সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২১৪.
কবিতাপাক্ষিক ৩০০ সংখ্যায় মোট ৪২১ জন কবির কবিতা ছাপা হয়েছিল । সংখ্যাটা কোনো পজিটিভ চিহ্ন বহন করে না । আমি বরং আমার থেকে অনুজ কবিদের মধ্য থেকে কয়েকজনের কবিতার অংশ নির্বাচন করে আমার আলোচনায় বা লেখায় স্থান দিচ্ছি।
প্রথমেই জানিয়ে রাখছি কবি নির্বাচনে পক্ষপাত থাকবেই , কেননা আমি কোনো দিনই 'নিরপেক্ষতার মুখোশ ' -এ আবৃত রাখি না। আমার পক্ষপাতিত্ব খোলাখুলি। এই ঘোষণা করলাম , নিজের দৃষ্টিভঙ্গীকে স্বচ্ছ করার জন্য। আমাকে ভালোমানুষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি কী লিখি সেটুকু -ই আমার পরিচয়।
সেই সূত্রে আমি প্রথমেই নিখিলকুমার সরকারের ' একটি রঙের জন্মকথা -র প্রথম কয়েক লাইন :
' গতকালের সূর্যাস্তের ভেতর আজকের সূর্যোদয় মেশাতেই/ যে নতুন রংটি প্যালেট উপচে পড়ল, সেই রঙের সঙ্গে / আমার কোনো পূর্বস্মৃতি অথবা বিস্মৃতি জড়িয়ে নেই '
অমিতাভ মৈত্র -র ' হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ ' কবিতাটিতে ২টি প্রতিবেদন ছিল। প্রথমটি থেকে :
' একজন কালো মেয়ে যখন কালো কোনো স্ফটিকের সামনে মনঃসংযোগ করে, / তখন কিছু একটা হারিয়ে যায় সেই স্ফটিক থেকে , একটা কিছু হারিয়ে যায় সেই কালো মেয়েটির থেকে --- আর এই দু-রকমের হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা রিভলবার বাজনা হয়ে ওঠে আর তার ধাতু ও বারুদের জীবনে ফিরতে থাকে ,'
আমি কোনো ব্যাখ্যা করছি না , কবিতা শবব্যবচ্ছেদ করতে নেই বলে।
এরপর আহ্বান করছি স্বপন দত্ত-র কবিতা। কবিতাটির নাম : রোদ্দুর - চন্দনে পুড়ে ।কবিতার শুরুটা :
' নাঃ , আজ এখানে আর একফোঁটাও বসন্তকাল খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু গর্ত থেকে গর্তে ধূ ধূ ঝুলকালি উড়ে যায়।'
এবার নাসের হোসেন-এর কবিতা , কবিতার নাম : যাচ্ছে , মাটিতে। পড়তে থাকি শুরুর দিকটা :
' গ্রন্থের আড়ালে যে লেখক অবস্থান করে থাকেন তাঁর সঙ্গে দেখা/ হয় মাঝেমাঝেই, অ্যাতো দেখা তবু মেলাতে পা মেলাতে পারি না , গ্রন্থের থেকেও/ গ্রন্থের লেখক নিজেই
বিস্ময়কর থেকে যান চিরকাল,'
এর আগে যে চারজনের কবিতার কথা লিখলাম তারা সকলেই বহরমপুর-কেন্দ্রিক। তার অর্থ বহরমপুরের প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব আছে। হ্যাঁ , আছেই তো। আর এই কারণে আমার বিচার হোক। সেই বিচারালয়ে আমি হাজির থাকবো সময় মতো।
এবার স্থান পরিবর্তন করছি। বহরমপুর থেকে বাঁকুড়া।আর বাঁকুড়া মানেই সুব্রত চেল। সুব্রত-র কবিতা নাম : ' মানুষের ছবি ' । পড়ুন :
' মানুষের ছবি আঁকতে যেও না তমোজিৎ ; /পাখি আঁকো , সময় পেলে বাবার সঙ্গে পাহাড় নদী দেখে এলে/ সেই পাহাড় ও নদীর ছবি আঁকো / মাছের ছবি আঁকো ,/ চিড়িয়াখানায় বাঘ দেখে এসে / আঁকতে বসো বাঘের ছবি।/
... ... ...
মানুষের ছবি আঁকতে চেও না / এ পৃথিবীতে যতজন মানুষ তারা ঠিক ততরকমের।/ একটা মানুষের ছবি এঁকে তুমি বলতে পারবে না / তুমি সব মানুষের ছবি এঁকে ফেলেছ ।'
এবার মুরারি সিংহ-র ' আমি ও একটি রবীন্দ্রগান ' কবিতার প্রথম ৩ এবং শেষের ২ লাইন পড়তে চাইছি :
'তুমি গাইলে এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে
আমি শুনলাম এই শ্রাবণের বুকের ভিতর ফাগুন আছে
তুমি গাইলে আগুন আমি শুনলাম ফাগুন
... ... ... ...
সেই রবীন্দ্রনাথ যেমন তোমাকে দিয়ে গাইয়ে নিচ্ছে আগুন / সেই রবীন্দ্রনাথ তেমনি আমাকে দিয়ে শুনিয়ে নিচ্ছে ফাগুন '
এরপর গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় -এর ' এক ছিপি আকাশ ' - এর প্রথম ২ লাইন :
' যে কোনো মানুষকে বোতলবন্দি করার গুপ্তবিদ্যাটি এখন ফাঁস হয়ে গেছে / সব্বাই জেনে গেছে যে , একটা গোটা মানুষকে একেবারে বোতলে ভরা যায় না।'
... ... ...
বোতলের খোলা মুখ দিয়ে ক্বচিৎ কদাচিৎ দেখতে পায় এক ছিপি আকাশ '
আরো কবি এবং কবিতা আগামীকাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন