রম্যরচনা
কাশীনাথ সাহা
লকডাউনের সুখ!
আমাদের সুখটা যে কোথায় সেটা আজও বুঝতে পারলাম না। নিজের সবকিছু থাকলেও পরের সুখ দেখলেই আমাদের মটকা গরম হয়ে যায়। ও কেন এতো সুন্দরী হলো? আরে বাবা ও সুন্দরী হলো তো হলো তাতে তোমার এতো গাত্রদাহ কেন?তুমি তো কুৎসিত নও! নিজের বউ টুকটুকে এক্কেবারে মাধুরী দিক্ষীত। তাতেও সন্তুষ্ট নয়, ফাঁক ফোঁকরে চোরা পথে অন্যদিকে চোখ । পরের ভাল আমরা দেখতেই পারি না। পরের ভাল কিছু দেখলেই আমাদের চোখ টাটায়। চোখে জয়বাংলা! আমার বর ডাক্তার ঠিক আছে, কিন্তু ওর স্বামী ইঞ্জিনীয়ার হলেই আমার সুখ ভোকাট্টা।
এই ভাইরাস সময়ে কোন কাজকম্মো নাই, অফিস আদালত নাই খাচ্ছি দাচ্ছি তিনবেলা নাক ডাকছি । এতো সুখ এই জন্মে আর কবে পেয়েছি? একই বউকে বারবার দেখতে হচ্ছে বলে একটু যে বিরক্ত হচ্ছি না তা নয়। কিন্তু গলাভর্তি সুখের কাছে ওটুকু যন্ত্রণা কুছ ভী নেহি। সকাল দশটার সময় বেশ গভীর নিদ্রামগ্ন ছিলাম, গিন্নি গুঁতো দিল, কালরাতের এঁটো থালাগুলো এখনো পড়ে আছে কখন মাজবে? আর বাসি কাপড় গুলো ধোবে কখন? ঘুমঘুম চোখে বললাম, সকাল হয়ে গেছে! গিন্নি তারপর যে বাক্যবান বর্ষন শুরু করলো। সেটা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বোঝে! সেই যে রামায়ণ না মহাভারতে কোথায় যেন পড়েছিলাম, ' রোগীর যন্ত্রণা সেজন বোঝে না হয়নি যে জন রোগী, রোগীর যন্ত্রণা সেই বোঝে যে জন ভুক্তভোগী '। কথা না বাড়িয়ে কাজে মনোনিবেশ করলাম। আমি নির্বাচিত স্বামী নই মনোনীত স্বামী। আমার গনতান্ত্রিক অধিকার কতোটুকু, সংবিধান দেখা হয়নি! দেখার ফুরসতই পেলাম না। যখন ফুরসত পেলাম তখন গাড্ডায় পড়ে গেছি। এই দেখুন একেই বলে সুখে থাকতে ভুতে কিলানো। মিসেস যদি একবারও আমার মনের কথা শুনতে পায় তাহলো আমার দফারফা। কি ভাবছেন, আমার মনের কথা ও বুঝবে কি করে? আপনি মহান ঈশ্বরের এই সৃষ্টিকে চিনেন না! আমি এখন কি ভাবছি সেটা নস্যি আগামী বছর কি ভাবতে পারি সেটাও ওনারা জানেন। এই রহস্য ভেদ করবার জন্য ভগবান ওদের আর একটা সলিড অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে রেখেছেন।
লকডাউনের প্রথম দিন বউ আদুরে আদুরে গলায় বলল, হেঁ গো তুৃমি মাংস রাঁধতে জানো! বউয়ের কাছে বীরত্ব দেখানোর একটা চান্স পেয়ে বললাম পারি না মানে, আমার মাংস একবার খেলে জীবনে ভুলতে পারবে না। যাঃ দুষ্টু, কি যে বলো না, তোমার মাংস তো ডেলি খাচ্ছি। খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে আমি খাসি মাংসের কথা বলছি। নো বল করেছিলাম, শেওয়াগের ব্যাট ওভারবাউন্ডারি ঝেড়ে দিয়েছে। ভুল শুধরে বললাম, আমার রান্না খাসি মাংস খাও জনম জনম ইয়াদ রাখোগী।
মাংস রান্না করে গিন্নিকে একবার খাইয়ে এমন গাড্ডায় পড়েছি এখন প্রতিদিনই মাছ মাংস সব রাঁধতে রাঁধতে আমি অফিসে চাকরি করতাম না হোটেলের কুক সেটাই ভুলতে বসেছি।
টিভিতে পত্র লিখন শিখছিলাম। রাজ্যপাল আর মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি চালাচালিতে বাঙালি হিসেবে ক'দিনে বেশ সমৃদ্ধ হয়েছি। সেটাই মন দিয়ে শিখছিলাম। মিসেস আদুরে গলায় ডাকলো। কই গো বাজার থেকে একটু মিষ্টি আনো না। এতো আদুরে ডাককে অবহেলা করবার তাকৎ কোনও পুরুষ সিংহের আছে কিনা জানিনা। তবুও মিনমিন করে বললাম, আমাদের জেলা রেড জোন হওয়ার পর পুলিশ বাইরে বেরুলেই পেটাচ্ছে। দুদিন পরে আনলে হয় না? বউ আদুরে গলায় বলল, তুমি কেমন স্বামী গো বউয়ের জন্য লোক হিমালয়ের চুঁড়া থেকে লাফ দেয়, আর তুমি সামান্য পুলিশের ডান্ডার ভয় করছো! ছিঃ। অগত্যা। বাইরে বেরুনোর জন্য তৈরি হলাম। বউ বললো একটু দেশী মুরগির খোঁজ করবে তো, কতোদিন দেশী মুরগী খাওয়া হয়নি। আমি রাগে গরগর করতে করতে মিনমিনে গলায় বললাম, মিথ্যা কথা বলো না, আমাকে তো ডেলি খাচ্ছো!৷ বউ আদুরে গলায় খিলখিলিয়ে বলল, ওমা তুমি দেশী কোথায় ওতো ব্রয়লার।টেস্ট লেস!
কাশীনাথ সাহা
লকডাউনের সুখ!
আমাদের সুখটা যে কোথায় সেটা আজও বুঝতে পারলাম না। নিজের সবকিছু থাকলেও পরের সুখ দেখলেই আমাদের মটকা গরম হয়ে যায়। ও কেন এতো সুন্দরী হলো? আরে বাবা ও সুন্দরী হলো তো হলো তাতে তোমার এতো গাত্রদাহ কেন?তুমি তো কুৎসিত নও! নিজের বউ টুকটুকে এক্কেবারে মাধুরী দিক্ষীত। তাতেও সন্তুষ্ট নয়, ফাঁক ফোঁকরে চোরা পথে অন্যদিকে চোখ । পরের ভাল আমরা দেখতেই পারি না। পরের ভাল কিছু দেখলেই আমাদের চোখ টাটায়। চোখে জয়বাংলা! আমার বর ডাক্তার ঠিক আছে, কিন্তু ওর স্বামী ইঞ্জিনীয়ার হলেই আমার সুখ ভোকাট্টা।
এই ভাইরাস সময়ে কোন কাজকম্মো নাই, অফিস আদালত নাই খাচ্ছি দাচ্ছি তিনবেলা নাক ডাকছি । এতো সুখ এই জন্মে আর কবে পেয়েছি? একই বউকে বারবার দেখতে হচ্ছে বলে একটু যে বিরক্ত হচ্ছি না তা নয়। কিন্তু গলাভর্তি সুখের কাছে ওটুকু যন্ত্রণা কুছ ভী নেহি। সকাল দশটার সময় বেশ গভীর নিদ্রামগ্ন ছিলাম, গিন্নি গুঁতো দিল, কালরাতের এঁটো থালাগুলো এখনো পড়ে আছে কখন মাজবে? আর বাসি কাপড় গুলো ধোবে কখন? ঘুমঘুম চোখে বললাম, সকাল হয়ে গেছে! গিন্নি তারপর যে বাক্যবান বর্ষন শুরু করলো। সেটা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বোঝে! সেই যে রামায়ণ না মহাভারতে কোথায় যেন পড়েছিলাম, ' রোগীর যন্ত্রণা সেজন বোঝে না হয়নি যে জন রোগী, রোগীর যন্ত্রণা সেই বোঝে যে জন ভুক্তভোগী '। কথা না বাড়িয়ে কাজে মনোনিবেশ করলাম। আমি নির্বাচিত স্বামী নই মনোনীত স্বামী। আমার গনতান্ত্রিক অধিকার কতোটুকু, সংবিধান দেখা হয়নি! দেখার ফুরসতই পেলাম না। যখন ফুরসত পেলাম তখন গাড্ডায় পড়ে গেছি। এই দেখুন একেই বলে সুখে থাকতে ভুতে কিলানো। মিসেস যদি একবারও আমার মনের কথা শুনতে পায় তাহলো আমার দফারফা। কি ভাবছেন, আমার মনের কথা ও বুঝবে কি করে? আপনি মহান ঈশ্বরের এই সৃষ্টিকে চিনেন না! আমি এখন কি ভাবছি সেটা নস্যি আগামী বছর কি ভাবতে পারি সেটাও ওনারা জানেন। এই রহস্য ভেদ করবার জন্য ভগবান ওদের আর একটা সলিড অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে রেখেছেন।
লকডাউনের প্রথম দিন বউ আদুরে আদুরে গলায় বলল, হেঁ গো তুৃমি মাংস রাঁধতে জানো! বউয়ের কাছে বীরত্ব দেখানোর একটা চান্স পেয়ে বললাম পারি না মানে, আমার মাংস একবার খেলে জীবনে ভুলতে পারবে না। যাঃ দুষ্টু, কি যে বলো না, তোমার মাংস তো ডেলি খাচ্ছি। খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে আমি খাসি মাংসের কথা বলছি। নো বল করেছিলাম, শেওয়াগের ব্যাট ওভারবাউন্ডারি ঝেড়ে দিয়েছে। ভুল শুধরে বললাম, আমার রান্না খাসি মাংস খাও জনম জনম ইয়াদ রাখোগী।
মাংস রান্না করে গিন্নিকে একবার খাইয়ে এমন গাড্ডায় পড়েছি এখন প্রতিদিনই মাছ মাংস সব রাঁধতে রাঁধতে আমি অফিসে চাকরি করতাম না হোটেলের কুক সেটাই ভুলতে বসেছি।
টিভিতে পত্র লিখন শিখছিলাম। রাজ্যপাল আর মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি চালাচালিতে বাঙালি হিসেবে ক'দিনে বেশ সমৃদ্ধ হয়েছি। সেটাই মন দিয়ে শিখছিলাম। মিসেস আদুরে গলায় ডাকলো। কই গো বাজার থেকে একটু মিষ্টি আনো না। এতো আদুরে ডাককে অবহেলা করবার তাকৎ কোনও পুরুষ সিংহের আছে কিনা জানিনা। তবুও মিনমিন করে বললাম, আমাদের জেলা রেড জোন হওয়ার পর পুলিশ বাইরে বেরুলেই পেটাচ্ছে। দুদিন পরে আনলে হয় না? বউ আদুরে গলায় বলল, তুমি কেমন স্বামী গো বউয়ের জন্য লোক হিমালয়ের চুঁড়া থেকে লাফ দেয়, আর তুমি সামান্য পুলিশের ডান্ডার ভয় করছো! ছিঃ। অগত্যা। বাইরে বেরুনোর জন্য তৈরি হলাম। বউ বললো একটু দেশী মুরগির খোঁজ করবে তো, কতোদিন দেশী মুরগী খাওয়া হয়নি। আমি রাগে গরগর করতে করতে মিনমিনে গলায় বললাম, মিথ্যা কথা বলো না, আমাকে তো ডেলি খাচ্ছো!৷ বউ আদুরে গলায় খিলখিলিয়ে বলল, ওমা তুমি দেশী কোথায় ওতো ব্রয়লার।টেস্ট লেস!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন