অনেক বছর আগে
রাজু ঘোষ
অনেক বছর আগে এক শীতের সকালে
তুমি আমাকে ফেলে চলে গেলে অকালে
সেদিন আজও ফিরে আসে বছর বছর
কিন্তু তুমি চলে গেলে একেবারে আঁখির আড়ালে
আমি ভাবী আমার চেতনার দৃষ্টি বুঝি হলো ক্ষীণ
নাকি রাক্ষসী প্রকৃতি আজ বড্ড বেরঙিন।
অনেক বছর আগে এক পুরোনো ক্যানভাসে
তুলির আঁচড়ে আমাকে বেঁধে ছিলে প্রতিদিনের অভ্যেসে
সময়ের ব্যাবধানে ধূলো বালি জমে ছিল মনের কোণে
তুমি ঘনঘন মুছে ফেলতে তোমার চোখের জলে
তারপর একদিন মুছতে মুছতে আমাকেই মুছে দিলে
মাজদরিয়ায় ফেলে দিয়ে তুমি বহু দূর চলে গেলে।
অনেক বছর আগে একটা কবিতা লেখা ডাইরির ভাঁজে
তুমি চোখ মেলে দেখো আছো তুমি প্রতিটি হলুদ পেজে
তুমি আছো সেই ফুরিয়ে যাওয়া উদাসী দোয়াতের কালিতে
তোমাকে না পাঠানো সেই অসমাপ্ত অভিমানী চিঠিতে
বেদনার গহবরে হয়েছে তারা সকলেই বিলীন
সময়ের ব্যাক্তিগত স্রোতে আজ সবই মলিন।
অনেক বছর আগে একটা ভাঙা গিটারের সুরে
আমি সুর বেঁধে ছিলাম তোমার এলো মেলো সুরে
সে সুরের ঝংকার আজও বাজে মহানগরীর পথে- প্রান্তরে
জীর্ণ পুরাতন অসহায় অট্টালিকার গহীন অন্দরে
কোনো অজানা অচেনা নির্জন জাহাজ বন্দরে
শুধুই কড়া নাড়ে না ভেঙ্গে যাওয়া নিঃসঙ্গ হৃদয় আঙিনা চত্বরে।
অনেক বছর আগে একটা বৃষ্টি ভেজা দিনে
তোমারে আমি গোপনে নিয়েছিলাম চিনে
সেদিন প্রবল জলোচ্ছ্বাস ভেঙে দিয়েছিল জীবনের বাঁধ
বানভাসি তুমি প্রাণপনে আঁকড়ে ধরে ছিলে আমার কাঁধ
আগ্রাসী ভাটা আষ্টেপৃষ্ঠে টেনে নিয়ে গেল মরা কটালে
নিঃসঙ্গ আমি পড়ে রইলাম নগ্ন ধবংসস্তূপের আড়ালে।
অনেক বছর আগে একটা চায়ের আসরে
তুমি আমায় কি নেশা করেছিলে
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে মায়াবী আলোয় বাসর আলোকিত করেছিলে
কামউন্মত্ত সিংহীর মত আগ্নেয়গিরির
জ্বলন্ত গলিত লাভার নিঃসরণ ঘটিয়েছিলে
তারপর ধীরে ধীরে অন্তহীন অন্ধকার চক্রবুহে ঠেলে দিলে
ভেঙেচুরে আমারে গুঁড়ো গুঁড়ো হতে দেখলে।
অনেক বছর আগে এক মহাঅষ্টমীর সকালে
তোমারে আমি প্রথম দেখেছিলাম খোলা চুলে
তুমি পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ছলে আমাকে ইশারা করেছিলে
আমৃত্যু একসাথে পথ চলার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখিয়েছিলে
সে স্বপ্ন আজ নীল দর্পণের বিকৃত ঘষা কাঁচের মত
দেবীর বিসর্জনের সাথে তুমি দিয়েছিলে তার আঁচ যত।
খুবই ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন