মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০

নস্টালজিয়া ৬ || পৃথা চট্টোপাধ্যায়

নস্টালজিয়া ৬
পৃথা চট্টোপাধ্যায়


জীবনের  এই এলোমেলো দিনে আরো বেশি করে মনে পড়ে  শৈশব ও কৈশোরের মুহূর্তগুলো । সেই আনন্দের দিনগুলো আজ বারবার  আমাকে পিছু ডাকে। এখন ঘরবন্দি এই শ্রাবণের বৃষ্টিঝরা সন্ধ্যায় সেই ডাক আরও নিবিড় ভাবে মনে বাজে। আমাদের শহরটা একসময়ে নবাবের রাজধানী ছিল বলেই হয়তো নদীর ধারে হলেও এর অবস্থান বেশ উঁচুতে। চারদিকে বন্যা পরিস্থিতি হলেও আমাদের লালবাগে কখনও বন্যা হতো না। তখন  কালবৈশাখীর ঝড় হতো আর বৃষ্টি হলে শিল পড়ত  খুব মনে আছে । পাড়ার ছেলেমেয়েরা ঝড় উঠলেই  ঘরে থাকতাম না, একটু এদিক ওদিক কাছাকাছি বেরিয়ে পড়তাম আম কুড়োনোর লোভে। ওখানে তখন অনেক আমবাগান ছিল পা বাড়ালেই । আমাদের বাড়ির কাজের মাসির মেয়ে মালতির সঙ্গে একবার  অনেকটা দূরে আম কুড়াতে গিয়ে মায়ের কাছে খুব মার খেয়েছিলাম।পরে 'আম আঁটির ভেঁপু'' পড়ার সময় এক নিঃশ্বাসে  গোগ্রাসে পড়েছিলাম বইটা, আর গল্পের  কোনো জায়গা বুঝতে কোনো হোঁচট খেতে হয় নি আমাকে।  মালতি আমাদের বাড়িতেই থাকত তখন সবসময়,  ও যে বাড়ির কেউ নয় তা  কখনোই মনে হতো না। মা মানুষকে খাওয়ানো বা আদর যত্ন করতে কোনো ত্রুটি রাখত না ; আমাদের সঙ্গে একই খাবার দাবার খেতো সেও।  শ্রাবণ মাস শেষ হলে রোদ্দুরের রংটা কেমন পাল্টে যেত বেশ বুঝতে পারতাম ।তখন আমাদের আনন্দের অবধি থাকতো না দুটো কারণে । এক , দুর্গা পুজোর সময় এগিয়ে আসা আর অন্যটা হোলো পুঁটুদিদের বাড়ির মনসা পুজো । পুঁটুদির বোন বুড়ি আমার বন্ধু হলেও ওদের সব ভাই বোনের সাথে আমার খুব ভাব ছিল। ওদের বাড়ির বাগানে আমরা প্রতিদিন বিকেলে  সবাই মিলে খেলা করতাম ।পুঁটুদির কাছে সরস্বতী পুজোর সময় শাড়ি পারতাম। ছোটবেলায় আমার  নিত্য অবাধ যাতায়াত ছিল ওদের বাড়িতে। ওদের বাড়ির মনসা পুজো হতো ভাদ্রমাসে। পুজোর অন্যতম বড়ো আকর্ষণ ছিল মনসার গান । সাতদিন ধরে চলতো সেই মনসামঙ্গল পালা। মজার বিষয় হলো বেহুলা,  মনসা, সনকা এসব চরিত্রে ছেলেরা মেয়ের সাজে অভিনয় করতো আর অভিনয়ের সময় তাদের একটুও ছেলে বলে মনেই হতো না। এই তেওয়ারি বাড়ির মনসা পুজোর কথা আশেপাশের এলাকায় অনেকেই জানতো। খুব ভিড় হতো লোকজনের। ইলেকট্রিক আলোর জোর বেশি থাকতো না এবং ঘনঘন লোডশেডিং হতো বলে হ্যাজাক জ্বালিয়ে চারিদিক আলোকিত করে সন্ধ্যার সময় পালা শুরু হতো আর রাত্রি দশটা পর্যন্ত চলতো। ওদের  চর কুঠিবাড়ির শিষ্যরা আসতো এই মনসা গান করতে একথা ওরাই বলতো। একটা জীর্ণ ম্যাটাডোর করে সবাই আসতো আর আলাদা একটা  সাজের গাড়ি আসতো। পালা সুরুর আগে ওদের গ্রিনরুমের দরজায় আমরা ছোটরা  ভিড় করতাম। একজন হনুমান সেজে আমাদের খুব আনন্দ দিত। আমার ঐ কিশোরী  বয়সে বেহুলার দুঃখ গাথা  মনকে খুব ছুঁয়ে যেত এখনও মনে পড়ে।

1 টি মন্তব্য:

  1. নসটালজিয়া সবসময় মানুষকে আপ্লুত করে। লেখকের সঙ্গে আমিও ছেলেবেলায় দেখা শহরটিকে খুঁজে পাচ্ছি।

    উত্তরমুছুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...