মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২

পাখিদের পাড়া পড়শী ২/৪ পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস, Pankaj Gobinda Medhi,Pakhider Parar Porshi

 

পাখিদের পাড়া পড়শী ২/৪

পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি   

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস,  

Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider para porshi



দ্বিতীয় অধ্যায় ২(ঘ)

শান্ত সৌম্য অথচ কুয়াশায় ঘিরে রাখা পরিবেশ। কুয়াশার তোরণের নিচে দিয়ে সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। বারান্দা থেকে মূল রাস্তায় যাবার জন্য ঘাসের  উপর দিয়ে হেঁটে চলায় শিশির লেগে জুতাজোড়া ভিজে উঠেছে। তাতে লেপ্টে থাকা শুকনো ঘাস আর পাতা ছাড়ানোর জন্য সে পাকা রাস্তার উপরে জুতোটা  ঘষতে লাগল। জুতোগুলো তার হালকা বলে মনে হল।

একটা মাছরাঙ্গা পাখি তার কর্কশ কণ্ঠস্বরে  জোরে জোরে চিৎকার করে এসে তার সামনে কোনো একটি গাছের ডালে বসল। উদয়শঙ্কর পাখিটিকে দেখতে পায়নি যদিও কণ্ঠস্বর থেকে সে পাখিটাকে চিনতে পারল। কাছেই উদয়শঙ্করকে দেখে উড়ে যাওয়া ভীত পাখিটা তার সামনে দিয়ে যাবার সময় কর্কশ স্বরে চিৎকার করে করে এভাবে উড়ে গেল যেন পাখিটা তাকে মুখ ভেঙচাতে  ভেঙচাতে উড়ে গেল। উড়ে যাওয়া পাখিটার দীর্ঘ লাল ঠোঁট দেখে সে আন্দাজ করতে পারল এটি মাছরাঙ্গা পাখির উন্নত প্রজাতি স্টর্ক- বিল্ড কিংফিশার।

প্রকৃতি শিবিরে অংশগ্রহণ করা প্রকৃতি কর্মীদের থাকতে দেওয়া হয়েছে কাজিরাঙ্গার একটি গেস্ট হাউসে। গেস্টহাউসটা একটি টিলার ওপরে অবস্থিত। উদয়শঙ্কর টিলাটি  থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে নেমে এসে  নিচের খোলা মাঠে দাঁড়াল। গতকাল আসার সময় এই মাঠে পর্যটনের জন্য আগত পর্যটকদের গাড়ি গুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। মাঠের বিপরীত দিকে বন বিভাগের কার্যালয়। উদয়শঙ্কর মূল রাস্তাটি দিয়ে ক্রমে ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকল।

চায়ের  একটি বাগানকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রাস্তাটা এগিয়ে গেছে।

উদয়শঙ্করকে সামনে দেখতে পেয়ে রাস্তাটিতে দুপ দাপ করে লাফাতে থাকা পাখির ঝাঁকটা কিচিরমিচির শব্দ করে বাগানের ফেন্সিং এবং গাছের ডালে বসে কাত হয়ে তাকে দেখতে লাগল। ইংরেজিতে এই পাখিগুলিকে জাঙ্গল ওয়েবলার  বলা হয়। উদয়শঙ্কর ওদের কাছে যাওয়ায় পাখির ঝাঁক নিরাপদ দূরত্বে সরে গেল। পাখিগুলি এই ধরনের কিচিরমিচির শব্দ করে যা  কখনও কখনও অত্যন্ত বিরক্তি দায়ক হয়ে উঠে। ঘরের জানালার কাছে কিচির মিচির করা এক ঝাঁক পাখি কয়েকদিন উদয়শঙ্করের সকালের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

