অনুবাদ কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অনুবাদ কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

মায়ের স্কুলটা ।। প্রণয় ফুকন ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ বাসুদেব দাস , কবিতা, Pranay Phukan

মায়ের স্কুলটা

প্রণয় ফুকন 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ বাসুদেব দাস 



হঠাৎ জানি কী হল সেদিন!

প্রয়াত মা শিক্ষকতা করা 

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেখতে ইচ্ছা হল। 

হয়তো মায়ের সুবাস পাব কোথাও!

স্কুলটি তালা বন্ধ।

মরচে ধরা গেটের ওপারে 

পরিত্যক্ত সীমানায় গাছ লতা জঞ্জালের স্তূপ।

জানালা দিয়ে দেখলাম, 

মেঝেতে ভাঙ্গা-চোরা  ডেক্স বেঞ্চ চেয়ার টেবিল গুলি 

মায়ের বসা চেয়ারটা চিনতে পারলাম না।


গ্রামের মানুষকে জিজ্ঞাসা করলাম, 

–কী হয়েছে?

–কয়েক বছর হল 

ছেলে মেয়ে নেই 

স্কুলটা বন্ধ হয়ে গেছে। 

–গ্রামের ছেলে মেয়েরা কোথায় পড়ে? 

–শহরের ইংরেজি স্কুলে ।

–এত দূরে? 

–স্কুল ভ্যানে করে সকালে যায়, সন্ধ্যেবেলা ফিরে 

–মাঠে ফুটবল,নদীর তীরে দৌড়াদৌড়ি?

–সেই সব আজকাল আর নেই।


কোনোমতে চোখের জল সামলে

ফিরে আসতে লাগলাম। 

পেছন থেকে বিবর্ণ স্কুলটি বলতে লাগল,

‘দুঃখ করে লাভ নেই বাবা, কাঁদিস না।

তোরা নিজেরাই খুলে দিয়েছিস পশ্চিমের জানালা। 

বাতাসকে দোষ দিয়ে লাভ কি?’


থতমত খেয়ে গেলাম

এটাই তো সত্যি, আমরা একটি আত্মঘাতী জাতি। 

কোনো গ্লানি নেই, অনুতাপ নেই 

শিলাময় কঠিনতায়,

বিচ্ছিন্ন করেছি ভাষা, 

বিচ্ছিন্ন করেছি সংস্কৃতি। 


মনে পড়ল স্বর্গগামী মাকে।

আজীবন শিখিয়েছেন যিনি 

দুঃখিনী বর্ণমালা।

ক্ষমা কর মা,

আমরা তোমার ব্যর্থ অক্ষম সন্তান। 

আমরা হারিয়ে ফেলেছি আত্মসম্মান 

আমরা ক্ষমার অযোগ্য। 


আমাদের শক্তি দাও মা 

কোনো এক সর্বনাশ ঘটার আগেই 

আমরা ফিরিয়ে আনি আমাদের মর্যাদা 

আমাদের সন্তানের মুখে বন্দিত হোক 

তোমার মুখের ভাষা। 

আমাদের শক্তি দাও। 


(সত্য অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে)

বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা ।। নীলিম কুমার মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, Nilim Kumar


একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা ।। নীলিম কুমার

 মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস 



কবি পরিচিতি--সাম্প্রতিক অসমের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত কবি নীলিম কুমার ১৯৬১ সালে অসমের পাঠশালায় জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় চিকিৎসক। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ অচিনার অসুখ’,’ স্বপ্নর রেলগাড়ি’,’ জোনাক ভাল পোয়া তিরোতাজনী’, নীলিম কুমারের শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ ইত্যাদি। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৪।




কবিতা ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস

 


অতিথি


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস

কিছুই জিজ্ঞেস না করে আমার বুকের দরজা খুলে সে

ভেতরে প্রবেশ করল

এসেই আমার প্রেমের ফুলদানিটা

ভেঙ্গে ফেলল

কোথাকার আপদ একটা

সকালেই চলে এসেছিল

খাওয়ালাম

দাওয়ালাম

বিকেল হল

অতিথি তো যায় না

রাত হল

অতিথি আমার বিছানায় গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল

মধ্যরাতে আমার হাতে বুক থেকে একটা পুঁটলি বের করে দিয়ে

হঠাৎ সে যাবার জন্য প্রস্তুত হল

রাতের রেলে যাবে

পুঁটলিটা খুলে দেখে

দেখলাম আমার প্রেমের ফুলদানিটার মতো

ভেঙ্গে আছে তাঁর হৃদয়

কোথাকার অতিথি এসেছিল

রাতের রেলে সে কোথয় বা চলে গেল

 

 

নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তি


মানুষগুলি হারিয়ে যাচ্ছে।

তাই আজকাল মানুষগুলি ফোটো উঠে বেশি।

নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জুনুন নিজেই ফোটোগুলিতে

খুঁজে বেড়ায় নিজেকে। আমরা ফোটোগুলিতে

খুঁজে বেড়াই নিজেরই মুখটি এবং দেখতে পাই

অবিকল নিজের অপরিচিত মুখটা।

নিজের সেই অপরিচিত মুখটিকে আমি

ভালোবাসতে বাধ্য করাই নিজেকে।

না হলে আমার উপায় থাকেনা।

কারণ আমরা হারিয়েছি

আজকালকার ফোটোগুলিতে আমাদের সঙ্গে থাকে—

প্রিয়, অপ্রিয়, অর্ধপ্রিয়, অর্ধ শত্রু, অর্ধ মিত্র

বিশ্বাসী অবিশ্বাসী ভবিষ্যতের শত্রু হতে চলা প্রত্যেকেই।

—এই সবার মধ্যে নিজেকে দেখে করুনা জন্মায়।

কেননা সেই জন নিজের ভবিষ্যতের বিষয়ে

কোন আন্দাজ করতে পারেনা যে সেই জন হারিয়েছে।

 

যত ফোটো উঠেছে মানুষগুলি, ততই নিজেকে হারিয়েছে।

 

  

বাতাস এবং নারী


মূল অসমিয়া  বাংলা অনুবাদ‐ বাসুদেব দাস

প্রচন্ড গরম।

গোধূলি হয়েছিল কেবল,

হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ চলে গেল।

দেখা গেল

আটমহলের বাড়িটির ছাদে

একজন মহিলা উঠে আসছে,

হাতে একটা পাখা!

আর কিছু ভাবতে ভাবতে

নিজেকে হাওয়া করতে থাকল

 

কিছুক্ষণ পরে

তাঁর ভাবনা

তাঁর হাতের মুঠি থেকে

পাখাটা নিচে ফেলে দিল

ঠিক এই মুহূর্ত পর্যন্ত

পথ চেয়েছিল বাতাস

বাতাস দৌড়ে এল

একটু অভিমান নিয়ে,

আর মহিলাটিকে বলল না যে

উদাস ভাবনাগুলি অপকারী।

কারণ বাতাস ভালোভাবেই জানে‐

নারী অবিহনে ভাবনাগুলি বেঁচে থাকে না

বাতাস মহিলাটির চুলগুলি

উড়াতে লাগল,

আর শাড়ির আঁচলটাও!

 

বাতাসের প্রতি কৃতজ্ঞতায়

মহিলাটির মুখে হাসি ফুটে উঠল

বাতাস বহুদিন দেখেনি

এরকম হাসি





এই শহরের সবচেয়ে

বুড়ো মানুষটি

প্রতিদিন বারান্দায় বসে অপেক্ষা করে থাকে খবরের কাগজটির জন্য

 

তার খবরের কাগজটি না পড়া পর্যন্ত যেন এই শহরে

সকালগুলি আসতেই পারে না।

 

খবরের কাগজটি  না পড়া পর্যন্ত

তাঁর গলা সকালের

এক কাপ চা ও গিলে না।

 

তাঁর পত্নী চায়ের কাপ নিয়ে

ঠিক তখনই উপস্থিত হয়

যখন তাঁর চোখ পড়তে শুরু করে

প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামগুলি

 

চায়ের কাপের সঙ্গে তিনি খবরের কাগজটি পড়ে শেষ করে

 

তারপরে তিনি

স্নান করতে যান

এবং

খবরের কাগজের সমস্ত অক্ষরগুলি ধুয়ে ফেলেন

 

তিনি খাওয়া চায়ের কাপটা ধুয়ে ফেলেন তাঁর

পত্নী।


প্রদীপ

 

জ্বলছিস হয়তো তুই 

পোড়ানোর জন্য আমার  বুকের  অন্ধকার?

