শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪

দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত ।। Tirthankar Sumit

 দুটি কবিতা 

তীর্থঙ্কর সুমিত







(১)

আরও একটা দিন


মুছে যাওয়া দিনগুলো
এখন আয়নার কথা বলে
এক পা, দু পা - প্রতি পায়ে পায়ে
ইতিহাস জড়িয়ে থাকে
কথা পাল্টানো মুহূর্তে...
"তুমি" নামে একটা ছায়া
আজ অতীতের দরজায় কড়া নাড়ে
ব্যর্থ পরিহাসের কথনে

অসমাপ্ত চিঠি আমার বালিশের নিচে
চোখের জলের...

আরও একটা দিন।।


(২)

বাকি গল্প


অসময়গুলো এখন বড় খাপছাড়া
সময়ের তাগিদে লিখে রাখা যত চিঠি
এখন আমার বইয়ের টেবিলজুড়ে
নানা আছিলায় আমার কালো কালির "পেন" টা
এখন ভাঙ্গনের গল্প লেখে
নদীর কাছে দাঁড়িয়ে যে বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম
আজ ভগ্নাংশের হিসাবে অতীত বলার দাবী রেখেছে
মুহূর্তে কত কিছু বদলে যায়
ঘড়ির ব্যাটারিটাও এখন স্থগিদ

আর আমি...

এসো এক কাপ চা খেতে খেতে বাকি গল্পটা বলি।।


পাখিদের পাড়া পড়শী- ৩// ৮ পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস, Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider Para Porshi

 পাখিদের পাড়া পড়শী- ৩// ৮

পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি   

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস,  

Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider Para Porshi




তৃতীয় অধ্যায়, অষ্টম অংশ 

(৮)

সুনন্দ পাঁচ দিন গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে থেকে ফিরে এল।ডান হাত নড়াচড়া করায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। কেউ ভাত খাইয়ে দিলে তবে খেতে পারে। বাঁ হাতে খাওয়া-দাওয়া এবং অন্যান্য কাজগুলি করায় সে অসুবিধা অনুভব করে, পারে না। বাড়িতে ফিরে আসার পরে জ্যোৎস্না জ্যোতি মালা তার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখছে। সময়ে ঔষধ খাইয়ে দেওয়া ভাত বেড়ে যাওয়া কাপড় বদলে  দেবার দায়িত্ব  আলাদা আলাদা ভাবে জ্যোৎস্না জ্যোতি মালার ওপরে পড়েছে। আমি ভেবেছিলাম ঘটনাটার পরে সুনন্দ ভেঙ্গে পড়বে।কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করার পরে বুঝতে পেরেছি যে সে যথেষ্ট দৃঢ় রয়েছে।আমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় সে আমাকে একনাগাড়ে ঘটনাগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে গেল।

  আমি বললাম— একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। আমরা এখন নতুন অধ্যায় একটা আরম্ভ করার জন্য এগোতে হবে। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠ।

আগামীকাল সুনন্দের সেলাই কাটার জন্য নলবাড়ির অসামরিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তারপরে তাকে আরও দুই তিন দিন বিশ্রাম নিতে হবে। সে সম্পূর্ণ সুস্থ  হয়ে উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে।তাই কাজের দায়িত্ব নবজিৎ বৈশ্য এবং কীচকের ওপরে  পড়েছে।গরমের বন্ধ খুলতে আরও কয়েকদিন মাত্র বাকি আছে। এই সময়টুকুর মধ্যে কাজ আরম্ভ না করলে  কাজে গতি আনতে  প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সময় লাগবে। নবজিৎ মইরাদাঙ্গা গিয়ে গাছের চারার ব্যবস্থা করে রেখে এসেছে। তারা প্রথম পর্যায়ে প্রয়োজন অনুসারে পাঁচশো চারা দিতে পারবে বলে সম্মতি জানিয়েছে এবং চারা কয়টি  নিয়ে আসবে বলেছে। পরে আরও পাঁচশো চারা লাগবে। নবজিৎকে বলেছি দ্রুত চারাগুলি এনে থানে জমা করতে হবে। বিপিন ডেকা পাঁচশো সিমেন্টের বস্তার পরিবর্তে বস্তা তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা কয়েকটি নাইলনের থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। বলেছে সিমেন্টের বস্তার চেয়ে সেগুলি বেশি ভালো। প্রয়োজন অনুসারে ছোটো বড়ো করে কেটে নেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে সিমেন্টের বস্তার চেয়ে উঁচু। গরু ছাগল  ঢুকতে ঢুকতে গাছের চারা বড়ো হয়ে যাবে। সেগুলিও সংগ্রহ করতে হবে।

নবজিৎ এবং  কীচককে বলেছিলাম— সবকিছু করার আগে বাঁশগুলি এনে  মাপ জোক  করে কেটে রাখা ভালো।

  একটা ঠেলায় করে দুটি ছেলে আজ সকালবেলা দশটা বাঁশ  রেখে গেছে।  বাঁশগুলি সোজা,দেখতে পুরুষ্ঠ ।আটটার সময় দুজন কাজ করা মানুষ  এল। তারা আমার কাছে এসে বাঁশগুলি কী মাপে কাটতে হবে জিজ্ঞেস করল। 

সাড়ে তিন ফুট মাপে। আধা ফুট মাটির নিচে এবং বাকি তিন ফুট মাটির উপরে।

আমার কথা বলার ধরণ দেখে মজা পেল বোধ হয়, দুজনেই হাসতে লাগল।

আমি লক্ষ্য করলাম তারা দুজন একটা করাত দিয়ে  সাড়ে তিন ফুট করে বাঁশগুলি কাটতে শুরু করেছে। আমি তাদের এক টুকরো বাঁশ দুইফালা করে প্রতিফালা থেকে চারটি করে মোট আটটি বের করতে দেখিয়ে দিলাম। আমি দেখানো অনুসারে তারা দুজন সন্তুষ্ট হল এবং সেই অনুসারে তারা বাঁশ কাটা এবং ফালা শুরু করল। সঙ্গে আমি তাদেরকে জানালাম যে বাঁশের ডালগুলি চেঁছে মিহি করতে হবে না,কেবল সূঁচলো করে রাখলেই হবে। কাজ করতে থাকা মানুষ দুজনকে  দুই কাপ চা এবং বিস্কুট  দেওয়ায়  মানুষ দুটি আমাদের প্রতি বড়ো সন্তুষ্ট হওয়া বলে মনে হল। নবজিৎ ঘরের কাজ সামলে  আসতে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল।

— আজ মরোয়ার বাজার ছিল। বাড়ির বাজার করে এসেছি।

চা খাবার জন্য ব্যবহার করা কাগজের গ্লাস দুটো দেখে নবজিৎ দুজনকে চা দিয়েছি কিনা আমাকে জিজ্ঞেস করল ।আমি বললাম দিয়েছি। তারপর নবজিৎ কাজ করার মানুষ দুটিকে হরেনের চা দোকানে দুজনের চা এবং ভাতের বন্দোবস্ত করেছে বলে জানাল। দুজনেই সময়মতো গিয়ে খেয়ে আসলেই হল। 

—পাঁচশো গাছের চারার জন্য চারটি করে মোট দুই হাজার বাঁশের চাঙ লাগবে। তুমি তাদের হিসেব করে রাখতে বলবে। সমস্ত কাজ আগে থেকেই করে রাখলে, পরে কোনো অসুবিধা হয় না।

  নবজিৎ আমার কথায় সায় দিল।

গত দুই দিনে কাজ করা মানুষ দুটি দুই হাজার  বাঁশের ফলা কেটে সূঁচলো করে রাখল। রাতুলের সহযোগে একটা টেম্পো ভ্যানে পাঁচশো গাছের চারাও মইরাদাঙা থেকে এসে পৌঁছাল। সেই চারাগুলি আমি থানের ভাঁড়ার ঘটিতে জল ছিটিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে দিলাম। বিপিন ডেকাও নিজের দায়িত্ব সুচারু রূপে পালন করল। সমস্ত কিছু জোগাড় হয়ে যাওয়ার পরে আমরা একত্রিশ তারিখ দিন ঠিক করলাম। গাছের চারা রোপণ করার জায়গা নির্বাচিত হল থানে। থান পরিচালনা সমিতির সভাপতি সম্পাদক এবং পুরোহিত শর্মার উপস্থিতিতে কীভাবে গাছের চারা রোপণ করলে ভবিষ্যতে অসুবিধা হবে না তা আলোচনা করা হল। কাকাবাবু এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব নবজিৎ এবং কীচকের ওপরে দেওয়া হল। জেপি পঞ্চাশটি ছেলেমেয়েকে নিমন্ত্রণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করল। মাটি খোঁড়ার জন্য আজকাল এক ধরনের বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটা দেখতে অর্ধ চুঙ্গা আকৃতির। সেই যন্ত্র ব্যবহার করলে গর্ত খোঁড়ার সময় হাত দিয়ে মাটি স্পর্শ না করলেও হয় এবং কম সময়ে অধিক গর্ত খনন করা যায়। পুলক নিজের বাড়ি থেকে সেই যন্ত্র আনবে বলে কথা দিল। গিঁট দেবার জন্য তাঁর এবং তাঁর কাটার জন্য একটা প্লাস আনার কথা আমি নবজিতকে মনে করিয়ে দিলাম। সঙ্গে একটা কাঁচি।

৩১ তারিখে সকালবেলা নটার সময় প্রথম চারাটা রোপণ করবে শহীদ পত্নী অনামিকা। সেই সম্মানটুকু অনামিকার প্রাপ্য। দ্বিতীয় চারাটা রোপণ করবে সুনন্দ এবং জ্যোৎস্না। প্রকৃতি রক্ষার জন্য সুনন্দকে শারীরিক নির্যাতন স্বীকার করে নিতে হয়েছে। তথাপি সে পিছু হটেনি। সুনন্দকে আমাদের তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা এবং স্বীকৃতির চিহ্ন স্বরূপ প্রদান করা এটা সাধারণ সম্মান। তারপরে সামগ্রিকভাবে চারা রোপণ করার কার্য আরম্ভ করা হবে। চারা সমূহ রোপন করার পরে আরম্ভ হবে ঘিরে দেওয়া পর্ব। নিজের নিজের চারাটা ভবিষ্যতে দেখা শোনার দায়িত্ব যে রোপণ করবে তাকেই  নিতে হবে। প্রয়োজনে চারাটা বড়ো হলে সেই চারাটা সে রোপণ করার চিহ্ন হিসেবে নিজের খরচে ফলক লাগাতে পারবে। নিজের নামটা ক্ষোদিত করার ইচ্ছায় ছাত্রছাত্রীরাই শুধু নয় জ্যেষ্ঠরা বৃক্ষরোপণ কার্যে উৎসাহ বোধ করছে নাকি। জেপি সহৃদয়তার সঙ্গে আমাকে জানাল।

সকালবেলা সময়ের চেয়ে আগে এসে প্রকৃতি কর্মীরা হাজির হল। সুনন্দ অতি ধীরে সুস্থে পায়ে হেঁটে এসেছে। পাশে রয়েছে জ্যোৎস্না। অনামিকা কাকাবাবু এবং কাকিমাকে আমি আসতে দেখেছি। ছেলেমেয়েদের দেখেছি ওরা সেলফি উঠায় ব্যস্ত। থানটার পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। বাপুটির সহযোগে গতকাল নবজিৎ এবং পুরোহিত শর্মা সুতো ট্রেনে নির্দিষ্ট স্থানে বাঁশের টুকরো দিয়ে একটা করে খুঁটি পুঁতে রেখেছিল। পুলক গর্ত খোঁড়ার বিশেষ যন্ত্র নিয়ে ইতিমধ্যে খুঁটি পুঁতে রাখা স্থান সমূহে গর্ত খুঁড়তে শুরু করেছে। বিশেষ যন্ত্রটি তিনবার মাটিতে চালিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক একটি চারা রোপণ করার জন্য গর্ত তৈরি হয়ে যায়। পুলক খুব কম সময়ের মধ্যে গর্তগুলি একনাগাড়ে করে চলেছে। পুলকের সাহায্য করছে তার মাছ ধরার সঙ্গী রাতুল।

এখন সকাল ন'টা বেজেছে। আমি সৌম্যদাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আজকের অনুষ্ঠান বিষয়ে সকলকে অবগত করার জন্য অনুরোধ জানালাম। সৌম্যদা প্রথমে গ্রামের যে সমস্ত ব্যক্তি সামাজিক কর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে মরনোত্তর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন।শহীদ জ্যোতিষ ডেকার উদ্দেশ্যে স্যালুট জানালেন। সুনন্দের  মতো প্রকৃতি কর্মীর সাহস এবং নিষ্ঠা আমাদের প্রত্যেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে সুনন্দকে স্বীকৃতি জানালেন। সৌম্যদা কাঠ খড়ির দোকান পরিত্যাগ করা অচ্যৃতকে একজন নিষ্ঠাবান প্রকৃতি কর্মী হিসেবে অভিহিত করে বললেন তোমাদের কর্মস্পৃহাকে স্বাগত জানিয়ে আমরা প্রত্যেকেই প্রকৃতির রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর হলাম। অসমের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অরুণ্য গ্রাম হিসেবে পরিচয় দেওয়ার জন্য আমরা যত্নের কোনোরকম ত্রুটি করব না । আসুন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পালন করি । প্রথম ক্ষেত্রে কাজ গুলি রোপণ করার জন্য শহীদ জ্যোতিষের পত্নী অনামিকাকে আমরা গ্রামবাসীর তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি । তাকে সহযোগিতা করবে জ্যোতিষের পিতা-মাতা। দ্বিতীয় চারটি লাগানোর ক্ষেত্রে আহ্বান জানাচ্ছি সুনন্দ এবং জ্যোৎস্নাকে। তৃতীয় চারাটির জন্য একাধিক্রমে বর কুরিহা গ্রামের জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের তারপরে আমার প্রিয় বন্ধু যুবক যুবতীদের, সুহৃদ ছাত্র-ছাত্রীদের এবং একেবারে শেষ চারাটা এইথানের  মাননীয় পুরোহিত কৈলাস শর্মাকে রোপণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি একটি বা ততোধিক চারা রোপণ করতে পারবেন। যুবতি এবং মহিলাদের উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে এক সময় পাঁচশো চারা রোপণের কার্যসূচি আরম্ভ হয়ে গেল । নবজিৎ, কীচক, জেপি, টিংকু ,পুলক, রাতুল উপস্থিত সবার সামনে রোপণের জন্য একটা একটা করে চারা রেখে যেতে লাগল।

ঘিরে দেবার আগে রোপণ করা চারা গুলির গোড়ায় জল দিতে হবে,এ কথাটা যেন কেউ ভুলে না যায়, আমি প্রত্যেককে অনুরোধ জানালাম। কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ঘের দেওয়ার কাজটা  চেষ্টা করেও পারছেনা। পুলক কীচকরা দেখিয়ে দিচ্ছে যদিও অনভ্যাসের জন্য ওদের বারবার ভুল হচ্ছে। বাঁশ কাটার জন্য আগত কাজের মানুষ দুটিকে  নবজিৎ আজও কাজে লাগিয়েছে।এটা সে ভালো কাজ করেছে।, তারা দুজন না থাকলে ঘের দেওয়ার কাজটা এগোত না। আজকের চারা রোপণ কার্য থেকে আমার একটি অভিজ্ঞতা হল। এরপরে এভাবে চারা রোপণ করতে হলে আগে থেকে গর্ত খুঁড়ে বাঁশের কঞ্চি গুলো পুঁতে রাখতে হবে।প্রকৃতি কর্মীরা চারাটা রোপণ করবে, জল দেবে এবং অভিজ্ঞ কাজের লোক দুটি ঘেরগুলি দিয়ে যাবে।

শিক্ষক সাংবাদিক প্রদীপ ডেকা বৃক্ষরোপণের আলোকচিত্র সংগ্রহ করছে। চারা রোপণ করার পরে বিভিন্নজন চারার সঙ্গে সেলফি তুলছে। জ্যোৎস্না সুনন্দকে ধরে এনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে।সে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমি দেখতে পেয়েছি কাকাবাবু আমার দিকে আসছে।

— তাহলে তোমার প্রথম অভিযান সফলভাবে শেষ হল। এখন তুমি হয়তো আমাদের,বাড়িতে যেতে পারবে।

আমি ঈষৎ হেসে কাকাবাবুকে বললাম—কাকাবাবু আমার অভিযান আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু তা বলে আপনাদের বাড়িতে যাব না, সেরকম কোনো কথা নেই। যাব যাবই। কথা দিলাম। কাকাবাবুরা আমি বা সুনন্দ কেউ তাদের বাড়িতে একদিনের জন্য না গেলেও এক মাসের জন্য না যাওয়ার মতো আক্ষেপ করে। কখনও কাকাবাবুর জন্য দুঃখ হয় আর কখনও রাগ।তবে আমরা কাকাবাবুকে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাই না।

প্রদীপ ডেকা এগিয়ে এসে আমার করমর্দন করল। 

—আপনার প্রোগ্রাম সাকসেস। আমি ভালোভাবে একটা খবর করব। প্রত্যেকের জানা উচিত এরকম একটি ভালো খবর।

— তার জন্য আপনারা ধন্যবাদের পাত্র। খবরটা প্রকাশিত হলে প্রকৃতি কর্মীরা উৎসাহিত হবে। আগামী রবিবার আমরা পুনরায় কার্যসূচি নিয়েছি।সেখানে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না। আমাদের প্রকৃতি কর্মীরা নদীর পরিত্যক্ত জমিতে গাছের চারা রোপণ করবে। আশা করি আপনি কিছুক্ষণের জন্য হলেও দেখা দেবেন।

— নিশ্চয় আসব এই গাছ চারাগুলি শুধু কাঠের জন্য? 

সাংবাদিক হিসেবে প্রদীপ দেখা কিছু প্রশ্নের অবতারণা করলেন। আমি উত্তর দেবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম।

— না না। বিভিন্ন ফলের গাছও আছে। আম, জাম, কাঁঠাল, লটকা, পেয়ারা ইত্যাদি।

বিভিন্নজন এসে আমার এবং সৌম্যদার সঙ্গে কথা বলে গেল। তার মধ্যে কাকাবাবুর পরিবারের মুখে দেখতে পেলাম অপ্রাপ্তির ছায়া।অবশ্য কিছুদিন আমি কাকাবাবুর বাড়িতে না যাওয়াটা সত্য। সুনন্দদের বাড়িতে গিয়েছি।আমার সাজ সরঞ্জামে চার্জ দেওয়া কাজটা ওদের বাড়িতেই করেছি।আমি অনুমান করছি সেসবের কোনো একটি জায়গায় কাকাবাবুর মনে বিষন্নতা লুকিয়ে রয়েছে। কাকাবাবুর পরিবার সে কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে গেল। বৃদ্ধ মানুষ ছোটো ছেলে মেয়েদের মতো।অকারণে অভিমান করে। কাকাবাবুর অভিমান ভাঙ্গার জন্য আজ সন্ধেবেলা সৌম্যদাকে নিয়ে একবার তাদের বাড়িতে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানের শেষে উপস্থিত প্রত্যেককে নিয়ে আমরা পুনরায় একবার বসার কথা ভাবলাম। আজকেই পরবর্তী বৈঠকের দিন ঠিকঠাক করে নেওয়া ভালো। আমরা ভাবছি প্রতিটি কার্যসূচি শেষ হওয়ার দিনেই আমরা পরবর্তী কার্য সুচির ক্রমনিকা স্থির করব। এটি একটা পরম্পরা হিসেবে গড়ে নেওয়া উচিত। নাহলে আজ কাল করে পিছিয়ে যাবার অবকাশ থাকে।

পুকুরে হাত পা ধুয়ে এসে নবজিতরা থানের ত্রিপল এনে মাটিতে পেতে বসে পড়ল।। আবহাওয়া ধীরে ধীরে মেঘলা হয়ে উঠছে।পূব থেকে পশ্চিমে ফুরফুরে এক ঝাঁক বাতাস বইছে। গরমের প্রকোপ কমেছে যদিও এক ঝাঁক বৃষ্টি হলে ভালো হত। চারা গুলি উজ্জীবিত হয়ে ওঠার সুযোগ পেতো।। নবজিতরা পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করবে বলে জানতে পেরে জ্যোৎস্না জ্যোতিমালার সঙ্গে অনামিকা থেকে গেল। সুনন্দ চেয়ারটিতে বসে রয়েছে।জ্যোৎস্না সঙ্গে আনা জলের  বোতল থেকে  জল এবং ঔষধ তাকে খাইয়ে দিচ্ছে।

—নবজিৎ আগামী রোববার আমরা পুনরায় বৃক্ষরোপণ করতে চাইছি। চারা জোগাড় হয়ে যাবে কি?

আমি আরম্ভ করলাম। না হলে দেরি করে থাকলে দেরি হতেই থাকবে। সুনন্দদের বেশি সময় আটকে রাখতে চাইছি না।

— হবে। তারা আমাকে আরও পাঁচশো চারা  দিতে পারব বলে বলে রেখেছে।

—তাহলে আমরা এবার নদীর তীরে চারা রোপণ করার ব্যবস্থা করব। তুমি আমাদের প্রকৃতি কর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলে দিও। তুমি আজ মনের মতো একটা কাজ করেছ। ভালো লাগল।

— কী উদয়দা, নবজিৎ বৈশ্য জিজ্ঞেস করল।

—তুমি যে উপস্থিত পরিবেশ কর্মীদের স্বাক্ষর এবং ফোন নাম্বার সমূহ সংগ্রহ করে রেখেছ সেইসব আমাদের কয়েকটি দিকে সাহায্য করবে। আর মনে রাখবে একটা সময় হয়তো এই খাতাটাই ইতিহাস হবে।যাইহোক কাজ করা মানুষ দুজনকে তুমি বাঁশের কাজটুকু করে রাখতে বল। বস্তা তৈরি করা নাইলনের থান আমাদের আর ও লাগবে।।প্রত্যেকবারই বিপিন ডেকাকে বলা উচিত হবে না।সেই সামগ্রীগুলি কোথায় কত দামে পাওয়া যায় তাকে জিজ্ঞেস করে কিছু বেশি করে কিনে এনে রাখবে।। বেশি করে কিনে এনে না রাখলে হঠাৎ প্রয়োজন হলে পাবে না।তখন খারাপ লাগবে।

—আমরা এইবার নদীর তীরে চারা রোপণ করার চেয়ে মানুষের বাড়িতে রোপণ আরম্ভ করব নাকি?

নবজিৎ বৈশ্য নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করল। 

—আমি ভাবছি নদীর তীরে চারা রোপণ করলে প্রত্যেকের চোখ পড়বে এবং আমাদের কার্যসূচি আরম্ভ করছি বলে গ্রামবাসীরা জানতে পারবে। সম্ভবত তখন প্রতিটি ঘরের মানুষের বাগানে বস্তিতে চারা রোপন করতে আমাদের সুবিধা হবে।

  নবজিৎ  আমার মতামতকে সমর্থন জানাল।তাই আগামী রবিবার আমরা নদীর তীরে চারা রোপণ করার কার্যসূচি গ্রহণ করব। আমি ভাবছি সেদিনই আমরা একটা সংগঠনের জন্ম দেব এবং সংগঠনটি করার জন্য বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমি আমার মনের ভাব প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে সুনন্দ আমাকে সমর্থন জানাল।

—আমিও কথাটা ভাবছিলাম।।কোনো সংগঠনের পতাকার নিচে হলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারব। আমাদের কাজগুলি সুচারু রূপে এগিয়ে যাবে।। আমরা আমাদের পরিচয়ও লাভ করব সংগঠনের মাধ্যমে। প্রকৃতি কর্মীরা নিজেদের পরিচিত করে তোলার সুযোগ পাবে।

— তাহলে আমাদের শিবির গুলিতে উপস্থিত থাকা প্রতিটি প্রকৃতি কর্মীকে সেদিন উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানাবে। বয়োজ্যেষ্ঠদেরও জানিয়ে দেবে ।সঙ্গে তোমরা ভেবে আসবে সংগঠনের নাম কী রাখা যেতে পারে।

— অর্থযুক্ত হতে হবে কিন্তু আমাদের সংগঠনের নাম।

— আপনি ঠিকই বলেছেন। সংগঠনের নাম অর্থ ভাবাপন্ন হতে হবে। সেই জন্য তোমরা যে কোনো নাম চট করে না দেওয়াই ভালো।

  আমি অনামিকাকে সমর্থন করলে অনামিকার মুখ হাস্যমুখর হয়ে পড়ল। 

ধীরে ধীরে আমাদের কাজগুলি এগিয়ে চলেছে। 

—নবজিৎ তুমি যে কংক্রিটের খুঁটি, রিং আদি তৈরি করা মানুষটির কথা বলেছিলে, জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেয়েছ কি—চাঙের নিচের সেই খুঁটির খরচ কত পড়বে।

—না উদয়দা। আমি আজকে যাব তার কাছে।

—যাবে। কারণ সেগুলি ঢালাই করার পরে প্রায় এক মাস সময় রাখতে হবে। কংক্রিটের খুঁটিগুলি আসার পরে আমরা উপরের বীমগুলি ঢালাই করতে পারব। সেগুলি তৈরি হতে প্রায় আরও একমাস। তারপর আমাদের বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু হবে। তাই আমাদের ঝুপড়ি গুলি তৈরি হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে না পারলে, কাজগুলি পিছিয়ে যেতে থাকবে। 

—খারাপ সময়ে আমার অঘটনটা ঘটল। নবজিৎদার ওপর বেশি চাপ পড়ে গেছে।

সুনন্দ আক্ষেপ করে বলল।

—উদয়দা আমার ওপরে তো কিছু কাজের দায়িত্ব দিতে পারেন।

পুলক সুনন্দকে  সমর্থন জানাল।

নবজিতকে সবকিছু করতে হবে সেরকম কিছু নেই। তোমরা দায়িত্ব নিতে চাইলেই হল। তখন নবকে আরও অন্য অনেক দায়িত্ব দিতে পারা যাবে। মনে কর, আগামী তিন মাস আমাদের জন্য যুদ্ধের সময়। সামনে যা কাজ হবে, ভাগাভাগি না করে আমরা সবাই করে যাব। 

—উদয়দা আমার ভাগে কী দায়িত্ব পড়েছে?

অনামিকা জিজ্ঞেস করল। 

—আপনি আগামী রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মাঝখানে মাত্র কয়েকটা দিন। 

নিজের কৌতূহল চেপে রেখে অনামিকাকে ইতস্তত করতে দেখে আমি পুনরায় বললাম—আপনি কোনো গভীর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

—উদয়দা আপনি আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করলে খুব খারাপ লাগে। কথাটা বলব বলব বলেও অনেকদিন বলতে পারিনি। আপনি কি আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করতে পারেন না? অনামিকা বলে ডাকতে পারেন না? 

সবার সামনে অনামিকার এই ধরনের অনুরোধ শুনে আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম ।

—সম্ভবত পারব না। তবুও ভেবে দেখি। 

সাধারণভাবে উপেক্ষা করার মতো আমি একটু কায়দা করে বললাম যাতে সে মনে আঘাত না পায়। 

—আপনারা প্রত্যেকে রবিবারের জন্য প্রস্তুত হন।

  রবিবারের নির্দিষ্ট দিনটিতে বিভিন্ন বয়সের একশোরও অধিক প্রকৃতি কর্মী জমায়েত হল। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে গাছের চারা রোপণ করার পরে আমরা সংগঠনের নাম এবং সংগঠনের একটি তদর্থ কমিটি গঠন করার জন্য আলোচনায় বসব। সেই অনুসারে আমরা গাছের চারা রোপণ করতে শুরু করলাম। পুলক এবং রাতুলের তত্ত্বাবধানে গতকাল এই কাজ করা চারটি করে বাশের কঞ্চি গর্ত গুলির চারপাশে পুঁতে রেখেছে। একশোর মতো চারা রোপণ করার পরে একজন মানুষকে নদীর তীর ধরে দৌড়াদৌড়ি করে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে পেলাম। লোকটা আমাদের দিকে খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। আমি পুনরায় কোনো অঘটনের গন্ধ পেলাম।

আমাদের কাছে পৌঁছে লোকটি গর্জন করে উঠল।

—আমার মাটিতে আপনারা একটিও চারা লাগাবেন না। আমি বুঝতে পারছি আপনারা বুদ্ধি করে মাটি দখল করতে চাইছেন।

আমি মানুষটাকে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। কিন্তু তিনি দ্বিগুণ ক্রোধে জ্বলে উঠলেন।

—কিসের জন্য ক্ষান্ত হব? কেন শান্ত হব? আমার মাটি তোমরা দখল করবে আর আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকব। আমাকে কি শাড়ি পরা ভেবেছ নাকি?

—দাদা, একটু মুখ সামলে কথা বলবেন। সমস্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েরা আছে। আপনি বয়স্ক হয়ে কেন এই ধরনের ব্যবহার করছেন। 

আমাদের মধ্যে থাকা জ্যেষ্ঠ প্রকৃতি কর্মী মানিক কলিতা লোকটিকে প্রতি আক্রমণ করল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে মানুষটা একটু শান্ত হয়ে পড়েছে বলে মনে হল।

—আমি সেসব জানিনা। আমার কথা হল আমার জমিতে গাছ রোপণ করা চলবে না। 

—ঠিক আছে। আপনার জমি কোনটা দেখিয়ে দিন।

এখন মানুষটা ঠিক বেকায়দায় পড়ল। নদীর মাঝখানের জমি। কোথাও একটা সীমার খুঁটি নেই।

—আমি জানিনা। আপনারা মন্ডল ডেকে আনুন এবং আমার জমিট বের করে দিন।

—শর্মা বাবু।আপনার এখানে জমি নেই। যদি থেকে থাকে মন্ডল এনে আপনিই বের করে নিন।

বিপিন ডেকা এভাবে বলার সঙ্গে সঙ্গে মানুষটা আহত জন্তুর মতো ছটফট করতে লাগলেন। তিনি পুনরায় চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন। 

—ডেকা। মুখ সামলে কথা বলবেন। পূর্বপুরুষের আমল থেকে এখানে আমাদের জমি থাকার কথা আপনি জানেন। এখন নাই বলে উড়িয়ে দিলেই হবে। 

–শর্মা বাবু ।আপনার ব্যবহার আপনার পরিচয়। ভদ্রলোকের মতো কথাবার্তা বললে সমাধান সূত্র বের করা যায়। আপনি যে এত চিৎকার চেঁচামেচি করছেন, মনে হচ্ছে আপনি যেন মারপিট করার জন্য এসেছেন।

—প্রয়োজন হলে মারপিট করতে হবে। 

মানুষটার কথায় কেউ কোনো গুরুত্ব না দিয়ে চারা রোপণ করার কাজ শুরু করল। মানুষটা বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল। আমি ভাবলাম মানুষটা যে মুড নিয়ে চলে গেল তিনি হয়তো এবার সঙ্গে বেশি লোকজন নিয়ে পুনরায় ফিরে আসবেন। বিপিন ডেকা মানুষটাকে ভালোভাবেই জানে।  

— তিনি আগে ধুবরির মহামায়া থানের পূজারী ছিলেন। এখন ছেলেটি থাকে বলে তিনি গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। ছেলেটির সঙ্গে আলোচনা করা ভালো হবে। অত্যন্ত শান্ত অমায়িক ছেলে। সামাজিক কাজের সঙ্গেও জড়িত।

আমি যেরকম ভেবেছিলাম তাই হল। তবে একদল নয়, সঙ্গে একটি ছেলেকে নিয়ে শর্মা পুনরায় ফিরে এসেছে। বিপিন ডেকা  দূর থেকেই ছেলেটিকে চিনতে পারল।

— ওই যে ছেলেটি। ওকে এনে লোকটি নিজের হাতের কুঠার পায়ে মেরেছে। ছেলেটি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাপকে উড়িয়ে দেবে দেখবে। বলবে—আমি জনগণের সঙ্গে আছি।

আর অবশেষে সেটাই হল। বাপ ছেলেকে সমস্ত কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা হল। আপনার মাটি আপনারই থাকবে। আমরা কেবল গাছের চারা বুনতে চাইছি। গাছের ফলও আপনার ,গাছও আপনার। আমাদের উদ্দেশ্য কেবল গ্রামটাকে সবুজ করে তোলা। আমরা এমনকি আপনার বাড়ির পাশের খালি জায়গাতেও, বাগানে বস্তিতেও গাছের চারা রোপণ করে যাব। আপনার সম্পদ হবে। আপনিই দেখাশোনা করবেন। অরণ্য গ্রাম এবং প্রকৃতি পর্যটনের ওপরে কিছু বলায় সে আমাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারল।

— এমনিতেও পতিত মাটি।চাষ-বাস ও হয় না। গাছ রোপণ করলে ভালোই হবে।

ছেলেটি খুশি মনে বাপের সঙ্গে চলে গেল। আমাদের দলটির প্রকৃতি কর্মীরা নিজের নিজের ভাগের কাজ সমূহ শেষ করে ফেলল। পাঁচশো গাছের চারা রোপণ করা হয়ে গেল। কাজ করা মানুষ দুটি ঘের দেওয়ার কাজ করছে। দুই একজন তখনও নদী থেকে জল এনে গাছের চারা গুলির গোড়ায় দিচ্ছে। আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। বাপুটি একটা কেটলিতে লাল চা এবং হাতে ঝুলিয়ে আনা ব্যাগটায় বিস্কুট এবং কাগজের গ্লাস আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। ব্যস্ততা সহকারে প্রত্যেকেই নিজের নিজের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলেছে।

গাছের ছায়ায় পেতে রাখা ত্রিপলটিতে আমরা সবাই বসে পড়লাম।

— তোমাদের মধ্যে কে কে আমাদের সংগঠনের নাম করণের ব্যাপারে ভেবে এসেছ?

কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আমরা আরম্ভ করলাম। দুজন তখনও মহা আয়েশে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে যাচ্ছিল।

— ন্যাচারস বোন মানে প্রকৃতির হাড়।

একজন বলল। অন্য একজন বলল ন্যাচারস ব্যাকবোন। আমি বললাম নামটা অসমিয়া ভাষায় হলে কী রকম হয়?

— উদয়দা, ভালো হয়।

অচ্যুত বলল। সৌম্যদা প্রকৃতি কর্মীদের মনোভাব লক্ষ্য করে চলেছে।

— তাহলে তুমি বল কী ভাবছ।

— প্রাকৃতিক বৈভব।

—তুমি তো দেখছি তোমার দোকানের নামটাই বলে দিলে।

—সেটা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই নামটা—

— আমি বললাম— আমি একটা নাম বলছি।

— বল, বল।

কয়েকজন আমাকে আমি ভাবা নামটা বলতে অনুরোধ করল।

— দহিকতরা।

— এতো দেখছি একটি পাখির নাম। তার তো বিশেষ কোনো অর্থ নেই।

নবজিৎ বৈশ্য নিজের মন্তব্য জানাল।

— উদয়, একটা অর্থবহ নাম রাখ।

সৌম্যদা আমাকে মনে করিয়ে দিল।

সৌম্যদা, অর্থ আছে। দহিকতরা মানে দশের ভেতরে কাজ ত্যাগের সঙ্গে করা। 

আমি এভাবে বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকেই প্রচন্ড জোরে হাততালি দিল। আমি পুনরায় বলতে লাগলাম দহি কতরা পাখির কণ্ঠস্বর উল্লেখযোগ্য। সুললিত সংগীত ছাড়াও পাখিটি ভিন্ন কণ্ঠস্বরে অন্য প্রাণীকে বিপদের সংকেত জানায়। সেই সংকেতের দ্বারা মানুষও বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি জানতে পারে। ছোট্ট পাখিটি দশের হিতের জন্যও কাজ করে।

অবশেষে প্রত্যেকেই আমাকেই সমর্থন জানাল এবং আমাদের সংগঠনের নামটা দহিকতরা  হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল।তারপরে আমরা প্রত্যেকেই একত্রিত হয়ে তদর্থ কমিটিটা গড়ে ফেললাম। কাকাবাবু, সৌম্যদা,বিপিন ডেকা এবং আমি উপদেষ্টা।নবজিৎ বৈশ্যকে সভাপতি ,সুনন্দ এবং অনামিকাকে সম্পাদক হিসেবে রাখা হল। অনামিকা আপত্তি করেছিল, কিন্তু কোনোভাবেই সেই আপত্তি টিকল না। কীচক এবং জেপি সহকারী সম্পাদক ।পুলক রাতুলরা  বিভিন্ন পদে বহাল রইল। মোট একুশ জনের কমিটি। আমাদের শিবির গুলিতে অংশগ্রহণ করা সমস্ত সদস্যই হল সাধারণ সদস্য।। আজ উপস্থিত থাকার সদস্যের সংখ্যা হল একশো দুই জন। আমাদের প্রত্যেককেই নির্দিষ্ট পরিমাণের ধন দান হিসেবে দিয়ে সভ্য পদ নিতে হবে। সমস্ত হিসেবের খতিয়ান  সুচারুরূপে রাখার জন্য কার্যপন্থা এবং  দৈহিক কতরার সংবিধানটি কোনো একজন জানাশোনা ব্যক্তির দ্বারা লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করার জন্য কমিটিকে অনুরোধ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হল। অন্য একটি প্রস্তাব অনুসারে অনন্য গ্রাম এবং প্রকৃতি পর্যটনের জন্য দুটি কমিটির গঠন করা হবে ।কমিটির দুটি স্বতন্ত্র হবে না। তারা মূল কমিটির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে এবং কার্য পালনের ক্ষেত্রে তৎপরতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। মূল কার্যনির্বাহকের সদস্যদের থেকে সেই কমিটি দুটি গঠন করা হবে। সঙ্গে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হল যে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য কার্যনির্বাহক কমিটি মিলিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। সেই জন্য কার্যনির্বাহক সমিতির মূল সদস্যদের নিয়ে একটি নীতি নির্ধারক কমিটি গ্রহণ করা হোক।  সেখানে উপদেষ্টারা, সভাপতি সম্পাদক এবং সহকারী সম্পাদক কয়েকজন  এবং প্রতিনিধি হিসেবে একজন কার্যনির্বাহক সদস্য কমিটিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।উপস্থিত প্রত্যেকেই সমর্থনে নীতি নির্ধারক কমিটিটিকে অনুমোদন জানানো হল। সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আগামী রবিবার আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাছের চারা রোপণ করব। প্রতিটি সদস্যই তাতে অংশগ্রহণ করবে এবং সজাগতা বৃদ্ধির জন্য তৎপরতা প্রদর্শন করবে। গাছের চারা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সমস্ত সদস্যই যৎপরোনাস্তি গুরুত্ব প্রদান করবে— উপদেষ্টারা সেই আহ্বান জানিয়ে আজকের প্রকৃতির শিবির তাতেই সম্পন্ন হওয়া বলে ঘোষণা করলেন।

  সৌম্যদা সকলের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করে বললেন —আমি আগামীকাল আপনাদের বিদায় জানাব। পুনরায় তিন মাস পরে আপনাদের  সাক্ষাৎ পাওয়ার সৌভাগ্য ঘটবে। আশা করব এই সময়ের ভেতরে আপনারা গাছের চারা রোপণের কাজ প্রায় শেষ করবেন এবং পর্যটক নিবাস সমূহগুলির নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হবে। তারপরে আরম্ভ করব নতুন পরিকল্পনা।

বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪

কবিতা ।। সেরা ধন ।। অঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

কবিতা

সেরা ধন

অঞ্জনা ভট্টাচার্য্য



জলে জল  ঢেলে

নীচে নেমে যাই 

হা - ভাতেদের   ভাগাড়ে

পাতি পাতি করে ধন খুঁজি 

ঝোলা ভরে যায় 

ফিরে আসি শব্দ মাঝির নৌকোতে।


আহ্লাদে মুখের বলিরেখা উধাও 

সবচেয়ে সেরা ধন পে‌য়েছি

কত কত জীবন - কবিতা লেখা হবে ।


স্নেহ ,মায়া,মমতা,ভালোবাসা

আন্তরিকতার কলস ভরে ফিরেছি ।

রোদ্দুর পত্রিকার মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান,সংস্কৃতি সংবাদ, Kolkata

রোদ্দুর পত্রিকার মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান



৩০ মে কলকাতার শিয়ালদহের কৃষ্ণচন্দ্র মেমোরিয়াল সভাঘরে অনুষ্ঠিত হল রোদ্দুর পত্রিকার মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান ।অনুষ্ঠানে পত্রিকা উদ্বোধন করেন‌ প্রখ্যাত সাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় । অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন বর্ষীয়ান বিশিষ্ট কবি  কমল দে সিকদার । প্রধান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে কবি সমালোচক প্রাবন্ধিক নীলাঞ্জন কুমার ও ঔপন্যাসিক তাপস সাহা । ছিমছাম এই সুন্দর অনুষ্ঠানে রোদ্দুর পত্রিকার দীর্ঘদিনের কান্ডারী সম্পাদক মানস মুখোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন উপরোক্ত বিশিষ্ট জনেরা ।

      অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মুকুল চক্রবর্তী । কবিতাপাঠে অংশ নেন নন্দিতা সেন বন্দ্যোপাধ্যায়,  কেতকী বসু,  শিবশংকর ঘোষ, নীলিমা সরকার,  অমিত কাশ্যপ,  চিরঞ্জীব হালদার, সব্যসাচী মল্লিক,  শৈলেন্দ্রনাথ কাবাসী ,বিজয়লক্ষ্মী চৌধুরী, তপতী চ্যাটার্জী, অদীপ ঘোষ, মানস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সুচারু সঞ্চালনা করেন তপতী চ্যাটার্জী।

কফিহাউসে‌র চারপাশে পত্রিকার সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি সংবাদ, Kolkata

কফিহাউসে‌র চারপাশে পত্রিকার সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান



গত ৩০ মে কলকাতার নির্মল ভবনে অনুষ্ঠিত হল। ' কফিহাউসের চারপাশে ' পত্রিকার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল জঙ্গীপুর মানব শিক্ষা রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ১৬ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কবি দেবাঞ্জন চক্রবর্তী ।প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সাহিত্যিক সুদীপ ঘোষ  ও বাংলাদেশের উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইয়াসমিন আরা লেখা ।

        এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্বর্ধিত হলেন ফ্রান্সের সেখ আমীরুল আব্রাহাম, বাঙলাদেশের ড.অনাথবন্ধু মল্লিক 

( সন্দীপক) , সবুজকুমার পাল দীপক , শ্যামল কুমার চৌধুরী,  লুৎফুন্নেসা ( লিন্ডা ) আমিন ও পশ্চিমবঙ্গের দেবব্রত দত্ত ।

           অনুষ্ঠানে ' কফিহাউসে‌র চারপাশে ' পত্রিকার বুদ্ধপূর্ণিমা সংখ্যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় । কবিতা পাঠে অংশ নেন দেবাঞ্জন চক্রবর্তী,  নীলাঞ্জন কুমার,  দেবাশিস লাহা , মৃণালকান্তি সাহা  , বিধানেন্দু পুররকাইত প্রমুখ বিশিষ্ট কবি । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পত্রিকার সহ সম্পাদক স্বপ্নাঞ্জন গোস্বামী।

বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪

ব্যর্থতা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, Arindam Chattopadhyay

কবিতা 

ব্যর্থতা

অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 



জীবন জুড়ে শুনে গেলাম

শুধু ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা

সেই বাল্যকালে গৃহশিক্ষক 

কতোবার শিখিয়েছিল 

লাঠি আর বাঁদরের ওঠা নামার অঙ্ক

আর ততবার একই ভুল করে গেছি

কতোদিন ঠিক মতন ট্রান্সলেশন করতে পারিনি

বলে বাবার কাছে শুনেছি যে 

আমার দ্বারা কিছু হবে না

যখন ত্রিকোণমিতি শিখতে শুরু করলাম

কোনদিন আমি সাইন সিক্সটির 

মানও ঠিক মনে করতে পারি নি

বার বার ভুল হয়ে যেত....

আর শুনতে হত যে আমার দ্বারা 

বিজ্ঞান পড়া হবে না

অনার্স ক্লাসে যখন এলাম

তখন ঠিকমতন ক্লাসিফিকেশন 

মনে না রাখতে পাড়ার জন্য

শিক্ষক মহাশয়ের কাছে

শুনেছিলাম যে অনার্স হবে না

বার বার ব্যর্থ হয়ে গেছি

পরবর্তীতে অক্ষর আর শব্দ সাজানো

 সাদা কাগজের ওপর শিখে লেখা শুরু করলাম

তখনও কতোজন প্রথম কয়েকটা লাইন

পড়ার পর লেখাটা সরিয়ে রাখত

কপালের ভাঁজ ফেলে ফেলে

মুখটা ভারি হয়ে যেত

কেমন যেন নিরুৎসাহ হয়ে

শূন্য আকাশ দেখতে থাকতাম


বাস্তবিকই বার বার ব্যর্থই হয়ে গেছি




পাখিদের পাড়া পড়শী- ৩// ৭ পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস, Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider Para Porshi

 পাখিদের পাড়া পড়শী- ৩// ৭

পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি   

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস,  

Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider Para Porshi




তৃতীয় অধ্যায়, সপ্তম অংশ ।। পাখিদের পাড়া- পড়শী

......

তৃতীয় অধ্যায়

(সাত)


    

সুনন্দকে বিদায় দিয়ে সৌম্যদা স্নান করতে  গেল ।আমি রাতের আহার প্রস্তুত করার জন্য স্টোভটার ওপরে কেটলিটা  বসিয়ে দিয়েছি।জল গরম হলে মেগীর ওপরে গরম জল ঢেলে রাতের আহার প্রস্তুত করব ।

তখনই কারও বিকট চিৎকার শুনতে পেলাম।

সৌম্যদা ভেতরে দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন— শুনেছ?’

— শুনেছি সৌম্যদা।রাতের কোনো মাতাল হবে হয়তো। আমি মাঝেমধ্যে এই ধরনের চিৎকার শুনতে পাই। বাঁধের ওপর দিয়ে যাবার সময় চেঁচামেচি করে যায়। কখনও বিকট স্বরে চিৎকার করে।

—তার মানে তুমি এই ধরনের রাতের চিৎকারের সঙ্গে অভ্যস্ত। আমি আরও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।

কিছুক্ষণ পরে হাতে টর্চ নিয়ে কোনো একটি ছেলেকে আমাদের দিকে দৌড়ে আসতে দেখতে পেলাম।

 আমি তখনই জানলা দিয়ে লাফিয়ে সৌম্যদাকে বললাম আমি কোনো বিপদের সতর্কবাণী দেখতে পাচ্ছি সৌম্যদা।

  সৌম্যদা সাবধান হলেন।

 দৌড়ে আসা ছেলেটি গ্রামেরই পুলেন। সে হাঁফাতে হাঁফাতে আসছে।

  দাদা দাদা দাদা— পুলেন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই —দাদা, সুনন্দদাকে  কেউ বাঁধের ওপরে ছুরি মেরেছে ।

সৌম্যদা এক মুহূর্ত দেরি না করে বলল— চলো। চলো।

  আমিও এক মুহূর্ত সময় দেরি না করে স্টোভটা নিভিয়ে দিয়ে ল্যাম্পটার সলতেটা একেবারে নামিয়ে দিয়ে মিটমিট করে ল্যাম্পটা জ্বলতে থাকার মতো অবস্থায় রেখে দিলাম।লেপটপটা এবং ক্যামেরার সরঞ্জাম গুলি পিঠে নেওয়া ব্যাগটায় ভরে দরজায় তালা মেরে থাকার সময় শুনতে পেলাম অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন এবং বাঁধের ওপর দিয়ে গড়িয়ে আসা আলোর রশ্মি।

  টর্চের আলো ফেলে আমাদের সামনে  পুলেন প্রায় দৌড়ে যাওয়ার মতো চলেছে। সৌম্যদা এবং আমি দ্রুত অনুসরণ করছি।

—গ্রামের মানুষ জানতে পেরেছে কি?

  আমি পুলেনকে জিজ্ঞেস করলাম।

— পুলেনদার চিৎকার শুনে গ্রামের মানুষ ভর্তি হয়ে গেছে। আমাকে আপনাদের খবর দিতে পাঠিয়েছে।।

  আমরা গিয়ে বাঁধের ওপর পৌঁছাতে পৌঁছাতে সুনন্দকে মৃত্যুঞ্জয় গাড়িতে উঠিয়ে নিয়েছে। আমরা তাকে দেখার সুযোগ পেলাম না। বাঁধের ওপরে কুড়ি পঁচিশটা বাইক। যুবক ছেলে এবং বয়স্ক মানুষের ভিড়।কয়েকজন মহিলাকেও উদ্বিগ্ন হয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখতে পাচ্ছি। আমি পুলেনের হাতে আমার ল্যাপটপটা এবং ক্যামেরাটা সুনন্দদের বাড়িতে রেখে দিতে পাঠালাম।

  যুবক ছেলেরা এম্বুলেন্সের পেছন পেছন বাইক চালিয়ে দিল।। সৌ্ম্যদা এবং আমাকেও দুটি ছেলে তাদের বাইকের পেছনে বসিয়ে নিল।। আমরা চিকিৎসালয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সুনন্দকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। সে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিল না। সমস্ত শরীর রক্তে মাখামাখি। ডান কাঁধ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মুখটা অক্ষত রয়েছে বলে মনে হল। অ্যাম্বুলেন্স সেবার লোক চিকিৎসালয়ে থাকা আরক্ষী কেন্দ্রে খবর দিল। আরক্ষী এসে গেল। আরক্ষীর উপস্থিতিতে চিকিৎসা বাহিনীর দল অপারেশন থিয়েটারে সুনন্দের চিকিৎসা আরম্ভ করল। ভেতরে কী চলছে আমরা বাইরে থেকে বুঝতে পারছি না।

  কিছুক্ষণ পরে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা একজন চিকিৎসক কর্মী বললেন— আপনাদের রোগীকে গুয়াহাটিতে নিয়ে যেতে হবে। অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করুন।

  খুব কম সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হয়ে গেল। হাতে স্যালাইনের একটা পাইপ সংযুক্ত করে সুনন্দকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হল। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় সৌম্যদা এবং আমি কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। সুনন্দকে অত্যন্ত ভীতিগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে। তার মুখ দিয়ে অস্ফুট গোঙানি বেরোচ্ছে। সেই মুহূর্তে সৌম্যদা এবং আমি খুব অসহায় অনুভব করতে লাগলাম।

সুনন্দকে গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে নিয়ে যাবার পরে আমরা অস্ত্রোপচার কক্ষের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তিনি আমাদের কাছে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রইলেন। নবজিৎ বৈশ্য তার পরিচিত একজন চিকিৎসক কর্মীকে সুনন্দের অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন আঘাত খুব একটা গুরুতর  নয়। কিন্তু কোনো রোগীর সঙ্গে এত সংখ্যক মানুষ এলে চিকিৎসক হতে পারা অঘটন এড়ানোর জন্য রোগীকে গুয়াহাটিতে রেফার করে। তিনি এই কথাও জানালেন যে সুনন্দকে ছুরি দিয়ে নয় ভাঙ্গা বোতল দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। মাংসপেশীর ভেতরে দুই এক  টুকরো কাঁচ ঢুকে থাকার আশঙ্কা অস্বীকার করা যায় না। 

সৌম্য দা বললেন— চলো থানায় যাই। একটা এজাহার লেখাতে হবে।

  গ্রামের কয়েকজন ছেলের সঙ্গে আমরা থানায় এলাম। এসেই সোজাসুজি কর্তব্যরত অফিসারের কাছে গেলাম। থানার আরক্ষী আমাদের চারজনকে ছাড়া বাদবাকি সবাইকে বাইরে বের করে দিলেন।সৌম্যদা কর্তব্যরত অফিসারের সামনে বসে এজাহার লিখলেন  এবং তাকে প্রদান করলেন।। সৌম্যদা স্পষ্টভাবে সুনন্দের উপরে করা আক্রমণ নিবারণ বাহিনীর কার্য বলে এজাহারে উল্লেখ করলেন। উপস্থিত প্রত্যেককেই এজাহারটিতে সই করলেন।

অফিসারটি এজাহারটা পড়লেন এবং একটা পেপার ওয়েট চাপা দিয়ে টেবিলের উপরে রেখে দিলেন।।

  আশা করি দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। দোষীকে—

 অফিসারটি যেন এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

— আপনি কীভাবে দোষীর কথা বলছেন। দোষীর কথা ন্যায়ালয় বলবে। আমাকে শেখাতে এসেছেন নাকি?

কর্তব্যরত অফিসারের অস্বাভাবিক ব্যবহারে সৌম্যদা হতভম্ব হয়ে পড়লেন।

   আপনাদের আরক্ষী অধীক্ষক কে?

—কে আপনি আমাকে আরক্ষী অধীক্ষকের ভয় দেখাচ্ছেন?এজাহার দিতে এসেছেন, এজাহার দেওয়া হয়ে গেছে।এখন আসুন, না হলে আপনাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে রাখব।

  এই মানুষটার সঙ্গে কথা না বলাই ভালো হবে ভেবে, সৌম্যদা কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন— নলবাড়ি জেলার আরক্ষী অধীক্ষকের ফোন নাম্বারটা দাও তো।

বিপরীত দিক থেকে কী বলল আমি শুনতে পেলাম না।কেবল কিছুক্ষণ পরে সৌম্যদার মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকল বলে মনে হল। সৌম্যদা পুনরায়  কারও সঙ্গে ফোনের সংযোগ ঘটাল। আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের সামনে বসে থাকা আরক্ষী অফিসারটি বেপরোয়া ভাবে বসে আছে ।

--আমি সৌম্য।পরিবেশ কর্মী।আপনার মনে আছে হয়তো প্রশাসনিক মহাবিদ্যালয়ে আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল।

সৌম্যদা হয়ে যাওয়া ঘটনাক্রম এবং আরক্ষী থানায় এসে পাওয়া ব্যবহারের কথা অফিসারের  কাছে জানালেন।

  বিপরীত দিক থেকে হয়তো সৌম্যদাকে আশ্বাস দিয়ে বলা হল— ঠিক আছে একটু অপেক্ষা করুন। আমি এখনই থানায় আসছি।

 সৌম্যদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন— আরক্ষী অধীক্ষক আসছেন। চল আমরা বাইরে তার জন্য অপেক্ষা করি।

কর্তব্যরত আরক্ষী অফিসারের ততক্ষণে কাণ্ডকারখানা দেখে হুঁশ ফিরে এসেছে। এই সাধারণ কথাটায় রাত নটার সময় আরক্ষী অধীক্ষক নিজে থানায় আসতে চলেছেন।নিশ্চয় মানুষটা বেশ বড়ো কেউ, মিডিয়ারও হতে পারে।। ভ্রাম্যমানের সুদক্ষ অভিনেতার মতো তখনই আরক্ষী অফিসার কথার সুর পাল্টে ফেললেন।

 বাইরে কেন অপেক্ষা করবেন? এখানে বসুন। স্যার এলে তার ঘরে যাবেন।…

 অফিসারটি একজন সিপাহীকে ডেকে বললেন— স্যারের রুমটা খুলে পরিষ্কার করে রাখ।

  আরক্ষী অধীক্ষক আসবে বলে জানতে পারার পরে আরক্ষী থানার ভেতরে সমগ্র পরিবেশটাই রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে গেল।

সৌম্যদার অনুরোধে আরক্ষী অধীক্ষক বিষয়টা গম্ভীর ভাবে গ্রহণ করলেন। তিনি তখনই বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে সৌম্যদা কে বললেন— আজকাল কিছু বিষয় খুব গম্ভীর হয়ে পড়েছে। তার ভেতরে আপনাদের পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়টাও অন্তর্ভুক্ত।

— গ্রীন ট্রাইবিউনেলের জন্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে  বলতে পারি।

  পাশের চেয়ারে বসে থাকা ভারপ্রাপ্ত অফিসারটি সমস্ত কথাগুলি মন দিয়ে শুনতে থাকলেন।

  আমরা আরক্ষী অধীক্ষকের আশ্বাস পেয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এলাম।। সুনন্দকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটা গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছে। খবরটা সঙ্গে যাওয়া  পুলক এবং রাতুল নবজিৎ বৈশ্যকে ফোনে জানিয়েছে।। চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে সুনন্দের চিকিৎসার জন্য অসুবিধা হওয়ার কোনো কথাই নেই গুয়াহাটিতে থাকা গ্রামের ছেলেদের কয়েকজনকে সমস্ত কথা ইতিমধ্যে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।। ওরা টাকা পয়সা নিয়ে সুনুন্দ পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে হাজির। ওরা আগে থেকে যা কিছু করা দরকার সব করে রেখেছে।

আমরা ফিরে এসে সুনন্দের বাড়ি পৌঁছালাম।সুনন্দের বাড়িতে তখনও গ্রামের কয়েকজন তরুণ এবং জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। তারা ঘটনাটার বিষয়ে চর্বিত চর্বণ করে আলোচনা করছিল। আমরা গিয়ে সুনন্দের স্ত্রী জ্যোৎস্নাকে ডেকে পাঠালাম। বেচারীর মুখটা চোখের জলে উপচে রয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তার মুখটা  শুকিয়ে গেছে। উপস্থিত জনগণের কাছ থেকে জানতে পারলাম গুয়াহাটিতে প্রেরণ করার জন্য জ্যোৎস্না জ্যোতি মালারা আঘাত অনেক গুরুত্বর বলে ভেবেছে। প্রকৃত কথাটা নবজিৎ বলায় তারা কিছুটা আশ্বস্ত হল। তখনই চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে থাকা পুলক ফোন করে জানাল যে সুনন্দের অস্ত্রোপচার  এক্সরে আদি সমস্ত কিছুই হয়ে গেছে। আর কাচের টুকরো ছাড়া বাইরের আঘাত খুব বেশি গুরুতর  নয়। কেবল কাঁধে বারোটা সেলাই পড়েছে ।চিকিৎসক নাকি চিকিৎসায় বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি। পুলক জ্যোৎস্না এবং জ্যোতিমালাকে ফোন করল।সুনন্দের মা জ্যোতিমালাকে এক কাপ করে লাল চা করে দিতে বলল। আমরা লাগবে না বলায় ওরা সম্মত হল না। গ্রামের মেয়ে জ্যোতিমালার সমবয়সী হিরন তখনই সবাইকে এক কাপ করে লাল চা এগিয়ে দিল।অতি প্রয়োজনীয় সময়ে  চায়ের কাপ তৃপ্তি দিল। অনেকক্ষণ ধরে আমাদের  পেটে কিছুই পড়েনি। গ্রামের ছেলে কয়েকজনের সঙ্গে সকালবেলা গিয়ে আমরা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় সুনন্দকে দেখা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সুনন্দের মা এবং জ্যোৎস্নাদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে এলাম। রাত তখন এগারোটা বেজেছে।

  ঘটনাটা সৌম্যদা এবং আমাকে সবচেয়ে বেশি বিব্রত করে তুলল। ঘটনাক্রম খারাপের দিকে যাচ্ছিল বলে মনে হচ্ছিল। অশান্তি অসূয়া চলতে থাকলে কাজ করে ভালো লাগবে না।ছেলেমেয়েরা ভীতগ্রস্ত হয়ে পড়বে। পর্যটক নিবাসে ফিরে এসে আমরাও কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে বাধ্য হলাম।

—মদ খাওয়া ছেলে এত রাত পর্যন্ত থাকার কথা নয়। তার জন্যই ওরা আজ সুনন্দকে আক্রমণ করতে পেরেছে।গ্রামের সমস্ত মানুষ বেরিয়ে এসেছে,ওদেরকে সেটাও বুঝতে হবে দেখছি।

 সৌম্যদা আমাকে  আশ্বস্ত করার জন্য বলল।

 আমি মেগিটা সিদ্ধ করতে করতে সৌম্যদাকে বললাম —সৌম্যদা ওদের রিমোট কন্ট্রোল অন্য জায়গায় আছে।সেখান থেকে যা হুকুম আসে, ওরা মদ মাংসের বিনিময়ে তাই পালন করে।

রাতে সৌম্যদা এবং আমার ভালো ঘুম হল না। একেবারে ভোরের দিকে ঘুম থেকে উঠে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়া ছেলে কয়েকজনের সঙ্গে আমরা দুজনে  গুয়াহাটি পৌঁছালাম। সুনন্দের মুখে যন্ত্রণা  এবং ভীতি গ্রস্ততার ছাপ। সারা রাত তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যথা কমা এবং প্রতিষেধক ঔষধ  দেবার পরে তার যন্ত্রণার কিছুটা উপশম হয়েছে।

আমাদের কণ্ঠস্বর শুনে সুনন্দ চোখ মেলে তাকাল।

—কী হয়েছে সুনন্দ? ব্যথা করছে?

