অলীক
রাজীব বরদলৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে
একটি না একটি কোনো ঘটনা পরিঘটনার শিকার হচ্ছে
এই আনন্দিত মহাবিশ্ব।
হয়তো কোনো সুনামি ধুঁয়ে নিচ্ছে পৃথিবীকে
নতুবা ভূমিকম্পে খসছে উচ্চশির…
তারচেয়েও, মানবসৃষ্ট কোনো বিস্ফোরণ কাণ্ড
শঙ্কা অথবা উদ্দীপনা।
প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে
পরিবর্তন অথবা রূপান্তর।
কিছু না কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে…
মানুষের আবেগ আচরণ চাল চলন কথাবার্তা চিন্তা তামাম গবেষণা ইত্যাদি।
পরিবর্তন জীবন সমুদ্রে
কোন প্রাণীকুলের বিলয় অথবা
জীবাণুর সৃষ্টি রহস্যময় করে তুলেছে বিশ্বকে
উদ্বেগ বেড়েছে, ধংসের অনুকূলে।
তবু, মূল্যহীন নয় এই পরিবর্তন
অনুকুল বা প্রতিকুল
অজ্ঞাতসারে হয়ে যায় এই সমস্ত কিছু।
স্বাভাবিক সময়।
কেবল মাত্র
প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে অস্থিরতা বাড়ছে মানুষের।
অস্বাভাবিক মানুষ, এই রোগ পরিবর্তনের।
প্রান্ত
রাজীব বরদলৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
জীবনের প্রান্তরে কোলাহলহীন পৃথিবী।
শান্ত নীলাভ আকাশ, সুশীল শীতল বায়ু
উন্মাদহীন নদীর গতি
যন্ত্রণা বিহীন তিমির রাত ।
নিঃশব্দ ঝিল্লির সুর, সূর্যহীন তারা
শিশির না ঝরা এক বুক স্যাঁতসেতে জ্যোৎস্না।
চেতনাহীন স্বপ্ন,উলঙ্গ যৌবন,
নিরুত্তাপ ক্লান্ত হৃদয়।
স্থির চাহনিতে স্মৃতির প্রতিবিম্ব,
নেপথ্যে করুণ বাঁশির সুর।
অদূরে যেন নিবিড় অপেক্ষায় কেউ
শুভ্র মেঘালি ঢেকে দেবে স্মৃতির সাতরঙী আভা।
অহেতুক…
রাজীব বরদলৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
তুমি না ডাকলেও আমি শুনতে পাই
তোমার মনের গুপ্ত কথা, যে কথা
বুকের মধ্যে প্রতিনিয়ত সবুজ হয়ে ভাসে…
বাতাস হয়ে আমার সর্বশরীরে শিহরণ তোলে।
তুমি না হাসলেও আমার দু চোখে নাহরের ফুল ফোটে,কলকলিয়ে থাকা শিশুর
ঠোঁট একটি কোমল মুখ দোলা দিয়ে…
এক অবুঝ অতৃপ্ত বাসনা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
দূর পথের এক নিরিবিলি সান্নিধ্য…
রুপালি চুলে এখনও মোহনীয়া আকর্ষণ, তুমি।
আজকাল সাদা রঙ আমার বড় প্রিয়
যদিও লাল রং তোমার ভালোবাসার রং।
আগুন ফুল আমার বুকে ফুটেছে।
আত্মকেন্দ্রিক
রাজীব বরদলৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
মানুষ এখন জীবনবোধের মূল্যায়ন করেনা।
আত্মকেন্দ্রিকতার চিতার আগুনে
মানবদরদী হৃদয়গুলি এখন সারশূন্য।
বেঁচে থাকতে মানুষ এখন মানুষের কাছ থেকে
দূরে থাকতে ভালোবাসে।
নিজেকে সরিয়ে রাখার জন্য
পদূলির দরজায়' স্বাগতম' এর পরিবর্তে লিখে রাখে
'কুকুর থেকে সাবধান'!
প্রশংসিত শব্দগুলি মানুষের কাছে এখন অশ্লীল।
নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ঘরোয়া কুকুরটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়
প্রাত্যহিক কথা বার্তাগুলি।
শ্মশানময় উঠোন বিহীন ঘরের দামি বারান্দা মুখে,
ধাবা,ফাস্টফুড
অথবা শহরের বাইরের নামিদামী রেস্তোরাঁ গুলিতে
তুমুল বিলাসী আড্ডা।
বিষয়– গৃহপালিত কুকুর, কাপড়চোপড়, ফ্ল্যাট, টাকা পয়সা,
নাইট ক্লাব অথবা
মাফিয়া কালো টাকা শপিং মল ইত্যাদির
বহু ব্যস্ত তালিকা।
পরিবর্তনের ঢেউয়ে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়া মানুষের চরিত্র মানেই
এখন রাস্তার পাশের পূতিগন্ধময় এক একটি ডাস্টবিন।
বেঁচে থাকার জন্য…
রাজীব বরদলৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
ফিরে আসার কথা বলে প্রত্যেকেই একদিন সামনের দিকে এগিয়ে যায়
কে আর ফিরে আসে।
আসব বলে ভেবে সুযোগ একটা যে খুঁজে বেড়ায়
আর কখনও ফিরে আসেনা ফেলে যাওয়া সোনালি পথে।
সামনের দিকে একবার পা রাখলেই
বর্ষার বৃষ্টিতে পিছল হয়ে পড়ে ফেলে আসা পথ
উপড়ে পড়ে কাছের কোমল মাটির গাছ, শিকড়
পথের বুকে খসে পড়ে বালুকাময় নির্লজ্জ পাহাড়
নদীর বুকের সাঁকো ।
উজাতে চাইলে, উজিয়ে আসে কেবল কলজের দুঃখ
রাতের এক ঝাঁক তুফানের মতো
স্মৃতির খড়কুটোগুলি।
জীবনের কথা বললে সকলেই মাদকতা ভালোবাসে
বেঁচে থাকা ছেলেরা দিনগুলি দীর্ঘ করে নিতে চায়।
শূন্যতার মধ্যেও বিরল
সুখানুভূতিতে
নিজেকে সমৃদ্ধ করে আশাগুলি পুষে রাখে সংগোপনে।
কবি পরিচিতি-অসমের গোলাঘাট জেলার গনকপুখুরিতে ১৯৬৮ সনে কবি রাজীব বরদলৈর জন্ম হয়।বর্তমানে ভারতীয় জীবন বীমা বিভাগের কলকাতা শাখায় কর্মরত।প্রকাশিত কাব্য সংকলন গুলি যথাক্রমে ‘প্রেম হৃদয় পৃথিবী’(২০১২), ‘র’দালির দেশ লৈ’,‘নৈ্র বুকুয়েদি’(২০১৩) ‘নিজানত নিরলে’(২০১৬),In depth of the river’(অনুবাদ)।এছাড়া দুটি একাঙ্ক নাটক ‘স্বদেশ আরু স্বাধীন্তা’(১৯৮৩) এবং সংলাপ।অসমের সাহিত্য সংস্কৃতিমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
অসাধারণ লাগলো। রাজীব বরদলৈ অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে কবিতাগুচ্ছ লিখেছেন। ওনার কলমে আজকের সমাজের সঠিক প্রতিফলন ঘটেছে। খুব ভালো লাগলো। আরো লেখা পড়ার প্রতীক্ষায় রইলাম।
উত্তরমুছুন