তোর অর্ধেক জীবন গেল

 

একটুও অন্ধকার দূর হল না

জ্বলে জ্বলে এখন দেখছি

তুই শেষ হবি

নিজে  দেখছি ডুবে যাবি অন্ধকারে

 

কেবল ঈশ্বরই তোর খোঁজে আসবে

তিনি তো খুঁজে পাবেন না

এত অন্ধকারে তোর আত্মা

তোর খোঁজে পুনরায়

তোকেই জ্বালাবে ঈশ্বরও

ওহে অবোধ প্রদীপ

অন্ধকারও   দুঃখী

তোকে দেখে

কীভাবে বলি শুভ দীপাবলী???


 


রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪

আকাশের বিরুদ্ধে ।। নীলিম কুমার ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস, Nilim Kumar

আকাশের বিরুদ্ধে

নীলিম কুমার



মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস

আকাশকে কার ও ভ্রুক্ষেপ করতে হয় না।

আকাশ কীআকাশ একটি ছলনামাত্র।

একটি বিশাল নীল আকার ধারণ করেছে যে ছলনা।

আসলে শূন্যতার নাম আকাশ। খালি জায়গাগুলির 

নামই আকাশ। আলমারির থাকগুলিতে,

পথে পড়ে থাকা খালি বোতল গুলির ভেতরে ওটা আকাশ।

আমরা আসা-যাওয়া করা পথটিতেদরজামুখে,

জানালার মুখেঘরেঘরের কোণটিতেবিছানার নিচে

ওটা আকাশ। অথচ কেউ সেগুলিকে আকাশ বলে না।

আমাদের মাথার ওপরে শূন্যতা শূন্যতা শূন্যতা।

শূন্যতা সৃষ্টি করা নীল তাবুটাকেই আমরা আকাশ বলি।

কত মিথ্যা একটা দৃশ্যের নাম আকাশ। তথাপি

এরকম মনে হয় যেন আকাশ লালন করছে আমাদের পৃথিবী।

রোদের খুঁজি আমরা আকাশের দিকে তাকাইবৃষ্টির খোঁজে

আমরা আকাশের দিকে তাকাই। অথচ রোদ বৃষ্টির সঙ্গে

কোনো সম্পর্ক নাই আকাশের।

ক্লান্ত লাগলে আমরা আকাশের দিকে তাকাই। হেরে গেলে

আমরা আকাশের দিকে তাকাই। ঘুম না এলে

বিছানা ছেড়ে উঠে এসে আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।

যেন আকাশের কোন একটি তারা চুরি করেছে আমাদের ঘুম।

যেন আকাশ ফিরিয়ে দিতে পারে সেই ঘুম…

এভাবে অজস্র মিথ্যা কথার জন্ম দিয়েছে আকাশ আমাদের

খুলির অন্ধকারে। বারবার বিশৃংখল করেছে আমাদের ভাবনাকে। কত মিথ্যা একটি চিত্রাংকনের নাম আকাশ।

প্রায় প্রলাপ বলে বলতে পারি আমাদের কথাবার্তা কেযখন

আমরা বলি আমাদের মাথার ওপরের আকাশটির কথা…


মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১

প্রেমের ফল্গুধারা বইয়ে দাও ।। রুদ্র সিংহ মটক ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস

প্রেমের ফল্গুধারা বইয়ে দাও

রুদ্র সিংহ মটক 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস 



প্রেমের ফল্গুধারা বইয়ে দাও 

মধ্যযুগীয় ধর্মের আফিঙ খেয়ে 

এখন যে মাতাল সময় 


মসজিদে আগুন জ্বলে 

মন্দিরের স্বর্ণচূড়া খসে 

কেঁপে উঠে দেশের মানচিত্র 


আকাশে ছড়ায় ভয়ের 

কালো মেঘ শঙ্কার ভূত 

কুটি কুটি করে খাই প্রেমের সবুজ 

শুষে নিই 

বিশ্বাসের রক্ত 


শ্বাস প্রশ্বাস কীভাবে নিই

বাতাস ছাপিয়ে বিস্ফোরণের গান 


এখানে রামের রক্তে জ্বলে আজানের প্রদীপ 

রহিমের রক্তে 

শুদ্ধ হয় মন্দিরের বেদী


আমরা যে মানুষ কীভাবে সই

রক্তক্ষরিত মাটির প্রজ্বলিত মুখ।


ঈশ্বরকে বারবার শাপ দিয়েছি 

আল্লাকে অভিশাপ 

এসো পুনরায় বিশ্বাসের হাত মেলে 

একে অপরকে আলিঙ্গণ করি,

চুমু খাই একে অপরকে 

ধর্মহীন এই পাপের পৃথিবীতে  



মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

কবি অজিত গগৈ ।। অনুবাদ কবিতাগুচ্ছ ।। অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস, Ajit Gagai

