মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

স্মৃতিকথা ১৫ ।। এই আমি চরিত্র ।। নীলাঞ্জন কুমার, Nilanjan Kumar

 

স্মৃতিকথা ১৫                  

                              এই আমি চরিত্র

                                নীলাঞ্জন কুমার


                          ( গত সংখ্যার পর)



                                 ।। ১৫।।

নিয়মমতো দিন যাচ্ছে,  আমি নিজেকে জানার চেষ্টা করছি । আমি কে? কোথা থেকে এলাম?  এই সব রহস্য নিয়ে চিন্তাভাবনা  আমাকে মাঝে মধ্যে পেয়ে বসতো । এই আমি চরিত্র যে কেবলমাত্র চরিত্রই,  অন্য কিছু নয় তা বোঝার মতো বয়স হয়নি বলে জিজ্ঞাসাগুলো জিজ্ঞাসাই রয়ে গেছে । কালো কালো অক্ষরের বই এর পাতাগুলো পড়তে পড়তে সেই পড়া কৌতুহল তৈরি করতে পারে জীবনের অন্তর্গত প্রশ্নগুলোর । মা বাবা তাদের মতো করে আমাদের প্রতিপালন করছে এও যে এক নিত্যনৈমিত্তিকতা । সব মিলিয়ে গতানুগতিক জীবন পদ্ধতি আমার কাছে পছন্দসই ছিল না।  আমি চাইছিলাম প্রাণবন্ত জীবন, যা আমাকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে যাবে ।
                 একথা বলতে পারি,  আমি চাইছিলাম এক ছোট্ট মফস্বল শহরের সংকীর্ণ জীবন থেকে বেরিয়ে অনেক বেশি স্পেশ । সংকীর্ণ মানসিকতার সহপাঠী,  যাদের সঙ্গে একটু বেশি মেলামেশার চেষ্টা করতাম তাদের নিচু মানসিকতা আমাকে ব্যথিত করতো । আমি কিছু বলতে চাই নিজের মতো করে কারোর কারোর কাছে । বুঝতে পারতাম তারা তাতে আগ্রহী নয় । তারা চায় তাদের কথা সবাই শুনুক । আমি কারোর কথা শুনবো না । যদি তার মধ্যে কেউ একটু করে উজ্জ্বল মনে হত তাকে দমন করার জন্য তারা কতখানি নিচে নামতে পারতো তা কহতব্য নয় । সে কারনে প্রকৃত বন্ধু আমি পাইনি গড়বেতাতে। তখন আমার সঙ্গী ছিল আমার ছোড়দি । সে আমার কথা কতটা বুঝতো জানা নেই,  কিন্তু চুপ করে আমার কথা শুনতো । তাতেই আমার আনন্দ ছিল ।
            গড়বেতার সহপাঠীদের মানসিকতার থেকে বেশ কিছুটা আলাদা হওয়ার কারনে আমার মানুষের থেকে নৈসর্গিক দিক বেশি করে টানতো । মনে আছে চুনারাম সাঁওতালের গরুর গাড়িতে করে আমাদের পরিবারের বগড়ির মেলা দেখতে যাওয়া । মাঝে মধ্যে সকলে মিলে বাড়ির সামনে অরুণোদয় সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাওয়া । যা আমার দিনযাপনের গ্লানিকে কিছুটা হালকা করে দিত ।
            বন্ধুহীন এই আমি মনে মনে যে ভাবনা ভাবতাম তার ভেতর থেকে উপলব্ধি গড়ে উঠতো তা হল আমার ভেতর এমন কিছু আছে যা নিয়ে মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারি । আমার চিন্তাভাবনার ভেতরে যে জিজ্ঞাসা গড়ে উঠতো তা যে সাধারণ মানুষের থেকে অন্যরকম তা ওই বয়সেই বুঝতে পারতাম । মা বাবার মোটা দাগের গল্প দিদিদের নিজেদের ভেতর পুরুষ নিয়ে আলোচনা বড় ক্লিশে মনে হত ।আমার ভাবুক অবস্থান যে বাস্তবের বাইরে তা বাবা মা বুঝতে পারতো । তারা আমায় বোঝাতো পড়াশোনা ভালো না করলে না খেয়ে মরতে হবে  কিন্তু আমি তা কানে তুলতাম না । প্রতি বছর যা হোক তা হোক করে পাস করা এই আমি নিজস্ব কেরিয়ার নিয়ে কোনদিনও ভাবতাম না । গানের ভেতর দিয়ে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করতাম । তাই নিয়ে হাজারো উল্লাস তখন আমায় ঘিরে । বাবা প্রতি পুজোর সময় কিনে আনতো এইচ এম ভি র শারদীয়ার গানের বই ' শারদঅর্ঘ ' ।আমি এই গানের কথাগুলোর সঙ্গে রেডিও র  অনুরোধের আসরের নতুন পুজোর গানগুলো  মেলাতাম । এও আমার আর এক আনন্দ । আর ছিল আমাদের এক টিয়া পাখি । তাকে কত নামে ডাকতাম । আমার আজব ভালোবাসা পাখিটির কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠতো । আমি তার ভালো নাম দিয়েছিলাম ' মন্ঞ্জুলিকা ' ডাক নাম ' মুনমুন ' । সে পাখির কথা আমার আজও অক্ষত আছে ।

                                                             ( চলবে)



আমার স্যামসাং গ্যালাক্সি স্মার্টফোন থেকে পাঠানো হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...