স্মৃতিকথা- ৩০
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
( গত মাসের পর)
যখন কর্নেলগোলায় থাকতাম তখন গান শেখার দারুন তাগিদ আমার ভেতর দেখা গেল । আমার বন্ধু তাপস দাস ( যে আমার প্রথম মিনি বই ' জরাজীর্ণ বাড়ির দলে'র প্রকাশক ছিলো) মেদিনীপুরের রাজনারায়ণ লাইব্রেরির বিপরীতে কেল্লা পুকুর পাড়ে চন্ডীচরণ পাঠকের ( যিনি বর্তমানে প্রয়াত, তিনি অসামান্য সঙ্গীত ও তবলা শিক্ষক ছিলেন) কাছে । আমি তাপসের সঙ্গে ওখানে যেতাম ওর তবলা শুনতে । পরে যেতে যেতে স্যারের সঙ্গে ভালোমতো আলাপ হলে তাঁর কাছে সঙ্গীত শেখা শুরু হল । বাবা নারাজ, মা কেবল রাজি । মায়ের ইচ্ছে ছেলে গাইয়ে বাজিয়ে না হলেও অন্তত কেউ বৈঠকী আড্ডায় গান গাইতে বললে আমি যেন ঠিকঠাক গাইতে পারি । যাই হোক শেখা শুরু হল । মাইনে ছিল তিরিশ টাকা । মাস ছয়েক শেখার পর মা পড়াশোনার ক্ষতির কারণে বেঁকে বসায় ব্যাপক শিক্ষা পেলাম না। কিন্তু মাস্টার মশাইয়ের কাছে ওই কম সময়ের মধ্যে যেটুকু পেয়েছি তা কম নয় । তানপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাগের শিক্ষা ও সেই নিয়ে আগ্রহ আমার অনেক বাড়লো । কিন্তু আরো বেশিদিন গান না শেখার আক্ষেপ এখনও আমার আছে । যা হোক তাতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি, ব্যাপক সঙ্গীত সম্পর্কিত পড়াশোনা ও গান শোনার কারণে একজন সংগীত প্রাবন্ধিক হিসেবে সামান্য লিখতে পারছি তা আমার সঙ্গীত গুরুর আশীর্বাদ বলে মনে করি ।
নতুন বাজারের বাড়িতে থাকতে থাকতে আমরা বুঝতে পারলাম খুব বেশিদিন এখানে থাকা যাবে না। কারণ যেখানে আমরা বাড়ি কিনব বলে জমি কিনেছি সেখান থেকে অনেক দূর হয়ে যাচ্ছে এই বাড়ি । ফলে বাড়ি তৈরির দেখভালের বিষয়ে আমাদের বেশ অসুবিধে হবে । তাই জমির কাছাকাছি বাড়ি খোঁজা আবার শুরু হল । বাবাকে তখন দেখেছি গরু খোঁজার মতো বাড়ি খুঁজতে । যখন বাড়ি পেলাম তখন প্রায় এক বছর কেটে গেছে নতুন বাজারে ।তার মধ্যে বাড়ির ভিত করা শেষ হয়েছিল । আমিও দেখভাল করে যেতাম প্রায় প্রতিদিনই নতুন বাজার থেকে । সেই সময় আমাদের জমির প্রতিবেশীরা ভিত হতে আমাদের জমি মাপার ব্যাপারে ঝামেলা শুরু করে দিলো । বাবা শেষ অবধি জমি মাপার জন্য আমিন নিয়ে প্রতিবেশীদের ডেকে জমি মাপাতে দেখা গেল জমির দলিলের সঙ্গে একদম ঠিক । এরপর সামান্য কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে বাড়ি পেলাম জমির থেকে হাঁটা পথে শরৎপল্লীতে । আমরা ওখানে ছিলাম বাড়ি শেষ হওয়া পর্যন্ত ।
সে একটা সময় গিয়েছিল, এদিকে বাড়ির কাজ শুরু ওদিকে বড়দির বিয়ের ব্যবস্থা । দিদির জন্য আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল পাত্র পাত্রী বিভাগে । কয়েকবার । দাদা যেহেতু কলকাতায়, তাই দাদা চিঠিগুলো নিয়ে আসত পত্রিকা অফিসের থেকে । তার ভেতর কয়েকজন পাত্রকে বাবা মা নির্বাচন করেছিল । তার মধ্যে একজনকে একটু বেশি করে । যিনি আমার বড় জামাইবাবু হয়েছিলেন । দিদির বিয়ে স্থির হবার পর সেই বিয়ে হয়েছিল কলকাতাতে একটি স্কুল ভাড়া করে । বাড়ির সবাই সে বিয়েতে গেলেও আমি বাড়ি পাহারায় থেকে গেলাম । দিদির বিয়েতে কোন এনজয় করতে পারিনি । জামাইবাবু ছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার বড় জাগুলির বাসিন্দা । উনি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার । বিয়ের সময় কলকাতায় তাঁর কর্মস্থল ছিল ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন