স্মৃতিকথা ১৪
এই আমি চরিত্রনীলাঞ্জন কুমার
( গত সংখ্যার পর)
গড়বেতার আর এক বিশেষত্ব ছিল রাজনীতি । পলিটিক্স এমন পর্যায়ে এখানে পৌচেছিল যে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেপুলেদের ভেতরও তা ছড়িয়ে পড়েছিল । লেগে থাকতো নিয়মিত মিছিল মিটিং । মাঝে মধ্যে বি ডি ও অফিস ঘেরাও করতো বিরোধী দল। বেশ মনে আছে এখানে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল রাজনীতিতে । একজন সিপিআই এর সরোজ রায় । অন্যজন কংগ্রেসের পন্ঞ্চানন সিংহ রায় । পন্ঞ্চানন বাবু আমাদের গড়বেতা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন । গড়বেতায় দেখেছি ধর্মঘট নিয়ে মানুষের ব্যাপক মাতামাতি । দু পক্ষই বেশ জোরালো ছিল । একে অপরের নেতৃত্ব নিয়ে ছড়া কাটা হত । তখন দু- তিনটে ছড়া বাচ্চা ছেলেপুলেদের মুখে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল । শ্রদ্ধেয়দ্বয় প্রয়াত প্রফুল্ল চন্দ্র সেন ও অতুল্য ঘোষকে কেন্দ্র করে মজাদার ছড়া সিপিআই বানিয়েছিল যা আমরা নিয়মিত বাচ্চাদের মুখে শুনতাম । যেমন:
' বাজার থেকে কিনলাম বেগুন
দেখতে প্রফুল্ল
বাড়িতে এসে কুটে দেখি
কিংবা,
' অতুল্য বেগুন কানা
ভোট পাবে এক আনা '
আবার কংগ্রেস থেকে ছড়া বানানো হত শ্রদ্ধেয় প্রয়াত সরোজ রায় কে কেন্দ্র করে :
' হায় হায় হায় হায়
হারবে রে সরোজ রায় । '
কিংবা,
' ভোটে হেরে মুখ লুকিয়ে
বলতো কে যায় ?
সরোজ রায় সরোজ রায় সরোজ রায় ।'
আমি দেখেছি একবার পন্ঞ্চানন সিংহ রায় আর একবার সরোজ রায় কে জিততে । তবে গড়বেতা থেকে ছ বছর বাদে মেদিনীপুর শহরে স্হায়ীভাবে চলে আসার পর আর খোঁজ রাখা হয়নি জেতা হারার বিষয়ে । যা হোক এভাবে কাটছিল দিন কিন্তু করালী বাবুর বাড়িতে নিত্যি ঝামেলা শুরু হওয়ায় বাবা নতুন করে ঘর খুঁজতে লাগলো । পাওয়াও গেল একটা সুন্দর বাড়ি । যার ভেতর দুটি ঘর ও বাইরে প্রশস্ত দালান । যার ফলে খেলাধুলা করার ক্ষেত্রে বেশ প্রশস্ত জায়গা পাওয়া গেল । তখন সিক্স থেকে সেভেন উঠেছি ।
বাড়িওলার নাম পন্ঞ্চানন । গড়বেতা চটিতে তাঁর ছিল মিষ্টি দোকান । তাই সকলে তাকে পন্ঞ্চু ময়রা বলতো । ভদ্রলোকের দোকানের পানতুয়া স্টাইলে অসাধারণ 'মাতৃভোগ ' এখনো মুখে লেগে আছে । বাবা যখন গড়বেতায় এক বছর একলা থাকতো তখন বাবার রাতের খাবার ছিল ছ টা রুটি আর দুটি মাতৃভোগ । সেই থেকে বাবার সঙ্গে পন্ঞ্চু বাবুর আলাপ । যাই হোক ভালো ঘরদোর পেয়ে আমরা বেশ গুছিয়ে বসলাম । দাদা তখন কলকাতায় ভাগ্য অন্বেষনে বড়মামা র কাছে । পরবর্তীতে গোদাপিয়াশালে শিক্ষকতায় যোগ দেয় ।
আমার স্কুলের পড়ার দিকে যতটা মন তার থেকে অনেক বেশি মন প্রকৃতির প্রতি । সারাক্ষণ নানান ভাবনায় সময় কাটে । বাড়ির সামনের ধূধূ মাঠ যেন আমায় টানে । বাড়ির ছাদের থেকে শিলাবতী নদী রূপোলি রেখার মতো দেখা যায় । যা আমাকে বিশেষ ভাবে নাড়া দেয় । আমি যেন নিজেকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করি ।পড়ার বইএর বদলে দেশ, অমৃত, আনন্দবাজার পত্রিকা বেশি টানে । সেই সঙ্গে মুন্সেফ অফিসের সামনের পানের দোকানের থেকে দশ পয়সা ভাড়া দিয়ে স্বপন কুমারের লেখা গোয়েন্দা কাহিনির সিরিজ পড়ার বইএর মধ্যে লুকিয়ে রেখে পড়ে ফেলার অভ্যাস রপ্ত হয়ে গেছে । সেই সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে স্বপন কুমারের বই ও কিনেছিলাম । সেগুলো বাঁধাই করেছিলাম । কালের নিয়মে তা নিশ্চিহ্ন হয়েছে ।
Eto monograhi lekha porar jonno sobsomoy mukhiye thaki
উত্তরমুছুন