মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ৭১ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী


৭১.
কানাইলাল জানা-র এবং আমার বাড়ির যাতায়াতে পথে একটা নদী ছিল। ঠিক নদী নয়। নদীর মতো নালা । একারণে আমাদের যাতায়াতের মধ্যে বেজে ওঠে জলের শব্দ। এটা কিন্তু বানিয়ে বললাম। যে কোনো লেখা তো এক অর্থে বানানো। একে আমি নির্মাণ বলে চিহ্নিত করি। নির্মাণ লিখলেই একটা প্রকল্পনা উঁকি দ্যায় পাশ থেকে।
কানাইলাল জানা তার কবিতানির্মাণের যে উপাদানগুলি ব্যবহার করে , তার মধ্যে তার দেশের বাড়ির ভূগোল তথা ভূমণ্ডল উঠে আসে। সঙ্গে থাকে অনেকগুলি সূর্যাস্তের কাহিনি। তার সঙ্গে পাকাপোক্ত ভাবে যুক্ত থাকে পোস্টমডার্ন চিন্তাচেতনা।
আর কানাই-এর দেশের বাড়ি মেদিনীপুরে , আমার বাঁকুড়ায়।সেই সূত্রেও আমার প্রতিবেশি কানাই। অথচ খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতে চাই এই তুতো সম্পর্কের জন্য যে কানাই বেশি বেশি করে সুযোগ পেয়েছে   কবিতাপাক্ষিকে  , এই অভিযোগ কখনো শুনিনি। এখনো কবিতা পাঠাতে বললেই কবিতা পাঠায়। এবার কবিতায়।
কপা ১৪ -তে ছিল ' চিঠি '। ১৪-র পর ২৮। এই ২৮ সংখ্যায় কবি কানাইলাল জানা প্রস্তাব করেছিল
' এবার এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং- এর চূড়ায় বসবে
বিশ্ব কবিসম্মেলন '। আরো লিখেছিল :
' কবির চোখ থেকে ঠিকরে পড়া আলোয় ঘন গভীর রাতেও / চলবে কবিতাপাঠ '।
এই কবিতাটি প্রকাশিত হবার পর কবিতার পাঠক সন্ধান পেয়েছিলেন জাদুবাস্তববোধ সম্পন্ন এক কবির।  যে তার ' হাওয়াই দ্বীপ ' কবিতায় লিখেছিল :
নদীমাতৃক হৃদয় , জলতরঙ্গের ঘরবাড়ি ,  দুর্বাঘাসের অভ্যর্থনা  ইত্যাকার নতুন শব্দবন্ধ। বাংলাকবিতা বুঝেতে পারল : সে এসে গেছে।
কপা ২৮ থেকে কপা ৩৪ - এর দূরত্ব  তিন মাস। এই তিন মাসের মধ্যেই আরো চারটি কবিতা। দানিকেন মানুষ , ফোয়ারা , পালাবদল , এখানে বেমানান আমি।
এখানে কানাইলাল যেসব ইনফরমেশন দিয়েছিল সেগুলি আপনাদের দেখিয়ে দিচ্ছি।
১ ॥ আসলে তো কেউ টেরই পায়নি যে এতদিনে আমি
       ময়দান থেকে মহাশূন্যের ছায়াপথ পর্যন্ত বানিয়ে
          ফেলেছি মসৃণ অ্যাসফাল্ট বিছানো রাস্তা।
২ ॥ চারদিকে কাঁচা আমের মতো মচমচে ঘাস !
৩ ॥ আর আমি সেই দৃশ্য দেখবো বলে ছায়ামশারি
        টাঙিয়ে গাছের ডালে ঘুমিয়ে থাকি --- অন্ধকার
         থেকে আরো অন্ধকারের চাদর ঢেকে...
৪ ॥  যেদিন থেকে জঙ্গলেই শুরু হল আমার       
         স্বাক্ষরতা অভিযান।

কবি কানাইলাল জানা-র এই যে দৃশ্য রচনা এর সঙ্গে
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক কিংবা জীবনানন্দ দাশের গ্রামের দৃশ্য মেলে না। এ এক অন্য গ্রাম।
কপা ৫৪ তে কানাই-এর একটি কবিতা। কবিতাটির নাম: আলি হোসেনের সানাই।
কানাই-এর মেয়ের বয়স তখন ঠিক একমাস।মধুমিতার ইচ্ছে ওর মেয়ের বিয়েতে সানাই বাজাক আলি হোসেন। একটা গল্পগন্ধ আছে। কিন্তু কানাই ওই কবিতাটিতে লিখে ফেলল একটি অনিবার্য লাইন।
' এ সানাই যে বাজায় সে তো পায় দেওদার বৃক্ষের আয়ু '। আর কবিতাটি শেষ হচ্ছে :
 ' তখন আলি হোসেনের হয়ে সানাই বাজাবে নিমন্ত্রিত তারাদল '।
আমি ময়ূরাক্ষী-র বিয়েতে উপস্থিত থাকব সেই সানাই -বাদন শোনার জন্য। কথা দিলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...