নস্টালজিয়া ২৯
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
প্রবহমানতাই জীবন।যে জীবন নদীর মত বাঁকে বাঁকে বইতে পারে, সইতে পারে দুঃখ কষ্ট সেই জীবনেরই তো উত্তরণ ঘটে। শোক যন্ত্রণা বিচ্ছেদ মৃত্যু দুঃখ দারিদ্র্য চলার পথে বারবার আসে, পথ রোধ করতে চায়, তবু থেমে গেলে তো চলে না। এসবের মধ্যেই আমাদের নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হয়। শৈশবের কথা লিখতে বসে এইসব কথা বারবার চলে আসছে, কারণ আমারও অতীত জুড়ে রয়েছে নিরন্তর আনন্দ ও ব্যথার অজস্র ঘটনা। এখন পরিস্থিতি এমনই আনন্দ করতে চাইলেও ঠিক সেই আগের মত খুশিতে ভরে উঠছে না মন। কত কত মুখ, কত সুখ স্মৃতি এসে ভিড় করছে যাদের আর কখনো ফিরে পাব না। কিছু মানুষ দেখি যারা সব কষ্ট খুব দ্রুত ভুলে, মৃত্যু ঝেড়ে ফেলে আনন্দে মেতে ওঠে, তারা এক বিশেষ গোত্রের। এরা সুখী।আমি তেমন নই। আমি ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হই। পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে।
আমার শৈশব ও কৈশোর ঘিরে আছে আমার বাবা মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন। বাবা মা আজ আর নেই। ভাই বোনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ। আমি কাউকে হারাতে চাই না।সবার সঙ্গে সম্পর্কের সুতোয় জড়িয়ে থাকতে চাই। এই সবের মধ্যে এক নিবিড় যন্ত্রণা আছে। সব কিছু দূরে সরিয়ে আমি সাগর তীরে ঝিনুকের খোঁজে বেরিয়েছি। আমরা যখন ঝিনুক কুড়োয় কোনো বাজ বিচার করি না, যা পাই কুড়িয়ে আনি। পরে সেগুলো থেকে বেছে জায়গা মত রাখি, কিন্তু ফেলতে পারি না একটাও।আমার অতীত জীবনের ঘটনাগুলোও তাই সবই মনের কুঠুরিতে জমে আছে আপনার ঔজ্জ্বল্যে। লিখতে বসে যখন যেটা মনে আসে লিখে ফেলি।
আগেই বলেছি আমাদের পুরনো আমলের বাড়িতে কড়ি- বরগার ঘর ছিল। গরমের সময় লিচু কিনে আনত বাবা। আমি মুর্শিদাবাদের আম জাম লিচু কাঁঠালের দেশের মানুষ। এইসব ফল কখনো অল্প কেনা হতো না আমাদের বাড়িতে তখন। আমরা সব ভাই বোন লিচুর ভক্ত ছিলাম। লিচু লোভনীয় ফল হলেও বেশি খেলে পেটে ব্যথা করে। বাবা বাগান থেকে লিচুর থোকা কিনে পাটের দড়িতে ঘরের কড়িকাঠের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখত যাতে আমরা ইচ্ছে মতো বেশি না খেয়ে ফেলি। সবুজ পাতায় গোলাপি আভার লিচুর থোকাগুলো ঝুলতো ঘরে, তার একটা দারুণ সৌন্দর্য ছিল। বাবা অফিসে চলে যেত। আমরা অপেক্ষা করতাম মাএর ঘুমানোর। মা ঘুমিয়ে পড়লেই চেয়ারের উপর টুল দিয়ে তাতে চড়ে সারা দুপুর লিচু চুরি করে খেতাম। বাবা অফিস থেকে ফিরে বলতেন ,"লিচু কম কম মনে হচ্ছে যেন !" আমরা সে কথায় কান না দিয়ে আরো গভীর মনোযোগের সাথে পড়ার ভান করতাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন