স্মৃতি কথা - ১৭
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
( গত সংখ্যার পর)
রাধানগর নামের গন্ঞ্জের মতো শহরটি গড়বেতার আমলাগোড়া অন্ঞ্চলে পড়ে । অজিত গনের ( শুনেছি তিনি প্রয়াত হয়েছেন) বাড়িটি ছিল রাধানগর হাটের এলাকার লাগোয়া । সম্ভবত শুক্রবার হাট বসতো । এছাড়া আর কোন নিয়মিত বাজার ছিল না। । ফলে এক সপ্তাহের সবজি মাছ আমাদের ওই দিন তুলে নিতেহত। ওই বাড়িতে বেশ কয়েকজন সহ ভাড়াটে ছিল। তারা মানুষ হিসেবে মন্দ ছিল না । বেশ মিলমিশ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ভাড়া নেবার দিকটিতে ছিল দুটি বড় বড় ঘর, একটি ছোট ঘর যেটি আমার জন্য ধার্য করা হয়েছিল । বাবা অফিসার পর্যায়ের লোক বলে অজিত গন কোনদিনও ভাড়া চাইতে আসেননি । বাবা তার দুই ছেলেকে ( যাদের নামেই বাড়িটি ছিল) ২৫ টাকা করে ৫০ টাকা জোর করে পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতো ।
রাধানগরের বাড়ির পেছনে ছিল বিশাল মাঠ ।সেখানে বাচ্চা ও তরুণরা গরমকালে ফুটবল, শীতে ক্রিকেট ও ভলিবল খেলতো । আমিও খেলতাম বাচ্চাদের সঙ্গে । ক্রিকেটে বাঁ হাতে বল করতাম । কিছুটা জোরেই করতাম । ব্যাটে ছিলাম একেবারেই গবেট । যা হোক প্রথমের দিকে স্কুলে যাবার ক্ষেত্রে বেশ কষ্ট হতো । বাবা আমাকে রডে বসিয়ে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যেত । যখন স্কুলে নামতাম তখন পা দুটো ঝিনঝিনেতে অবশ । প্রথমের দিকে একটি মাত্র বাস চলতো গড়বেতা থেকে রাধানগর পর্যন্ত । মাঝে মধ্যে স্কুল থেকে ফেরার সময় সেই বাস পেতাম নাহলে হেঁটে যেতাম মাইল তিনেক রাস্তা । হাঁটতে লাগতো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট । রাধানগরের গড়বেতা হাইস্কুলের কয়েকজন মাস্টারমশাই থাকতেন যেমন বন্দিরাম সরকার, অমিতমাধব সেন । এঁরা আমাকে খুব ভালোবাসতেন । অমিত বাবু ভালো গান করতেন । আমি একবার ওঁর সঙ্গে স্কুলের বাৎসরিক ফাংসনে উদ্বোধনী সঙ্গীত গেয়েছিলাম রবীন্দ্র সংগীত ' সবারে করি আহ্বান ' । কিছু ছাত্র ও শিক্ষক বাহবা দিয়েছিল ।অমিত বাবু ও বন্দিরাম বাবু ছিলেন বাবার বন্ধু বিশেষ । রাধানগরে থাকাকালীন বন্দিরাম বাবু ও আরও কিছু মানুষ মিলে অভিনয়ের আয়োজন করতো ।হাটতলায় একটি মন্ঞ্চ ছিল ( সেখানে দুর্গা পূজাও হতো ) সেখানে নাটক হতো । বাবার পরিচালনায় জোছন দস্তিদারের ' দুই মহল ' নাটকটি খুব নাম করেছিল । এছাড়া বাবার আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নবরন্ঞ্জন শাখা ' রাজা রামমোহন ' নাটক ওখানে আয়োজন করেছিল ।
গড়বেতা স্কুলে রাধানগর থেকে আর একজন সহপাঠী যেত । তার ডাকনাম ছিল কাতু । আমি কাতু বলেই ডাকতাম । ওদের রাধানগরে বিরাট ওষুধের দোকান ছিল । আমরা বিকেলে খেলাধুলা করতাম । এসব নিয়ে রাধানগরে বেশ ছিলাম । আমাদের বাড়ির একটু দূরে' চন্ডিদাস চিত্র মন্দির ' নামে তাঁবুর সিনেমা ছিল । অস্থায়ী এই সিনেমা বর্ষাকালে বন্ধ থাকতো । প্রতিদিন ভালো ভালো গান বাজতো সিনেমা শুরুর আগে ।আমি আমার স্বভাবসুলভ দিক দিয়ে ওই সিনেমায় স্টিল ফটো দেখে আসতাম নতুন সিনেমা এলে । প্রায় দেড় বছর এই রাধানগরে থাকার সময় এক কলেজ পড়ুয়ার কাছে টিউশন পড়তে পড়তে যেতাম । তার বাড়ি আমার বাড়ির পাশেই ছিল ।
রাধানগরে দেখেছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রেষারেষি । সে সময় গরীব মানুষদের মাইলো নামে এক ধরনের আমেরিকান শস্য রেশনে দেওয়া হতো ।সে নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা প্রত্যক্ষ করেছি । মাইলো নিয়ে হাজারো অভিযোগ করতো বিরোধীরা। অথচ এখন দেখি মাইলো হেল্থ ড্রিঙ্ক হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ।বোঝা যায় দিন কিভাবে বদলে যাচ্ছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন