মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০

নস্টালজিয়া ৪ || পৃৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট

নস্টালজিয়া ৪
পৃৃথা চট্টোপাধ্যায়



আমবাগানে ঘেরা আমাদের শান্ত স্নিগ্ধ ছোট্ট  শহরটাতে বর্ষা আসতো আপন ছন্দে- চাঁপার গন্ধে,কামিনীর ফুলদলে আর ভাগীরথীর ভরা যৌবনে। আমাদের বাড়ি থেকে এই গঙ্গা নদী ও হাজারদুয়ারি প্যালেস ছিল খুব কাছে।গঙ্গায় স্নান করতে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম। গঙ্গার জলে আমাদের বাড়িতে রান্নাও হতো । মা বারোমাস প্রতিদিনই প্রায় গঙ্গায় স্নান করতে যেত খুব  ভোরবেলায়,মাঝে মাঝেই সঙ্গ ধরতাম  তার। তখন দু-কূল ছাপিয়ে বইতো নদী, জল  পলিমাটি মিশে ঘোলা।  নদী অনেক চওড়া  হয়ে যেত বর্ষাকালে । অতিবর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি  হলে অনেক খাল- বিল-পুকুর ভেসে মিশে যেত গঙ্গার সাথে, তাই এই সময়  দেখতাম তীব্র  জলস্রোতে কত কচুরিপানা, কাঠকুটো ,ঘাসের চাঁই আরও কত কী  অনায়াসে ভেসে যেতে। বর্ষায় গঙ্গার  জল এতো বেড়ে যেত যে নবাবের বাঁধানো ঘাট ছাপিয়ে প্রায় সব সিঁড়ি ডুবে যেত। মা একবার খুব ভোরে সূর্যোদয়ের আগে একা স্নান করতে গিয়ে জলে ডুব দেওয়ার সময়  একটা গলা কাটা দেহ জলে  গা ঘেঁষে ভেসে যেতে দেখে খুব ভয় পেয়েছিল। সেই থেকে অতি ভোরে আর যেত না। নদীতে স্নানের সময় বৃষ্টি নামলে আমার অপূর্ব আনন্দ হতো। এপার থেকে নদীর অন্য পার  ঝাপসা লাগত।  বৃষ্টির অজস্র ফোঁটা আমাকে ভিজিয়ে কীভাবে অনন্ত জলরাশির সঙ্গে অবলীলায়  মিশে যাচ্ছে দেখতাম। হাজারদুয়ারির চারপাশে নবাবি আমলের  ফল ও ফুলের বাগান ছিল। ফলের গাছ এই সময়  আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ,জামরুল , ফলসা প্রভৃতি ফলে ভরে থাকত। স্বর্ণচাঁপা,কাঠগোলাপ,করবী,কদম,কামিনী ,হাসনুহানা, ম্যাগনোলিয়া  প্রভৃতি অজস্র ফুলের গাছ ছিল। বর্ষার জলভরা মেঘ, বৃষ্টি আর ভিজে হাওয়ায় এইসব ফুলের গন্ধ মিশে আমার কিশোরী বেলার মনকে উতলা করে তুলতো। এক অনাস্বাদিত বৃষ্টিভেজা সুখের অনুভব আপন মনে অনুভব করে মেঘলা সকালে  নীরবে (কারন মা স্নান করে ইষ্টনাম জপ করত বলে কথা বলত না) মায়ের সঙ্গে ঘরে ফিরতাম ।

1 টি মন্তব্য:

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...