সুনন্দকে পরিবেশের সঙ্গে সহজ করার জন্য আমি আন্তরিকতার সঙ্গে বললাম।

—না উদয় দা কিছু না। এসবই সাধারণ কথা বলে ভাবছি। সমাজের কাজ করতে গেলে কোনো ব্যক্তি বিশেষের অনিষ্ট হলে আক্রমণ তো করবেই। ওরা হাতে ভাঙ্গা বোতল নিয়ে এসেছিল। আমার মুখ লক্ষ্য করে ছুরি মারার মতো বোতল গুলি ছুঁড়ে মেরেছিল। মুখটা রক্ষা করতে গিয়ে কাঁধে লাগল। আমি পা পিছলে বাঁধের ওপর থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়লাম এবং সজোরে  চিৎকার করতে লাগলাম।বাঁধের ওপর থেকে গড়িয়ে পড়ার জন্য ভালোই হয়েছে। ওরা দ্বিতীয়বার আক্রমণ করার সুযোগ পেল না। আঘাত পাওয়ার পরে আমার এরকম মনে হচ্ছিল যেন কাঁধটা খসে পড়েছে। তারপরে আমি আর কিছু বলতে পারি না। আরটিআই করার জন্য নিবারণই  কাজটা করেছে বলে মনে হয়।

— মনে হয় না, ওই করেছে।আমরা তার নামে থানায় এজাহার দিয়ে এসেছি। না হলে সে আরও অঘটন ঘটাতে পারে।নবজিৎ সুনন্দাকে বলল।

 আমি জ্যোৎস্না জ্যোতিমালা এবং মাকে ফোন করার জন্য তার হাতে ফোনটা তুলে দিলাম। সুনন্দ ওদের সঙ্গে কথা বলল। বাড়ির মানুষের সঙ্গে কথা বলার পরে সুনন্দের মনটা হালকা হতে দেখা গেল।

—-জ্যোৎস্নার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এই সময়ে সে দুঃখ পেল বলে খারাপ লাগছে।

 আক্ষেপের সঙ্গে বলল। 

—ওহো ভালো খবর দেখছি। কনগ্রাচুলেশন।

  সুনন্দ ডানহাতটা  এগিয়ে দিতে পারছে না। বাঁ হাতটায় স্যালাইন দেওয়া আছে যদিও সে ধীরে ধীরে বা হাতটা এগিয়ে দিল। আমি এবং সৌম্যদা তার হাতটা খামচে ধরলাম। জ্যোৎস্না এইজন্যই এবার প্রকৃতি শিবিরে উপস্থিত থাকতে পারেনি?আমি তার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে ভেবেছিলাম মেয়েদের মাসিকের সমস্যার জন্যই সে হয়তো উপস্থিত থাকতে পারেনি। আমি সুনন্দকে না বলে নিজেকে বলার মতো বললাম।

— এন্টিবায়োটিকের কোর্সটা শেষ হলে তোমাকে বাড়িতে যেতে দেবে মনে হয়।

সৌম্যদা এবং আমি সারাদিন সুনন্দের সঙ্গে রইলাম।সঙ্গে যাওয়া ছেলেদের কারও কারও গুয়াহাটিতে দুই একটি কাজ আছে।এই ছেলেরা তাদের কাজগুলি শেষ করে যেতে চায়। আমরা বললাম যার যা কাজ আছে সব শেষ করে আয়।, যাবার সময় কেবল আমাদের নিয়ে যাবি। সন্ধ্যে হলেও অসুবিধাধা নেই। দিনে সুনন্দকে আমি নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিলাম। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সে আমার হাতটা খাামচে ধরেছিল ।

--প্রকৃতি কর্মীরা এত প্রাকৃতিক এবং মানবতাবাদী উদয়দা।

  নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সুনন্দের দুই চোখ সজল হয়ে উঠল। আমি সুনন্দের দুই চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।। কিছু বললাম না।। সে যে বুঝতে পেরেছে সেটাই তার কাছে সত্য হোক।

  সন্ধের সময় আমরা ফিরে এলাম। ফেরার সময় আমি সুনন্দের হাতে তিন হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে এলাম। সে নিতে চাইছিল না।

--‘ পয়সা আছে আমার সঙ্গে দাদা।

--- ঠিক আছে। রেখে দাও হঠাৎ প্রয়োজন হতে পারে।

 সুনন্দদের বাড়ি হয়ে আমরা ফিরে এসে পর্যটন নিবাসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অন্ধকার হয়ে গেল। সারাদিনে ঘটনাক্রমের কোনো পরিবর্তনের খবর আমরা পেলাম না। আশা করেছিলাম আরক্ষীর লোক এসে সুনন্দের ঘটনাটির কোনো তদন্ত করবে। গুয়াহাটি থেকে এসে সুনন্দের বাড়িতে খবর নিতে গেলে তারা বলল আরক্ষীর লোক আসেনি। কেবল গ্রামের বিভিন্ন লোক এসে খবরাখবর করে গেছে। আমরা দুজনেই ভালো আছি কিনা গ্রামের মানুষ সুনন্দের পরিবারকে জিজ্ঞেস করেছে। আমাদেরকেও কিছুটা দেখে শুনে সাবধানে চলার জন্য তারা অনুরোধ করে গেছে। সুনন্দের মা সুনন্দ দিনের বেলা ভাত খেয়েছ কিনা আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছি বলায়  আবেগ রুদ্ধ কন্ঠে মা বলল--  তুমি কোনো জন্মে আমাদের আত্মীয় ছিলে নিশ্চয়।  আচ্ছা তোমরা ভাত খেয়েছ কি?

  -- খেয়েছি।

  অত্যন্ত বেপরোয়া ভাবে আমি উত্তর দিলাম। তবে মায়ের স্নেহের নজরের কাছে আমি ধরা পড়ে গেলাম ।

---না খাওনি। আমি খারাপ পাব বলে বলছ!

-- খাইনি। আমরা দুজনেই সারাদিন চিকিৎসালয়ে ছিলাম। বাইরে বেরিয়ে খাবার সময় এবং সুযোগ দুটোই পেলাম না।

-- হিরণ, কিরণ, এই জ্যোতি।

 দুজনেই দৌড়াদৌড়ি করে মায়ের কাছে চলে এল। 

--তাড়াতাড়ি করে দুজনের জন্য অল্প ভাত বসিয়ে দে।

 সৌম্যদা বললেন--  না না এই সন্ধ্যা বেলা আমরা কোনোমতেই ভাত খাব না। 

আমি বললাম   অসময়ে হয়েছে। এই অবেলায় ভাত খাওয়া ঠিক হবে না।।

  মা আমাদের মাঝখান থেকে উঠে কিছুক্ষণের জন্য ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে জ্যোৎস্না দুজনের জন্যই  চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি দুই বাটি সান্দহ   এবং দুই গ্লাস দুধ নিয়ে এল। সান্দহ   খাবার ইচ্ছা না থাকলেও সুনন্দদের মায়ের স্নেহের আবদারকে এড়াতে পারলাম না।সান্দহ দুই বাটি উদরস্থ করার পরে আমাদের রাতের আহারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। আমরা বসে থাকার মধ্যেই কাকাবাবু এলেন সুনন্দের খবর নেবার জন্য। আমরা গুয়াহাটিতে সুনন্দের খবর নিতে যাবার খবর কাকাবাবু বৌমা অনামিকার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। অনামিকা দিনের বেলা সুনন্দের স্ত্রী জ্যোৎস্নার খবর নিতে এসেছিল। কাকাবাবুর সঙ্গে দেখা হওয়ায় ঘটনার সম্পর্কে বিভিন্ন কথা আলোচনা হল। কাকাবাবু বললেন    জনগণ তোমাদের সঙ্গে আছে।  তোমরা কোনো চিন্তা কর না  কিন্তু সাবধানে থাকবে নিবারণ নরখাদক। সে মানুষ শিকারি। তার জিভে নর মাংসের স্বাদ লেগে আছে। কথাটা মনে রেখো।

  ---কাজ করতে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হতেই হবে সেটা আমাদের জানা। কিন্তু আমাদের জন্য সুনন্দকে চিকিৎসালয়ে থাকতে হবে বলে আমরা ভাবতেই পারিনি।।

   বিনীতভাবে আমি বললাম। কাকাবাবুর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলল। কাকাবাবুর জমিতে কবে নাগাদ ঘর তৈরির কাজ আরম্ভ করব জিজ্ঞেস করলেন। তার জমিতে পর্যটক নিবাস দ্রুত গড়ে ওঠাটা তিনি আন্তরিকভাবে চাইছেন।

  --বুড়ো মানুষ হঠাৎ মরে যাব । দেখতে পারবো না মনে হয়।

 --বাহ কাকাবাবু আপনি আমাদের আবেগিকভাবে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছেন আমরা আগে এই সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে নি। কাঠ চোরাই কলটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিবারণ নামের ছেলেটি আমাদের শান্তিতে কাজ করতে দেবে না। সে আমাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে।। আজ সুনন্দকে, কাল আমাকে, পরশু আপনাকে    ব্যাপারটাকে এভাবে এগোতে দেওয়া যায় না।।

ঠিক অন্ধকার নেমে আসতেই কাকাবাবু এবং সুনন্দদের পরিবারের কাছ থেকে আমরা দুজনেই বিদায় নিলাম।। গুয়াহাটিতে যাবার পথে রেখে যাওয়া ল্যাপটপটা এবং ক্যামেরার সাজসরঞ্জাম সমূহ বিষয়ে জ্যোতিমালাকে মনে করিয়ে দিলাম।

---আমি বললাম আজ থাক। রাতে বিশেষ কাজ করব না। চার্জ শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল এসে চার্জ দিয়ে নিয়ে যাব।

 সুনন্দের বাড়ি থেকে ফিরে আসার সময় গতকাল সুনন্দকে আক্রমণ করা স্থানে উপস্থিত হয়ে টর্চের আলোতে দেখতে পেলাম সেই জায়গায় কয়েকটি খালি মদের বোতল।। তার মধ্যে কয়েকটি ভাঙ্গা।। আরক্ষী  এসে তদন্ত করে এই সমস্ত নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আত্মসমর্পণকারী বিদ্রোহী বলে আরক্ষী ঘাটাতে চাইল না নাকি। সৌম্যদাকে কথাটা বলায় সৌম্যদা বললেন ধৈর্য ধর।। আর দুদিন দেখব। তারপরে আরক্ষী অধীক্ষককে গিয়ে জিজ্ঞেস করব জনগণ আইন হাতে তুলে নিলে আপনি কী করবেন? সরকারের পয়সায় জনগণককে কারাগারের ভাত খাওয়াবেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনাকে সবাই যাতে জানতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আপনার জন্য সেটাই হবে হয়তো উচিত সম্মান।

 বাঁধ থেকে নেমে আমরা সোজাসুজি পর্যটক নিবাসের দিকে এগিয়ে গেলাম।। সাধারণত আমি এই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করি না। আজ পরিবর্তন করার প্রয়োজন অনুভব করলাম ।

পর্যটন নিবাসে পৌঁছানোর পরে আমার কেমন যেন একটা শারীরিক অস্বস্তি হল। কোনো দিক থেকে ভেসে আসা বিপদের অপরিচিত গন্ধ নাকে এসে লাগল।। আমি সৌম্যদাকে বললাম-- সৌম্যদা আজ আমরা রাতে এখানে থাকব না নাকি?

 কোথায় থাকবে?

  --আমার সঙ্গে দুটো তাঁবু আছে। অরণ্যের মধ্যে থাকব নাকি?

--রাতে কেউ আসবে বলে ভেবেছ?  অরণ্যের মধ্যে ওরা আমাদের পাবে না নাকি?

 --- সৌম্যদা অরণ্যের মধ্যে ওরা আমাদের খুঁজতে যাবে না। মদ খেয়ে সেই সমস্ত জায়গায় যেতে ওরা ভয় করবে। মোটের উপর জায়গা পরিবর্তন করাটা আজকের জন্য ভালো হবে বলে আমার মন বলছে। 

সৌম্যদা  আমার কথায় সহমত প্রকাশ করলেন। অন্ধকারের মাঝে  তাঁবুটা খাটানোর জন্য প্রয়োজন হওয়া কয়েক পদ সামগ্রী নিয়ে আমরা দুজনে চুপি চুপি পর্যটক নিবাস ছেড়ে এলাম। এমনকি যাবার সময় হাতে থাকা টর্চটাও ব্যবহার করলাম না। আমরা যেতে যেতে জ্যোতিষের সমাধির কাছে অরণ্য অঞ্চলে পৌঁছে গেলাম। সেখানে আমরা এমন একটি জায়গায় তাঁবু টানালাম যাতে আমাদের দূর থেকে কেউ দেখতে না পায় অথচ আমরা অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাই। তাঁবুটা টানাতে আমরা ন্যূনতম আলো ব্যবহার করলাম। তাঁবুটা টানার পরে না দিলেও হত যদিও তার উপরে কিছু গাছের ডাল ভেঙে চাপিয়ে দিলাম। তার সঙ্গে দুটি একটি লতা ও বিছিয়ে দিলাম। এই জায়গা থেকে মানুষ আসা-যাওয়া করা রাস্তাটা, আর নদীর পাড়ের দণ্ডিটা— দুটোই দূরে। সাবধানতা অবলম্বন করে আমরা দুজনেই ধীরে ধীরে কথা বলতে লাগলাম। বিভিন্ন কথা। সন্ধ্যাবেলা আবহাওয়া একটু মেঘলা ছিল। এখন আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় চারপাশ চন্দ্রালোকে আলোকিত হয়ে উঠেছে। তাঁবুর ফুটো দিয়ে নদীটা এবং রাস্তাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। রাতের নদীটা দেখার জন্য আকুল হয়েছিলাম বলে মনে হচ্ছে। সেই জন্যই হয়তো জোনাকি পোকারা রাশি রাশি আলো ছিটিয়ে চলেছে। আকণ্ঠ জ্যোৎস্না পান করে নদীটা হয়ে উঠেছে একটি জ্যোৎস্নার নদী।

রাত বারোটার সময় আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।

আমার যখন ঘুম ভাঙল পাশেই কোথাও নড়াচড়ার শব্দ পেলাম। আমি সৌম্যদার দিকে তাকালাম। মানুষটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ধীরে ধীরে শব্দটা কাছাকাছি এগিয়ে এল। আমি তাঁবুর ফুটো দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। বাইরে রাত প্রভাত হতে খুব বেশি দেরি নেই। তাঁবু থেকে একটু দূরে একঝাঁক শিয়াল। ওরা ইঁদুরের গর্ত শুঁকে বেড়াচ্ছে বোধহয়। অথবা আমাদের গন্ধ পেয়ে ভয়ে ভয়ে অনুসন্ধানের জন্য এগিয়ে এসে থাকতে পারে। প্রকৃতির সমস্ত প্রাণীই অনুসন্ধিৎসু। দূরের কোনো মসজিদে ভোরের আজান দিচ্ছে। আমি তাঁবুর মূল চেইনটা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসতে গেলাম। সামনে একটা মানুষকে দেখে শিয়ালের ঝাঁকটা দৌড়ে পালাল। প্রস্রাব করে এসে আমি আবার তাঁবুর বিছানায় শুয়ে পড়লাম। সৌম্যদা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে আছে। সূর্য উঠার পরেও আমি তাঁবুর ভেতরেই গড়াতে থাকলাম । বাইরে বেরোলে কেউ দেখে ফেলার আশঙ্কা। আমরা যে এখানে আছি সে কথা কাউকে জানাতে চাইছি না। সৌম্যদা জেগে ওঠা পর্যন্ত এই সময়টুকুতে বোতলের জলই হল আমার সারথি। আমি সময় কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে এক ঢোক এক ঢোক করে জল পান করতে লাগলাম। এটা আমার পুরোনো অভ্যাস।

সৌম্যদা যখন জেগে উঠল তখন সকাল সাতটা বাজে। ঘুম ভেঙ্গেই তিনি ধড়মড় করে উঠে বসলেন।

— কটা বাজে?

— সাতটা।

কী বলছ হে। জীবনে এত বেলা পর্যন্ত কখন ও ঘুমোইনি।

— আজ ঘুমিয়েছেন। রেকর্ড হল।

—চল। চল।উঠ।

আমরা দুজনে ধরাধরি করে তাঁবুটা খুলে কষে বেঁধে নিলাম।

অরণ্যের মধ্যেই আমরা দুজনে নিত্যকর্মও সম্পাদন করলাম। অরণ্যের মধ্যে নিত্যকর্ম সম্পাদন করার জন্য পরিবেশকর্মীরা গর্ত খুঁড়ে নেয়। ব্যবহার করার পরে মাটি দিয়ে সেই গর্তটা পূরণ করে পুঁতে ফেলে। আমার তাবুর সঙ্গে গর্ত খোঁড়া ডালকাটা ইত্যাদি বিভিন্ন সরঞ্জামের জন্য একটা অতিরিক্ত ব্যাগ আছে। সঙ্গে আছে প্রাথমিক চিকিৎসায় সাহায্যকারী অন্য একটি ব্যাগ। তাঁবুটা এবং প্রয়োজনীয় সাজ সরঞ্জাম আমার পিঠে নিয়ে আমরা নদীর দিকে এগিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য স্নান করে নেওয়া। অনেকদিন নদীতে স্নান করিনি। নদীর জল এখন ও ঘোলা হয়েই রয়েছে। তবুও প্রতিদিনের মতো মাথাটা ভালোভাবে ভিজিয়ে শরীরটাকে কোনোমতে ধুয়ে নিলাম। সৌম্যদা পুকুরের জলে স্নান করার স্থির  করলেন। তিনি নদীর তীরে কাপড় ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা একটা পাথরের উপর বসে অনেক দূরের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

হঠাৎ সৌম্যদা বলে উঠলেন— বার্ন আউল। লক্ষ্মীপেঁচা।

নদীর ওপার থেকে একটা লক্ষ্মী পেঁচাকে উড়ে আসতে দেখলেন সৌম্যদা। একটা কাক পেঁচাটাকে আসার পথে বিরক্ত করছে। পেঁচাটা উড়ন্ত অবস্থায় কাকটাকে প্রতি আক্রমণ করছে। অরণ্যের ভেতরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত সৌম্যদা পেঁচাটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখলেন।

এবার সৌম্যদার চোখে পড়ল গ্রেট কর্মোরেন্ট পাখি একটা। অসমিয়াতে পাখিটির  নাম দৈকলা।

— দেখেছ?

আমি সৌম্যদা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া পাখিটার দিকে তাকালাম। প্রায়ই দেখা পাখি। পাখিটা আমাদের নজর থেকে দূরে যাওয়ার জন্য কোথাও উড়ে চলে গেল।

সৌম্যদা এবং আমি নদীর তীর ধরে হেঁটে পর্যটক নিবাসের দিকে এগিয়ে গেলাম। অনেক সময় পার হয়ে গেছে। হাত ঘড়িতে তখন সাড়ে নয়টা। দূর থেকেই দেখতে পেলাম থানের সামনে অনেক মানুষের ভিড়। আমার মনটা দমে গেল। এই সময়ে এত মানুষ কখনও আমি থানে আসতে দেখিনি। সৌম্যদাকে বললাম— আর ও কিছু অঘটন ঘটেছে।

আমরা দ্রুত এসে মানুষের ভিড়ের কাছে পৌঁছে গেলাম।

-- আপনারা গতরাতে এখানে ছিলেন না নাকি?

— না। আমি মানুষটাকে বিনয়ের সঙ্গে বললাম।

— আমরা আপনাদের দুজনকে না দেখে খুব চিন্তায় পড়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম আপনাদের  দুজনকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেছে।

— কেন। কিসের জন্য?

দেখা অথচ নামে চিনতে না পারা মানুষটাকে আমি বললাম।

মানুষটা পর্যটক নিবাসের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল— যান। দেখে আসুন।

আমি ঘরের ভেতরে এসে ভিমরি খেলাম। পুরো ঘরটা মানুষের বিষ্ঠা এবং মূত্রে পরিপূর্ণ। মেঝেতে আছড়ে ফেলা ভাঙ্গা বোতলের টুকরো এবং আমার অবশিষ্ট সাজসরঞ্জাম ছিন্নভিন্ন। স্টোভটা মেঝেতে আছড়ে ফেলায় ভেঙ্গেচুরে বিকৃত হয়ে গেছে। স্টোভটাতে কেরোসিন কম ছিল। সেটা মেঝেতে ছড়িয়ে গিয়ে শুকিয়ে যাওয়ায় দাগ হয়ে গেছে। বিছানাটা উল্টে ফেলা হয়েছে। বিছানার চাদরটা বিষ্ঠা এবং প্রস্রাবের মধ্যে পড়ে রয়েছে। মোটের উপর অমানুষিক উপদ্রব। উপস্থিত জনগণ ভেবেছিল আমাদের দুজনকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ঘরটাকে লন্ডভন্ড করে রেখে গেছে।

— গতরাতে আমরা দুজনেই ওদের লক্ষ্য হব বলে আমার কেন জানি মনে হয়েছিল। সেই জন্য রাতটা বনের মধ্যেই কাটালাম। আর শেষ পর্যন্ত আমরা যা ভেবেছিলাম তাই সত্য হল। গতরাতে ওরা আমাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে এসেছিল।

উপস্থিত জনগণের মধ্যে বিভিন্ন কথা চলতে থাকল। কেউ বলল— ওদের এত সাহস মন্দিরের সম্পত্তির ওপরে হাত দিয়েছে। কেউ বলছেন— এই দুজন আমাদের গ্রামের অতিথি। অতিথিকেই যদি রক্ষণাবেক্ষণ দিতে না পারি আমরা তাহলে কিসের গৃহস্থ। মাঝখানে আবার কেউ বলল— এইগুলো চুপ করে সহ্য করার কথা নয়, এর উচিত বিচার হওয়া উচিত। রাতের বেলায় যদি দুজনকে মেরে রেখে যেত। আমাদের মাঝখানের কেউ কি আজ আর মুখ দেখাতে পারত।

দূর থেকে পুরোহিত কৈলাস শর্মা মাথাটা নেড়ে নেড়ে আসছে। মানুষটার মুখটা একেবারে গম্ভীর। রাস্তায় কেউ খবর দেওয়ার পর থেকে তিনি তাড়াহুড়ো করে সাইকেল চালিয়ে চলে এসেছেন। সাইকেলটা ঘরের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে তিনি সোজাসুজি পর্যটক নিবাসের রুমের কাছে পৌঁছে গেলেন।

—ইস। ইস। মানুষের বিষ্ঠা এবং মূত্রের গন্ধ দাঁতে লাগায় পুরোহিত মশাই নাক মুখ কুঁচকে নিলেন।

— থানায় গিয়ে কেউ কেস দিয়ে আসা উচিত।

পুরোহিত শর্মার কাছে এসে বাপুটি  বলল। নাক টিপে ধরা পুরোহিত শর্মা বারান্দা থেকে নেমে এলেন।

— আপনাকে তো আবার স্নান করতে হবে?

এবার পুরোহিত শর্মা স্থির থাকতে পারলেন না।

— আমার সামনে থেকে দূর হ। কী সব মাথামুণ্ড বলছিস।

—ভালো কথা বললে পন্ডিত শনি হয়ে দাঁড়ায়।

—যা বলছি। 

বাপুটির কথা শুনেই নাকি অন্য কারও মনে কথাটা উদয় হওয়ায় জনগণ থান পরিচালনা সমিতি সম্পাদক এবং একজন সদস্যকে থানায় এজাহার দেবার জন্য পাঠিয়ে দিল। তারা থানায় যাওয়ার বিপরীতে বণিক সংস্থার সভাপতি বিপিন ডেকাকে নিয়ে জনগণ একটা জনসভা আয়োজন করার মনস্থ করলেন। কেবল তারা দুজনে থানা থেকে ফিরে আসার পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করবে। আরক্ষী যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে জনগণকেই করতে হবে। একটার পরে আরেকটা ঘটনা বেড়েই চলেছে। এদিকে থানে করা উপদ্রপের ঘটনা মানুষের কান থেকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে থানে মানুষের ভিড় বাড়তে লাগল। থানের ঘটনার জন্য, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন সহকারী পরিদর্শক, কয়েকজন আরক্ষী এবং সিআরপি বাহিনী আধ ঘন্টার ভেতরে থানে এসে উপস্থিত হল। থানে লোকে লোকারণ্য। আরক্ষী এসে ঘরটা পরীক্ষা করল। যে প্রথম ঘরটা দেখেছিল তার সাক্ষ্য গ্রহণ করল। আমাকে এবং সৌম্যদাকেও দু একটি কথা জিজ্ঞেস করল। পুরোহিত শর্মা এবং বণিক সংস্থার বিপিন ডেকাকেও দুই চারটি কথা জিজ্ঞেস করে নিয়মমাফিক লিখে নিল। আরক্ষী বিহিত  ব্যবস্থা নেবে বলে আরক্ষী বাহিনী চলে গেল। 

আরক্ষী যাবার পরে বিপিন ডেকার পৌরোহিত্যে সভা আরম্ভ হল। প্রত্যেকেই সুনন্দকে আক্রমণ এবং আমাদের দুজনকে আক্রমণ করতে আসা ঘটনাকে ধিক্কার জানাল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কী করা উচিত তার উপরে বিভিন্ন জনে বক্তব্য রাখলেন। একজন বক্তা বললেন—এরা এখানে যে ধরনের কাজ করতে এসেছে সেই সব বন্ধ করলেই সমস্যার শেষ। 

তখন সবার মাঝখান থেকে একজন বলল—নিবারণ গাছ কেটে সমস্ত তছনছ করে দিলে সমস্যার শেষ হবে? এরা গাছ লাগিয়ে আমাদের গ্রামটিকে সবুজ করতে এসছে আর সে কারখানা বসিয়ে সমস্ত ধ্বংস করতে চাইছে। কে ভালো কাজ করছে জনগণ ভেবেচিন্তে দেখুন। গায়ের জোরে সব কিছু করার দিন এখনও আছে বলে জনগণ ভাবে নাকি? সেই দিন পার হয়ে গেছে। বক্তব্য রাখা মানুষটি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে বলে মনে হল।

সভা চলার সময় কেউ খবর দিল যে আরক্ষী এবং বন বিভাগের লোক এসে কাঠ চেরাই কলটা বাজেয়াপ্ত করেছে। কারখানা খুলে সাজ সরঞ্জাম গুলি ট্রাকে ওঠাতে শুরু করেছে। 

কোথাকার সভা কোথায় গেল। কেউ বুঝতেই পারল না। প্রত্যেকেই তাড়াহুড়ো করে বাঁধের নির্দিষ্ট জায়গাটার দিকে এগিয়ে গেল। সৌম্যদা এবং আমি জনগণকে বারবার সতর্ক করে বলে দিলাম–আপনারা শুধু দেখতে থাকবেন আমাদের কাতর অনুরোধ আপনারা কোনো কথায় আইন হাতে তুলে নেবেন না।জনগণ গিয়ে দেখল কথাটা সত্যি। 

নিবারণ তার বুলেটটিতে বসে দুই হাত জড়িয়ে অত্যন্ত বেপরোয়া ভঙ্গিমায় বসে আছে। মাঝেমধ্যে সে বন বিভাগের এবং আরক্ষীর উদ্দেশ্যে বলে চলেছে—আপনারা একটা নেবেন আমি দুটো বসাব।

বন বিভাগ এবং আরক্ষীর লোকেরা কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। নিবারণকে কোনোরকম পাত্তা দিচ্ছে না।

তারা নিবারণকে গুরুত্ব দিতে না দেখে সে জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল—গতরাতে কুকুর দুটোকে পেলাম না। পেলে  বালুতে পুঁতে রাখতাম।

নিবারণের উত্তেজক কথাবার্তা শুনে জনগণের ধৈর্যের বাঁধ খসে পড়ল। বন বিভাগ এবং আরক্ষীর লোক কাঠ চেরাই কলটা ট্রাকে ভরিয়ে নিয়ে গেল। 

এইবার নিবারণ ক্রোধের বশে বন বিভাগের লোক এবং আরক্ষীর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে পুনরায় অহংকার করে বলতে লাগল–পুলিশ আমার (অশ্লীল) করবে। ফরেস্টের মানুষ আমার ঘন্টা করবে। আগামীকাল আরও একটি নতুন বসাব। আর কুকুর দুটো, কোথায় যাবে ওরা। আজ না পেলেও কাল পাব। বালিতে পুঁতে রাখব(অশ্লীল)।

জনগণ আর সহ্য করতে পারল না। 

—ওটাকে ধর। 

জনগণের মাঝখান থেকে কেউ একজন চিৎকার করল। হুড়মুড় করে বাঁধের ওপর থেকে নেমে আসা মানুষের দলটা নিবারনের দিকে দৌড়ে গেল। নিবারণ এক দৌড়ে নদীর তীরে পৌঁছে গেল। সে পালাতে যেতেই জনগণ থমকে দাঁড়াল। দলবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা জনগণকে উদ্দেশ্য করে নিবারণ পুনরায় বলতে লাগল—তোদের মধ্যে কারা কারা কুকুর দুটোর সঙ্গে আছিস আমি জানি। আমি কাউকে ছাড়ব না। এই বালিতে—নদীর বালির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে সে বলল—এই বালিতে অনেককে পুঁতে রেখেছি, এইবার তোদের কয়েকজনের পালা। জনগণ সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। প্রত্যেকেই হুড়মুড় করে তার দিকে ছুটে গেল। নিবারণ পুনরায় দৌড়াতে শুরু করল। সে কাচিনে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছেলে। জনগণ কোথায় তাকে ধরতে পারবে। জনগণ তার পেছনে তাড়া করে যাবার সময় কয়েকজন তার বুলেটটিতে আগুন লাগিয়ে দিল। দপ দপ করে জ্বলে উঠা আগুনে তার সুন্দর বাহনটা ভস্মীভূত  হয়ে গেল। তারপরে তার কারখানায় মজুদ করে রাখা কাঠগুলোতে অগ্নিসংযোগ  করল। আগুনের লেলিহান শিখা জায়গাটাকে ঘিরে ধরল। 

আমি, সৌম্যদা, পুরোহিত শর্মা এবং বাপুটি থান থেকে দেখতে পেলাম আগুনের প্রচন্ড লেলিহান শিখা।

—ঠিক করেছি, ঠিক করেছি। আগেও জ্বালিয়েছে, এখনো জ্বালাচ্ছে। প্রত্যেককে বালুতে পুঁতে রাখার ধমক দেয় সে, আজ হয়তো ওকেই পুঁতে রাখতাম।

এই গ্রামের মানুষ একেবারে মারকুটে। আজ তার চারা শুদ্ধ উপড়ে ফেলেছে। সে আর গ্রামে ঢুকতে পারবে না। 

পুরোহিত শর্মা গম্ভীর কন্ঠে বলল। 

কাঠ চেরাই  কলটার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে জনগণ ফিরে আসা পর্যন্ত আমি এবং সৌম্যদা মিলেমিশে ঘরটা পরিষ্কার করতে শুরু করলাম। পুরোহিত শর্মা নাক টিপে ধরে দূর থেকে আমাদের কাজ দেখতে লাগল। আমাদের দুজনের কাজ দেখে বাপুটি ছটফট করতে লাগল।

—কী মানুষ হে আপনারা। এত নোংরাতেও হাত দিতে পারেন। আমি ভেবেছিলাম জমাদারকে খবর দিতে হবে। 

রুমের মধ্যে বিষ্ঠা সমূহের ওপরে বালি ছিটিয়ে সেগুলি কোদাল দিয়ে তুলে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখলাম। তারপরে জল দিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট নোংরাটাকেও সরিয়ে দিলাম। কেউ একজন এলে বগলচক থেকে একটা ফিনাইলের বোতল আনতে বলতে হবে।

ঘটনাস্থল থেকে জনগণ ফিরে এসে আমাদের কাজ দেখে হতভম্ব। তাদের মধ্যে একজন বলল—আপনারা এই সমস্ত কাজও ঘৃণা না  করে করতে পারেন।

প্রকৃতি সংরক্ষণের স্বার্থে আমাদের  সব ধরনের কাজই পারতে হবে। এসব অত্যন্ত সাধারণ কথা। মানুষের করা কাজ মানুষকেই করতে হবে।

ফিরে আসা জনগণ পুনরায় একজোট হল। বিপিন ডেকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল—এদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া গ্রামবাসীর কর্তব্য। আপনাদের সেই কর্তব্য পালন করতে হবে। নিবারণ কলিতাকে আর কোনো মতেই গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরা লক্ষ্য রাখব, আপনারা কীভাবে কাজ করেন—সৌম্যদা এবং আমার দিকে তাকিয়ে বিপিন ডেকা  বলল—দশের, জনগণের কাজ করব। আমরা সব সময় আপনাদের সঙ্গে থাকব। আজ আমাদের একটা অধ্যায় শেষ হল।











বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪

সাহিত্যের আড্ডায় রবীন্দ্রনাথ সংস্কৃতি সংবাদ , কলকাতা দিপালী মাইতির প্রতিবেদন , Bengal Culture

সাহিত্যের আড্ডায় রবীন্দ্রনাথ 

সংস্কৃতি সংবাদ , কলকাতা

দিপালী মাইতির প্রতিবেদন 



নিজস্ব প্রতিবেদন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'এবার ফেরাও মোরে' কবিতার অমোঘ লাইন 'স্বার্থ মগ্ন যে জন বিমুখ  / বৃহৎ জগৎ হতে,   সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে। /   মহাবিশ্ব জীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে / নির্ভয়ে ছুটিতে হবে সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা, / মৃত্যুরে করিনা শঙ্কা, দুর্দিনের অশ্রু জলধারা / মস্তকে পড়িবে ঝরি,তারি সাথে যাব অভিসারে ...."   । ১৬ই মে সপ্তাহের সাহিত্যের আড্ডায় মূল থিম ছিল এটি। আড্ডার সূচনায় সপ্তাহ সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী বলেন রবীন্দ্রনাথকে ভারতবাসীর সৎ বিবেক গুরুদেব বলেছেন , স্বয়ং গান্ধীজিও তাই বলেছেন। গুরুদেব এবং গুরুবাদী কথার মধ্যে ফারাক রয়েছে। গুরুদেব কথার অর্থ শিক্ষক। গুরুবাদি অর্থ হচ্ছে অন্ধ ভক্ত। রবীন্দ্রনাথ নিজেও গুরুবাদী ভাবনার বিরুদ্ধে ছিলেন। তাই 'গুরু বাক্য' প্রহসনটি তিনি লিখেছিলন। দিলীপ চক্রবর্তীর লেখা 'সংস্কৃতির শিকড়ের পুনরুদ্ধার  ও আমাদের রবীন্দ্রনাথ' শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে সুকুমার রুজ অংশবিশেষ পাঠ করে শোনান। অর্পিতা ঘোষ পালিত পর্যটক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি সুন্দর রচনা পাঠ করেন। সুকুমার রুজ তাঁর একটি ছোট গল্পে চমৎকারভাবে তুলে ধরেন প্রেমিক প্রেমিকার জীবনের রবীন্দ্রনাথ। আড্ডায় সুন্দর গল্প শোনান মিতা নাগ ভট্টাচার্য। মালবিকা ভট্টাচার্য তাঁর একটি চমৎকার ছোট গল্প শোনান। প্রদীপ চক্রবর্তী নন্দিতা সেন বন্দ্যোপাধ্যাীয় নীলাঞ্জন কুমার সুতপা ভট্টাচার্য চক্রবর্তী প্রত্যেকের তাঁদের সুন্দর কবিতা এবং গল্প শোনান যা সবাইকে মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুতপা। বর্তমান সময়ে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সন্দীপ দাস সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন । অনলাইনেও এই আলোচনা শোনেন অনেকেই। সপ্তাহের বিমল সরকার  সকলকে আপ্যায়ন করেন।

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ।। হোমেন বরগোহাঞি ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, Homen Bargohain

 বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস





তিন 

জন্ম এবং শৈশবকাল

 আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিখ্যাত নগরগুলির ভেতরে একটি হল বোস্টন।  জন উইনথ্রপ  নামের একজন ধনী ব্যবসায়ী তার কোম্পানির সদর কার্যালয় হিসেবে ১৬৩০ সনে নগরটি প্রতিষ্ঠা করে। শহরটি শুরু  থেকেই জ্ঞানচর্চার একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। সঙ্গে এটা ব্যাবসা-বাণিজ্যেরও একটি বড়ো কেন্দ্র ছিল। বোস্টনের ধন কুবেররা  সাহিত্য এবং শিল্প-সংস্কৃতির উন্নতির জন্য অকাতরে ধন খরচ করতেন। ফলে নগরটি আমেরিকার এথেন্স হয়ে উঠেছিল। অর্থাৎ প্রাচীন গ্রিসে এথেন্স যেভাবে জ্ঞান চর্চা এবং সাহিত্য সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র ছিল, আমেরিকায় সেই জায়গা নিয়েছিল বোস্টন। সর্বসাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে না পারা উঁচু স্তরের পন্ডিতদের আমেরিকানরা বোস্টন ব্রাহ্মণ বলে ক্ষেপায়। আমেরিকানরা শহরটিকে কী চোখে দেখে সে কথা এই একটিমাত্র কথা থেকেই বুঝতে পারা যায়। বর্তমানকালে বোস্টন চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও একটি প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বোস্টনের হার্বাড মেডিকেল স্কুলের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।

  এই বোস্টন শহরে ১৭০৬ সনের ১৭ জানুয়ারি  বেঞ্জামিনের জন্ম হয়েছিল। তার পিতা জোশিয়া ফ্রাঙ্কলিনের চর্বি থেকে সাবান এবং মোমবাতি তৈরি করার  ব্যাবসা ছিল ।সেই সমস্ত জিনিস বিক্রি করার জন্য তার নিজস্ব একটি দোকান ছিল। কিন্তু তার উপার্জনের তুলনায় খাবার লোকের সংখ্যা ছিল বেশি। তিনি দুবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম পত্নীর দিক থেকে সাত  এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর দিক থেকে দশ—মোট ১৭ জন ছেলেমেয়ে ছিল। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন তার আত্মজীবনীতে লিখে রেখে গেছেন বাবার সঙ্গে একসাথে টেবিলে খেতে বসার সময় তেরো জন ভাই বোনকে একসঙ্গে দেখার কথা তার ভালোভাবে মনে আছে।

 বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন পিতার দ্বিতীয় পক্ষের অষ্টম সন্তান। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে ছেলেমেয়েদের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় সত্যি, কিন্তু কিছু সুবিধা যে রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। বড়ো পরিবারে একে অপরের জন্য কিছু ত্যাগ করতে হয়,অনেক অসুবিধা বিনা আপত্তিতে সহ্য করতে হয়। ফলে স্নেহ ভালোবাসা, মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষমতা এবং সহনশীলতা ইত্যাদি গুণগুলি গড়ে ওঠে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন শৈশব থেকেই এই গুণগুলি আয়ত্ব করেছিলেন। তিনি শান্ত স্বভাবের ছিলেন এবং বাড়ির পরিবেশ  তাকে  মিতব্যয়ী হতে শিখিয়েছিল।

 জোসিয়া ফ্রাঙ্কলিনের সতেরোটি ছেলে মেয়ের মধ্যে দশটি ছিল ছেলে, বাকি সাতটি মেয়ে। ছেলেগুলির মধ্যে বেঞ্জামিনই ছিল সবচেয়ে ছোটো। জোসিয়া ফ্রাঙ্কলিন তার নয়টি ছেলেকে বিভিন্ন ব্যাবসা-বাণিজ্যে শিক্ষানবিশ হিসেবে ভর্তি করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ছোটো পুত্র বেঞ্জামিনকে তিনি করতে চেয়েছিলেন গির্জার যাজক। সেই উদ্দেশ্যে একটি গ্রামার স্কুলে বেঞ্জামিনের নাম ভর্তি করা হল। তখন তার বয়স আট বছর।

  গ্রামার স্কুলে বেঞ্জামিন মাত্র এক বছর ছিলেন। স্কুলে নাম লেখানোর কিছুদিনের মধ্যে তিনি শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।কেবল তাই নয়, ধীরে ধীরে উন্নতি করে এবং অন্য সমস্ত ছেলেকে পেছনে ফেলে তিনি এক বছরের ভেতরে স্কুলের তিনটি শ্রেণি অতিক্রম করতে সক্ষম হলেন ।কিন্তু মন দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য শিক্ষককে তাকে কখনও জোর করতে হত  না বা সেই সময়ের রীতি অনুসারে বেত মেরে শাসন করতে হত না।জ্ঞান হওয়ার পর থেকে লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ ছিল অপরিসীম। তিনি নিজেই লিখে রেখে গেছেন— ‘আমি যে কখন পড়তে পারতাম না সে কথা আমার মনেই পড়ে না।’অর্থাৎ অক্ষরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দিন থেকে তিনি বই না পড়ে একেবারেই থাকতে পারতেন না। বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করার জন্য তিনি সব সময় একটি প্রবল আগ্রহ অনুভব করতেন। কর্মজীবনে প্রবেশ করার পরে তিনি যখন পড়ার সময় পেতেন না, তখনও তিনি রবিবারকে আলাদাভাবে রাখতেন শুধু বই পড়ার জন্য। 

 বেঞ্জামিন গ্রামার স্কুলে এক বছর সম্পূর্ণ করার পরে পিতা তাকে সেই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনার কথা ভাবলেন। সতেরোটি ছেলেমেয়ে নিয়ে বিরাট সংসারটার  ভরণপোষণ চালানোর মতো তার ক্ষমতা ছিল না। এহেন অবস্থায় বেঞ্জামিনকে ধর্মযাজক করতে হলে যে ধরনের দীর্ঘ উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন তার খরচ বহন করার মতো সঙ্গতি তার ছিল না। গ্রামার স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে বেঞ্জামিনকে ভর্তি করে দেওয়া হল এমন একটি স্কুলে যেখানে কেবল হাতের লেখা এবং গণিতের শিক্ষা দেওয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন জর্জ ব্রাউনেল।শিক্ষক হিসেবে তিনি খুব বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ছিলেন। জর্জ ব্রাউনেলের স্কুলে বেঞ্জামিন হাতের লেখা সুন্দর করার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করলেন যদিও পার্টিগণিতের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হতে পারলেন না।

