কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার
কবিতা ১৯৮৮ - ১৯৯২ । ঋজুরেখ চক্রবর্তী । রক্তকরবী । পনের টাকা ।
' সমগ্র জীবনসূচি থেকে/ সমগ্র জীবনসূচি বাদ দিয়ে দিলে/ পড়ে থাকে সমগ্রতা জীবনসূচি । ' ( 'জীবনসূচি' ) । কিংবা, ' মশলার গন্ধে সন্ধ্যে ঢেকে যায় / চকিতে রাস্তার মোড়ে জ্বলে ওঠে সোডিয়াম মৃত্যু চেতনার মতো ' (ইতিবৃত্ত) -র গভীর গভীরতর কাব্যইঙ্গিত অক্লেশে কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তী আমাদের সামনে হাজির করেন তাঁর 'কবিতা ১৯৮৮-১৯৯২ ' শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে । তাঁর কবিতার সামনে আকর্ষিত হয়ে তাই বারবার উচ্চারণ করতে ইচ্ছে হয়: ' সেই সব নারকীয় সন্ধ্যাগুলি অবশেষে ত্যাগ করে বাঁচান আমাকে, বাঁচান হাঁপানির মতো দিনগুলি বহু দূরে চলে দিয়ে একেবারে ।'( ' ব্যক্তিগত শ্বেতপত্র '),' নির্জন, তোমাকে অবশেষে গোপনে জানাই, / সে আমার রাত্রিজোড়া অন্ধকারে আলোর রোশনাই । ' ( নির্জনকে পাঁচটি সনেট) -এর মতো পংক্তি ।
কবি ঋজুরেখ এ কাব্যগ্রন্থে এক সাবলীল অবস্থানে দাঁড়িয়ে গভীর ব্যন্জ্ঞনার শব্দ সমষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছেন । তিরিশ বত্রিশ বছর আগের লেখা এই চার ফর্মার কাব্যগ্রন্থটি তাই ছেড়ে যেতে চায় না মন থেকে । কবি শিখিয়ে দেন কিভাবে শব্দের সুতো দিয়ে কবিতাকে বপন করা যায় ।
কাব্যগ্রন্থে পাই: ' আমি শুধু তোমাকে জড়াতে চেয়ে হাত থেকে ধুয়ে ফেলেছি সব অন্ধকার ছাপ । তাই আজ আর তোমার যথার্থ কোন উপমা খুঁজি না । ' ( স্বীকারোক্তি ) -এর মতো অজস্র পংক্তি । যার ভেতর দিয়ে পাঠক গভীরতর অবস্থানে পোঁছে যেতে পারেন অনুষঙ্গের ভেলায় চড়ে । পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদ ও মুদ্রণ পারিপাট্য দাম দেবার মতো । এত নির্ভুল কাব্যগ্রন্থ অনেক দিন পর পাওয়া গেল ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন