রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

অশ্রুর উৎস যখন শুকিয়ে যায় || হোমেন বরগোহাঞি || মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস, Badudeb Das

 অশ্রুর উৎস যখন শুকিয়ে যায়

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস




অশ্রুর উৎস যখন শুকিয়ে যায়


নির্মল এবং সুস্থ মনের অধিকারী প্রতিটি মানুষই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আশা করে – আগামী দিনগুলি যেন তার নিজের জন্য এবং পরিচিত-অপরিচিত সমস্ত মানুষের জন্য শুভঙ্কর হয়। তিনি যেন প্রত্যেকের মঙ্গলের খবর শুনতে পান। কিন্তু চির অভিশপ্ত সেই সমস্ত তথাকথিত শিক্ষিত লোক– যাদের  প্রতিদিন সকালবেলা উঠে খবরের কাগজ পড়তে হয়। প্রাচীন মানুষের প্রভাতী প্রার্থনা শাস্ত্র পাঠের স্থান এখন দখল করেছে আধুনিক মানুষের খবরের কাগজ। খবরের কাগজ প্রতি সকালে আমাদের জন্য কী খবর বহন করে আনে? আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধে ইসলামিক বিপ্লবীরা সরকারি সৈনিক কয়জনকে জীবন্ত ছাল ছাড়িয়ে হত্যা করেছে। কোচবিহারের একটি গ্রামে একজন জমির মালিক চারজন কৃষিশ্রমিকের চোখগুলি ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপড়ে নিয়েছে। উত্তর কামরূপের কোনো একটি গ্রামে শিশুসহ পঁয়ত্রিশ  জন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অশান্তি দমনের নামে সরকারি সেনাবাহিনী কুমারী বৃদ্ধা এবং গর্ভবতী মহিলাকে নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে। কোনো এক জায়গায় উন্মুক্ত জনতা একজন নিরপরাধ মানুষকে প্রকাণ্ড পাথর দিয়ে আঘাত করে করে এভাবে হত্যা করেছে যে তার আঙ্গুল ছাড়া মানুষটাকে শনাক্ত করার আর কোনো উপায় ছিল না। এই সমস্ত নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে ধর্মের নামে, ভাষার  নামে, সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদের নামে।

আধুনিক মানুষের মতো অভিশপ্ত মানুষ আর কে আছে– কারণ মানুষকে প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়তে হয়, প্রতিদিন সেবন করতে হয় খবরের কাগজ উদগীরণ করা মারাত্মক বিষবাষ্প। এই বিষবাষ্প  শরীরের কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু এটা মানুষের আত্মাকে তিলে তিলে পক্ষাঘাতগ্রস্থ করে তোলে। আধুনিক মানুষের জীবনে খবরের কাগজ সৃষ্টি করা বিষক্রিয়া লক্ষ করে গুস্তাভ ফ্লবেয়ার এত বেশি আতঙ্কিত হয়েছিলেন যে– তিনি বলেছিলেনঃ' খবরের কাগজ হল আবসিথের মতো মারাত্মক বিষ। মাত্র এক গ্লাস তোমাকে খতম করার জন্য যথেষ্ট। সাংবাদিকরা নিজের প্রতিবেদন লেখার আগে সব সময় এই বিষপান করে নেয়।'

পৃথিবীর সমস্ত ধর্মই একটি নরকের কল্পনা করেছে। মানুষের বিশ্বাস যে, যে সমস্ত লোক এই পৃথিবীতে নানা পাপ আর দুষ্কর্ম করে তাদেরকে মৃত্যুর পরে নরকে নানা প্রকারের শাস্তি ভোগ করতে হয়। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে তারা এরকম একটি পৃথিবীতে গিয়ে পুনরায় যখন দেহ ধারণ করে – যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে বিচিত্র অন্তহীন যন্ত্রনা । কিন্তু প্রতিদিন খবরের কাগজে মানুষের অবর্ণনীয় যন্ত্রণার কথা পড়ে পড়ে কিছুদিন আগে আমেরিকার বিখ্যাত টাইম পত্রিকায় একজন পাঠক প্রশ্ন করেছেনঃ' আমাদের এই পৃথিবীতেই যে মানুষের জীবন অন্য কোনো একটি পৃথিবীর নরক নয় সে কথা আমরা কীভাবে জানব?'

