বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০

একজন বুড়ো মানুষ-৯ || নিরুপমা বরগোহাঞি || অসমীয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস,

 একজন বুড়ো মানুষ-৯,

নিরুপমা বরগোহাঞি,

অসমীয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস,




(৯)
উত্তরে সঞ্জয়ের বলতে ইচ্ছা করল যে সেই সমস্ত স্বামীরা চেয়ে ছিল যে তাদের স্ত্রীরা চাকরি করুক কিন্তু আমিতো তোমাকে বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু বলতে ইচ্ছা হলেও বলল না। অন্য কথা বলল-‘আমি যে ইঞ্জিনিয়ার মানুষ কমলা, তোমাদের ছাত্রীদের সেই অসমিয়া বা ইংরেজি লেখাগুলির মানে আমি কি বুঝতে পারব?’
কমলা আর কথা বলল না। কেবল কিছুটা শব্দ করে সামনে নিয়ে দেখতে থাকা খাতাগুলি টেবিলের উপর সজোরে রেখে দিয়ে ভাবিতকে চিৎকার করে ডাকল। ভাবিত,এই ভাবিত, বাবাকে বল গিয়ে যা অনেক দেরি হয়ে গেছে, স্নান করে ভাত খেতে হবে।’ 
অবশেষে বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু হল। কমলা বিজয়কে নকশাটা দেখানোর পর থেকে একটা আশ্চর্য, এবং বিজয় ভরালীর নিজের মতে একটা ঘৃণ্য অভ্যাস হয়ে গেল তার। তিনি থাকার ঘরের সঙ্গেই কমলোদের শোবার ঘর। মাত্র একটি দেওয়ালের ব্যবধান। ইচ্ছা করলে একটা রুমে বলা কথা অন্যরুম থেকে সহজে শোনা যায়। কিন্তু এতদিন কমলাদের কোনো ধরনের কথা বার্তা বিজয় ভরালীর কানে আসেনি বা তিনি কান দেননি। নিজের ঘরে থাকা সময়টুকু তিনি বই পড়ে বা শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দেন। ঘুম না আসার সময়টুকু তিনি নিজের চিন্তা রাজ্যে এভাবে ডুবে থাকেন যে পাশের ঘর থেকে আসা সঞ্জয় বা কমলার কথাবার্তা কানে পড়া ছাড়া তার কোনো অর্থ তার মগজে ঢুকে না। কিন্তু কমলা তাকে ঘরের নকশাটা  দেখানোর পর থেকেই সেই আশ্চর্য এবং তার নিজের ভাষায় ঘৃণ্য অভ্যাসটা গড়ে উঠল, আর যার ফলে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক সময় সামনের বারান্দায় কাটাতে বাধ্য হলেন।
একদিন তিনি এবং ইলাও ওদের মতো একটি ঘর তৈরি করতে চেয়েছিলেন- দুজনের কত জল্পনা-কল্পনা, কত আলোচনায় না চলছিল। এখন ওরা দুটো বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে নিশ্চয়ই একইভাবে কল্পনার রাজ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে, আলোচনা করছে, ভবিষ্যতের রঙ্গিন মধুর ছবি আঁকছে- কেমন তাদের সেই স্বপ্ন? আশ্চর্য, তা জানার জন্য যেন তার মনটা আকুল হয়ে উঠল। অদ্ভুত একটা অদম্য কৌতূহল তার মনকে অধিকার করে ফেলল, আর নিজেকে তিনি বারবার তার জন্য তীব্র তিরস্কার করলেন। আর নিজেকে বললেন-‘ আজ ইলা থাকলে তোমাকে বলতো যে বুড়ো হয়ে তোমার প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে -কিন্তু তবুও তার পরেও তার কান দুটি উৎকর্ণ হয়ে রইল বেড়ার ওপাশে থাকা দম্পতির ঘর বাঁধার স্বপ্ন রচনার কথাবার্তা শোনার আগ্রহে। ফলে নিজেকে ছিঃ ছিঃ করে,ধিক্কার দিয়ে বেশিরভাগ সময় তিনি বাইরে গিয়ে বসে থাকতে লাগলেন। অবশ্য দুপুরবেলা সময়টিতে যখন ছেলে,ছেলের বউ ঘরে থাকে না, সেই সময়টুকু তিনি মনের মধ্যে কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব না রেখে নিজের ঘরেই কাটিয়ে দিতে পারছিলেন। কিন্তু বিপদ হয়েছিল সন্ধ্যেবেলা এবং রাতগুলোতে। যদিও সামনের দিকে বারান্দায় বসে থাকলেই হয়ে যায় কিন্তু রাতের বেলা নিজেকে নিয়ে যেন মহা সমস্যায় পড়ে গেলেন বিজয় ভরালী। এই ধরণের অদ্ভুত বিপদও মানুষের হয় কি? বুড়ো বয়সে এটা কী ধরনের মনের রোগ দেখা দিল যে তাকে এত যত্ন করেও ভালো করতে পারছে না। ওই ঘরে ছেলে-বৌমার কথা পাতার শব্দ শুনলেই কানদুটি অবাধ্যভাবে নিজে থেকেই উৎকর্ণ হয়ে ওঠে। একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন আর শেষে উপায় না পেয়ে কমলার সুসজ্জিত  ড্রয়িংরূমের একটা সোফায় জড়োসড়ো হয়ে বসে নিয়ে রাতে ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত বসে বই পড়তে থাকেন। এই অভ্যাসটা করেও কিন্তু তিনি মনে শান্তি পেলেন না। কারণ এত পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা ঘরে বসে তিনি নিজেকে কেমন যেন অপরাধীর মত অনুভব করেন। সেই জন্য কোমল নরম কুশন গুলির স্বাচ্ছন্দ ও তাকে কোনো আরাম দিতে পারে না। তিনি বসার ফলে যে কুসনগুলির ইস্তিরি ভেঙ্গে যাবে, নোংরা হবে, নিচে পেতে রাখা পরিষ্কার কার্পেটের ওপর তার পায়ের ধুলো পড়বে, আর ফলে কমলা নিশ্চয় তার ওপরে মনে মনে রাগ হবে- এই ধরনের ভাব মনে আসে বলে বিজয় ভরালী কোনোদিন ড্রয়িংরুমে বসে স্বস্তি অনুভব করতে পারেন না। এখন আরও বেশি অস্বস্তি নিয়ে তিনি অত্যন্ত সংকুচিত ভাবে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে একটা সোফার কোণে যত কম জায়গা নিয়ে পারা যায়
 সেভাবে বসে বই পড়তে লাগলেন। কিছুদিন যাওয়ার পরে বিজয় ভরালী দেখলেন সঞ্জয় একদিন অফিস থেকে এসেই ড্রয়িং রুমের সামনের বাল্বটা সরিয়ে নিজের হাতে অন্য একটি বাল্ব লাগাল। তিনি একটু অবাক হলেন- গতকাল পর্যন্ত তো বাল্বটা ঠিকই ছিল। তাহলে? কিন্তু মনের প্রশ্ন তার মনেই থেকে গেল। সঞ্জয়কে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এই একটি বিষয়ে বাপ ছেলের মধ্যে আশ্চর্য সম্বন্ধ। খুব কমই একে অপরকে কোনো সাধারন কথার জন্য প্রশ্ন করে।
 শুধু প্রশ্ন করা কেন, কথাবার্তাই বা দুজন দুজনের মধ্যে আর কতটুকু হয়?  ইলার মৃত্যুর পরে দুজনে দুজনের বেশির অন্তরঙ্গ হয়ে না উঠে আরও যেন দূরে সরে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই গম্ভীর বিজয় ভরালী আরও গম্ভীর হয়ে পড়েছিল। আর সঞ্জয় যার বেশির ভাগ কথাবার্তা আদর মান-অভিমান মায়ের সঙ্গে ছিল সে যেন হঠাৎ অথৈ সমুদ্রে পড়ে ছটফট করতে লাগল। বাবাকে আশ্রয় হিসেবে যে জড়িয়ে ধরবে বাবারও তো সেই সময় তার মতোই অবস্থা। তাই সেই দুঃখের পাষাণ-ভার স্তব্ধ সেই মানুষটির কাছে আশ্রয়ের কোনো আশা নেই,সান্ত্বনার কোনো ভাষা নেই বলে তার শিশুমন যেন কোনোভাবে বুঝতে পেরে নিজেই নিজের জগৎ সৃষ্টি করে নিল। বাপ-ছেলের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবধান আরও বেড়ে গেল। কিন্তু ইলার মা বাবা যখন পোনাকে নিয়ে নিজের সঙ্গে রেখে বড় করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তখন কিন্তু বিজয় ভরালী প্রায় আর্তনাদ করে উঠেছিলেন। ইলার একমাত্র রক্তমাংসের চিহ্ন পোনা , তাকে চোখের সামনে দেখতে  না পেলে সে কী নিয়ে বেঁচে থাকবে? তাই শেষপর্যন্ত তার সঙ্গেই থেকে গেল পোনা। সঙ্গে থাকা কাজের ছেলেটি ভাগ্যক্রমে খুব বিশ্বাসী ছিল। তাই তার হাতে ভার দিয়ে একরকম নিশ্চিত হয়ে রইল বিজয় ভরালী। পোনাও গম্ভীর প্রকৃতির বাবার কাছাকাছি হওয়ার চেয়ে কাজের লোক 
বাদলের সঙ্গে বেশি অন্তরঙ্গ হয়ে পড়ল।
ইলার মৃত্যুর সময় বলা কথাগুলি যে বিজয় ভরালী ভুলে যায়নি তা বোঝা গেল। ছাত্র হিসেবে সঞ্জয় যদিও কোনো একটি বিশেষ লাইনের প্রতি আগ্রহী ছিল না কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি। অবশ্য প্রত্যেক বিষয়ে সে সমান মেধাবী ছিল, সে দিক থেকে তার যেকোনো বিষয় নিয়ে পড়ায়  কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা সে ভাবতেই পারেনি। বিজয় ভরালী ছেলেকে জানাল যে তাকে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। বাবার কথা মান্য করার সাহস সঞ্জয়ের
 ছিল না। তাই সে ইঞ্জিনিয়ার হল। অনেক বাবা-ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার হতে দেখার মতো এটাও এক ধরনের বাবার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু কোনোদিন সে জানতে পারল না যে মায়ের মৃত্যুর সময় মুখে উচ্চারিত হওয়া কথাটা বাবা কোনোদিন ভুলে যায়নি। মনে মনে সংকল্প নিয়ে ছিল যে ছেলেকে অত্যন্ত বেশি ভাব প্রবণতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তাই ভাবল ইঞ্জিনিয়ার হলে সেই জীবনযাত্রার ফলে ছেলের ভাবুক মন অনেক পরিমাণে বহির্মুখী হয়ে পড়বে। সুখের চেয়ে দুঃখই যেখানে  বেশি সেই মানব জীবনে ভাবপ্রবণতা অতিরিক্ত কিছু দুঃখ  বহন করে আনে। অবশ্য স্বভাবের পরিবর্তন করা সহজ নয়। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার দ্বারা অন্তত কিছুটা পরিবর্তিত করা যায়। বিজয় ভরালীর আশা সেখানেই,আর সেই আশাতেই তিনি সঞ্জয়কে কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পাঠালেন। আর তারপরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ালেন। 
অবশ্য ছেলের মনের সঙ্গে সম্বন্ধ না থাকা বিজয় ভরালী কোনোদিন বুঝতে পারলেন না তাঁর পরিকল্পনা কতদূর সফল হয়েছিল। ছেলের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তা চলে, তার দ্বারা ছেলের মনের পরিচয় পাওয়া সহজ নয়।
এখন বাল্বটা সরিয়ে ফেলার কথায় সামান্য কৌতহল মনে দেখা দিলেও তিনি ছেলেকে সেই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কিন্তু বিকেলের ড্রইং রুমে লাইট জ্বালিয়ে পড়তে বসার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রশ্নের উত্তর নিজেই পেয়ে গেলেন। সূইচটা টেপার সঙ্গে সঙ্গে বিজয় দেখলেন যে উজ্জ্বল আলোতে ঘর ভরে গেল আর সেই মুহূর্তে ছেলের প্রতি মনটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। একই সঙ্গে এক ধরনের আনন্দ অনুভব করলেন বিজয় ভরালী। আপাতদৃষ্টিতে তার সঙ্গে সঞ্জয়ের বেশি যোগাযোগ নেই বলে মনে হলেও বাবার সুখ-দুঃখের প্রতি যে তার যথেষ্ট নজর আছে তা তো বুঝা গেল। ড্রইং রুমের লাইটের আলো যথেষ্ট কম ছিল, এই কয়েকদিন তাকে বেশ কষ্ট করেই কম আলোতে পড়াশোনা করতে হয়েছে। সে কথা তাহলে সঞ্জয় লক্ষ করেছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার মনে আরও একটি প্রশ্নের উদয় হল। এই লক্ষ্য কে করেছে? সঞ্জয় না কমলা? তার আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি কার চোখ, কমলার না সঞ্জয়ের? আর সেই প্রশ্নের উত্তর সেদিনই পেয়ে গেলেন বিজয় ভরালী। একটু ছোট অক্ষরের একটি বই দিনের বেলা পড়ছিলেন কিন্তু রাতের বেলা ড্রইংরুমের অনুজ্জ্বল আলোতে তা পড়া সম্ভব হবে না বলে ভেবে অন্য একটি বই এনেছিলেন। এখন পুনরায় দিনের বেলা পড়া বইটি নিজের রুম থেকে আনতে গিয়ে পাশের  ঘরে কমলার কণ্ঠস্বর শুনে কানদুটো সজাগ হয়ে গেল। অভ্যাসটা খুব খারাপ ধরনের হয়েছে, নিজেকে নিয়ে বড় হতাশ মনে ভাবলেন বিজয় ভরালী। আজ কমলার কণ্ঠস্বর বেশ  কিছুটা তীক্ষ্ন, না হলে সাধারণভাবে কথা বললে তিনি সবগুলো কথা বুঝতে পারেন না। আর সেটাই তার মনে সান্ত্বনা দেয় যে জঘন্য অভ্যাস থাকলেও ভাগ্যক্রমে সমস্ত কথা তিনি শুনতে পান না। কিন্তু আজ কমলার প্রত্যেকটি শব্দই তার কানে গেল। কমলা বলছে –‘আজ যখন তুমি একটা পাওয়ারফুল বাল্ব লাগিয়ে দিলে বাবা আর কোনো দিন সন্ধ্যেবেলা ড্রইংরুম ছাড়বে না -একেবারে সোনায় সোহাগা হল ।এমনিতেই সোফায় বসার আরাম
 তো ছিলই-’
         ‘কিন্তু সোফা তো আরাম করে বসার জন্যই কমলা-’ ছেলের কণ্ঠস্বর বিজয় ভরালী শুনতে পেল। আরাম করে বসার জন্য ঠিকই, কিন্তু সেই আরামের ব্যবস্থা করেছি অতিথিদের জন্য,ঘরের মানুষের জন্য নয়-’ 
         ‘এটা তো বেশ নতুন কথা শোনালে কমলা। ঘরের আরাম, ঘরের স্বাচ্ছন্দ্য, ‌ঘরের  মানুষের জন্য নয়,অতিথির জন্য জন্য হে-’ 
          বিজয়ের কথায় তীব্রস্বরে বাধা দিয়ে উঠল কমলা- ঘরের মানুষ ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আরাম না করলেও চলে, ঘরের মানুষের আরামের জন্য অনেক জায়গা আছে, অন্তত বিছানা রয়েছে। আর তুমি তো অন্তত
 সেই বিছানার আরাম থেকে কখনও বঞ্চিত হওনি।একটা বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে ক্লান্ত লাগছে, ক্লান্ত লাগছে বলে তুমি তো বেশিরভাগ সময় বিছানাতেই কাটিয়ে দাও- অথচ মিস্ত্রি ঘর তৈরি করেছে, ঠিকাদার কাজ চাইছে,জিনিস জোগাড় করেছে। তোমার কাজ হল কেবল অফিস থেকে ফিরে এসে সেই কাজগুলি একবার দেখে আসা। দেখে আসা মানে উপরে উপরে চোখ বুলিয়ে আসা ।ভালো করে যদি দেখতে আজ ঠিকাদার একটা বাড়ি তৈরি করতে এতগুলি টাকার হিসেব ধরিয়ে দিতে পারত না।
 একজন ইঞ্জিনিয়ারের
 চোখে
 সাধারণ একজন ঠিকাদার ধুলো দিতে পারছে। তুমি যে কেন ইঞ্জিনিয়ার হলে আমি ভেবে পাইনা, তোমার মতো ইম্প্রাক্টিক্যাল মানুষ প্রফেসর টফেসর হলে বেশি মানাতো…







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...