কবি অজিত গগৈ ।। অনুবাদ কবিতাগুচ্ছ ।। অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস 



কবি পরিচিতি–১৯৬৮ সনে  কবি অজিত গগৈ জন্মগ্রহণ করেন।'অরণ‍্যর শোভাযাত্রা' কবির  প্রথম কাব্য সংকলন।২০০৬ সনে মুনীন বরকটকী  পুরস্কার লাভ করেন। কবির  একাধিক কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।'জীবনর সুরীয়া বাঁহী' কবির  একমাত্র গল্প সংকলন।




 ঘুম

অজিত গগৈ

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস


উঠ ঘুম

কত পড়ে থাক বিছানায়


রাত দুপুর হল

মিনতি করছি– উঠ,

তুমি উঠলেই অর্থময় হবে অন্ধকার।


এই অন্ধকারে বাস্তবের স্বপ্নে মত্ত  একদল মানুষ

রক্তিম চোখ ,শ্বাপদের মতো আচরণ

নিজের ছাল ছাড়ানোর জন্য প্রায় প্রস্তুত!


ঘুম... তোমার মধ্য দিয়ে দেখা স্বপ্ন সুন্দর

বাস্তবে দেখা স্বপ্ন ভয়ঙ্কর।

ভয়ংকর স্বপ্ন দহন করছে সময়

হে ঘুম, তুমি উঠ; উঠ…

উজাগরি মানুষের চোখে চোখে গড়িয়ে  যাও

সপ্তসুর হয়ে বেজে উঠ বুকে

স্বপ্ন হয়ে নেচে উঠ আত্মায়।


মানুষগুলি ঘুমিয়ে পড়ুক

নতুন করে জেগে উঠার জন্য।


কবিতার শব ব্যবচ্ছেদ

অজিত গগৈ 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস


মর্গ থেকে তুলে এনে

সুতীক্ষ্ণ ছুরিতে ব্যবচ্ছেদ করছি এই কবিতার শব।


জাঁকজমক পোশাক পরিয়ে উলঙ্গ করেছি কবিতাকে,

শব্দালঙ্কার,  অর্থালঙ্কারকে;

' কবিতা' শব্দকে মুক্তি দিয়েছি আভিধানিক অর্থ থেকে।


কবিরা বারবার চুম্বন করায় অঙ্গারের মতো কালো হয়ে পড়েছিল

কবিতার দুটি ঠোঁট,

জান্তব আচরণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল শরীর...।


( কবিদের অনেকেই ইতিমধ্যে কবিতা কে ধর্ষণ করে পালিয়ে গেছে

খ্যাতির শীর্ষবিন্দুতে,

অনেককে আটক করা হয়েছে পুরস্কারের বন্দিশালায়!)


ঘৃণ্য হয়ে কবিতা গন্ধ ছড়াচ্ছে,

আমি বিদীর্ণ করেছি কবিতার বক্ষস্থল;

