বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

বিদেহ নন্দিনী~১৭ || ডঃমালিনী || মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস || Basudeb Das

 

বিদেহ নন্দিনী~১৭ || ডঃমালিনী || মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস || Basudeb Das


 (সতেরো)

চিত্রকূটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা আরম্ভ করে মেজ শাশুড়ি সুমিত্রা বলেছিল-‘সীতা, তোমাদের দেখার জন্য প্রজাদের কী আগ্রহ। শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য সমগ্র অযোধ্যাবাসী বের হয়ে এসেছিল। পরে ভরত শত্রুঘ্ন বুঝিয়ে-সুজিয়ে রেখে এসেছে।’ উৎসাহে নাকি শোভাযাত্রা দলটি প্রথম দিন এই গঙ্গা পার হয়েছিল। সেখানে নিষাদ রাজা গুহ এবং শোভাযাত্রার দলটির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। গুহ হলেন আমার স্বামীর বন্ধু। গঙ্গার পারে রথের ওপরে অযোধ্যার পতাকা, সৈন্যবাহিনী, অসংখ্য হাতি  ঘোড়া এবং মানুষের সমাগম দেখে নিষাদ রাজা  ভরত আমাদের আক্রমণ করতে এসেছিল বলে ভাবলেন। তাই তিনি নিজের সৈন্য-সামন্ত প্রস্তুত করে ভরতের আগমনের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে জানার জন্য নিজেই গঙ্গার পারে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। গুহ নাকি কোনো ভূমিকা না করে একেবারে সোজাসুজি ভরতকে জিজ্ঞেস করেছিল-‘ তুমি রামচন্দ্রের অপকার করার জন্য আসনি তো ?এতগুলি সৈন্য-সামন্ত সঙ্গে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য কী?’গুহের কথায় নাকি ভরত বড় আঘাত পেল। ভরত রুদ্ধ কন্ঠে সদলবলে আসার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বললেন-‘ দাদা রামচন্দ্র অযোধ্যার রাজা। আমি নয়, তার অভিষেকের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ, আত্মীয়-স্বজন, প্রজাগণ এবং সসৈন্যে তাকে অযোধ্যায় নিয়ে যাবার জন্য এভাবে দলবদ্ধ হয়ে এসেছি। আপনি আমার আন্তরিকতাকে সন্দেহ করায় আমি মর্মান্তিক আঘাত পেয়েছি। আপনি আমাকে  বিশ্বাস করুন। আমি যা বলছি তা সত্য। আমাকে অবিশ্বাস করে আর কষ্ট দেবেন না।’ 

সুমন্ত্রও ভরতের কথায় সায় দিলেন। গুহ যেহেতু সুমন্ত্রকে ভালোভাবে জানেন তাই তিনি ভরতকে বিশ্বাস করলেন। তার মধ্যে ভরতের কথা তার অন্তর স্পর্শ করেছিল। গুহ নাকি ভরতকে  জড়িয়ে ধরে বলেছিল-‘ হে কুমার ভরত, তুমি রামের উপযুক্ত ভ্রাতা। তোমার এই ভ্রাতৃপ্রেমের কথা জগতে অমর হয়ে থাকবে। তারপর নাকি নিষাদ রাজ গুহ নিজেও সেই শোভাযাত্রায় যোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন –‘আমরা মুনি ভরদ্বাজের কাছ থেকে রামচন্দ্রের বসতি স্থান বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পারব। তাই আগামীকাল সকালে আমরা মুনির আশ্রম অভিমুখে যাত্রা করব।’সেই রাতে ভরত নাকি গুহকে আমাদের কথা বলেই কাটাল। আমরা কোথায় শুয়েছিলাম, কী খেয়েছিলাম, তৃণশয্যায় কষ্ট পেয়েছিলাম কিনা,ইত্যাদি নানা কথা জিজ্ঞেস করে মাঝেমাঝেই ভরত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল। সেই রাতেই নাকি ভরত নিষাদরাজ গুহ, সুমন্ত্র, শত্রুঘ্ন এবং অন্য মন্ত্রীবর্গের সামনে সংকল্প নিয়েছিল-‘ আমি দাদা রামচন্দ্রকে মিনতি করে অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনতে পারব বলে ভাবছি। যদি পিতার বাক্য পালনের জন্য বনবাসে কাটাতে হয় তাহলে আমি তার পরিবর্তে বনবাসে থাকব। যদি তিনি এই কথায় রাজি না হন তাহলে আমিও তার সঙ্গে বনবাসে বাস করব, যদি সে কথায় তিনি রাজি না হন তাহলে আমি যেখানেই থাকি না কেন সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করব। দাদা রাম তৃণশয্যায় শোবে আর আমি সোনার পালঙ্কে শোব এ কথা কখনও হতে পারে না। ভরতের সংকল্প দেখে নাকি প্রত্যেকেই ধন্য ভরত  ধন্য ভরত বলে উচ্চারণ করে।

পরের দিন সকালে নিষাদ রাজ গুহ গঙ্গা পার করার জন্য অনেক নৌকা জোগাড় করে দিলেন। কিছু সৈন্য কলার ভেলা তৈরি করে গঙ্গা পার হল, হাতি গুলি সাঁতরে গঙ্গা পার হল, আশ্রমের শান্তি ভঙ্গ হবে বলে মাত্র ঋষি বশিষ্ঠ এবং দুইজন মন্ত্রীর সঙ্গে ভরদ্বাজ মুনির সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রথমে সন্দেহ করার মতো ভরতকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি রামের অনিষ্ট করার জন্য আসনি তো? ভরত নাকি ভরদ্বাজ মুনির কথা শুনে কেঁদে ফেলে। তারপরে অবরুদ্ধ কন্ঠ বলে-‘আপনার মতো একজন ঋষিও যদি আমাকে এভাবে সন্দেহ করে তাহলে আমার মৃত্যুই শ্রেয়।’ তারপর নাকি ভরত কাঁদতে কাঁদতে তার সংকল্পের কথা মুনিকে জানায়। মুনি নাকি ভরতের কথা শুনে অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং আমাদের বাসস্থান সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে বলে-‘ আগামীকাল সকালে আমার আশ্রম থেকে যাত্রা আরম্ভ করবে। আজ রাতে তোমার দলের সবাইকে আমার আতিথ্য গ্রহণ করতে হবে।’ ভরত নাকি প্রথমে ঋষির কষ্ট হবে বলে ইতস্তত করছিল। পরে ঋষির অনুরোধে রাজি হয়। মুনি ভরদ্বাজ তার আধ্যাত্মিক শক্তির বলে নিমেষের মধ্যে একটি উপবন সৃষ্টি করে বিভিন্ন খাদ্য বস্তু দিয়ে ভরে ফেলেন। সুন্দর অপ্সরীরা অতিথিদের শুশ্রূষা করে। সেই রাতে প্রত্যেকেই বড় আনন্দে কাটিয়ে পরের দিন সকালে মুনির উপদেশ মতো চিত্রকূট অভিমুখে যাত্রা করে। যাবার সময় তিনজন শাশুড়ি মুনি ভরদ্বাজকে   প্রণাম জানানোর জন্য এসেছিল। ভরত মায়েদের ঋষির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। ভরত নাকি প্রথমে বড় শাশুড়ি কৌশল্যাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিল-‘এই যে দেখছেন দুর্বল মহিলাটি, তিনি প্রয়াত মহারাজ দশরথের জ্যেষ্ঠ পত্নী এবং রামচন্দ্রের মাতা। তিনি শোকে দুঃখে অনাহারে উপবাসে থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেজোরানী এবং লক্ষণ এবং শত্রুঘ্নের মাতা সুমিত্রা। ভরত মা কৈকেয়ীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিল-‘ যার জন্য মহারাজের মৃত্যু ঘটল, যার জন্য রামচন্দ্রকে বনবাসে যেতে হল, যে অত্যন্ত অহংকারী, ক্রোধপরায়ণ, মন দুর্বুদ্ধিতে ভরা, নিজেকে বড় জ্ঞানী এবং সুন্দরী বলে ভাবা নিষ্ঠুর এবং পাপী মনের এই মহিলা হলেন আমার মাতা কৈকেয়ী।কথাটা বলতে গিয়ে নাকি ভরতের চোখের জল বেরিয়ে গিয়েছিল। 

মুনি ভরদ্বাজ ভরতকে স্নেহের সঙ্গে বলেছিল-‘ তুমি কৈকেয়ীর সঙ্গে বিশেষ বিরোধিতা কর না। রামের বনবাস বিধির বিধান মতোই হয়েছে। আমরা মানুষেরা মাত্র কারণ হয়ে পড়ি। রামের বনবাসের ফলে ত্রৈলোক্যের মঙ্গল হবে।’

ভরদ্বাজ মুনি বুঝিয়ে দেওয়া মতো এই দলটি চিত্রকূটে পৌঁছালো।

সেই রাতে অনেক রাত পর্যন্ত মেজ শাশুড়ি সুমিত্রা,আমরা বনবাসে আসার পর তারা চিত্রকূট পৌঁছানো পর্যন্ত যে সমস্ত কথা ছিল সব সংক্ষেপে বলল‌।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...