শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০

সবাই মিলে সিনেমা হলে (২৩) || কান্তিরঞ্জন দে || বাংলা সিনেমা ও বাংলাদেশ

সবাই মিলে সিনেমা হলে (২৩)

কান্তিরঞ্জন দে



বাংলা সিনেমা  ও  বাংলাদেশ


        বাংলা সিনেমার আলোচনা বাংলাদেশের বাংলা সিনেমাকে বাদ দিয়ে কখনোই হতে পারে না । অন্তত  হওয়া উচিত নয় । কেন না , কাঁটাতারের ভৌগোলিক কিংবা রাজনৈতিক বিভাজন সত্বেও , সাহিত্য-ছবি আঁকাআঁকি- গানবাজনা-নাটক-থিয়েটার এবং শিল্প-সংস্কৃতির অন্যান্য শাখার মতো বাংলা সিনেমাও স্বভাব চরিত্রে এক এবং অবিভাজ্য । গুণমানে কিছু তফাৎ অবশ্যই আছে।

       এই জরুরী কথাটা আমরা অনেক সময়েই ভুলে যাই । ২০১৯ সালে কলকাতায় পূর্ণ দৈর্ঘ্যের বাংলা সিনেমার একশো বছর পালন করা হয়েছিল । কারণ , ১৯১৯ সালে তৈরি " বিল্বমঙ্গল " বাংলা ভাষায় তৈরি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা । কিন্তু এই উৎসব উপলক্ষে যাবতীয় লেখালেখি কিংবা  আলোচনায় কোথাও কিন্তু বাংলাদেশের বাংলা সিনেমা প্রসঙ্গ আসেই নি । অন্তত আমার নজরে পড়ে নি । এটি একটি মারাত্মক অন্যায় বলেই মনে করি ।


         ১৮৯৬ সালে বোম্বাই এবং কলকাতায় প্রথম সিনেমা দেখানোর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা শহরেও  সিনেমা প্রদর্শনী  হয় । ঢাকার বয়স কলকাতার অন্তত।দ্বিগুণ । কিন্তু ব্রিটিশ ভারতে ঢাকা ছিল একটি বিভাগীয় সদর শহর মাত্র ।

কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হবার সুবাদে অন্য সব ক্ষেত্রের মতো সিনেমা দেখানো এবং  সিনেমার তৈরি সুযোগও  এখানে তড়তড় করে বাড়তে থাকে । ঢাকায় প্রথম সিনেমা দেখানো হয় ১৮৯৮-তে । প্রথম সিনেমা হল তৈরি হয় ১৯০৫-এ। 

      ঢাকায় প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি হলো, ১৯৩১ সালে নবাবদের পয়সা এবং উদ্যোগে । ছবির নাম " লাস্ট কিস্ । " একজন  আবদুল সোবহান নামে এক সুদর্শন যুবক এতে নারী সেজে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করলেন ।  ঢাকায় প্রথম সবাক ডক্যুমেন্টারী ছবি  তৈরি হয় ১৯৪৮ সালে ।

      বাংলা দু-টুকরো হবার পরেও ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা সহ তৎকালীন সমগ্ৰ পূর্ব পাকিস্তানে উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত সিনেমা সহ কলকাতায় তৈরি সব ধরণের বাংলা দেখতে কোনও অসুবিধে ছিল না ।  ৬৫-র যুদ্ধের পর পাকিস্তান সরকার সেই সুবিধে পূব বাংলার বাঙালিদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় । এর মধ্যে ১৯৪৭-র পর থেকে পূব বাংলায় সিনেমা হলের সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে , তেমনি বাংলা ভাষায় সিনেমার পত্র পত্রিকার প্রকাশও অনেক বেড়ে যায় । সেই সময় পূব বাংলায়  উর্দু সিনেমার পাশাপাশি  হাজার অসুবিধের মধ্যেও বাংলা সিনেমা তৈরি করা ছাড়েন নি বাঙালিরা ।

      এখানে বিস্তারিত লিখবার সুযোগ নেই ।  তবুও সংক্ষেপে বলা যাক যে----১৯৪৭- ১৯৭১, বাংলাদেশ জন্ম নেবার আগের এই  তেইশ বছরেই ওখানে  পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন পর্ষদ (১৯৫৭) গঠিত হয় । ১৯৬০ সালে ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের সূচনা হয় । সালাউদ্দিন কিংবা সুভাষ দত্তের মতো উদ্যমী পরিচালকেরা ওখানে অর্থবহ সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে থাকেন । 

       ১৯৭০ সালে জহির রয়হান পরিচালিত " জীবন থেকে নেয়া " সিনেমাটি  পূর্ব বাংলার সিনেমা জগতকে আমূল কাঁপিয়ে দিয়ে যায় । বাণিজ্যিক সিনেমার পাশাপাশি সুস্থ বাংলা সিনেমার ধারা ওখানে ক্রমশ বেগবান হতে থাকে । একদিকে  জহির রায়হান , আলমগীর কবির-এর মতো পরিচালকেরা অর্থবহ সিনেমা বানাতে থাকেন , অন্যদিকে মুহম্মদ খশরু-র মতো চলচ্চিত্র তাত্ত্বিকেরা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নতুন ধরণের চলচ্চিত্রে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকেন ।


        এর মধ্যেই চলে আসে মুক্তিযুদ্ধ । ১৯৭১-এ জন্ম নেয় বাংলাদেশ । ১৬ই ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে । এখন বাংলাদেশের বিজয়  মাস চলছে ।

       এই বিজয় মাসে তাই বাংলা সিনেমার কোনও রকমের আলোচনাই বাংলাদেশের বাংলা সিনেমা ছাড়া হতে পারে না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সিনেমা নিয়ে বাকি আলোচনা করব পরের সপ্তাহে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...