আজকাল খবরের কাগজ পড়ে পড়ে আমার মনে ও সব সময় এই প্রশ্নটিই দেখা দেয়।

মানুষের হিংস্র আচরণ বোঝানোর জন্য আমরা প্রায়ই' পাশবিক' শব্দটি ব্যবহার করি। কিন্তু সেটা একটি প্রকাণ্ড ভুল। পশু আত্ম রক্ষার জন্য পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বা আহারের জন্য অন্য পশুকে   হত্যা করে । কিন্তু কোনো পশু আদর্শের নামে বা নিজের বিকৃত মানসিকতা তৃপ্ত করার জন্য অন্য পশুকে জীবন্ত অবস্থায় ছাল ছাড়িয়ে হত্যা করে না, মহিলার যোনিপথে জ্বলন্ত লোহা  বা ভাঙ্গা বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে মজা দেখে না, ধারালো ছুরি দিয়ে চোখ উপড়ে আনে না, মানুষ মানুষের ওপরে যে অকল্পনীয় অত্যাচার করতে পারে তাকে পাশবিক বলাটা পশু জগতের প্রতি একটি বিরাট অপমান।

আবহমানকাল ধরে মানুষ মানুষের ওপরে এভাবে' মানবিক' অত্যাচার করে আসছে। তারমধ্যে যে সমস্ত মানুষ নিজের নিষ্ঠুর বিকৃত এবং রক্তপিপাসু মনোবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য অন্য মানুষকে অবর্ননীয় যন্ত্রণা দিয়ে আনন্দ লাভ করে সেই সমস্ত মানুষের কথা বুঝতে পারি কারণ প্রকৃতির কোনো একটি প্রকাণ্ড ভুল নিষ্ঠুর খেয়ালের ফলে সেই সমস্ত মানুষের মস্তিষ্ক গঠনে এক ধরনের সহজাত ত্রুটি থেকে যায়। কিন্তু বুঝতে কঠিন হয়ে পড়ে মানুষ মানুষের ওপরে করা সেই সমস্ত নরকীয় নির্যাতনের কথা- যে সমস্ত করা হয় ধর্মের নামে, দেশপ্রেমের নামে, সাহিত্য সংস্কৃতির নামে। মধ্যযুগের স্পেনে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এতটাই প্রবল হয়েছিল যে শাস্ত্র বাক্য থেকে এক চুল সরে আসা মানুষকে দলে দলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল কিন্তু একবার একজন ধর্মগুরু অনুভব করলেন যে জ্বলন্ত আগুনে মানুষটাকে ছুড়ে  দিলে তার পুড়ে মরতে  বেশি সময় লাগে না, ফলে শাস্ত্রের বিরোধিতা করে পাপ করার জন্য তার যতটুকু শাস্তি হওয়া উচিত  ততটুকু হয় না। পাপের শাস্তি দেবার জন্য তিনি একটি অভিনব উপায় আবিষ্কার করলেন। উপায়টি হল মাছের মধ্যে কাঠি ঢুকিয়ে  দিয়ে তা সিদ্ধ করার মতো। পার্থক্য কেবল এই যে মানুষটার মধ্যে কাঠি না ঢুকিয়ে একটা খুঁটিতে বাঁধা হয়। পাশেই প্রকাণ্ড আগুন জালানো হয়। সেই অসহ‍্য  আগুনের তাপে তিল তিল করে সিদ্ধ মানুষটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয়। কিন্তু এই অভিনব মৃত্যুর যন্ত্রনা যাতে আর ও বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেই উদ্দেশ্যে ধর্মগুরুটি আরও একটি উপায় উদ্ভাবন করলেন। মানুষটা যাতে দ্রুত অজ্ঞান হয়ে যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি হারিয়ে না ফেলে , সেই উদ্দেশ্যে তার বুক এবং মাথাটায় বরফে ভেজানো কাপড় দিয়ে আবৃত্ত করে তাতে মাঝেমধ্যে ঠান্ডা জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ফলে মগজ সহজে চৈতন্য হারিয়ে ফেলে না, হৃদপিণ্ড সহজে বন্ধ হয়ে যায় না, কিন্তু বাকি সর্বাঙ্গ তিলে তিলে সিদ্ধ হতে শুরু করে এবং' পাপী' ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সেই যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকে। ধর্মকে রক্ষা করার জন্য মানুষের মহৎ কল্পনাকে এই ধরনের অসীম উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করতে হয়েছে।

সেই মধ্যযুগ থেকে মানুষ অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কল্পনাশক্তিও আগের চেয়ে বহুগুণে বিকশিত হয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে , দক্ষিণ আমেরিকার সামরিক একনায়কত্ববাদী দেশগুলির কারাগারে, স্টালিনের রাশিয়ায়,শ্বাহ- শাসিত ইরানের চাবাক নিয়ন্ত্রিত টর্চার চেম্বারে, পলপটর কম্বোডিয়ায়, বর্ণ-বৈষম্যবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার কারাগারে মানুষকে নিষ্ঠুর ভাবে যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করার জন্য যে সমস্ত নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে সেই সব দেখেশুনে মনে কেবলমাত্র একটি প্রশ্ন দেখা দেয়ঃ How do we know that life on this earth iis not another world's hell?' আমাদের এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন যে অন্য কোনো একটি পৃথিবীর নরক নয়, সে কথা আমরা কীভাবে বলতে পারি?'

মানুষের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতার সীমা নেই– কেবল সেটাই এই পৃথিবীটা  যে নরক তার প্রমাণ নয়। তার চেয়েও বড় প্রমাণ হল এই যে– বেশিরভাগ মানুষই অন্যের অবর্ণনীয় দুঃখ-যন্ত্রণা দেখে বিচলিত হওয়া তো দূরের কথা– ধর্ম,ভাষা,  রাজনীতি, জাতীয়তা ইত্যাদি নানা বিমুর্ত আদর্শ বা ধারণার নামে অন্যকে নিষ্ঠুর যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করাটা কে একটা নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করে। কোনো বাঙালি মাতা বা পত্নীর বুক শূন্য করে একজন মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হল, সেই ঘটনার প্রতি অসমিয়া মহিলার একমাত্র প্রতিক্রিয়া হলঃ' বাঙালিরা মহা বদমাশ; এই খবরটাকে এত গুরুত্ব দিয়ে ওদের কাগজে প্রকাশ করতে হল কেন?' সেই  অসমিয়া মহিলার নিজের স্বামীকে যদি কেউ এই ধরনের শয়তানি বর্বরতার সঙ্গে হত্যা করত, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া ঠিক একই ধরনের হত  কি? কোনো অসমিয়া মায়ের বুক শূন্য করে একজন সুকুমার কিশোরকে ছুরি মেরে বা শিশুকে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হল, বাঙালি মহিলার মুখে মন্তব্য শুনতে পেলামঃ' বেটা অসমিয়াদের উচিত শাস্তি হয়েছে।' তার নিজের শিশু সন্তান এভাবে নিহত হলে তিনি কি এরকম একটি মন্তব্য করতে পারতেন?

যুদ্ধ-বিগ্রহ বা বিপ্লব পৃথিবী থেকে অচিরেই বিলুপ্ত হবে সেরকম আশা করছি না, যদিও নিশ্চয় আশা করি যে– প্রেম এবং অহিংসার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং বিশ্ব সমস্ত মানব দরদী  মানুষের অন্তিম লক্ষ‍্য। সেই লক্ষ্য অবশ্য এখনও সুদূর-পরাহত । কিন্তু তা বলে আমরা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে হিংসা এবং নিষ্ঠুরতাকে পরিহার করে চলতে পারি না কি?

 প্রতিদিন খবরের কাগজে অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতা, হিংসা এবং নরহত্যার বর্ণনার প্রতি বিভিন্ন মানুষের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে বিস্মিত এবং বেদনাবিভূত  না হয়ে থাকা যায়না। বাঙালির হত্যায় অসমিয়া নির্বিকার, অসমিয়ার হত্যায় বাঙালি উদাসীন। মাতৃত্ব ,দাম্পত্য অপত্য – এই সমস্ত মানবিক অনুভূতির কি কোনো ভৌগলিক সীমা আছে ? ধর্ম বা ভাষা আছে?

উত্তর মেরুর বরফ– মরুভূমিতে বাস করা এস্কিমোরা আমাদের চেয়ে নিশ্চয় বহুগুণে বেশি অসভ্য(?) এবং অনগ্রসর। কিন্তু অন্যের দুঃখে সহানুভূতি জানাবার জন্য তারা একটি অতি মৌলিক উপায় অবলম্বন করে। কোনো একজন এস্কিমো যদি কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যন্ত্রণা পায়, তাহলে অন্য একজন এস্কিমো অস্ত্রের দ্বারা নিজের শরীরে নিজে আঘাত করে নেয়।– যাতে বন্ধু বা আত্মীয় জনের শারীরিক যন্ত্রণা সে নিজেও অনুভব করতে পারে। আমাদের এতটা বর্বরোচিত কাজ করতে হবে না কিন্তু আমরা যখন কোনো নিরীহ নিরপরাধ মানুষের নিষ্ঠুর হত্যার খবর পাই তখন আমরা হিন্দু বা মুসলমান বা অসমিয়া বাঙালি না হয়ে একজন পিতা মাতা পুত্র পত্নী বা স্ত্রী হিসেবে সেই হত্যাজনিত বিচ্ছেদের যন্ত্রণা অনুভব করার জন্য চেষ্টা করতে পারিনা কি? রক্ত–পিশাচ খুনির হাতে যে মাতা নিজের একমাত্র পুত্রকে চিরকালের জন্য হারিয়েছে, সেই মাতার বুক ভাঙ্গা কান্নার কি বিশেষ কোনো ভাষা আছে?

অত্যন্ত ভয়ের কথা হচ্ছে এই যে– খবরের কাগজ ছড়িয়ে দেওয়া বিষপান করে করে সমাজের বেশিরভাগ মানুষই এই ধরনের মর্মন্তুদ মানবিক ট্রেজিডিকেও জাতি-ধর্ম ভাষার মাপকাঠিতে বিচার করতে শুরু করেছে । তার কারণ কি ?

সমস্ত রোগের ভেতরে ভয়ঙ্কর রোগ হল গলিত কুষ্ঠ। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হল এই যে এই রোগ দেহের স্নায়ু তন্ত্রের অনুভব শক্তি ধ্বংস করে দেয় । ফলে কুষ্ঠ রোগে শরীরে  যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং একদিক থেকে তার দেহের মাংসগুলি গলে পচে,খসে যেতে শুরু করে। সেন্ট ফ্রান্সিস অফ আছিছি কুষ্ঠ রোগীর সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। একদিন কোনোভাবে টগবগ করে ফুটতে থাকা গরম জল তার পায়ে পড়ল, কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না। তখনই তিনি বুঝতে পারলেন যে ভয়ঙ্কর কুষ্ঠরোগ তাকেও আক্রমণ করেছে। ডাক্তারি ভাষায় এই ধরনের স্নায়ু- বিধ্বংসী কুষ্ঠ রোগকে burn out case বলা হয়।

কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত দেহের  মতো মানুষের হৃদয় যখন যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি হারিয়ে ফেলে তখন নিশ্চয় বুঝতে হবে যে সেই মানুষের হৃদয় কুষ্ঠ রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে বর্তমান সমাজে বেশিরভাগ মানুষের হৃদয় এই ধরনের কুষ্ঠ রোগের দ্বারা আক্রান্ত। তাই তারা খবরের কাগজে প্রতিদিন নিষ্ঠুর নরহত্যার বর্ণনা পরেও পিতা-মাতা বা ভগ্নির অশ্রু প্লাবিত হৃদয়ে কোনো ধরনের যন্ত্রণা অনুভব করে না, সু-সজ্জিত ড্রইং রুমে বসে তারা সেই সমস্ত খবর নির্বিকার চিত্তে রাজনৈতিক তত্ত্ব কথা হিসেবে আলোচনা করতে পারে। খবরের কাগজে মানুষের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের বিবরণ পড়ে এমনকি মহিলারাও যখন এক ফোঁটা চোখের জল ফেলার পরিবর্তে তাকে হাস্য- পরিহাসের বিষয় হিসেবে আলোচনা করতে পারে, তখন আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ বাকি থাকেনা যে তার হৃদয় কুষ্ঠ রোগ আক্রমণ করেছে ? তার হৃদয়ে  পবিত্র অশ্রুর উৎস চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে? আর কোনোদিন কোনো যন্ত্রণা অনুভব করতে পারবে না?

গ্রাহাম গ্রীণের 'এ বার্ণট আউট কেস' নামে উপন্যাসের নায়ক আর্তনাদ করে চিৎকার করে উঠেছেঃ' হে ভগবান, হে ভগবান আমাকে যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি ফিরিয়ে দাও। আমার অন্য কিছু চাইনা, কেবল যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি ফিরিয়ে দাও।'

মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় করে  যন্ত্রণাকে, সবচেয়ে বেশি পরিহার করে চলতে চায় যন্ত্রণাকে। কিন্তু মানুষের শরীর একমাত্র দুরারোগ্য কুষ্ঠ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে সে যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু কুষ্ঠ রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যে মানুষ যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, সেই বার্ণট  আউট কেস কুষ্ঠ রোগীর পক্ষে জীবনের পরমতম  প্রার্থনীয় বস্তু হল যন্ত্রণা, যন্ত্রণা, যন্ত্রণা।

সমাজের বেশিরভাগ মনুষের হৃদয় আজ কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত , তারা যন্ত্রণা অনুভব করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ঈশ্বর তাদের সেই যন্ত্রণাবোধ ফিরিয়ে দিন, ঈশ্বর মানুষকে দিতে পারা এর চেয়ে বড় উপহার অন্য কিছুই নেই । আমাদের এই প্রার্থনা শেষ করি ওয়াল্ট হুইটম্যানের একটি পবিত্র শ্লোকের  সাহায্যে– 

Agonies are one of my changes of 

Garments.I do not ask the wounded person 

How he feels,I myself become the 

Wounded person,

My hurts turn livid upon me as I 

Lean on a can and observe.







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...