মায়ের স্কুলটা
প্রণয় ফুকন
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ বাসুদেব দাস
হঠাৎ জানি কী হল সেদিন!
প্রয়াত মা শিক্ষকতা করা
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেখতে ইচ্ছা হল।
হয়তো মায়ের সুবাস পাব কোথাও!
স্কুলটি তালা বন্ধ।
মরচে ধরা গেটের ওপারে
পরিত্যক্ত সীমানায় গাছ লতা জঞ্জালের স্তূপ।
জানালা দিয়ে দেখলাম,
মেঝেতে ভাঙ্গা-চোরা ডেক্স বেঞ্চ চেয়ার টেবিল গুলি
মায়ের বসা চেয়ারটা চিনতে পারলাম না।
গ্রামের মানুষকে জিজ্ঞাসা করলাম,
–কী হয়েছে?
–কয়েক বছর হল
ছেলে মেয়ে নেই
স্কুলটা বন্ধ হয়ে গেছে।
–গ্রামের ছেলে মেয়েরা কোথায় পড়ে?
–শহরের ইংরেজি স্কুলে ।
–এত দূরে?
–স্কুল ভ্যানে করে সকালে যায়, সন্ধ্যেবেলা ফিরে
–মাঠে ফুটবল,নদীর তীরে দৌড়াদৌড়ি?
–সেই সব আজকাল আর নেই।
কোনোমতে চোখের জল সামলে
ফিরে আসতে লাগলাম।
পেছন থেকে বিবর্ণ স্কুলটি বলতে লাগল,
‘দুঃখ করে লাভ নেই বাবা, কাঁদিস না।
তোরা নিজেরাই খুলে দিয়েছিস পশ্চিমের জানালা।
বাতাসকে দোষ দিয়ে লাভ কি?’
থতমত খেয়ে গেলাম
এটাই তো সত্যি, আমরা একটি আত্মঘাতী জাতি।
কোনো গ্লানি নেই, অনুতাপ নেই
শিলাময় কঠিনতায়,
বিচ্ছিন্ন করেছি ভাষা,
বিচ্ছিন্ন করেছি সংস্কৃতি।
মনে পড়ল স্বর্গগামী মাকে।
আজীবন শিখিয়েছেন যিনি
দুঃখিনী বর্ণমালা।
ক্ষমা কর মা,
আমরা তোমার ব্যর্থ অক্ষম সন্তান।
আমরা হারিয়ে ফেলেছি আত্মসম্মান
আমরা ক্ষমার অযোগ্য।
আমাদের শক্তি দাও মা
কোনো এক সর্বনাশ ঘটার আগেই
আমরা ফিরিয়ে আনি আমাদের মর্যাদা
আমাদের সন্তানের মুখে বন্দিত হোক
তোমার মুখের ভাষা।
আমাদের শক্তি দাও।
(সত্য অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে)
অপূৰ্ব লেখা ও অনুবাদ
উত্তরমুছুন