শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

সবাই মিলে সিনেমা হলে ( ১০ ) || কান্তিরঞ্জন দে || সিনেমা কি স্বাধীন ?

সবাই মিলে সিনেমা হলে  ( ১০ )
কান্তিরঞ্জন দে
৷৷৷৷৷


   সিনেমা কি স্বাধীন ?

        সিনেমা কি একটি স্বাধীন- স্বতন্ত্র শিল্পমাধ্যম ? এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ এ দেশে আজও আছে । রকমসকম দেখে তাই মনে হয়। মূল প্রশ্নে যাবার আগে এ প্রসঙ্গে দু- চারটে কথা বলে।নিই ।
       যেহেতু ভারতবর্ষে সিনেমার বাড়বাড়ন্ত সাহিত্যের হাত ধরে , তাই এ প্রশ্নটা  সিরিয়াস সিনেমাপ্রেমীদের মনে আজও ওঠে। অবশ্য , সিনেমা আদৌ শিল্প মাধ্যম কিনা , সে বিতর্কও সিনেমার জন্মের বহুবছর পর্যন্ত টিঁকে ছিল। এখন আর দেশে-বিদেশে এ নিয়ে কেউ সন্দেহ করেন না। কিন্তু সিনেমার স্বাধীন সত্তা নিয়ে সংশয়ের খোঁচাটা রয়েই গেছে।
       ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে  মুরারী ভাদুড়ীকে ( নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ীর ছোটভাই ) অনুযোগ জানিয়েছিলেন যে, ------- " ছায়াচিত্র এখনো পর্যন্ত সাহিত্যের চাটুবৃত্তি করে চলেছে ।"
        অনুসরণ নয় । পাঠক " চাটুবৃত্তি " শব্দটি খেয়াল করবেন। কারণ, এটা তো সত্যি যে , গত শতাব্দীর ২০ দশক  থেকে ৫০-৬০- ৭০ দশক পর্যন্ত বাংলা সিনেমা কাঙালের মতো বাংলা সাহিত্যের পিছু পিছু হেঁটেছে ।
     পথের পাঁচালী-র  মধ্য দিয়ে সিনেমা এ দেশে সাহিত্যের হাত ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছিল। অনভ্যস্ত পণ্ডিতেরাও তখন পথের পাঁচালী সিনেমার সাহিত্যিক বিচ্যুতি নিয়ে অনর্থক চ্যাঁচামেচি করেছিলেন । সত্যজিৎ রায়ই আমাদের দেশে " অকৃত্রিম"  সিনেমার প্রবর্তক ।
     সত্যজিৎ বারবার সাহিত্যকে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ঠিকই । কিন্তু সে শুধুই উপাদান-উপকরণ মাত্র ।।  "বইয়ের " চিত্র রূপায়ণ কখনোই নয় ।

      তা সত্ত্বেও অবশ্য অন্যান্য পরিচালকদের   পর্দায়     " বই " বানানো থেমে থাকে নি । ১৯৮০ সালে উত্তমকুমারের মৃত্যু পর্যন্ত সে ধারা সদর্পে চলেছিল । উত্তম-সুচিত্রার টান ছাড়াও জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাসটি  সিনেমায় দেখতে যাবার দর্শক তখনও পর্যন্ত নেহাত কম ছিল না । বর্তমানে সে উন্নত প্রজাতির দর্শকশ্রেণীও লুপ্তপ্রায় ।

    ৭০ দশক থেকে সুখেন দাস এবং ৮০-র দশক থেকে অঞ্জন চৌধুরী ,  সাহিত্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের বানানো গল্পে পর্দায় পরপর হিট " বই " বানিয়েছেন । তাতে ব্যবসা বেড়েছে কিন্তু বাংলা সিনেমা ক্রমশ  গোল্লায়  গেছে ।
      বর্তমানে বাংলা সিনেমা এক মিশ্র প্রজাতির বস্তু । কিছু সাহিত্য  । কিছু দক্ষিণী রি-মেক । আর কিছু গপ্পো প্রযোজকদের উদ্ভট কল্পনাপ্রসূত । সাহিত্যের সুরুচির গর্বটুকুও বাঙালির সিনেমা হারিয়ে বসে আছে ।

      ডঃ সুকুমার সেনের মতো পণ্ডিতদের অনেকেই  বহুদিন পর্যন্ত সিনেমাকে শিল্পমাধ্যম হিসেবে স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না । কারণ ? সিনেমার মধ্যে চিত্রকলা-সংগীত-শব্দ-সাহিত্য-স্থাপত্য-নৃত্য , প্রাক-সিনেমার সব ক'টি শিল্পই মিলেমিশে আছে । এটাই যে তার অভিনবত্ব ও কৌলিন্য----সেটা এই পণ্ডিতেরা  উপলব্ধিই করতে পারেন নি ।

       আজও আমাদের দেশে সিনেমা স্বতন্ত্র-স্বাধীন শিল্প মাধ্যম কিনা, সেই ধোঁয়াশা রয়েই গেছে ।
      সিনেমাকে যে চেহারায় আমরা এ দেশে দেখি , সেটি প্রাচীন প্রচলিত ভারতীয় বিনোদনের এক বিকৃত পাঁচমেশালি রূপ মাত্র ।
     তাকে আর যাই হোক, স্বাধীন কোনভাবেই বলা চলে না । কেন ? তার নানা কারণ আছে ।
      বারান্তরে সেগুলো বলা যাবে 'খন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...