ছিন্নভিন্ন করেছি জরায়ু, হাতুড়ি মেরে ভেদ করেছি

মগজ।


অক্ষরে

অজিত গগৈ 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস


স্বপ্নের চারা- অঙ্কুর খুঁজে বেড়াচ্ছি অক্ষরে 

অক্ষরের চিপরাং নিয়ে খুঁড়ছি পাথর

অক্ষরের মৈ বানিয়েছি আকাশের চাঁদ- সূর্যের জন্য

তোমার-আমার দুই গ্রামের মধ্যে সেতু বেঁধেছি


অন্ধকারকে অন্ধকার বলে দেখাতে চাইছি,

আলোর সবাক ছবি আঁকতে চাইছি

অক্ষরে…


অক্ষরের শিকল দিয়ে বাঁধার কথা ভাবছি একে অপরকে


অক্ষরগুলি মাটিতে ছড়িয়ে  দিয়েছি

গজিয়ে উঠুক…

বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিক


অক্ষরের  দীর্ঘ হাতগুলি মানুষের হাত হোক,

অক্ষরের পা দিয়ে মানুষ লাফিয়ে পার হোক খারাপ সময়


সমূহ বই থেকে, কম্পিউটারের স্টোরেজ থেকে দলে দলে

বেরিয়ে আসা অক্ষর একদিন

আকাশ থেকে ছোঁ নেমে আসা তারার সঙ্গে অন্তরঙ্গ

আলাপ করবে…

চোখ দিয়ে আমি এরকম একটা স্বপ্ন দেখেছি।

------

টীকা -

চিপরাং–মাটি খনন করার এক ধরনের লোহার অস্ত্র।


পলু -জীবন

অজিত গগৈ

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস


আত্মগোপন?

না। নিজের পথ বন্ধ করে

তোমার জন্য একটা পথ কেটেছি?

তপস্যা?

হতে পারে। এই মহাশূন্যতায় নিজের মুখের আঁশে 

নিজেকে বেঁধে ফেলেছি,

তোমাকে মুক্ত করার জন্য।

নিজেই নিজের পক্ষ আর বিপক্ষ হয়ে

এক ভয়ঙ্কর খেলা খেলছি ।

নিজেকে হারাচ্ছি

আবার জেতাচ্ছি…

দক্ষ খেলোয়াড় হয়েছি,

তোমার সঙ্গে না হারা- না জেতা খেলা একটা খেলার জন্য

আর বাতাসের বাগানে মরার জন্য!

-------

টীকা-

পলু-পাট,মুগা,এণ্ডি আদির পোকা।

শরীর

অজিত গগৈ

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস


শরীরের জন্যই ক্ষুধা আর বিদ্রোহ,

শরীরের জন্যই প্রার্থনা;

শরীরের জন্যই অমরত্ব আর নির্বাণ


'...মধ্যে ক্ষমা চকিত হরিণী প্রেক্ষণা নিম্ন নাভি…'

––--------আর ––-------

'বুক খাল , চোখ লাল…'

––------ তারপরে–---–-----

' অস্থির এই সংসার!'


ক্ষণভঙ্গুর বলে জানার পরেও

শরীর ডাকে শরীরকে,

শরীর খুঁড়ে শরীরকে;

শরীর মারে শরীরকে







মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১

অনুবাদ কবিতা ।। হেমাঙ্গ কুমার দত্ত ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস, 33

অনুবাদ কবিতা 

হেমাঙ্গ কুমার দত্ত

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস





বন্দীশালার কবিতা

হেমাঙ্গ কুমার দত্ত

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস

এক মুহূর্তের জন্য আমাকে মুক্তি দাও

আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই পৃথিবীকে

জানতে চাই বাইরের মুক্ত পৃথিবী

গোপনে কতটা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে

একটি ঘরে পাঠানো হয় এত মানুষকে


এক মুহূর্তের জন্য আমাকে মুক্তি দাও

আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই পৃথিবীকে

সেখানে ব্যক্তি কতটা স্থানু আর জড় বলে

প্রয়োজন নেই তাদের দেওয়ালের


এক মুহূর্তের জন্য আমাকে মুক্তি দাও

আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই পৃথিবীকে

বুঝতে চাই এই বন্দীশালায়

অপরাধগুলি সত্যিই বন্দী কিনা

শাস্তিগুলিই এখানে বন্দী


ধর্মযুদ্ধ

হেমাঙ্গ কুমার দত্ত

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস

কখনও ঈশ্বর অনুভব করে

প্রয়োজন তার শোধিত হওয়ার


সময়ের সংক্রমণের সমস্ত প্রলেপ মুছে

পুনরায় একবার নিজেকে উজ্জ্বল করে দেখার


সেদিন ঈশ্বর পৃথিবীতে আগুন জ্বালেন

পৃথিবী জ্বলে পোড়া তাপে শোধিত হয় ঈশ্বর


জীবন্ত দাহ এবং দাহ সংস্কারের পরে

এক টুকরো আগুন ছাই হয়ে মাটির বুকে

(আত্মা স্বর্গে যাক বা না যাক

শরীর ধীরে ধীরে বিলীন পাতালে)

নিচে আগুন নিভতে না চাওয়া শিখা

সুপ্রভ হয়ে ঈশ্বরের ওপরে

(পৃথিবী থেকে তাকালে

কালো ধোয়ার সঙ্গে একসঙ্গে দেখা যায়)


একদিন আগুন নিভে যায়

পুনরায় জেগে ওঠে ঘর রাজপথ বাজার এবং মন্দির


নতুন যুগের আশীষ কামনা করে

জ্বলে উঠে মন্দিরে একটি প্রদীপ


পরবর্তীকালে পৃথিবী জ্বালানোর জন্য

সেই ক্ষুদ্র অস্ত্র ঈশ্বরকে মানুষের উপহার


ভিক্ষা

হেমাঙ্গ কুমার দত্ত

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

আধুলিটা নেবার সময়

তুমি হেসে বললে অনেক পেয়েছ


আধুলিটা দেবার সময়

আমিও ভেবেছিলাম ইস বেশি দিলাম


হিসেবের সমতায়

দেখিয়ে গেলে বাংলোয় পরিবৃত আমার দীনতা


অন্য ইউরেকা

(আর্কিমিডিসের কাছে ক্ষমা প্রার্থনায়)

হেমাঙ্গ কুমার দত্ত

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস

আর্কিমিডিস স্নান করা ঘরে কী পেল কী পেল 

রাজমুকুটে ভেঁজালের পরিমাণ?

বড় ভালো হল এখন মুকুটগুলি আরও বেশি মুকুট হবে 

রাজারা আরও বেশি রাজা 


এইবার বেশি সোনায় মুকুট ভারী এবং 

এত ওজন বয়ে বেড়ানো রাজার কাজ নয়


রাজা এবার তাই সিংহাসনে বসে থাকবে রুটিনের বেশিরভাগ সময় 

রাজকবির চোখে দেখবে প্রজার বর্তমান 

যাজকের হাতে নির্মাণ করবে ভবিষ্যৎ

-রাজা এবার বেশি করে রাজা   


রাজা হবে বেশি করে রাজা গুণে বেড়ে 

সংখ্যায় বাড়বে তাঁর রাণী

রাজা এবার পুরোপুরি আইনসম্মত

অন্যের মতো রাজা ভাঙ্গে না পরিবর্তন করে আইন 


রাজা এবার রাজ্যের সীমা পার হয়েও রাজা 

দিগ্বিজয়ই যেহেতু রাজার স্বাভাবিক বিদেশ-ভ্রমণ 

-রাজা এবার বেশি করে রাজা


সমস্যা হল রাজা বেশি করে রাজা হলে 

প্রজা হয়ে পড়ে বেশি করে প্রজা

  

পাব্লিক কল

হেমাঙ্গ কুমার দত্ত

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-- বাসুদেব দাস


হ‍্যালো কেমন আছ, কেমন আছেন ইনি

মনে পড়ছে খুব– তাই

কতদিন হল সেই তখনই দেখা হওয়া শেষবার


না না, কিছুই জানতে পারিনি

বাঃ সুন্দর, কোথায় ঠিক হল

ভালো খবরতো, ভাগ্যের কথা আজকাল এভাবে


কী বললে, মারা গেছে, কবে, কী হয়েছিল

ইস অকালে, বড় ভালো ছিল

শৈশবে একবার যাবার পরে আমাকে যে, আসতেই  দিচ্ছিল না

বিশ্বাস করা শক্ত, সত্যিই


ঠিক আছে, রাখছি তাহলে

তুমিতো বুঝতেই পারছ

সত্যিই, বেড়ে গেছে কথার খরচ

হাসির খরচ, দুঃখের খরচ,প্রেমের খরচ

সীমিত শব্দ– মিনিটে মেপে–

সীমিত ভাবোচ্ছাস


কবি পরিচিতি--১৯৭৩ সনে অসমের দরং জেলার টংলায়  কবি হেমাঙ্গ কুমার দত্তের জন্ম হয়। পিতা হরিহর দত্ত এবং মাতা  তিলোত্তমা দত্ত।২০০০ সনে তার একমাত্র কাব্য সংকলন' অথবা' প্রকাশিত হয়।২০০২ সনে সংকলনটি মুনীন বরকটকী   পুরস্কার লাভ করে।২০০৬ সনে কবি নিরুদ্দিষ্ট হন।









Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...