শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

সবাই মিলে সিনেমা হলে ( ১৮) || কান্তিরঞ্জন দে || সাহিত্য এবং / অথবা সিনেমা

সবাই মিলে সিনেমা হলে ( ১৮)

কান্তিরঞ্জন দে



সাহিত্য  এবং / অথবা সিনেমা


      আগেই বলেছি , বাংলায় সাহিত্য এবং সিনেমা এই দুটো শিল্প মাধ্যমে  আজও কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে ।  এর কারণ , বাংলা সংস্কৃতির সংসারে সাহিত্য হল বড় ভাই এবং সিনেমা মাধ্যম তার অনুজ ।  তাই এই দুই মাধ্যমের সম্পর্কটি বুঝতে অনেকেই ভুল করেন ।

       প্রথমেই বুঝতে হবে যে সিনেমা প্রয়োজনে  সাহিত্য থেকে গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি উপকরণ হিসেবে নেয় ঠিকই ,  তবে সাহিত্যকে অনুসরণ কিংবা অনুকরণ করবার কোনও দায় সিনেমার নেই । দুটো সম্পূর্ণ আলাদা শিল্প মাধ্যম । দুটোর প্রকাশ রীতি একেবারেই আলাদা । একটা যদি আপেল হয় , অন্যটি কমলালেবু । দুটোই রসালো ফল । ব্যস্ , দুজনের মধ্যে মিল বলতে এটুকুই । আর কিছু নয় ।


        সত্যজিৎ রায়ের " পথের পাঁচালী " বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিত্র রূপান্তর মাত্র । হুবহু চিত্র অনুবাদ কখনোই নয় । পথের পাঁচালী প্রায় চারশো পাতার উপন্যাস । অসংখ্য চরিত্র  এবং অসংখ্য ঘটনা   মিলিয়ে এক মহৎ সাহিত্যকর্ম। " আম আঁটির ভেঁপু " সিগনেট প্রেস প্রকাশিত তারই এক কিশোর পাঠ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করণ । সেটিও মাত্র দেড়শো পাতা আয়তনের হলেও তাতেও প্রচুর চরিত্র এবং ঘটনা ।

     সত্যজিৎ রায় ওই আম আঁটির ভেঁপু থেকেই সিনেমার জন্য প্রয়োজনীয় চরিত্র এবং ঘটনাগুলোকে সিনেমার উপযোগী করে সাজিয়ে সিনেমার নিজস্ব উপস্থাপন রীতির ব্যাকরণ মেনে পর্দায় হাজির করেছিলেন । উপন্যাসে ইন্দির ঠাকরুণ মারা যান , উপন্যাস শুরুর কয়েক পৃষ্ঠার মধ্যেই । সত্যজিৎ রায়  সিনেমার প্রয়োজনে ( বলা ভালো , সিনেমার নাটকীয়তার প্রয়োজনে ) এই চরিত্রটিকে বাঁচিয়ে রাখেন আরও বেশ কিছুক্ষণ । এইরকম টুকিটাকি পরিবর্তন সিনেমাটিতে আরও বেশ কিছু  ছিল ।

         ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট পথের পাঁচালী রিলিজ করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সে সময় সিনেমার বৈশিষ্ট্য না বোঝা বেশ কিছু  সাহিত্য প্রেমিক হৈ চৈ বাঁধিয়ে বসেছিলেন । তাদের অভিযোগ----- সত্যজিৎ পথের পাঁচালীকে বিকৃত করেছেন । ১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ রায় যখন রবীন্দ্রনাথের  বড় গল্প " নষ্টনীড়" থেকে চারুলতা নির্মাণ তখন তো হৈ হট্টগোল একেবারে তুঙ্গে উঠেছিল । পরিচয় পত্রিকায় লম্বা চিঠি লিখে সত্যজিৎবাবুকে প্রায় পাখি পড়ার মতো করে ব্যাখা করতে হয়েছিল যে , সিনেমায়  মূল গল্প কি কি  অদলবদল জরুরী ছিল এবং কেন সেগুলো জরুরী ছিল ।


       সত্যজিৎ রায় ছাড়াও বাংলার আরও অনেক পরিচালকদের ছবি নিয়েও বিশুদ্ধ সাহিত্য প্রেমিকেরা  বিভিন্ন সময়েই আপত্তি তুলতেন । আজকাল অবশ্য এ ব্যাপারটা একটু কমেছে ।

       তবুও বলব , আজও বাংলায় সিনেমা মাধ্যমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য গুলো উপলব্ধি করবার লোক যথেষ্ট কম । বাংলায় সাহিত্য নির্ভর সিনেমা বানানোটাই অনেকটা কমে গেছে । সে কারণেই হয়তো চ্যাঁচামেচিটা কমেছে । যথার্থ সিনেমা রসিক ও বোদ্ধার সংখ্যা খুব একটা যে বেড়েছে , এমন কথা বলা মুস্কিল ।


        সাহিত্য নির্ভরতা ছিল , বাংলা সিনেমার পক্ষে সে-ও একরকমের ভালো ছিল । এখন তো সিনেমার নামে  বাংলা সিনেমায় বাইরের চাকচিক্যের দিকে যতটা নজর দেওয়া হয় , বিষয়ের গভীরতার দিকে ততটা নজর দেওয়া হয় কি ?


         পশ্চিমবঙ্গের ( এবং সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশেরও ) বাংলা সিনেমার  নিজস্ব ভাষা খুঁজে নিয়ে , নিজের পায়ে দাঁড়াতে যথেষ্ট দেরি আছে । কত দেরি ? বলা খুব মুস্কিল । 

     সব কিছু দেখে শুনে মনে হয় , বর্তমান যুগের বাংলা সিনেমা সাহিত্যের হাত ছেড়ে একসময়  পেছন দিকে হাঁটা শুরু করেছিল । ইদানীং  আবার সবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ।

     সামনে এগোচ্ছে কি ? সে কথা জোর বলা খুব মুস্কিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...