 বেঞ্জামিনের পিতা অবশেষে সেই স্কুল থেকেও বেঞ্জামিনকে ছাড়িয়ে এলে নিজের ব্যাবসায়ের কাজে লাগিয়ে দিলেন। সেই সময়ে বেঞ্জামিনের বয়স ছিল মাত্র দশ  বছর।আগেই বলা হয়েছে যে জোশিয়া ফ্রাঙ্কলিনের ব্যাবসাটা ছিল জন্তুর চর্বি থেকে সাবান এবং মোমবাতি তৈরি করে সেগুলি বিক্রি করা। বেঞ্জামিনকে এখন সাবান এবং মোমবাতি তৈরি করার বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে বাবাকে সাহায্য করতে হল।মাঝে মাঝে তাকে দোকানে বিক্রির কাজেও সহায়তা করতে হল। কিন্তু পিতার ব্যাবসায় বেঞ্জামিনের মোটেই আগ্রহ ছিল না। বন্দর শহর বোস্টনে জন্ম হওয়ায় ছেলেটির মন সমুদ্রের প্রতি খুব আকর্ষণ অনুভব করত। অর্থাৎ তার ইচ্ছা ছিল নাবিক হওয়ার। কিন্তু পিতা তাকে নাবিক হওয়ার অনুমতি দিলেন না।

  নাবিক হওয়ার আশা পূরণ হল না যদিও বেঞ্জামিন বাড়ির পাশের নদী এবং পুকুরে সাঁতার কেটে এবং নৌকা বেয়ে শৈশবকে আনন্দময় করে তুলেছিল। নেতা হওয়ার গুণ নিয়েই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন; সেই জন্য শৈশবের সমস্ত খেলাধুলা এবং দুঃসাহসিক অভিযানে তিনি ছিলেন সমবয়সী ছেলেদের নেতা। কোনো বিপদে পড়লেই ছেলেগুলি উদ্ধারের উপায় বের করার জন্য তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত। 

 শৈশবে কোন ছেলেই বা একটু-আধটু দুষ্টুমি করে না?বেঞ্জামিনও নিশ্চয় করতেন। তারই একটা উদাহরণ তিনি নিজের আত্মজীবনীতে দিয়ে গেছেন।

  বেঞ্জামিনের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। তাদের বাড়ির পাশে একটা পুকুর ছিল। পুকুরটা জলে যখন উপচে পড়ত তখন সেখানে মাছ ধরার জন্য বেঞ্জামিন এবং তার সঙ্গীরা পুকুরের পারে গিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেদের নাড়াচাড়ায় পুকুরটার তীরে এক হাঁটু কাঁদা হয়। খারাপকে ভালো করা, অসুবিধা গুলি দূর করে সুবিধা সৃষ্টি করে নেওয়া—- অতি কম বয়স থেকেই  এটা ছিল বেঞ্জামিনের মানসিকতার একটি বৈশিষ্ট্য। এক হাঁটু কাদায় দাঁড়িয়ে মাছ ধরতে লাগার কথাটা বেঞ্জামিন সহ্য করতে পারল না। সেই জন্য পুকুরপারে একটা পাকা ঘাট তৈরি করার কথা তিনি ভাবলেন। পুকুরটা থেকে একটু দূরে একজন মানুষ একটা নতুন ঘর তৈরি করতে শুরু করেছিল। তার জন্য অনেক পাথর জমা করা হয়েছিল। তার সঙ্গীরা বিকেলে মিস্ত্রীরা না থাকার সুযোগ নিয়ে পাথরগুলি বহন করে এনে পুকুরের তীরে পাকাঘাট তৈরি করল।।পরের দিন সকালে মিস্ত্রিরা কাজ করতে এসে পাথরগুলি না দেখে চেঁচামেচি শুরু করল। অপরাধীকে ধরতে বেশি সময় লাগল না। ছেলেগুলির পিতারা যাকে যেখানে শাস্তি দেবার দিল।বেঞ্জামিন নিজের পিতাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন যে পুকুরে একটা পাকা ঘাট প্রত্যেকের জন্য দরকার হয়ে পড়েছিল এবং তারা একটা ভালো কাজ করেছিল। কিন্তু পিতা এই কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন যে যে কাজ সৎ উপায়ে করা হয় না সেই কাজ কখনও অন্যের উপকার করতে পারেনা। পিতার এই কথাটা বেঞ্জামিনের মনে চিরকালের জন্য গেঁথে গিয়েছিল। 

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

আটপৌরে ৭২৮ || সুদীপ বিশ্বাস-এর কবিতা, Atpoure 728 by Sudip Biswas

 আটপৌরে ৭২৮ || সুদীপ বিশ্বাস-এর কবিতা, Atpoure 728 by Sudip Biswas





আটপৌরে ৭২৮

পাইট


আলোহাওয়া। এলাকায়। প্রস্তুত। 


চাপমান 


চড়েছে পারদের অবউষ্ণ সুরা।

শব্দব্রাউজ- ১০৯৯ ।। নীলাঞ্জন কুমার || Shabdo browse-1099, Nilanjan Kumar

 শব্দব্রাউজ- ১০৯৯ ।। নীলাঞ্জন কুমার || Shabdo browse-1099, Nilanjan Kumar





শব্দব্রাউজ- ১০৯৯ ।। নীলাঞ্জন কুমার

বিপাশা আবাসন তেঘরিয়া মেন রোড কলকাতা ১৮.৪. ২৪ . সকাল ৯টা ১০ মিনিট ।


শব্দসূত্র: মিঠুয়া বাতাস আয়


ভোরের মিঠুয়া বাতাস

কোথায় নিয়ে যায়

দাবদাহ !


ছুটে আয় পাগলা হাওয়া

ছুটে আয় বৃষ্টি উল্লাস ।


দাবদাহের

এখন অগ্নিবীণায় মন।


তাকে থামাই কি করে‌ ?



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী পালন ও কবিতার বই 'সন্দেশখালির মা' প্রকাশ ।। দিপালী মাইতির প্রতিবেদন ।। সংস্কৃতি সংবাদ, Sandeshkhali

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী পালন ও কবিতার বই 'সন্দেশখালির মা' প্রকাশ

দিপালী মাইতির প্রতিবেদন 



 সন্দেশখালি, ৯ মে ।।  কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হলো বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ সন্দেশখালির মাটিতে। অনুষ্ঠানটি হয় ভাঙাতুশখালি সুন্দরবন শিক্ষা সংস্কৃতির কক্ষে এবং সংলগ্ন মাছের ভেড়ি ও কুলগাছিয়া নদীর পাড়ে। ওই সংস্থার পরিচালক হাবিবের আয়োজনে উপস্থিত হয়েছিলেন এলাকার সাধারণ নরনারী, শিশু। হাওড়া থেকে গেছিলেন কবি অলোক বিশ্বাস এবং মেদিনীপুর থেকে এসেছিলেন কবি সন্দীপ সাহু। মাল্যদান করা হয় রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতে। এই বিশেষ দিনটিতে সন্দেশখালিতে প্রকাশিত হলো আটের দশকের কবি অলোক বিশ্বাসের প্রতিবাদী কবিতার বই 'সন্দেশখালির মা'। প্রকাশিত হলো কবি সন্দীপ সাহু সম্পাদিত সন্দেশখালি গণআন্দোলন বিষয়ক কবিতার সংকলন 'চরৈবেতি সন্দেশখালি' এবং কবির নিজস্ব কবিতার বই 'সন্দেশখালির ঘোষণাপত্র'। অলোক বিশ্বাসের কবিতার বইটি প্রকাশিত হয়েছে কবিতা ক্যাম্পাস প্রকাশনী থেকে এবং সন্দীপ সাহুর বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে প্রীতিকণা প্রকাশনী থেকে। উভয় প্রকাশনীর পক্ষে স্থানীয় আন্দোলনকারী নারীদের সংবর্ধিত করা হয়। হাবিব রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে কবির সামাজিক ভূমিকার কথা বলেন। কবি অলোক বিশ্বাস সন্দেশখালির আন্দোলনে নারীদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন। কবি সন্দীপ সাহু রবীন্দ্রনাথের সামাজিক ভূমিকা প্রসঙ্গে বলার পর সন্দেশখালি আন্দোলন সম্পর্কিত কবিতা সংকলন প্রকাশের গুরুত্বের কথা বলেন।


বক্তাদের কথায় বারবার উঠে আসে সন্দেশখালির ঐতিহাসিক আন্দোলনের পটভূমিতে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের নীরবতার প্রসঙ্গ। প্রতিটি বই প্রকাশ করেন সন্দেশখালির প্রতিবাদী নারীরা। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র ক'রে মাছের ভেড়ি সংলগ্ন গ্রামীণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ নাগরিক ধীরেন সরদার।

বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

কিছু বই কিছু কথা - ৩১৮ ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম নীলাঞ্জন কুমার মহেশ। গল্পের কাব্যরূপ ।‌গল্প লেখক : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।‌ কাহিনি কাব্য লেখক : অমিয় পালিত, Mahesh

 কিছু বই কিছু কথা - ৩১৮

ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম

                           নীলাঞ্জন কুমার


মহেশ। গল্পের কাব্যরূপ ।‌গল্প লেখক : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।‌ কাহিনি কাব্য লেখক : অমিয় পালিত। কবিতা এখন , সন্দাইল, বরুন্দা হাওড়া  থেকে প্রকাশিত ।
মূল্য: কুড়ি টাকা ।





শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্প  কে না পড়েছে।‌ বিপুল জনপ্রিয় মর্মস্পর্শী এ কাহিনির ভেতর যে বাস্তবতা, তা আজো আমরা প্রত্যক্ষ করি ।‌ সেই ছোট্ট গল্পটিকে  নিয়ে  হাওড়ার অমিয় পালিত সম্ভবত ১৯৭৫ সালে  কাহিনি কাব্যকথা রচনা করেন ( প্রকাশিত জানুয়ারী, ২০২৩) । ক্ষীণতনু পুস্তিকার উদ্যোক্তা চিত্ত সাহুর ভূমিকায় জানা যায় ।
‌‌‌‌‌   ‌‌‌‌‌      অমিয় ‌পালিতের লেখার অনেক ত্রুটি সংশোধন করেন প্রর্তক্য  পত্রিকার  সম্পাদক ও কাব্য বিদগ্ধ অশোক রায় । তাঁকে ধন্যবাদ কারণ তিনি পাঠকের কাছে কিছুটা হলেও লেখাটি উপযুক্ত করেছেন।‌
            অক্ষরবৃত্তে ও চারণ ছন্দে লেখা‌ এই কাহিনি কাব্যে
লেখক কাব্যের থেকে গল্পে জোর দিয়েছেন  বেশি। তাই কাব্যের দিক থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধে হয় ।
          এই লেখাটির কাব্য  সে অবস্থানে‌ না পৌছোলেও গ্রন্থের ইতিহাস মূল্য  আছে। হাওড়া জেলার এক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এক অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় । পুস্তিকার পারিপাট্য ও প্রচ্ছদ খুবই
অপাঙক্তেয়। তবু সার্বিক অর্থে পুস্তিকার সাফল্য  কামনা করি ।



যশোর রোড ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, Arindam Chattopadhyay

যশোর রোড

অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 



ছায়াঘেরা যশোর রোড

দুপাশ থেকে বেড়ে ওঠা গাছ

একেকটা মহীরুহ 

তাদের ডাল পালা যেন আকাশ ছোঁয়

আকাশ থেকে নুইয়ে পড়া 

গাছের ডাল অন্ধকার ঘনায়

সমস্ত পথ জুড়ে...

কখনও একটা সুরঙ্গ পথ হয়ে  যায়

মনে হয় যেন কোন এক অসীমের দিকে

চলে যাওয়া পথরেখা

কোন উত্তাপ নেই

ছায়া শীতল পথ 

যেন আবহমান কাল জুড়ে

শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়া

পথ জুড়ে ছড়ানো সভ্যতা

কত যে ইতিহাস জড়ানো গল্পকথা

আর কতো যে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিকথা

তবুও এই পথের ভেতরই যেন জুড়ে আছে

না ভাঙা কোন ভূমিখণ্ডের দৃশ্যকথা



শব্দব্রাউজ- ১০৯৮ ।। নীলাঞ্জন কুমার || Shabdo browse-1098, Nilanjan Kumar

 শব্দব্রাউজ- ১০৯৮ ।। নীলাঞ্জন কুমার || Shabdo browse-1098, Nilanjan Kumar





শব্দব্রাউজ- ১০৯৮ ।। নীলাঞ্জন কুমার

বিপাশা আবাসন তেঘরিয়া মেন রোড কলকাতা থেকে ১৭.৪.২৪ দুপুর ২ -১৫ মিনিট ।


শব্দসূত্র: উত্তাপ যে ছোঁয়


সৃষ্টি উত্তাপ যে

ছুঁতে পারে

তার কল্পনায় ব্রহ্মান্ড ।


শব্দের ভেতর যে

ভালোবাসার উত্তাপ

তাকে যে ছুঁতে পারে

সে সূর্যের সামনেও

দাঁড়ানোর ইচ্ছে নিয়ে বাঁচে। 

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

আটপৌরে ৭২৭ || সুদীপ বিশ্বাস-এর কবিতা, Atpoure 727 by Sudip Biswas

 আটপৌরে ৭২৭ || সুদীপ বিশ্বাস-এর কবিতা, Atpoure 727 by Sudip Biswas





আটপৌরে ৭২৭

আসল


বিনেপয়সাতে। দানখয়রাত। ভান্ডারা।


লক্ষ্মীমন্ত


ভোটের সমূহ রচিত আস্তিন।

সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

শব্দব্রাউজ- ১০৯৭ ।। নীলাঞ্জন কুমার || Shabdo browse-1097, Nilanjan Kumar

 শব্দব্রাউজ- ১০৯৭ ।। নীলাঞ্জন কুমার || Shabdo browse-1097, Nilanjan Kumar





শব্দব্রাউজ- ১০৯৭ ।। নীলাঞ্জন কুমার

বিপাশা আবাসন তেঘরিয়া মেন রোড কলকাতা থেকে ৪.৪.২৪ সকাল সাড়ে এগারটা।


শব্দসূত্র : জাগো, নতুন সকাল


জাগলে

সত্য আমার

চোখের সামনে দাঁড়িয়ে ।


তারপর সকাল দুপুর

বিকেল সন্ধ্যে রাত

একটু একটু করে

মিথ্যে জড়ায়।


জাগো নতুন সকাল

তুমি যেওনা

সময়ের সঙ্গে !

আটপৌরে ৭২৬ || সুদীপ বিশ্বাস-এর কবিতা, Atpoure 726 by Sudip Biswas

 আটপৌরে ৭২৬ || সুদীপ বিশ্বাস-এর কবিতা, Atpoure 726 by Sudip Biswas





আটপৌরে ৭২৬

যাত্রা 


অভিসারে। গাগরিজল। চলতহ।


জলবায়ু 


পরিবর্তন আসে সেই মনপথে।

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...