মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য ৭৮ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক বিভাগ

সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী


৭৮.
আজ সাম্যব্রত জোয়ারদার - এর কথা। সাম্যব্রত তখন থাকত উল্টোডাঙার এক হাউসিং -এ। উল্টোডাঙা থেকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের যাত্রাপথটি দেখতে  না পেলেও দেখতে পাচ্ছি যাত্রাসঙ্গীকে। সেই সঙ্গীটির নাম প্রসূন ভৌমিক। ওদের একটা পত্রিকা ছিল ' বিজল্প '। তবে একটা কথা বেশ মনে আছে ওরা নিজেদের স্টাইলে বইমেলাকে এনজয় করত। এর জন্য কিছুক্ষণ বর্ণময় থাকত বইমেলা।
কবিতাপাক্ষিক ২৫  = দ্বিতীয় বছর , প্রথম সংখ্যা। 14 মে 1994।
এর ঠিক আগে আগেই প্রকাশিত হয়েছে কবিতাপাক্ষিক গ্রন্থমালা সিরিজের দশটি কবিতার বই। প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়েছিল কলকাতা প্রেস ক্লাবে।
ওই সংখ্যায় সাম্যব্রত-র ' মৃত্যুর সঙ্গে কয়েক লাইন ' সিরিজের প্রথম ৭ টি কবিতা।
ওই সংখ্যায় প্রকাশিত অগ্রজ কবিদের কবিদের কবিতার সঙ্গে সাম্যব্রত-র কবিতার পার্থক্যটা আগে দেখিয়ে দিতে চাইছি।
১ ॥ বৃষ্টি কী-যে বৃষ্টি/ চোখে কিছুই দেখাই যায় না !
২ ॥  পশ্চিমের জানলাটার ঘষাকাচে জ্যোৎস্না, /
        আজ কি শুক্লপক্ষের রাত ?
৩ ॥ গোপনে কবুল করি এই ফক্কিকারী মিছে নিজের
        জীবন।
৪ ॥  শহর , আমাকে তুমি / কীসের গভীরে নিয়ে
          গেলে?
যে চারজন কবির কবিতার লাইন উদ্ধৃত করলাম , এই কবিরা সকলেই তাঁদের দশকের উল্লেখযোগ্য কবি। আর সাম্যব্রত-র কবিতার সঙ্গে তাঁদের কবিতার পার্থক্য দেখাবার কারণ সাম্য প্রথম থেকেই তার কবিতাকে ' নতুন কবিতা ' রূপে প্রমাণ করতে চেয়েছিল । এখন দেখাতে চাইছি কী সেই পার্থক্য ।
দেখুন , কী কী কারণে নতুন :
১ ॥ বুনোঘাসের নীচে বসে অসুস্থ পাখিরা / তখন
       পরস্পরের যৌনাঙ্গ পরীক্ষায় রত ,
২ ॥  পাঁচ আঙুলের ফাঁকে ডেভির আবছা ল্যাম্প
         পথনির্দেশ করছে।
৩ ॥  আসলে এসব কোনোকিছুই চন্দ্র জগতের
         দৃশ্যমান নয়।
৪ ॥  ডুবে যাওয়া সেই অর্ধেক জেটিঘাটে আমরা
       তিনজন / পরস্পর ডানা স্পর্শ করলাম।
৫ ॥  শিশিরে পড়ে রইল কার উজ্জ্বল হাতঘড়ি !
এবার মনোযোগ দিয়ে বিচার করে দেখুন আগের চার কবির কবিতার সঙ্গে সাম্যব্রত-র কবিতার মৌলিক পার্থক্যগুলি। এটাই হবার কথা। এটাই হয়েছিল। সকলের তো হয় না। কারো কারো হয়। আর সেগুলিকে চোখে আঙুল দিয়ে চিহ্নিত করার দায়িত্বটা তো আমার। একমাত্র আমারই। কারণ আমিই তো সেই কোন সকাল থেকে ' আপডেট আপডেট ' করে চিৎকার করে চলেছি।
সেসব কথা থাক। সাম্যব্রত -র কবিতার সন্ধান পেলাম কপা ৩৮ - এ। ওখানেও ' মৃত্যুর সঙ্গে কয়েক লাইন '।
ওই কবিতাটি থেকে আমি তুলে আনছি গুটিকয় চিহ্ন।ওই চিহ্ন ধরে হেঁটে গেলে এক নতুন যাত্রাপথের সন্ধান পাবেন। দেখুন সেই চিহ্নগুলি :
দীর্ঘ চুলের বারান্দা ॥ সুপ্ত আগ্নেয়গিরির কোঁচকানো মুখ  ॥  ক্ষতের মতো মৌচাক ॥ ওই তো রোদ্দুরে টানটান ওদের শুকনো খোলস
কপা ৪৪- এ ছিল একটি কবিতা ' কমরেড '। ছোটো কবিতা । ওই কবিতাটির প্রথম দুই এবং শেষেরও দুই লাইন = মোট চার লাইন পড়তে বলছি ।
' পার্টি অফিস বন্ধ রেখে আপাতত ফিরে গ্যাছেন কমরেড ঝাউ , / মধ্যবর্তী বাতাসে হেসে উঠছে দর্মার ফাঁকে আবছা চেয়ারম্যান। '
' কমরেড আরো উষ্ণতা চাই , আর চাই প্রতিদিন একটা করে চিঠি / দূর চা- বাগান , কোলিয়ারি থেকে ... "
এরপর সাম্যব্রত জোয়ারদার কবিতাপাক্ষিকের সঙ্গে এমনকী আমার সঙ্গেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ আমি জানি না। সবটা জানার কথাও আমার নয়। আমি সব জমানাতেই ক্ষমতা থেকে দূরে দূরেই থেকেছি। বা আমাকে দূরে রাখা হয়েছে।
তা যাই হোক , যতদিন লেখার ইচ্ছেটা থাকবে , ততদিন লিখে যাবো।
আর লেখাটা তো একান্তভাবে নিজের লেখা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...