইমেলা দৈনিক বিক্রি করেছেন দশদিন।দশ- দশটা সারাদিন। আজকের দিনসমীরণে এটা ভাবাও যায় না।
আগামীকালের চিন্তা আগামীকালই জানে। আমি নিমিত্তমাত্র।

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || সকালবাড়ি ও গগন~ প্রফুল্ল পাল

কিছু বই কিছু কথা  । নীলাঞ্জন কুমার

সকালবাড়ি ও গগন । প্রফুল্ল পাল ।পাঠক ।পন্ঞ্চাশ টাকা ।

কবি প্রফুল্ল পাল কে যত পড়ছি  তত আশ্চর্য হই, যখন দেখি তাঁর উচ্চারণে ছড়িয়ে যায় একাধারে প্রাকৃতিক তন্ময়তা , পাশাপাশি সামাজিক কুটিল দিক । প্রফুল্ল পাল যেন নিজেকে রসিকতা করে । সে রসিকতা কখন কবিতা হয়ে যায়  বুঝতে পারে দীক্ষিত পাঠক । যেমন:
তখনও বাতাসে ছড়িয়েছিল আতর মাখানো গুজব/  ঐসব গুজব সমগ্র থেকে ভোটকেন্দ্রের বারান্দায় আছড়ে পড়ছিল কাতলা- রুই- মৃগেল আর আঁশবটিও...'। মাঝে মধ্যে মনে হয় এদের নিয়ে কেন বেশি আলোচনা হয় না । যে সব কাগজের প্রচুর প্রচার তারা কেন মাটি থেকে খুঁড়ে বের করে  এদের প্রচার করে না?  বাহারি মোড়কের ভেতর এসব কাগজের কুৎসিৎ চরিত্র যে ফুটে ওঠে তা তারা বুঝেও বোঝে না ।
            প্রফুল্ল পালের২০১২ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ  ' ' সকাল বাড়ি ও গগন ' সেই জাতের কাব্যগ্রন্থ যাকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করা যায় কিংবা  পাতার পর পাতা লেখা যায় । '
      '   ডাঙার ও জলের মুড়িওয়ালাদের  ভেলকি বেশিদিন টিকবে না, তাই/  মুড়ির টিনগুলি এক একটা জাদবাক্স আর মুড়িওয়ালারা মেঘলা দিনের জাদুকর ।'
এর মতো কবিতা কবি তাঁর চেতনা দিয়ে লিখে যান । তাঁর তপস্যার  সামনে আমরা যেন দাঁড়াতে পারি, মাখতে পারি তার সুরভি । হিরণ মিত্রের প্রচ্ছদে বিমূর্ত উপলব্ধি সাধারণের জন্য নয়,  পরিশ্রমের প্রয়োজন অনুভবে আনতে ।

আটপৌরে কবিতা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা

নীলাঞ্জন কুমার 


২৩৬

দস্যু/ দুর্বৃত্ত/ দুরাত্মা 
    ) দুর্বিসহ  (
দৃশ্য দাগ দেগে দেয় ।

২৩৭

আলমারি/ আয়না/ উনুন
        ) আসবাব  (
সঙ্গী হয়ে থাকে আজীবন ।

২৩৮

ডানপিটে/  দুরন্ত/ দুষ্টু 
     ) অতিষ্ঠ  (
হওয়া ছাড়া পথ নেই ।

২৩৯

বিপদ/ আপদ/ ঝামেলা 
      ) সমস্যা  (
এসে গেলে শুধু আতঙ্ক !

২৪০

ভিডিও/ মেসেজ/ চ্যাট 
    ) হোয়াটসঅ্যাপ  (
নব্বই দশকে অস্তিত্ব কোথায় ?

কবিতা || মৌনতা || মীনা সাহা


মৌনতা
মীনা সাহা

নদীর বয়ে যাওয়া জলের দাগ ...
রয়ে যায় পাথরের খাঁজে
মনের আরশিতে জমে থাকা স্মৃতি ...
নিয়ত প্রতিবিম্ব ফেলে
বিষাদের নৈশ সঙ্গীত বাতাসের গায়ে
আকাশের চাঁদ নত মুখে
তারাদের বাতি নিভেছে আজ ...
মৌনতায় আকাশের ভাষা
নদীর জলে পড়েছে তার ছাপ ...

শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

চলে গেলেন কবি শম্ভু রক্ষিত || i-সোসাইটির বিনম্র শ্রদ্ধা

চলে গেলেন কবি শম্ভু রক্ষিত


i-সোসাইটি লিটারেরি নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে পরম শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় কবিকে ৷ বিদেহী কবি-আত্মার শান্তি কামনা করি ৷ || শান্তি ||

আটপৌরে সিরিজ : ৪ || অলোক বিশ্বাস || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে সিরিজ : ৪ 
অলোক বিশ্বাস


উৎসব
---------
কনটেনমেন্ট জোনে মানুষের
ভাবনায়
ব্যাপক উৎসবের ঢল নেমেছে

উত্তরাপথ
-------------
আনন্দকে ব্যাখ্যার অতীত
ভাবলে
আরেকটি আনন্দ রচিত হয়

করোনা যুদ্ধে
-----------------
উন্মত্ত গতিবিদ্যার আলোদেশ।
অদৃশ্য
করোনা যুদ্ধে চূড়ান্ত একশেষ

ব্যাখ্যার অতীত
--------------------
ব্যাকরণের ব্যাখ্যা পড়লেও
আজও
বুঝিনি কাকে বলে আকাশ

দাঁড়কাক
------------
কয়েকটি দাঁড়কাক কিচেনে
ঢুকে
টেনে তুলছে ইঁদুরের সাম্রাজ্য

অপরাধী || বিশ্বনাথ পাল || কবিতা

অপরাধী
বিশ্বনাথ পাল 

কে বেশি ধোয়া তুলসী তারই লড়াইয়ে দর্শকাসন আলো করে আছি আমরা
এদিকে মায়ের নিথর দেহকে জাগাতে চাইছে যে শিশুটি
তার অসহায়তার কাছে
আমাদের নিরুপদ্রব বাঁচতে চাওয়াকে অপরাধী মনে হয়


কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || স্তব্ধতার গান শোনো

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার 


স্তব্ধতার গান শোনো। শঙ্কর বসু । একুশ শতক। একশো টাকা ।


কবিতায় অহেতুক পান্ডিত্য দেখানোর প্রলোভন অনেক কবির ভেতর বিদ্যমান । শুধুমাত্র সেরিব্রাল কবিতা তাই আলোচনার ভেতর আসেনা। জনমানসে তা বেশ ভালো রকম পরিত্যাজ্য হয় । দুর্বোধ্য কবিতা নামেকিছুকবিতা লিখে নিজেকে জ্ঞানী প্রতিপন্ন করার বিষয়টি সত্তর দশকে বেশ দেখা গিয়েছিল,  এখন তা অস্তমিত । কবি শঙ্কর বসু  দীর্ঘদিন কবিতা গল্প লিখে যাচ্ছেন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে কবিতার ভেতরে তিনি পাণ্ডিত্যের ধারকাছ দিয়ে যাচ্ছেন  না । তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ ' স্তব্ধতার গান শোনো ' -তে যে মেজাজ খুঁজে পাই, যেমন:  ' অজস্র দুঃখের ক্যানভাসে/ লুকিয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতা । ' (স্বাধীনতা- স্বাধীনতা) বা, '' রিমোট কন্ট্রোলে শাসন  করছি/  তোমাদের আত্মাকে - আজও এই মুহুর্তে ' (ভারতবর্ষ আজ')।
        শঙ্কর বসু সেই মাপের কবি যিনি অহেতুক জনপ্রিয়তায় লালায়িত নন। তাঁর কবিতা কখনো কখনো কাগজে পাওয়া যায় । তিনি কবিতাকে অনেক
দিন ধরে মনে পুষে তারপর প্রকাশ করেন : ' আমাদের মাঝখানে এখনও প্রশ্ন আসে/  কেন বিচ্ছেদের বিষ গোপন, বিন্দু বিন্দু দহন ?'(প্রশ্ন ) এর মধ্যে দিয়ে তা বুঝতে পারা যায় ।
            এ বই কতখানি সচেতন পাঠকের যাবে, কতখানি তার সমাদর হবে বোঝা দায় । তবু যদি পাঠক
মগ্ন হয়ে পড়েন তবে তিনি পাবেন এক বিশেষ স্বাদ । যার মধ্যে রয়েছে ভালোবাসা, ক্ষোভ, নিম্নগ্রামের আস্ফালন ইত্যাদি ইত্যাদি । তাঁর তির্যক কবিতাগুলি বেশ টানে । প্রবীর আচার্যের প্রচ্ছদ টেনে রাখে,  তাঁর ড্রয়িং ভেতরে মোচড় দেয় ।

আটপৌরে কবিতা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা 

নীলাঞ্জন কুমার 



২৩১

দুরত্ব/ যোগাযোগহীন/ ভিন্ন 
        ) ক্রমাগত  (
একলা করে তোলে আমায় ।

২৩২

ছাদ /আকাশ/ অক্সিজেন 
     ) স্বস্তি  (
অন্তত একটু দিয়ে যায় !

২৩৩

দুর্বিপাক/ সাহায্য/ হা- হুতাশ
       ) একদিন  (
মিটে গেলেও দাম থাকে ।

২৩৪

সম্মেলন/  জমায়েত/ বক্তৃতা 
      )মানুষ (
আসে যায় আসে যায় 

২৩৫

বাঘ/ সিংহ/ চিতা 
  ) হিংস্র  (
ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা দেয় ।

সৌমিত্র রায়- এর জন্য গদ্য || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায়- এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

২৭.
কানাইলাল জানা-র 2/1 এ, বেকার রোডের বাড়ির কবিতাপাঠের একটা ক্যালেন্ডার আপনাদের জন্য পেশ করছি।
25 মে , 1994 ॥ সঞ্চয়িতা কুণ্ডুর কবিতাপাঠ
26 জুন, 1994 ॥ রফিক উল ইসলাম চৈতালী চট্টোপাধ্যায়- - দু-জন
24 জুলাই, 1994॥ নয়ের দশকের চার কবি অর্ণব সাহা আবীর সিংহ মানসকুমার চিনি সুমিতেশ সরকার
এইদিনের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল কালীঘাট মিলন সংঘ সভাঘরে।
28 আগস্ট ,1994 ॥ জয় গোস্বামী প্রমোদ বসু
25 সেপ্টেম্বর ,1994 ॥ আটের দশকের চার কবি অলোক বিশ্বাস জহর সেনমজুমদার নাসের হোসেন সুব্রত চেল
সুব্রত সেদিন অনুপস্থিত ছিল।

27 নভেম্বর ,1994 ॥ পবিত্র মুখোপাধ্যায়। এদিন পবিত্র মুখোপাধ্যায় ছাড়াও তার কবিতা পড়েছিলেন উপস্থিত বেশ কয়েকজন কবি।

কবিতাপাক্ষিক ১ থেকে ৪১ তম সংখ্যা পর্যন্ত কবিতা সংবাদ লিখতাম আমি। নামে কিংবা বেনামে।
৪২- ৪৩ সংখ্যা থেকে নাসের হোসেন অর্জুন মিশ্র কলমনামে কবিতাসংবাদ লেখা শুরু করেছিল। তারিখটা নোট করুন  28 জানুয়ারি ,1994। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত বিরামহীন। মাঝে আবার আলাদা করে শিল্পসংবাদও লিখতে হয়েছে।বড়ো ছোটো কোনো পত্রিকার এরকম কোনো কলাম-রাইটার্স খুঁজে দেখতে পারেন। পাবেন না।
মার্চ মাসে কবিতা পাঠ করেছিলেন কালীকৃষ্ণ গুহ এবং মলয় রায়চৌধুরী। কানাইলালের বাড়িতে।

দেখতে দেখতে দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তির ঘণ্টা বেজে গেল।কবিতাপাক্ষিক -এর ২য় বর্ষ পূর্তি এবং বাঁকুড়া জেলা কবিতা উৎসব ৷ 23 এপ্রিল , 1995 ৷ বাজোরিয়া গেস্ট হাউস , লালবাজার ,বাঁকুড়া।

ওই উৎসবের আহ্বায়ক : ডা: দীপংকর মাজী , বেলিয়াতোড়।

এটা উল্লেখ করার কারণ তখনো শহর বাঁকুড়ায় কবিতাপাক্ষিকের ইয়েস-ম্যান কবি- সংগঠক একজনও পাওয়া যায়নি। যারা ছিল সকলেই নবীন যুবক।এবং প্রকৃত অর্থে কবি।
আগামীকাল সে-খবর।

নিমগাছ || রুদ্র কিংশুক || গল্প

ছোটোদের গল্প :

নিমগাছ
রুদ্র কিংশুক

বাড়ি ছেড়ে যত দূরেই যাওয়া হোক না কেন বাড়ি আমাদের ছেড়ে যায় না । বহুকাল হল লেখাপড়া আর চাকরির কারণে সমুদ্রগড়ের কাছে আমাদের সেই গ্রাম আর আমাদের মাটির বাড়িটা ছেড়ে নরেন্দ্রপুর, কলকাতা, শান্তিনিকেতন, আরামবাগ --- কত জায়গাতেই আমি থাকলাম। কিন্তু বুকের মধ্যে আমার ঠাকুরদার তৈরি করা সেই মাটির বাড়িটা আজও জেগে আছে। তার স্মৃতি আর গল্পগুলো আমার বুকের ভেতরে এক টুকরো কাপড়ে বাঁধা লাউ-কুমড়োর বীজের মতো তুলে রাখা আছে।  হয়তো কোন শরতের সকালে যখন শিউলি ঝরবে,  তারা হঠাৎ আমার বুকের মাটিতে  ছড়িয়ে পড়বে , ছবির মতো ফুটে উঠবে । কখনও ঝমঝম বর্ষার রাতে তারা আমাকে সবাই বলে:  ফিরে আয়।

তো সেই বাড়িটার একটা গল্প বলি শোনো। বাড়ির ঈশান কোনে একটা বড় নিমগাছ ছিল । সেই নিম গাছের পাশে যে ঘরটা সেই ঘরটাতেই আমি রাত্রে ঘুমোতাম। প্রতিদিন  রাত তিনটের সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটত ওই গাছে ।গ্রীষ্ম বর্ষা শীত--- সব ঋতুতেই প্রতিদিন  অই একই সময়ে একটা ঝড় কোথা থেকে এসে উপস্থিত হত গাছের ওপর। প্রচন্ড জোরে দূলে উঠতো ডালপালা।কিছুক্ষন প‍র আবার সবকিছু শান্ত হয়ে যেত। প্রতিদিন আমি বাতাসের শব্দে জেগে উঠতাম।

কথাটা গ্রামের অনেকেই জেনে গেল। সবাই বলাবলি করত কোন নিশি হয়তো হাওয়ার  রূপ ধরে প্রতিদিন আসে ওই নিমগাছে। আমাদের গ্রামের  জাহ্নবী চক্রবর্তী । গ্রামের লোক তাঁকে পণ্ডিতমশাই বলতো। তিনি অনেক ভেবে চিন্তে  বিধান দিলেন। ঈশান কোণে রয়েছে কোন প্রেতাত্মা ।ভোরবেলার ওই সময় ঝড় হয়ে আসে আবার চলে যায় ।ঝড় তুলে সে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় ।তাঁর পরামর্শে বাবা একদিন লোকজন ডেকে এনে নিমগাছটা কেটে ফেলল। বাড়ির ঈশানকোনটা একেবারে খাঁ খাঁ করতে লাগলো। আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেল ।কিন্তু আশ্চর্য এই যে সেদিন থেকে আর কোনদিন ওই সময়ে ওঠা সেই দমকা বাতাস আর এলো না।

 এখন আমাদের সেই পুরনো বাড়িটা কত বদলে গেছে! এখানে ওখানে একতলা দোতলা তিন-চারটে বাড়ি। সেই ফাঁকা মুথাঘাসে ঢাকা হাঁস-ডাকা উঠানটাও আর নেই ।  আমার নাভিমূল পোঁতা আছে  এই উঠানে। নাভিমূল কী জানো তো তোমারা? সেই নাড়ি- সুতো  যেটা দিয়ে আমি মাতৃগর্ভে মায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মাটির পাত্রে রাখা নাভিমূল- রাখা উঠানের ওই জায়গাটা আমার বড়ো ভালো লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওই মাটি থেকে কোন একদিন একদিন আমি একটা গন্ধরাজ লেবু গাছে জন্মাবো। পুরনো বাড়িটার ঈশান কোণে মাটির ঘরটা কিন্তু এখনো আছে। কতদিন পর আজ চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠী আর গাজনে গ্রামে ফিরে এসেছি। ওই ঘরটার অবস্থা জরাজীর্ণ । তবুও  সবার অলক্ষ্যে বহুকাল বন্ধ ঘরে একবার ঢুকলাম। একটা অদ্ভুত গন্ধে আমার বুক ভরে উঠলো ।মনে পড়ে গেল সেই নিশি-পাওয়া নিমগাছটার কথা । ইথারে তার পাকা হলুদ ফলগুলো ফুলের মতো ফুটে আছে।

মা ও মাধবীলতা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

মা ও মাধবীলতা
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

সামনে বিস্তৃত খেলার মাঠ, চারিদিকে আম গাছ
তার এক পাশে থাকার কয়েকটা আবাসন
এরকম একটা আবাসনে, মা
বড় করেছিলেন মাধবীলতা
ছাদ ছাড়িয়ে যখন আকাশের দিকে...
চলে যেতে হয়েছিল অন্য বাড়িতে
মা আর মাধবীলতা র সখ্যতা  আবার
 নতুন বাড়ির উঠোনে
সকাল যায়, সন্ধ্যা যায় মা জল দেয়, কথা বলে
মাধবীলতা শোনে, হয়ত বলে, মা'ই বোঝে
শুধু দ'জনেরই একান্ত কিছুটা সময়.....
আমার শৈশব, কৈশোরে, বাল্যকাল
জড়িয়ে  এই মাধবীলতা
ওকে নিয়ে কত যে শীত, গ্রীষ্ম,বর্ষা কেটেছে
আর কত যে রঙিন হয়ে যেত এই মাধবীলতা
তা হৃদয় ই জানে
ঝোড়ো হাওয়ায় যখন দুলে উঠত তখন
ভরা নদী মনে হত......
এখনও মা আর মাধবীলতা অবিচ্ছেদ্য
মা এখনও দেখে উত্তরের জানালা দিয়ে
আর দৃষ্টি বিনিময়ে এক অন্য সুখ.....

# আমার আর মাধবীলতার দূরত্ব
আকাশ আর ভূমির মতন
শুধু আমার দৃষ্টি ভাসে  মেঘের ভেতর
কিন্তু মাধবীলতা এসে ধরা দেয় না.....


বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০২০

অভিজিৎ চৌধুরী|| পূরবী~ ৩ || ধারাবাহিক উপন্যাস অভিজিৎ চৌধুরী।

পূরবী~ ৩ || ধারাবাহিক উপন্যাস
অভিজিৎ চৌধুরী।

কলকাতায়ও প্লেগ চলে এলো।তার কয়েকদিন আগে ছিল রথীর জন্মদিন।রথীর জন্মদিন পালন করে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে কলকাতা ছাড়লেন।
বোম্বাই শহরে প্লেগ মহামারীর আকার নিলে শাসক অত্যাচারই প্রতিরোধ হিসেবে বেছে নিলো।রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করলেন।সিডিশন অ্যাক্ট চালু হয়েছে, কবিকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হল।
অমিতকে মেয়েটি বলল,রূপশ্রীর টাকা হবে!
অমিত বলল,এখন কোন বিয়ে হবে না।সোস্যাল গেদারিং নিষিদ্ধ।
মেয়েটি বলল,তাহলে উপায়!
বড় বউ, স্বপ্নে দেখলুম তুমি আমায় খুব বকছো।মাত্র দুটো চিঠি লিখেছিলেন ছুটিকে সাজাদপুর থেকে।তার মধ্য এটি ছিল একটি।
ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অন লাইন বন্ধ রয়েছে।
অপেক্ষা করুন।লক ডাউন তো চিরকাল থাকবে না।রেজিস্ট্রি করে রাখতে পারেন।
সময় এখানে থমকে থাকে।রথী সাঁতার শিখল পদ্মায়।তখন রবীন্দ্রনাথ পদ্মা পার হতে পারতেন সাঁতরে।
ওদের সঙ্গ দিতে অমলা এলো কলকাতা থেকে।দিনে ছুটির কাজে সাহায্য করা আর অবাক হন কি চমৎকার অনুবাদ করতে পারেন মৃণালিনী।অমলা একদিন বললেন,এগুলি কিন্তু ভারতীতে ছাপা হতে পারে।
কাজ হলো চিঠির উত্তর না এলেও।জোড়াসাঁকোর বাড়ি থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে এলেন মৃণালিনী।
লাজুক কণ্ঠে ছুটি বলেন,হ্যা।তিনিই তো লরেটো হাউসের ম্যাডামদের ঘরে ডেকে এনে আমায় পড়াশুনা শেখালেন।
ছুটি রাজী হন না।বলেন,এসব পিতৃদেবকে দেখায়।অমলা বলেন,মহর্ষি!
ছুটি মাথা নেড়ে বলেন,হ্যা।
পুব বাংলার মেয়ে বলে কথায় একদম চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার নেই।
অমলা বলল,তিনি খুব মহান তাই না!

আটপৌরে কবিতা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা 

নীলাঞ্জন কুমার 


২২৬

মাটি/ অঙ্কুর/ গাছ 
)মহীরুহ (
শুধু সময় দিতে হয় ।

২২৭

আদর্শ/ লক্ষ্য/ অভ্যেস
      ) ফলাফল  (
একদিন ঠিক এসে যায় ।

২২৮

সজ্জ্বন/ দ্য়ালু/ সেবক 
     ) ঈশ্বর(
হয়ে ওঠে ক্রমে ক্রমে ।

২২৯

মন্ত্রী/ দপ্তর /মানুষ
  ) অহর্নিশ(
তার লক্ষ্য হয় মানুষ।


২৩০

বিভ্রান্তি/ পাগলামি/ উন্মনা 
         ) অবিন্যস্ত  (
জীবন বয়ে নিয়ে যায় ।

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || মৃৃৃণালেন্দু দাশ~ অহল্যা কন্যা আমার

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার 

অহল্যা কন্যা আমার । মৃণালেন্দু দাশ ।পরিবেশক- পাতিরাম । ছয় টাকা ।

১৯ ৮৩-৮৪ সালের রচনা সমৃদ্ধ ও১৯৮৬ সালে প্রকাশিত মৃণালেন্দু দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ' অহল্যা কণ্যা আমার' -তে প্রথম কবিতার শেষ লাইনে এসে তিনি লেখেন ' আমার অহল্যা মাকে গ্রহণ করো পণহীন পায় ! 'এর উচ্চারণের জন্য  তখন তাঁর কাছে কবিতার ক্ষেত্রে অনেক বায়না থেকে যায় । অত্যন্ত ভালো কিছু কবিতা নিয়ে এ গ্রন্থ অন্য আবেদন রেখে  যায়, যেমন: ' ভিতরে ছড়ানো রেনুর উপর/ কোনদিন দেখতে পাওনি/  নরম রোদ্দুর কি রকম দেখায় , ( 'এখানে না এলে ') , ' তবে কেন উদাসীন সময়ের কাছে/ চাও ফিরে আসা ।' ( 'উদাসীন সময়ের কাছে ) ।
             কবি তাঁর কবিতায় বেশ কিছু সামাজিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন । করেছেন টোটেম ট্যাবুর ওপর । পণরীতি  মানবিক মূল্যবোধ ও বিশ্বাস ইত্যাদির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর উচ্চারণ করেছেন : 'ক্রমাগত গাছের জন্ম দাও/ বিশ্বাসের বিশাল গাছ । ' ( ' অবিমিশ্র বাতাসে দ্বিধান্বিত সময়) । কিংবা,  ' দেবতা মানুষ হয় ভালোবাসা  বিলোতে বিলোতে ।' ( ' কাছে এলে প্রিয় মানুষ ')।-র মাধ্যমে তিনি নিজেকে চিনিয়ে দেন ।
                 ছোট ছোট কবিতার মাধ্যমে তিনি আলাদা আলাদা মেসেজ ছেড়ে গেছেন । আনন্দ লাগে যখন প্রায় তিরিশ চল্লিশ বছর আগের কাব্যগ্রন্থ নিয়ে ভাবনা করি তখন এমন বই সামনে এলে । বিশ্বজিৎ মন্ডলের প্রচ্ছদ  জীবনের অস্থিরতাকে চিন্হিত করে ।

প্রভাত চৌধুরী || সৌমিত্র রায়-এর জন্য গদ্য || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায়-এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

২৬.
আগের অধ্যায়ে , লেখার নয় , ব্যক্তিগত সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২২/ বি , প্রতাপাদিত্য রোডের সঙ্গে যুক্ত ছিল ৩৬ / ডি , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ঠিকানাটি , কবিতাপাক্ষিক পর্বে ঠিক এই সমীকরণেই ৩৬ ডি-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল ২/১ এ, বেকার রোড।তরুণ কবি কানাইলাল জানা-র বাড়ি বা আবাসন। কানাইলাল কারা-বিভাগের মাঝারি আধিকারিক। সেই সুবাদে জেলের আবাসনে থাকার অধিকার পেয়েছিল। আয়তনে বেশ বড়ো। ইংরেজ আমলের স্থাপত্য। আর কানাই-এর পরিচর্যায় বিভিন্ন ফুলের গাছ। আমার খুব পছন্দ হয়ে গেল। এখানেই কবিতাপাঠের আসর হতে পারে। কানাইও রাজি হয়ে গেল।আমরা তো রাজি ছিলামই।
তখনো কিন্তু নাসের হোসেন নামটি কবিতাপাক্ষিক সম্পাদকমণ্ডলীতে যুক্ত হয়নি। অথচ ইতিমধ্যেই নাসের তার ভূমিকা পালন করতে শুরু করে দিয়েছে। 
 এবার একটা ছক কেটে নিচ্ছি।
২৫ মে , ১৯৯৪ ॥ কবিতাপাঠ : সঞ্চয়িতা কুণ্ডু ।
২৬ জুন , ১৯৯৪ ॥ কবিতাপাঠ:রফিক উল ইসলাম
                             চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
ওই সময় এ রকম একক কবিতাপাঠের আয়োজন করার কথা ভাবাও যেত না। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম এবং করেও দেখিয়েছিলাম।
কিছু প্রাসঙ্গিক কথা। আমন্ত্রণ- পত্র লিখে ফেলল নাসের হোসেন। তার ওপর অলংকরণ করা হল। তখন অলিতে- গলিতে এত জেরক্স অফসেট ছিল না। টেরিটিবাজারের একটা জায়গায় ছাপা হত। আমরাও পৌঁছে গেলাম জেরক্স অফসেটে। এই ফরম্যাটও আমরা নিয়ে এসেছিলাম কবিতার বাসভূমিতে।
এবার ৩৬ ডি , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে  অঘোষিত মিছিল করে যেতাম ২/১ এ, বেকার রোডে। সে এক অভিনব মিছিল ! প্রায় সকলের হাতে তালাই -মাদুর - অল্পসল্প টিফিন।আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের খাড়া দেওয়ালের পাশ দিয়ে আমাদের কবিতাযাত্রা। আজ মনে পড়ে গেলে অবাক হয়ে যাই।
আর সকাল থেকে কানাইলাল জানা-র পরিশ্রমে তখন  ঝকঝক করছে ছাদ এবং ঘর। এই নিষ্ঠার কথা ভুলে গেলে রবীন্দ্রনাথ আমায় ক্ষমা করবেন না।
প্রথম দিন কবিতা পড়েছিল সঞ্চয়িতা কুণ্ডু।আর ওর পঠিত কবিতার ওপর আলোচনা করেছিলেন আলোক সরকার রবীন্দু বিশ্বাস কালীকৃষ্ণ গুহ অনন্ত দাশ প্রমুখ অগ্রজ এবং বিশিষ্ট কবিরা।
বাংলাকবিতার ইতিহাসে এই ঘটনা বিরল। আমরা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছি এটি ঘোষণা করলাম। নতুন দৃষ্টিভঙ্গির শুরু করলাম --- এটা ঢোলশোহরত করেদিলাম। এটা শুনতে পেলেন অনেকেই। আর বধিররা যে কোনো কিছুই শুনতে পান না , এটা আর নতুন করে বললাম না।
আগামীকাল আসুক।

নিশিডাক || রুদ্র কিংশুক || ছোটদের গল্প

ছোটদের গল্প:

 নিশিডাক 
রুদ্র কিংশুক 


বাড়ির যে কোনো পুজোয় ফুল পাড়ার দায়িত্ব বুলুর।  কেউ তাকে এ দায়িত্ব দেয়নি । সে নিজের থেকেই এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। গ্রামের কোন বাগানে কী ফুলগাছ আছে, সে তার নখদর্পণে।গ্রামের অন্য ছেলের আগে গিয়ে ফুল পেড়ে ফেলতে হবে --- এই ভাবনায় পুজোর আগের দিন তার চোখের পাতা বুজতেই চায়না।

কাল বাড়িতে পৌষলক্ষ্মীর পুজো। ফুলের সাজি মাথার কাছে রেখে বুলু ঘুমাতে গেল। সকাল সকাল উঠে পশ্চিম পাড়ার পুকুরের পাড়ে ধানুপিসিদের বাগানে ফুল পাড়তে হবে। এ বাগানে কত রকমের যে ফুলগাছ। বুলু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখল ধানুপিসিদের । বাগানের গাছে গাছে ফুলগুলো তাকে ডাকছে। হঠাৎ বুলুর ঘুম ভাঙলো। ফুলের  সাজি নিয়ে বুলুর দৌড়। রাস্তাঘাট আলো থৈ থৈ। সকাল তো হয়ে গেছে। কিন্তু কারো ঘুম ভাঙ্গেনি আজ । ভালোই হয়েছে। সব ফুল সে একাই তুলবে ।
বাগানে গিয়ে বুলু দেখে কেউ এখনো আসতে পারেনি । বাগানে সে চাঁপাগাছের ডাল নুইয়ে ফুল পাড়তে লাগল। ঝুঁকেপড়া জবার ডাল থেকে ফুল তুল। উঁচু উঁচু ডালগুলো আজকে  কে যেন মাটির কাছে নামিয়ে এনেছে । দেখতে দেখতে সাজি ভরে উঠলো। জামার পকেট, প্যান্টের পকেট ভরে গেল ফুলে ফুলে। দূরে খেজুরগাছের মাথায়  একটা লক্ষ্মীপেঁচা ডেকে উঠল। বুলুর মনে হলো এবার বাড়ি ফিরতে হবে। তার খুব আনন্দ হচ্ছে। বাগানের বাইরে এসে সে একটা ছায়ামূর্তি দেখল। অনেকটা দূর থেকে সেই মূর্তি বলল ---এখানে এত রাতে কী করতে এসেছো ?
বুলু বলল --- আজ লক্ষ্মীপুজো।মা ফুল পাড়তে পাঠিয়েছে , পিসি।
বুলু এবার প্রায় দৌড় লাগাল। বাড়ির দিকে। বাগান থেকে তাদের বাড়ি বেশ খানিকটা দূরেই। রাস্তায় এখনো কোনো লোক বার হয়নি। রাস্তা আলোয় ভরা। একটা শেয়াল রাস্তা পার হয়ে খড়ি নদীর চরের দিকে ছুটে গেল। তার চোখদুটো জ্বলছে। বুলু বাড়িতে ঢুকেই দেখল মা উঠানে ডালিমগাছের কাছে দাঁড়িয়ে । তাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে উঠলো মা।
----- এত রাতে কোথায় গিয়েছিলি?
বুলু বলল--- কেন ধানুপিসিদের বাগানে ফুল পাড়তে!
  পরের দিন সবাই বলাবলি করতে লাগল বুলুকে  নাকি নিশিতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ফুলবাগানে।

মুখোমুখি || শ্রাবণী গুপ্ত || কবিতা

মুখোমুখি
শ্রাবণী গুপ্ত


নিজেকে দেখেছি আয়নায়
আজও দেখি
দেখতে দেখতে ভাবি হচ্ছেটা কী
চুল পাকার পরিবর্তে দিন দিন কালো হয়ে উঠছে
দিন দিন বেড়েই চলেছে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য
অথচ আমার বয়স বাড়ছে
আমার চোখে রিমলেস চশমা বসেছে
হাঁটুর মলম এসেছে
ফ্রিজের উপর ট্রে-ভর্তি ওষুধ নানান নামের

নিজেকে দেখেছি আয়নায়
আজও দেখি
দেখতে দেখতে ভাবি রহস্যটা কী
খোলা চুলে দাঁড়ালে নিজেকেই অচেনা লাগে
ভ্রূ যেন ধনুক, গালে যেন আপেলের আধফালি রাখা
অথচ আমার বয়স বাড়ছে
সিঁড়ি উঠতে উঠতে মাঝে দাঁড়াতে হয়
সকালের কথা বিকেলে মনে পড়ে না
রিপোর্টে রিপোর্টে ভরে গেছে ঘরের চারপাশ

আকাশ ছাদের নিচে এসে দাঁড়ালে
পশ্চিমে সূর্যকে ঢলে পড়তে দেখি
ঝরে পড়তে দেখি ফুল
বুঝতে পারি
বিদগ্ধ আয়নার সামনে দাঁড়াতে মানুষ
আসলে ভয় পায় ।

ঘুম || চয়ন পাহাড়ী || গল্প

ঘুম
চয়ন পাহাড়ী

বুধন লোহারের ঘুম আসেনা।অনিদ্রার রোগী নয় সে।এমনিই ঘুম আসেনা রাতে।হয়তো চিন্তায়, হয়তো বা দুশ্চিন্তায়। কিন্তু এই ঘুম না আসায় তার বিশেষ শারীরিক ক্ষতি হয়নি।কাজের দক্ষতাও কমেনি বলেই মনেহয়।এখনও সে সারাদিনে একশো কুড়ি তিরিশ বস্তা মাল একই ট্রাকে লোড করে দিতে পারে।মালিক আগারওয়ালজি তাকে তো এমনি এমনি এত পছন্দ করে না, কারণ আছে।যারা আগারওয়ালের প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি তে সারাদিন ধরে মালের বস্তা ট্রাক থেকে নামায়, আবার বিকেলে ট্রাকে তুলে দেয় তাদের সর্দার বুধন। বয়স চল্লিশ-পয়তাল্লিশের ভেতরই হবে, তাই আর বেশ কয়েকবছর টানতে পারবে বলেই মনে হয়।
ঘাসের উপর শুয়ে তারাভর্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে কতকিছুই না ভাবছিল বুধন।নিজের গ্রামের কথা, বড়ো হওয়ার কথা।ক্লাস ফাইভেই স্কুল পালিয়ে একটা লরিতে হেল্পারি করতে পাঞ্জাবে পালিয়ে যাওয়া, বছর পনের সেখানেই কাটিয়ে গ্রামে ফেরা।তারপর আবার কয়েক বছর দিল্লির কাছে একটা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ করা।আবার বাড়ি ফেরা।বাড়িতে তদ্দিনে বাবা গত হয়েছে, ছোটভাই ,মা কে দেখেনা। অল্প চাষের জমি ছিল বুধনের বাবার।মায়ের কান্নাকাটি থামাতে আর না পালিয়ে , বুধন ঠিক করল এবার গ্রামেই থাকবে।চাষবাস করবে । বুধনের কপালে সুখ ছিল না কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে ছিল।গ্রামের বন্ধুদের কথায় পড়ে জমানো সব টাকা কিসব স্কীমে জমা করেছিল,ছ'মাসে ডবল ফেরতের আশায়।টাকা আর আসেনি।দুর্দশা ডবল হয়ে ফেরত এসেছে। ইতিমধ্যে মাও খুব অসুস্থ, মা এর কথায় চাপে পড়ে বিয়ে করেছে বছর খানেক আগে।
---বুধন ভাই, ও বুধন ভাই, কি ছাইপাশ ভাবছো, আকাশের দিকে তাকিয়ে?
---তাতে তোর কিরে ঢ্যমনা? যা বলার ফটাফট বল ।
হঠাৎ তার চিন্তায় অযাচিত ছেদ পড়ায় বিরক্ত বুধন খেঁকিয়ে ওঠে।এই নরেশ ছেলেটা বুধনের পাশের গ্রামের।বছর দুয়েক আগেও সাইকেলে ঘুরে ঘুরে গ্রামের মেয়ে- বউ দের কাছে চুড়ি ,বালা ,স্টিলের বাসন বেচত। বছরখানেক হলো বুধন কে ধরে আগারওয়ালের কারখানায় ঢুকেছে। চটপটে ছোকরা একটু আধটু ইলেকট্রিকের কাজ জানে। ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রির পয়সা ছোটখাটো সারাইয়ের কাজে বেঁচে যায় আগারওয়ালের, তাই বাড়তি খাতির পায় নরেশ। বুধন কে সে গুরু মানে।
---না মানে বলছিলাম যে রাত অনেক হল, ঘুমিয়ে পড়ো।কাল সকালে তো আবার হাঁটা শুরু, না কি?
---ঠিক হেঁটে নেব রে ছোকরা, এই বুধন লোহার এখনও শক্তি হারায়নি। কত কিলোমিটার বাকি রে? মোবাইলে দেখ না।
---কি যে বলো দাদা, চারদিন তো হাটলাম, একশো কিলোমিটার মতো হলো, আরো এগারোশো বাকি।
---আর কিছুদিন হাঁটলে যদি একটা ট্রাক পাই, কি বলিস?চুপিচুপি বলি শোন, আমার জমানো দুহাজার টাকা আছে, যদি আমার কিছু হয়ে যায় ,তুই নিয়ে নিবি।
---ওসব অলুক্ষুনে কথা বলতে নেই। কী হবে তোমার? কিছু হবে না। গ্রামে ফিরতে হবে না? বৌদি অপেক্ষায় রয়েছে না? আজ কথা হয়েছে?
---নাহ রে। এই বুড়ো বর কিছুই তো দিতে পারে নি। দুবেলা দুমুঠো খাবারও রোজ জোটে না।আমার বোধহয় ওকে বিয়ে করাই উচিত হয়নি। তুই তো ওকে আমার বিয়ের আগে থেকেই চিনতিস তাই না?
---না ,মানে হ্যাঁ। ওই মুখ চেনা আর কী।তিনটে পাড়া পরে থাকতো।অন্য গ্রাম থেকে এসেছিল তার মায়ের সাথে।ঐ পাড়ায় আমার দিদির শ্বশুরবাড়ী,  তাই জানতাম।
---আর কী জানতিস ?
---আর কী জানব!! আর কিছুই না ।
--- হ্যাঁ, আর কী জানবি!! আর কত কী বা আমি জানব!
---আচ্ছা, একটা কথা বলো বুধনদা।সরকার আমাদের জন্য কি কিচ্ছু ভাবছে না? কিছু করবে না?তুমি তো অনেকক্ষণ কাল রাতে আমার মোবাইলে খবর শুনলে, কী বুঝলে বলো।
---তোর মোবাইল দেখে অনেক কিছুই বুঝেছি।কিন্তু খবরের ভিডিও দেখে কিছুই বুঝিনি। শুধু বুঝলাম যে আমরা গরীব।আর এখন কয়েকমাসের মধ্যে ভোট থাকলে সব দলের দাদারাই ট্রাক পাঠাতো।আমাদের দাম নেই রে।আমাদের ভোটের আছে।
--- ঠিকই বলেছ। শালা ,সবকটা নেতাই হারামী।খালি ভাষণ আর ভাষণ।কেউ পাত্তা দেয় না। এতদিন যদি হাঁটতেই হয়, খাবো কী?
----ওই জন্যই তো আমার জমানো টাকাটা রেখেছি।তোর আমার চলে যাবে। বাকিদের কথা জানিনা।তোর কাছে যা আছে রেখেদে ।পরে দেখা যাবে।
---গ্রামে ফিরে কী হবে বলতো? কেউ কি খেতে দেবে, কাজ দেবে?মনে তো হয় না, সবারই হাল এক।
---জানিনা রে।আমি সত্যি কিছু জানি না।আর বকিস না। এবার ঘুমোতে দে। পায়ের ফোস্কাটা বেড়েছে।আর পারছি না।
খানিকক্ষণ দুজনেই চুপচাপ।বারাউরি, মহারাষ্ট্রের একটা ছোটো শহর যেখানকার প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি "আগারওয়াল প্লাষ্টিকস" এর দুই শ্রমিকের মনে অসংখ্য প্রশ্ন যার উত্তর কারুরই জানা নেই।লক ডাউন আরও বাড়তে পারে এই ইঙ্গিতে আর কোনো দ্বিধা না রেখে ওরা তিরিশ জন বেরিয়ে পড়েছে বারাউরি থেকে।যতটা পথ হেঁটে যাওয়া যায়,ওরা হেঁটে ই ফিরতে চাই নিজেদের গ্রামে যা লখনৌ শহর থেকেও প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে।  চারদিন হেটে পৌঁছেছে আওরঙ্গাবাদ ।
নিস্তব্ধতা বেশিক্ষণ সহ্য হয় না নরেশের। যতক্ষণ জেগে আছে বকবক করতেই থাকবে। কিন্তু উপরওয়ালার দয়ায় ঘুম গাঢ় তার। ভূমিকম্প হলেও টের পায়না যেন।
---আচ্ছা বুধন দা, তুমি স্টেশনমাস্টার কে কী জিগ্যেস করছিলে বললে না তো।কোনো ট্রেন দিচ্ছে নাকি সরকার আমাদের বাড়ি ফেরার জন্য? অন্তত লখনৌ অব্দি যাওয়ার ট্রেন পেলেও ভালই হতো ,কি বলো?
---তোর নাম বুদ্ধু নরেশ হলেও ঠিক হত।কোনো ট্রেন কোথাও চলছে না, বুঝলি?রেল লাইন ধরে হাঁটলে রাস্তা ভুল কম হয়।তাই জিগ্যেস করছিলাম এই লাইনে পরের স্টেশান গুলো কী আছে।
--- ওহ ,তাহলে এই লাইন ধরে কোনো ট্রেন আসবে না বলো?
---এলেও বা তোর কী? তুই তো নীচে ঢালুতে ঘাসের উপর শুয়ে আছিস। আর ওই গাধা গুলোকেও বলেছি রেল লাইনের উপর শুতে না।কে কার কথা শুনছে!!! বলে কিনা রেলের পাত গুলো বেশ ঠান্ডা, বেশ আরামে ঘুমানো যায়। ওই মোটাবুদ্ধি গুলোকে আর বোঝাতে পারব না।
---হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছ।বলছি পোটলা তে কিছু খাবার আছে নাকি? একটা রুটি হলেও হবে, জল আছে আমার কাছে। চার পাঁচ ঢোক খেয়ে নেব।
---এই নে। চারটে রুটি আর তরকারি আছে।নষ্ট করবি না।আর আমার কাগজ পত্র, ব্যাংকের বই আছে, ঘাটবি না।
---একটাই নিচ্ছি গো।ব্যাংকের বই সঙ্গে নিয়ে ঘুরছ। খুব টাকা পয়সা আছে নাকি? হে হে , কি দাদা?
---নাহ রে, হেসে ফেলে বুধন।ওটা আমার আর বউ এর একসাথে ব্যাংকের বই।দুজনের ছবি সাঁটানো আছে স্ট্যাম্প মেরে।টাকাপয়সা তো নেই, মাঝে মাঝে ওই ছবিটাই দেখি।
---বাবা, এই বলছো বাঁচা মরার ঠিক নেই।আবার মনে মনে এত রস! ব্যাপার ই আলাদা।
---বেশি বকিস না। সরকার যদি টাকা দেয়, সেটা তো আর হাতে দেবে না।ব্যাংকের বই খুব দরকার, বুঝলি?
খাওয়া শেষ তো আমার পোটলা দে।বালিশ করে ঘুমাই।
---এই নাও গো  দাদা। রুটি খেয়ে যেন একটু শক্তি এলো।ঘুমই বুঝলে। সকালে ডেকে দিও।

এইসব বলে একটা ঢেকুর তুলে ঘুমিয়ে পড়লো নরেশ।আকাশের তারা গুলো যখন প্রায় মিশে যেতে চলেছে শেষ রাতের পাতলা আলোয়,নরেশের সেই ঘুম ভাঙলো এক বিকট শব্দে, প্রচন্ড জোরে বাজতে থাকা মালগাড়ির হর্নের আওয়াজে। ধড়ফড় করে উঠে দেখে বুধন নেই পাশে, তার পোটলাও নেই।ভোররাতে পাগলের মতো চারদিক খুঁজতে থাকলো নরেশ , বুধন লোহার কে।বেশিক্ষণ লাগলো না।একটা বগির তলায় কারুর ডান হাত বেরিয়ে আছে। সে হাত নরেশের চেনা। একটু দূরে ছিটকে আছে একটা আধখোলা পোটলা, তিনটে রুটি, একটু তরকারি আর একটা পাসবইয়ের প্রথম পাতা। দুটো ছবি। স্ট্যাম্প লাগানো।

বুধবার, ২৭ মে, ২০২০

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || Ivanka Mogilska-এর কবিতা

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা 

রুদ্র কিংশুক

ইভাঙ্কা মজিলস্কা-র কবিতা
ইভাঙ্কা  মজিলস্কা  (Ivanka Mogilska,1981)-র জন্ম বুলগেরিয়ার প্লভডিভ শহরে। কবিতা ও উপন্যাস লেখা ছাড়া,  তিনি একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট এবং সঙ্গীতজ্ঞ ।
এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তাঁর চারটি চারটি গ্রন্থ ।দুটি কবিতা সংকলন এবং দুটি উপন্যাস। ইংরেজি, ফরাসি ও হাঙ্গেরিয়ান সহ পৃথিবীর অন্যান্য কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর লেখা ।পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাহিত্য তিনি বুলগেরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে  থাকেন ।বর্তমানে এই লেখক থাকেন বুলগেরিয়ার সোফিয়া শহরে।

১. ছবি
কখনো কখনো সে বলে অবিশ্বাস্য সব গল্প
 সে খায় দিনটাকে ছোট্ট ছোট্ট টুকরে
অন্ধকারে সে হাসে।
 সবটাই তার সূর্যালোক
আর কয়েক টুকরো সাদা মেঘ ।
কখনো ইচ্ছে করে শুয়ে শুয়ে থাকে
প্রতিদিনের প্লেটের উপর ।
কোনোভাবেই সে গ্রাহ্য করে না ।
কোন শব্দ নেই ।
কোন গল্প নেই ।
তখন কোন অন্ধকারও না
 হাসির
যোগ্য।
 সে এতটাই  উদাসীন ---
তাই তুমি ভাবো
ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা
অথবা তার চোখ ।

২. শোভাযাত্রা

সময়
যতটা তুমি নাও
সেটাই সময়
যা কেউ তাকে স্মরণ করতে নেয় ।

৩. আকাশ
সে চাই সেলাই-না-করা একটা আকাশ
খোলা প্রান্ত সহ
যাতে যখন সেটা খুলে যাবে
 সে লাফিয়ে উঠতে পারবে
একটা সূতো ধরে
 উঠে যাবে
একেবারে চূড়ায়।

৪. একটা দিন
 একটা দিন গলে যায়
জলের গ্লাসে ভিটামিনের মতো
 যা কেউ একজন ভুলে গেছে টেবিলের ওপর টেবিলের ওপর গেছে টেবিলের ওপর টেবিলের ওপর।
 ফিসফিস শব্দ হয় ।
নীরব কুলকুচি।
শোনার মতো কেউ নেই আশে পাশে পাশে
তার তুচ্ছ নালিশ।
 তাই সে শান্ত হয়ে পড়ে,
বুদবুদ ওঠে ,
তলানি পড়ে ।
সন্ধ্যেবেলা মালিকেরা বাড়ি ফিরে এসে
তাকে ঢেলে দেয় সিঙ্কের ভেতর।

আটপৌরে কবিতা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা 

নীলাঞ্জন কুমার 



২২১.

গন্ডি/ বৃত্ত/ আবদ্ধ
    ) সীমারেখা  (
জন্ম থেকে স্থির থাকে ।

২২২.

সত্যজিত/ মৃণাল/ ঋত্বিক 
     )চলচ্চিত্র  (
ভোলা যাবে না তাদের ।

২২৩.

ব্যোমকেশ/ ফেলুদা/ কিরীটি 
      ) গোয়েন্দা  (
সময় বোধ হারিয়ে যায়।

২২৪.

কঠিন/ তরল/ গ্যাসীয় 
    ) প্রাকৃতিক  (
ভাবলে বুঝি কত বৈচিত্র্য !

২২৫.

ছিটকিনি/ খিল/ কড়া 
   ) নিরাপত্তা (
স্বস্তির ঘুমে ঢলে পড়ি।

প্রভাত চৌধুরী || সৌমিত্র রায়-এর জন্য গদ্য- ২৫ || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায়-এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

২৫.
এখন ২৪ বৈশাখের কথা। ১৪০১ বঙ্গাব্দের ২৪ বৈশাখের কথা। ১৪০০ বঙ্গাব্দের ২৪ বৈশাখ ছিল কবিতাপাক্ষিক পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। ঠিক তার এক বছর পর কবিতাপাক্ষিক প্রকাশনার শুরুর দিন।

পত্রিকা থেকে প্রকাশনায় কেন আসলাম এটা তো জানাতে হবে। প্রথম কথাটি হল --- এই এক বছরে যেসব নতুন বা পুরোনো কবি একত্রিত হয়েছে তাদের কবিতার একটা আউটলেট চাই। মনে রাখবেন তখন কিন্তু আমার নিজস্ব আউটলেটের প্রয়োজন পড়েনি। আমি সেই এক বছরে মোট ছ-টি কবিতা লিখেছিলাম। সেই ছ-টি কবিতা-কে মূলধন করে আগের বই ' প্রভাত চৌধুরী  প্রণীত প্রভাত চৌধুরী '-র কিছু কবিতা যুক্ত করে সমীরণ মজুমদারের সমর্থনে ওর অমৃতলোক প্রকাশনা থেকে আমার ' সাদাকথা ' প্রকাশিত হয়ে গেছে। আমার বাসনা হয়েছিল কবিতাপাক্ষিক পরিবারের নিজস্ব একটা প্রকাশনা থাকুক।

আরো একটা কথা তখন বলতাম : কাকেরা কাকের মাংস খায় না। কিন্তু কবিরা কবিদের মাংস খায়। অর্থাৎ কবিদের টাকায় বই ছাপিয়ে একটা নির্দিষ্ট মুনাফা রাখা। যে টাকায় তার জীবিকা। আমি চেয়েছিলাম এই প্রথার অবসান হোক। যা খরচ হবে ঠিক সেই টাকা-ই নেওয়া হবে বইপ্রকাশ বাবদ। এরপর মৌচাকে ঢিল পড়লে যা হয় ঠিক তা-ই হয়েছিল।এখন সেসব কথা থাক।

এখন একটা স্বীকারোক্তি করতে চাইছি।তা হলহল এই যে একসঙ্গে দশটি বই প্রকাশ এর পরিকল্পনাটি ছিল শ্যামলবরণ সাহা-র বাকচর্চার অনুপ্রেরণাজাত। শ্যামলবরণ বর্ধমানের অনেক কবির এক ফর্মার কবিতার বই প্রকাশ করেছিল একক প্রচেষ্টায়। আর আমরা তো এক পরিবার। শ্যামলবরণ একা পারলে আমরা কেন পারব না ?
আমরাও পেরেছিলাম। প্রমাণ করেছিলাম আমরাও পারি। কবিপত্রকালে তো আমি প্রায় একক পরিশ্রমে এবং পরিকল্পনায় বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছিলাম এই যে একসঙ্গে দশটি বই প্রকাশ এর পরিকল্পনাটি ছিল শ্যামলবরণ সাহা-র বাকচর্চার অনুপ্রেরণাজাত। শ্যামলবরণ বর্ধমানের অনেক কবির এক ফর্মার কবিতার বই প্রকাশ করেছিল একক প্রচেষ্টায়। আর আমরা তো এক পরিবার। শ্যামলবরণ একা পারলে আমরা কেন পারব না ?
আমরাও পেরেছিলাম। প্রমাণ করেছিলাম আমরাও পারি। কবিপত্রকালে তো আমি প্রায় একক পরিশ্রমে এবং পরিকল্পনায় বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছিলাম। কাজেই ভয়-কে জয় করে পৌঁছে গেলাম ২৪ বৈশাখ ১৪০১ । এবং কলকাতার ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রেস ক্লাবে।কবিতাপাক্ষিক প্রথম গ্রন্থমালা সিরিজের প্রকাশ অনুষ্ঠানে। তখনকার  একমাত্র এসি অডিটোরিয়ামে।
 কোন কোন বই প্রকাশিত হয়েছিল তার তালিকা আগেই দিয়েছিলাম।
সিরিজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন অগ্রজ কবি আলোক সরকার।
কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়-এর হাত থেকে প্রথম কয়েকটি কপি কিনেছিলেন দীপঙ্কর সরকার গোপাল আচার্য নয়ন রায় সুশীল ভৌমিক ডা: নীলাদ্রি বিশ্বাস অরূপ পান্তী ।ছিল কবিতাপাঠ ।সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন দেবাশিস রায়চৌধুরী। ভাবতে পারেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন  কবি সুশীল ভৌমিক । এসেছিলেনবহরমপুর থেকে ।

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || দর্পণ~ সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত ।

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার 

দর্পণ ।সমরেন্দ্র দাশগুপ্ত । বিশ্বজ্ঞান ।পন্ঞ্চাশ টাকা ।

হাজারো শব্দের ভীড়ের ভেতর যখন কোন কবিতা হারায় তখন দুঃখ বাড়ায় । যে মানুষ কবিতারই মানুষ নয় তাকে এই সত্য তাকে জানালে তারই উপকার হয় এ কথা কেউ বোঝেন না ।লেখক মনে দুঃখ পাবেন একথা ভেবে তার প্রশংসা করা তাঁর যতখানি ক্ষতি তা শুভার্থীদের বোঝা প্রয়োজন । বিশ্বজ্ঞান প্রকাশনীর প্রয়াত কর্ণধার দেবকুমার বসু 'দর্পণ ' বইটি নিয়ে লিখতে গিয়ে যে প্রশংসা করেছেন তাতে দুঃখ হয় ।
        সমরেন্দ্র দাশগুপ্তর ' দর্পণ ' কোনমতেই কবিতার বই নয় ,এটি পদ্যের বই । যে পদ্য এখনো বহু মানুষ কবিতা বলে মনে করেন ,যেমন:  ' হায় রে নারী ছাড়লি শাড়ি/  ধরলি এ কোন বেশ , /অর্ধ নগ্ন হয়ে ঘুরিস/  লজ্জার নেই লেশ । ' এর ভেতরে ছন্দ ঠিকঠাক থাকলেও বাকি সব ঈশ্বর গুপ্ত যুগের ।
      সখ মেটানোর কোন জায়গা যে কবিতার ভেতরে হয় না তা এ ধরনের লেখককুল বোঝেন না । তার জন্য ভালো ও খারাপের মধ্যে বিরাট ফারাক থেকে যায় । প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে লেখকের ভেতর তির্যকতা আছে ।

ক্যামেরা চলছে || নীলিমা সাহা || কবিতা

ক্যামেরা চলছে 
নীলিমা সাহা 

ক্যামেরা চলছে ...
বন্দি  হচ্ছে  উপেক্ষিত অপেক্ষারা --অনিচ্ছাগুলো ইচ্ছে  হয়ে যাচ্ছে

আজকালপরশুর  পরিযায়ী প্রশ্রয়,মায়াবর্ণ... সময়ের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে  ...ভরা  জৈষ্ঠেও অদ্ভুত  শীতপথ, প্রতিদিন জন্ম হচ্ছে মৃতুদিন
কতত বি-বাহ বন্ধ দরজার  আলে,স্বরবর্ণ রিফু করছে আবহ বিরহ,নেপথ্যকথনে সেই  বহুবর্ণের টেক্সট

ক্যামেরা  চলছে ...

ইউটার্ন পথ---চড়াই,উৎরাই---সেখানে-ই  রেখে যাওয়া কিস্ আঃ... কিসসা হয়ে পথস্রোত--পায়ে পায়ে  পরিত্যক্ত পালক---গা ঘেঁষে থাকে ব্রেকিংনিউজ...
দর্জিপাড়া থেকে নীহারিকাগলি ছেড়ে কেষ্টপুর চই চই রাধাচূড়া-- হাসিকান্না
 আর জলবিভাজন

সন্ধ্যা  হাতে বসে থাকে
যৌন সুবাস---

আমি আপনি দেখছি লাইভ টেলিকাস্ট---

ক্যামেরা চলছে ...

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...