রাঢ় অঞ্চলের মগসুর মাস:
গতকাল ছিল অগ্রহায়ণ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। যাকে সুবর্ণরেখৈক ভাষায় বলা হয় মগসুর মাসের গুরুবার। পশ্চিম সীমান্ত এলাকায়, বিশেষ করে সুবর্ণরেখা অববাহিকা অঞ্চল তথা ওড়িশা লাগোয়া সমগ্র অঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাসে শেষ বৃহস্পতিবার পালিত হয় খুব ধুমধাম করে। অগ্রহায়ণ মাসের চারটি বৃহস্পতিবার কে সুবর্ণরেখৈক ভাষায় বলা হয় " মগসুর মাসের গুরুবার "। ঐ অঞ্চলের সমস্ত চাষী পরিবারের খুব প্রাচীন গৃহলক্ষী পূজো। প্রত্যেক বাড়িতে বংশ পরম্পরায় মা ঠাকুমা রা গৃহলক্ষী বা ধানলক্ষী হিসেবে গৃহস্থ বাড়িতে ঠাকুর ঘরের কোণে মাটির হাঁড়িতে পেতলের হাতি, ঘোড়া, পায়রা রাখা থাকে। এবং একটি কাঠের খোটলি রাখা থাকে। বছরে দুবার ঐ হাতি ঠাকুর হাঁড়ি থেকে বের হোন। একবার কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর সময আর অগ্রহায়ণ মাসের চারটি বৃহস্পতিবার বা শেষ বৃহস্পতিবার। বাড়ির মা ঠাকুমা রা ঐ গৃহলক্ষী কে হাঁড়ি থেকে বের করে লেবু ও তেঁতুল দিয়ে মেজে, গাওয়া ঘি মাখিয়ে স্নান করান। তারপর ঐ কাঠের খোটলির মধ্যে ধান ছড়িয়ে তার ওপর সুন্দর ভাবে সাজানো হয় গৃহলক্ষী মায়ের বিগ্রহ । গাঁদা ফুলের মালা, বড় বড় গাঁদা, পিঁইতিফুল, চন্দন, সিঁন্দুর, দুর্বা, কুলপাতা, আঁখের ডোগা ও আতপ চালের বাটা ইত্যাদি নৈবেদ্য সহযোগে। শেষ বৃহস্পতিবার তিন বার পুজো করা হয়। সকালে পূজোর সময় ফল ও পঞ্চামৃত(দুধ,গুড়, আঁখ, কলা, আতপ চালের বাটা ইত্যাদি মাখা)। দুপুরে পূজোর সময় চালের গুড়ি ও গুড়ের পিঠে, পায়েস, আতপ চালের ভাত ও পাঁচ রকমের সব্জি গাওয়া ঘি তে ভাজা, লালআলু, রম্ভা, গোটা মুগ কালাই সিদ্ধ নিবেদন করা হয় প্রসাদ হিসেবে। সন্ধ্যা বেলা তে ধূপ,ধুনা ও প্রদীপ সহযোগে সন্ধ্যা আরতি হয় এবং লক্ষ্মী চরিত্র পাঁচালি মা ঠাকুমা রা পাঠ করেন শঙ্খ ধ্বনি সহযোগে। এই পূজোর অনেক নিয়ম। উপোস থাকতে হয়, অন্ন রান্না হয় না। পিঠে ও পায়েস খায়। আগেরদিন নিরামিষ খেতে হয়। আগেরদিন রাত্রিতে কাচা কাপড় পরে মা ঠাকুমা রা আতপ চালের বাটা কে জল গুলে আল্পনা দেন। গোটা ঘরের দরজার কাছে লক্ষ্মীর পায়ের পাঁচ আল্পনা দেওয়া হয়। অগ্রহায়ণ মাসে অধিকাংশ চাষীদের ধান কাটা শেষ হয়। ধান এনে খামারে জমা রাখা হয়। ধান আনা শেষ হলে "ধান গাছসহ মাটি"নিয়ে এসে ঐ খামারে ধানের গাদার মধ্যে বিশেষ ভাবে রাখা হয়। শেষ গুরুবার (বৃহস্পতিবার) দিন পূজো করা হয়। যাদের ধান কাটা শেষ হয় না তাঁরা মকরসংক্রান্তির দিন ঐ পূজো টা করেন। প্রতিবেদন : গবেষক ডঃ শান্তনুপাণ্ডা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন