মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২২

স্মৃতিকথা ১৪ ।। এই আমি চরিত্র ।। নীলাঞ্জন কুমার, Nilanjan Kumar

 স্মৃতিকথা ১৪

                               এই আমি চরিত্র

                              নীলাঞ্জন কুমার


                             ( গত সংখ্যার পর) 





গড়বেতার আর এক বিশেষত্ব ছিল রাজনীতি । পলিটিক্স এমন পর্যায়ে এখানে পৌচেছিল যে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেপুলেদের ভেতরও তা ছড়িয়ে পড়েছিল । লেগে থাকতো নিয়মিত মিছিল মিটিং । মাঝে মধ্যে বি ডি ও অফিস ঘেরাও করতো বিরোধী দল। বেশ মনে আছে এখানে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল রাজনীতিতে । একজন সিপিআই এর সরোজ রায় । অন্যজন কংগ্রেসের  পন্ঞ্চানন সিংহ রায় । পন্ঞ্চানন বাবু আমাদের গড়বেতা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন । গড়বেতায়  দেখেছি ধর্মঘট নিয়ে মানুষের ব্যাপক মাতামাতি । দু পক্ষই  বেশ জোরালো ছিল । একে অপরের নেতৃত্ব নিয়ে ছড়া কাটা হত । তখন দু- তিনটে ছড়া বাচ্চা ছেলেপুলেদের মুখে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল । শ্রদ্ধেয়দ্বয় প্রয়াত  প্রফুল্ল চন্দ্র সেন ও অতুল্য  ঘোষকে কেন্দ্র করে মজাদার ছড়া সিপিআই বানিয়েছিল যা আমরা নিয়মিত বাচ্চাদের মুখে শুনতাম । যেমন: 
             ' বাজার থেকে কিনলাম বেগুন
                               দেখতে প্রফুল্ল
                 বাড়িতে এসে কুটে দেখি
                                কানা অতুল্য । '

কিংবা, 
              ' অতুল্য বেগুন কানা
                 ভোট পাবে এক আনা '

আবার কংগ্রেস থেকে ছড়া বানানো হত শ্রদ্ধেয় প্রয়াত  সরোজ রায় কে কেন্দ্র করে :

               ' হায় হায় হায় হায়
                  হারবে রে সরোজ রায় । '

কিংবা,

         ' ভোটে হেরে মুখ লুকিয়ে
                 বলতো কে যায় ?

        সরোজ রায় সরোজ রায় সরোজ রায় ।'

      আমি দেখেছি একবার পন্ঞ্চানন সিংহ রায় আর একবার সরোজ রায় কে জিততে । তবে গড়বেতা থেকে  ছ বছর  বাদে মেদিনীপুর শহরে স্হায়ীভাবে চলে আসার পর আর খোঁজ রাখা হয়নি জেতা হারার বিষয়ে । যা হোক এভাবে কাটছিল দিন কিন্তু করালী বাবুর বাড়িতে নিত্যি ঝামেলা শুরু হওয়ায় বাবা নতুন করে ঘর খুঁজতে লাগলো । পাওয়াও গেল একটা সুন্দর বাড়ি । যার ভেতর দুটি ঘর ও বাইরে প্রশস্ত দালান । যার ফলে খেলাধুলা করার ক্ষেত্রে  বেশ প্রশস্ত জায়গা পাওয়া গেল । তখন সিক্স থেকে সেভেন উঠেছি  ।
                   বাড়িওলার নাম পন্ঞ্চানন । গড়বেতা চটিতে  তাঁর ছিল মিষ্টি দোকান । তাই সকলে তাকে পন্ঞ্চু ময়রা বলতো । ভদ্রলোকের দোকানের পানতুয়া স্টাইলে অসাধারণ 'মাতৃভোগ ' এখনো মুখে লেগে আছে । বাবা যখন গড়বেতায়  এক বছর একলা থাকতো তখন বাবার রাতের খাবার ছিল ছ টা রুটি আর দুটি  মাতৃভোগ । সেই থেকে বাবার সঙ্গে পন্ঞ্চু বাবুর আলাপ  । যাই হোক ভালো ঘরদোর পেয়ে আমরা বেশ গুছিয়ে বসলাম । দাদা তখন কলকাতায় ভাগ্য অন্বেষনে বড়মামা র কাছে । পরবর্তীতে গোদাপিয়াশালে শিক্ষকতায় যোগ দেয় ।
                        আমার স্কুলের পড়ার দিকে যতটা মন তার থেকে অনেক বেশি মন প্রকৃতির প্রতি । সারাক্ষণ নানান ভাবনায় সময় কাটে । বাড়ির  সামনের ধূধূ মাঠ যেন আমায় টানে । বাড়ির ছাদের  থেকে শিলাবতী নদী রূপোলি রেখার মতো দেখা যায় ।  যা আমাকে বিশেষ ভাবে নাড়া দেয় । আমি যেন নিজেকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করি ।পড়ার বইএর বদলে দেশ,  অমৃত,  আনন্দবাজার পত্রিকা বেশি টানে । সেই সঙ্গে মুন্সেফ অফিসের সামনের পানের দোকানের থেকে দশ পয়সা ভাড়া দিয়ে স্বপন কুমারের লেখা গোয়েন্দা কাহিনির সিরিজ পড়ার বইএর মধ্যে লুকিয়ে রেখে পড়ে ফেলার অভ্যাস রপ্ত হয়ে গেছে । সেই সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে স্বপন কুমারের বই ও কিনেছিলাম । সেগুলো বাঁধাই করেছিলাম । কালের নিয়মে তা নিশ্চিহ্ন হয়েছে ।

                                                            ( চলবে) 
              


1 টি মন্তব্য:

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...