কহরা চৌরাস্তায় গিয়ে সেখান থেকে উদয়শঙ্কর ফিরে এল।

ফিরে আসার সময় টিলাটির সমতলে থাকা বুড়ো কাঁঠাল গাছটিতে উদয়শঙ্কর একটা রিথেড হর্নবিল দেখতে পেল । পাখিটার সাদা মাথাটা এবং ঠোঁটের নিচের হলদে থলেটা দেখে তার বুঝতে বাকি রইল না যে পাখিটা পুরুষ রিথেড। পাখিটাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করার জন্য উদয়শঙ্কর নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়াল যাতে সে পাখিটাকে দেখতে পায় অথচ পাখিটা তাকে দেখতে পাবে না । পুরুষ পাখিটা থেকে কিছুটা দূরে উদয়শঙ্কর দেখতে পেল একটি মহিলা রিথেড হর্নবিল। পাখিটার মাথাটা কালো এবং থলেটা নীল হওয়ার সঙ্গে লেজের অংশটা সাদা। দুজন একান্তমনে পরস্পরের প্রতি নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। একবার পুরুষ পাখিটি মহিলা পাখিটির কাছে এসেছে এবং পরের বার মহিলা পাখিটি পুরুষ পাখির কাছে যাচ্ছে। দুজনেরই প্রেমাস্পদ আন্তরিকতা লাস্যময়। দুজনকেই ভালোভাবে নিরীক্ষণ করার জন্য উদয়শঙ্কর একটু দূরে একটা বাড়ির সিঁড়িতে বসে নিল এবং সেখান থেকে কিছু সময় পাখিদুটির প্রেমকেলি উপভোগ  করতে লাগল। সে বসে থাকা জায়গাটা থেকে শিবির পাতা ঘরটিতে থাকা অংশগ্রহণকারীদের ব্যস্ততাও দেখতে পাওয়া যায়। অংশগ্রহণকারীদের নাড়াচাড়া উদয়শঙ্কর দেখতে পেল। কেউ হাতে টুথব্রাশ নিয়েছে আবার কেউ হাতে গরম চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দিচ্ছে। পাকা মেঝেতে বসার ফলে উদয়শঙ্করের ঠান্ডা লাগতে লাগল। পাখি দুটিকে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ছেড়ে দিয়ে সে শিবির অভিমুখে এগিয়ে গেল । 

–মর্নিং ওয়াক করে এলে নাকি?

কাছে যেতেই উদয়শঙ্করকে সৌম‍্যদা জিজ্ঞেস করল।সৌম‍্যদা গোলাপ গগৈ, কিশোর চৌধুরী এবং সুনীল দাসের পত্নী লীনার সঙ্গে কথা বলছিল । মাঝেমধ্যে তাদের মুখে উদ্ভূত হওয়া হাসির রেশ উদয়শঙ্কর দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিল ।

– না সৌম্যদা এমনিই কিছুটা হেঁটে এলাম। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে এত সকালে হাঁটতে যাওয়াই হয় না যে। তারমধ্যে কাজিরাঙ্গা বলে কিছুটা সুবিধা হয়েছে।

– পরিবেশ কীরকম মনে হচ্ছে? ঠিকই আছে তো?

– হ‍্যাঁ সৌম‍্যদা। বেশ মজার । ভালো লাগছে ।

– চল। এখন তৈরি হয়ে নাও । আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরোতে হবে ।

সকালের আহার গ্রহণ করার পরে গতকাল বলে দেওয়া সময় অনুসারে নয়টার সময় প্রতিজন অংশগ্রহণকারী তৈরি হয়ে নিল । কেবল বনরক্ষীদের আসার জন্য তারা অপেক্ষা করছে । সকালের চা এবং আহার গ্রহণ করে উদয়শঙ্কর শিবিরের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। তা দেখে সৌম্যদা এগিয়ে এল।

– আমরা এখন অরণ্যের মধ্যে যাব। সেখানে গেলে প্রত্যেকেরই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হবে এবং আশা করি আমাদের প্রত্যেকেরই ভালো লাগবে। তুমি পরিবেশ পরিস্থিতি এবং আমাদের আলোচনা গুলি একটু মন দিয়ে শোনো।

সৌম‍্যদা উদয়শঙ্করের কাঁধে হাত রেখে তাকে বলল ।

–সৌম‍্যদা, উদ্দেশ্য নিশ্চয় পক্ষী  নিরীক্ষণই হবে?

– না,না । উদ্দেশ্য অরণ্য নিরীক্ষণ । আমরা অরণ্যে প্রবেশ করব এবং প্রকৃতির প্রারম্ভিক কথাগুলি জানার চেষ্টা করব । কাছেই বড় বাঁদরের একটা দল আছে, সম্ভব হলে সেটাও দেখার চেষ্টা করব। কেবল পক্ষী নিরীক্ষণের জন্য অন্য একটি শিবিরের খুব শীঘ্রই আয়োজন করা হবে ।

– সেটাতেও নিশ্চয় আমি যোগদানের সুযোগ পাব।

– কেন পাবে না।

আন্তরিকতার সঙ্গে আশ্বাস দিল সৌম‍্যদা।








     















 





 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...