রজনীকান্ত সেন এক বিস্মৃতপ্রায় কবি, সঙ্গীতকার, সুরকার ও গায়ক
মনোজিৎ কুমার দাস
(৭)
এছাড়াও তিনি ওরা , চহিতে জানে না, দয়াময়----- কতভাবে বিরাজিছ বিশ্ব-- মাঝারে---আর কতদিন ভবে থাকিব মা--- ইত্যাদি সাধন সঙ্গীত লেখেন।কবি রজনীকান্তের কবিতা ও গান হাস্যরস, দেশাত্মবোধের গন্ডি ছাড়িয়ে ভগবৎ প্রেমের সাগর পানে ছুটেছে তা আমরা বুঝতে পারি তাঁর সাধন আঙ্গিকের গানের সুর ও ভাষার মধ্য দিয়ে। কবি ও গায়ক রজনীকান্ত ১৩১৫ সালের ২১ অগ্রহায়ণ কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের নবগৃহ প্রবেশোৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে সাহিত্য সাহিত্য গবেষক ও সুপন্ডিত দীনেশচন্দ্র সেনের আতিথ্য গ্রহণ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে রজনীকান্ত সৃষ্টির বিশালতা ও সৃষ্টির সূক্ষতা বিষয়ক দু’খানা গান পরিবেশন করেন। রজনীকান্ত এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর রোজনামচায় লেখেন--- এই গান শুনে রবি ঠাকুর আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।, আমি দীনেশকে সঙ্গে করে রবি ঠাকুরের বাড়ি তারপরদিনসকাল বেলা যাই। সেইখানে তিনি আবার ঐ গান শোনেন, শুনে বলেন যে বর্হিজগৎ সম্বন্ধে আর একটা করুন।’
কবি ও গায়ক রজনীকান্ত বুঝেছিলেন, ‘ যাঁরে মন দিলে ফিরে আসে না’- সে মন তিনি তাঁরই রাতুল চরণে সমর্পণ রচিত হয়েছে তাঁর হৃদয়ের অন্ত:স্থল থেকে। তারই অভিব্যক্তি আমরা লক্ষ করিতে পারি তাঁর এই একান্ত প্রার্থনায়---
কবে, তৃষিত এ মরু ছড়িয়া যাইব
তোমারি রসাল --নন্দনে; কবে, তাপিত এ চিত, করিব শীতল,
তোমারি করুণা চন্দনে!
তোমারি বরুনা- চন্দনে!
রজনীকান্তের গ্রন্থ সমূহ : বাণী (১৯০২), কল্যাণী (১৯০৫), অমৃত (১৯১০), এছাড়াও ৫টি বই তাঁর মৃত্যু-পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলো হচ্ছে-অভয়া (১৯১০), আনন্দময়ী, (১৯১০) বিশ্রাম, (১৯১০), সদ্ভাবকুসুম (১৯১৩), শেষদান (১৯১৬) ইত্যাদি।
১৯০৯ সালে রজনীকান্ত কণ্ঠনালীর ক্যান্সার শনাক্ত হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০ তারিখে ইংরেজ ডাক্তার ক্যাপ্টেন ডেনহ্যাম হুয়াইটের তত্ত্বাবধানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ট্রাকিওটোমি অপারেশন করান। এতে তিনি কিছুটা আরোগ্য লাভ করলেও চিরতরে তাঁর বাকশক্তি হারান। অপারেশন পরবর্তী জীবনের বাকি দিনগুলোয় হাসপাতালের কটেজেই কাটাতে হয়। ১১ জুন, ১৯১০ তারিখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রজনীকান্ত সেনকে দেখার জন্য হাসপাতাল যান। এ উপলক্ষে হাসপাতালে বসেই রজনীকান্ত একটি কবিতা রচনা করেন-
আমায় সকল রকমে কাঙ্গাল করেছে, গর্ব করিতে চূর,
তাই যশ ও অর্থ, মান ও স্বাস্থ্য, সকলি করেছে দূর?
ঐগুলো সব মায়াময় রূপে, ফেলেছিল মোরে অহমিকা-কূপে, তাই সব বাধা সরায় দয়াল করেছে দীন আতুর;
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন