সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৮৯.
গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়-কে পেয়েছিলাম বাঁকুড়া বইমেলায়। আমরা তখন বিভিন্ন জেলার বইমেলায় অংশগ্রহণ করতাম শুধুমাত্র বই বিক্রি করতেই নয়। আমাদের কবিতাপাক্ষিক-এর স্টলের বাইরের দিকে একটা অদৃশ্য জাল থাকত।বই বিক্রির পাশাপাশি আমরা কবি ধরতাম।
এই প্রক্রিয়াতেই বর্ধমান বইমেলা থেকে ধরেছিলাম বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং প্রাবন্ধিক মুরারি সিংহ-কে। ১৯৯৭-এর ঘটনা সম্ভবত। আর গুরুদাস-কে পেলাম ২০০০-র বাঁকুড়া বইমেলায়।সেবারে স্টল পেয়েছিলাম ছোটদা বা ছান্দারের অভিব্যক্তির উৎপল চক্রবর্তীর সৌজন্যে। তাও পুরো স্টল নয় , হাফ স্টল। এর আগেও বাঁকুড়া বইমেলায় কবিতাপাক্ষিক-এর বইপত্র এবং পত্রিকা বিক্রির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল ' কবিতা দশদিনে '- র টিম।কেননা সেবার ওদের স্টলেই কপা-কে স্থান দিয়েছিল রাজকল্যাণ চেল এবং দশদিনের বন্ধুরা।
এবার গুরুদাস-কথা। অরিজিন্যাল বাড়ি ছাতনা। বাঁকুড়া-র কাঠঝুরিডাঙার প্রফেসর কলোনিতে থাকত।
সেবার মেলা শুরু হয়েছিল ৫ ডিসেম্বর।আমি প্রথম থেকেই ছিলাম।লক্ষ করলাম এক ভদ্রলোক প্রায় প্রতিদিনই স্টলে আসছেন এবং কিছু না কিছু বই বই কিনছেন। আমাদের স্টলের কারো পরিচিত নয়।শেষের দিকে নিজেই কবিতা শোনাতে চেয়েছিল। স্টলের বাইরে একটা বেঞ্চিতে বসে শুনেছিলাম। শোনার পর জানতে চেয়েছিলাম : কীভাবে লিখলেন ?
উত্তর : রেডিয়েশন।এই যে ক-দিন এলাম , সেই রেডিয়েশন থেকেই লিখেছি।
গুরুদাস কথাটা বানিয়ে বলেনি।বাঁকুড়ার লোকজন বানিয়ে বা ইনিয়ে- বিনিয়ে কথা বলতে জানে না। যা বলে সোজাসাপটা বলে। সেদিন ওর কাছ থেকে দু-একটি কবিতা চেয়ে নিয়েছিলাম। দু-চার লাইন পড়ুন :
' পর্দার ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা মতামত আছে
যথা পর্দা মানে আড়াল অথবা পর্দা মানে শাসন
অথবা পর্দা মানে বাইরের দৃষ্টিকে ভিতরে আসতে না দেওয়ার/ ছেলেমানুষি।
আমার বাঁকুড়া বইমেলায় অংশগ্রহণ সার্থক হয়ে উঠেছিল এই ঘটনার প্রেক্ষিতে।
আমি বুঝতে পেরেছিলাম আধুনিকতাকে পেরিয়ে এসে একজন কবি এসে গেল। আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হল।
একটা কথা খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতে চাই যে কবিতাপাক্ষিক-এর যাবতীয় বাড়বাড়ন্ত সবটাই বেলেতোড় কেন্দ্রিক। বা আরো সহজ করে বললে বলতে হবে পুরোটাই রাজকল্যাণ চেল-এর সৌজন্যে।দীপ সাউ সূত্রে সোনামুখী-চ্যাপ্টারটা বাদ দিলে। যদিও বাঁকুড়ার অনিন্দ্য রায় স্বরূপ চন্দ সহ কয়েকজন তরুণ কবিতাপাক্ষিক-এর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত ছিল। আমার মনে হয়েছিল গুরুদাস কপা টিমে যুক্ত হওয়াটা একটা বিশেষ ঘটনা।কারণ গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে বহুরৈখিক কবিতা , পাশাপাশি পোস্টমডার্ন কবিতার সমর্থনে ক্রমাগত গদ্য লিখে যাওয়া।এখন এখানে কবিতার কথা :
' আমাদের মাথা দুলে উঠলে প্রথম বুঝতে পারে পা
আর পা টলে গেলে প্রথম খবর পায় আমাদের মাথা '
আবার অন্য একটি কবিতায় গুরুদাসের ঘোষণা :
' ' নির্ভরতা ' শব্দটির সঙ্গে আমাদের আজীবন পরিচয় থাকলেও / জন্মলাভের পূর্বে এবং মৃত্যুর পর আমাদের ব্যক্তি-অভিধান / একে আদৌ তোয়াক্কা করে না '।
গুরুদাস যা বলছে তা বেশ সরাসরি বলছে। বলার মধ্যে কোনো হেঁয়ালি নেই। এবং আরো একটা কথা যা বলেছে সেগুলি খুবই জানাকথা। কিন্তু তা আমরা কেউ বলিনি।
গুরুদাস তার ' স্বপ্নের বাজার ' - যা যা বলেছিল , সেসব এখনো পাঠ্য হিসেবে উপস্থিত করলাম আপনাদের কাছে।
' স্বপ্নের বাজারটা এখন আপনার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে / এবং আপনি চাইলেই এখন যে কোনো ধরনের স্বপ্ন / কিনতে পারেন। এর জন্য দরকার আপনার একটি ক্রেডিট কার্ড / ও প্রতি স্বপ্নের জন্য একটি সঠিক উত্তর। '
২০০১- ০২ এ রচিত এইসব পঙ্ ক্তিমালা এখনো উজ্জ্বল , গায়ে কোনো শ্যাওলা জমে যায়নি। শুধু খুঁজে বের করে পড়তে হবে। আমাদের গৌরবময় রচনাগুলি উদ্ধার করে আজকের পাঠকের সামনে উপস্থিত করে হবে। সেই কাজটিই এখন করে চলেছি। আপনারা সঙ্গে থাকুন।
প্রভাত চৌধুরী
৮৯.
গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়-কে পেয়েছিলাম বাঁকুড়া বইমেলায়। আমরা তখন বিভিন্ন জেলার বইমেলায় অংশগ্রহণ করতাম শুধুমাত্র বই বিক্রি করতেই নয়। আমাদের কবিতাপাক্ষিক-এর স্টলের বাইরের দিকে একটা অদৃশ্য জাল থাকত।বই বিক্রির পাশাপাশি আমরা কবি ধরতাম।
এই প্রক্রিয়াতেই বর্ধমান বইমেলা থেকে ধরেছিলাম বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং প্রাবন্ধিক মুরারি সিংহ-কে। ১৯৯৭-এর ঘটনা সম্ভবত। আর গুরুদাস-কে পেলাম ২০০০-র বাঁকুড়া বইমেলায়।সেবারে স্টল পেয়েছিলাম ছোটদা বা ছান্দারের অভিব্যক্তির উৎপল চক্রবর্তীর সৌজন্যে। তাও পুরো স্টল নয় , হাফ স্টল। এর আগেও বাঁকুড়া বইমেলায় কবিতাপাক্ষিক-এর বইপত্র এবং পত্রিকা বিক্রির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল ' কবিতা দশদিনে '- র টিম।কেননা সেবার ওদের স্টলেই কপা-কে স্থান দিয়েছিল রাজকল্যাণ চেল এবং দশদিনের বন্ধুরা।
এবার গুরুদাস-কথা। অরিজিন্যাল বাড়ি ছাতনা। বাঁকুড়া-র কাঠঝুরিডাঙার প্রফেসর কলোনিতে থাকত।
সেবার মেলা শুরু হয়েছিল ৫ ডিসেম্বর।আমি প্রথম থেকেই ছিলাম।লক্ষ করলাম এক ভদ্রলোক প্রায় প্রতিদিনই স্টলে আসছেন এবং কিছু না কিছু বই বই কিনছেন। আমাদের স্টলের কারো পরিচিত নয়।শেষের দিকে নিজেই কবিতা শোনাতে চেয়েছিল। স্টলের বাইরে একটা বেঞ্চিতে বসে শুনেছিলাম। শোনার পর জানতে চেয়েছিলাম : কীভাবে লিখলেন ?
উত্তর : রেডিয়েশন।এই যে ক-দিন এলাম , সেই রেডিয়েশন থেকেই লিখেছি।
গুরুদাস কথাটা বানিয়ে বলেনি।বাঁকুড়ার লোকজন বানিয়ে বা ইনিয়ে- বিনিয়ে কথা বলতে জানে না। যা বলে সোজাসাপটা বলে। সেদিন ওর কাছ থেকে দু-একটি কবিতা চেয়ে নিয়েছিলাম। দু-চার লাইন পড়ুন :
' পর্দার ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা মতামত আছে
যথা পর্দা মানে আড়াল অথবা পর্দা মানে শাসন
অথবা পর্দা মানে বাইরের দৃষ্টিকে ভিতরে আসতে না দেওয়ার/ ছেলেমানুষি।
আমার বাঁকুড়া বইমেলায় অংশগ্রহণ সার্থক হয়ে উঠেছিল এই ঘটনার প্রেক্ষিতে।
আমি বুঝতে পেরেছিলাম আধুনিকতাকে পেরিয়ে এসে একজন কবি এসে গেল। আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হল।
একটা কথা খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতে চাই যে কবিতাপাক্ষিক-এর যাবতীয় বাড়বাড়ন্ত সবটাই বেলেতোড় কেন্দ্রিক। বা আরো সহজ করে বললে বলতে হবে পুরোটাই রাজকল্যাণ চেল-এর সৌজন্যে।দীপ সাউ সূত্রে সোনামুখী-চ্যাপ্টারটা বাদ দিলে। যদিও বাঁকুড়ার অনিন্দ্য রায় স্বরূপ চন্দ সহ কয়েকজন তরুণ কবিতাপাক্ষিক-এর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত ছিল। আমার মনে হয়েছিল গুরুদাস কপা টিমে যুক্ত হওয়াটা একটা বিশেষ ঘটনা।কারণ গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে বহুরৈখিক কবিতা , পাশাপাশি পোস্টমডার্ন কবিতার সমর্থনে ক্রমাগত গদ্য লিখে যাওয়া।এখন এখানে কবিতার কথা :
' আমাদের মাথা দুলে উঠলে প্রথম বুঝতে পারে পা
আর পা টলে গেলে প্রথম খবর পায় আমাদের মাথা '
আবার অন্য একটি কবিতায় গুরুদাসের ঘোষণা :
' ' নির্ভরতা ' শব্দটির সঙ্গে আমাদের আজীবন পরিচয় থাকলেও / জন্মলাভের পূর্বে এবং মৃত্যুর পর আমাদের ব্যক্তি-অভিধান / একে আদৌ তোয়াক্কা করে না '।
গুরুদাস যা বলছে তা বেশ সরাসরি বলছে। বলার মধ্যে কোনো হেঁয়ালি নেই। এবং আরো একটা কথা যা বলেছে সেগুলি খুবই জানাকথা। কিন্তু তা আমরা কেউ বলিনি।
গুরুদাস তার ' স্বপ্নের বাজার ' - যা যা বলেছিল , সেসব এখনো পাঠ্য হিসেবে উপস্থিত করলাম আপনাদের কাছে।
' স্বপ্নের বাজারটা এখন আপনার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে / এবং আপনি চাইলেই এখন যে কোনো ধরনের স্বপ্ন / কিনতে পারেন। এর জন্য দরকার আপনার একটি ক্রেডিট কার্ড / ও প্রতি স্বপ্নের জন্য একটি সঠিক উত্তর। '
২০০১- ০২ এ রচিত এইসব পঙ্ ক্তিমালা এখনো উজ্জ্বল , গায়ে কোনো শ্যাওলা জমে যায়নি। শুধু খুঁজে বের করে পড়তে হবে। আমাদের গৌরবময় রচনাগুলি উদ্ধার করে আজকের পাঠকের সামনে উপস্থিত করে হবে। সেই কাজটিই এখন করে চলেছি। আপনারা সঙ্গে থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন