হে আমার স্বদেশ- ১১
সন্তোষ কুমার কর্মকার
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
লেখক পরিচিতি-- সন্তোষ কুমার কর্মকার একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক এবং অনুবাদক।বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৫৩ সনে শ্রীকর্মকারের জন্ম হয়।পিতা কানাইলাল কর্মকার। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে সপরিবারে ভারতে চলে আসেন। প্রাথমিক শিক্ষা অসমের বরপেটায়।গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রচিত উপন্যাস গুলি যথাক্রমে গৃহভূমি, শঙ্খ ধ্বনি, পদাতিক, সুবর্ণরেখা,অ মোর আপোনার দেশ, কালান্তরর কথকতা, শিপার সন্ধানত, ইত্যাদি। ছোটগল্প,বেশ কিছু শিশু উপন্যাস এবং অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন।২০২১ সনের এপ্রিল মাসে এই মহান লেখকের মৃত্যু হয়।১৯৯৬ সনে ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার, ১৯৯৮ সনে অসম সাহিত্য সভার সীতানাথ ব্রহ্ম পুরস্কার এবং ২০২০ সনে সাহিত্যাচার্য সৈয়দ আব্দুল মালিক উপন্যাসশ্রী পুরস্কার লাভ করেন ।
আলোচ্য উপন্যাস ' হে আমার স্বদেশ' (অ’ মোর আপোনার দেশ) অসমের অন্যতম সাহিত্যিক, ঠাকুর পরিবারের জামাই, সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।এই উপন্যাসে বেজবরুয়ার চেতনায় কীভাবে জাতীয়তাবাদ অঙ্কুরিত হয়েছিল, বেজবরুয়ার জাতীয়তাবাদের স্বরূপ, রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদের সঙ্গে বেজবরুয়ার জাতীয়তাবাদের তুলনা, ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রেক্ষাপটে ভারত তথা অসমের নবজাগরণের উন্মেষ, জাতীয়তাবাদী বেজবরুয়ার সংগ্রাম, অসম বাংলার সাংস্কৃতিক সমন্বয় আলোচিত হয়েছে।এই উপন্যাসের চরিত্র রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ঠাকুরবাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, বলেন্দ্রনাথ,প্রজ্ঞাসুন্দরী ,অন্যদিকে অসমের হেমচন্দ্র গোস্বামী, গুণাভিরাম বরুয়া,চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা -উনবিংশ শতকের অসম বাংলার অনেক স্বনামধন্য পুরুষই উপন্যাসের পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি শ্রীমতী কর্মকার উপন্যাসটির প্রায় আড়াইশো পাতার মতো অনুবাদ করেছিলেন।তবে আমি প্ৰয়োজন অনুসারে উপন্যাসটিকে আবার নতুন করে একেবারে প্রথম থেকে অনুবাদ করেছি। বলাবাহুল্য শ্রীমতী কর্মকারের অনুবাদ আমাকে অনেকটাই সাহায্য করেছে। এই সুযোগে আমি তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। পরিশেষে দৈনিক বাংলা পত্রিকা(অন লাইন)উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে আগ্ৰহী হওয়ায় তাদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
(১১)
পরীক্ষায় বসল। বি-এ ফাইনাল পরীক্ষা। ছাত্র হিসেবে লক্ষ্মীনাথ মেধা শক্তির পরিচয় দিতে না পারলেও তার মেধা নেই তা কিন্তু নয়। সুবোধ- সুশীল ছাত্রদের মতো মেধা এবং শ্রমকে কেবল পাঠ্যপুথিতে সীমাবদ্ধ রাখে না বলেই সে কলেজের নক্ষত্র হতে পারেনি। অবশ্য তার জন্য তার আফসোস নেই। কারণ কলেজের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু উৎস থেকে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের আলোক যুক্ত ব্যক্তিদের সান্নিধ্য থেকে লাভ করা শিক্ষাজ্ঞানে তার বিচারবোধ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হল।
পরীক্ষার পরে লক্ষ্মীনাথ বাড়িমুখো হল। বহুদিন বাড়ি যায়নি। এমনিতেও অন্যান্য প্রবাসী অসমিয়া ছাত্রদের মতো সে বছর বছর বাড়ি যায় না। এক একটি ফাইনাল পরীক্ষার পরেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে যায় বলেই বাড়ির প্রতি তার আকর্ষণ কম হয় না। ঘনঘন বাড়িতে না যাওয়ার মূল কারনটা হল, অনর্থক টাকা খরচ হওয়ার ভয়। বাড়িতে না যাবার আরও একটি বড় কারণ হল, কলেজ বন্ধ থাকার সময় কলেজের চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে কলকাতার উদার- সাংস্কৃতিক বৌদ্ধিক পরিবেশ থেকে উপযোগী জ্ঞান আহরণ করার সুবিধা পায়। মানব জীবনকে বোঝার জন্য দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশি শিক্ষা- সংস্কৃতির বিষয়ে জ্ঞান লাভ করাটা যে অপরিহার্য, এটা দ্বিতীয় বার কলকাতায় এসে লক্ষ্মীনাথ ভালোভাবে বুঝতে পারল। সঙ্গে বিভিন্ন ঘাত উপঘাতের এটাও উপলব্ধি করতে পারল যে স্বকীয়তা রক্ষা করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানো হল জ্ঞান আহরণের মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রথমে ট্রেন তারপরে জাহাজে দীর্ঘ ভ্রমণের শেষে বাড়ি পৌঁছাল। ঘর- নিজের ঘর, ইতিহাস স্পর্শ করা নগর শিবসাগর। রংঘর, কারেংঘর দৌল দেবালয়ের সঙ্গে শিব সাগর-জয়সাগর ইত্যাদি বিশাল পুকুরে ঐতিহ্যমণ্ডিত রংপুর … শিব সাগরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীনাথের চেতনায় আহোম স্বর্গদেউরা সৃষ্টি করে রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস সরব হয়ে উঠে। কিন্তু আহোম ইতিহাসের শেষের সময়টুকুর কথা ভাবলেই তাঁর মন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
অবশ্য লক্ষ্মীনাথ এই ভাবটিকে মনের মধ্যে বেশিক্ষণ স্থান দেয় না। শিবসাগরেও যাতে অ.সা.উ.সা.র সভায় গ্রহণ করা কার্যসূচি সমূহ কার্যকরী হয়, শিবসাগরের শিক্ষিত মানুষেরা যাতে জোনাকীর কপি পায়, তার জন্য বাড়িতে এসেই লক্ষ্মীনাথ নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করল।
তবুও তার সময় কাটে না। কলকাতায় এত ব্যস্ততাপূর্ণ জীবন, এদিকে শিবসাগরে গোঁসাই ঘরের আনুষ্ঠানিকতার পরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলা, মা অথবা নতুন বৌদি দুজন যত্ন করে খাবার খেতে দেওয়া এবং ঘুমোনো, বিকেলে বড় পুকুর অথবা দিখৌর পারে ঘুরে বেড়ানো– এখন, এই বয়সে কতদিন এভাবে কাটানো যাবে?
ইতিমধ্যে আরও একটি উপসর্গ লক্ষ্মীনাথকে বেশ ভালোভাবে পেয়ে বসল। সেটা হল বিয়ে। আগেরবার বাড়িতে আসার সময় বাড়ির এবং আত্মীয় মহিলারা বিয়ে করার জন্য তার ওপরে বেশ চাপ সৃষ্টি করেছিল। তখন এটি একটি ছোটখাটো আন্দোলনের রূপ ধারণ করেছিল এবং বড় বৌদি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। লক্ষ্মীনাথ তাকে আলাদাভাবে ডেকে এনে বলেছিল,' বড় বৌদি, আমার বিয়ে নিয়ে এত হুলুস্থুল কর না।’
'কেন?'
'এখনই আমি বিয়ে করতে চাইছি না।'
'চিরকুমার থাকার ইচ্ছে নাকি?'
'না না কথা সেটা নয়। আমার বিয়ে করার সময় হয়নি।'
' তোমার বয়স তো দেখছি এক কুড়ি পাঁচ হয়েছে।'
' হলেও আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। পড়াশোনা শেষ করে যখন নিজে রোজগার করতে পারব এবং যাকে বিয়ে করে নিয়ে আসব, তাকেও খাইয়ে-দাইয়ে সুখে রাখতে পারব তখনই আমি বিয়ে করার কথা ভাবব।'
' তাহলে বিয়ে করতে করতে তোমার চুল পেকে যাবে।' মুখ টিপে হেসে বড় বৌদি বলেছিল,' কলকাতায় কারও সঙ্গে হৃদয়ের বিনিময় হয়েছে নাকি?'
' কী যে একই কথা বারবার বলছ!' বিরক্ত কন্ঠে লক্ষ্মীনাথ বলেছিল,' বিয়ে- বিয়ে -বিয়ে ! তোমাদের মনের ভাবটা এরকম যেন বিয়ে করা এবং ছেলে-মেয়েদের জন্ম দেওয়া ছাড়া এই সংসার আর অন্য কোনো কাজ নেই!'
লক্ষ্মীনাথ তারপরে বড় বৌদির সামনে থেকে চলে এসেছিল।
কলকাতাতেও তার কাছে মেয়ে দেবার একটা প্রস্তাব এসেছিল। গুয়াহাটির রাধাচরণ বরুয়ার ভাই উমাচরণ বরুয়া তখন ব্যবসায়িক কারণে কলকাতায় ছিল। এই অমায়িক মানুষটি লক্ষ্মীনাথকে খুব ভালোবাসেন। উমাচরণের সঙ্গে কলকাতার কয়েকজন প্রখ্যাত বাঙালির পরিচয় রয়েছে। কেবল পরিচয়ই নয়, তাদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বও নিবিড়। লক্ষ্মীনাথ প্রায়ই উমাচরণ বরুয়ার কলকাতার সার্কুলার রোডের ভাড়া বাড়িতে যেত। একদিন তাঁর বন্ধু বীরেশ চ্যাটার্জির সঙ্গে লক্ষ্মীনাথের পরিচয় হল। তার দিন চারেকের মধ্যেই উমাচরণ হাসতে হাসতে বললেন ,' লক্ষ্মী, চ্যাটার্জীর দুটি বিবাহযোগ্যা কন্যা রয়েছে। তিনি উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান করছেন। সেদিন যে তাঁর সঙ্গে তোমার কথাবার্তা হল, তোমাকে তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। এক মেয়েকে তোমার হাতে সম্প্রদান করতে চায়। বিয়ে করতে রাজি হলে প্রচুর ধন রত্ন পাবে।'
সেদিনও লক্ষ্মীনাথ প্রস্তাবটিকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবটা তার মনের মধ্যে কিছুটা হলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
তারপর এবার লক্ষ্মীনাথ বাড়িতে এসে দেখল,তার বিয়ের কথাটা আগের চেয়ে আলাদা একটি রূপ নিয়েছে। আরও লক্ষ্য করল, এ ক্ষেত্রে কেবল বৌদিরাই সক্রিয় নয়। এই দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়েছে মাতা ঠানেশ্বরী।সেবার বড় বৌদির হাত থেকে কোনো ভাবে রক্ষা পেয়ে গেলেও এবার মায়ের হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
'লখী,ও লখী–।'
পথে দেখা হওয়া পোস্ট অফিসের বুড়ো পিয়ন নন্দের কাছ থেকে টেলিগ্ৰামটা নিয়েই শ্রীনাথ দৌড়ে ঘরের ভেতরে এল।
বৈঠকখানা ঘরে বসে লক্ষ্মীনাথ একটা বই পড়ছিল। শ্রীনাথ দাদার ডাক শুনে বইটা বন্ধ করে বাইরে এল।
তাকে দেখে শ্রীনাথ চিৎকার করে উঠল ,'লখী, ইউ আর গ্রেজুয়েট!'
লক্ষ্মীনাথের বুকটা নেচে উঠল। গ্রেজুয়েট মানে বি-এ পাস করল। অনেকদিনের প্রচেষ্টা এবং বহু শ্রমের সুফল পেল। শ্রীনাথের কাছ থেকে টেলিগ্রামটা হাতে নিয়ে লক্ষ্মীনাথ পড়ল,' লক্ষ্মীনাথ এন্ড কৈলাস আর গ্রেজুয়েট।'
কৈলাস শর্মা নগাওঁয়ের। লক্ষ্মীনাথের সঙ্গের। একসঙ্গে বি-এ পরীক্ষা দিয়েছিল। দুজন একই মেসে ছিল।
দীননাথ বেজবরুয়ার পুত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি-এ পাস করল। এটা কম বড় কথা নয়। আজ পর্যন্ত অসমের কজন সন্তান বি-এ পাস করতে সক্ষম হয়েছে? আমি নিজে বলতে গেলে উজান অসমের জগন্নাথ বরুয়া প্রথম বি-এ। আজ লক্ষ্মীনাথ বি-এ পাশ করায় সেই একই গৌরব নিয়ে শিবসাগরের দীনানাথ বেজবরুয়ার পরিবার গৌরবান্বিত হয়ে উঠল।
দুপুরের আহার খাওয়ার পরে দীননাথ বেজবরুয়া বড় ঘরের বারান্দায় পাটি পেতে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। খবরটা কানে যেতেই তিনি উঠে বসলেন। কোনো দিকে না তাকিয়ে ঠাকুর ঘরে প্রবেশ করলেন। আসনে শোভা পাচ্ছে দশম, কীর্তন, ঘোষা, রত্নাবলী পুথি।পুথিগুলি সোনা- রুপোর ফুল লাগানো একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। সিংহাসনের দিকে মাথা দিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। কেবল সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করাই নয়, ঠাকুর ঘরের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা কাঁসিটা নিয়ে বাজাতে লাগলেন। এটা তার আনন্দের প্রকাশ এবং এই আনন্দের প্রকাশ পরম পূজ্য গোঁসাই দেবের সামনে। লক্ষ্মীনাথের বি-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা যে সর্ব কল্যাণকর গোঁসাই ঠাকুরের আশীর্বাদে সম্ভব হয়েছে, এটা ভেবেই তিনি ঠাকুরের কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন।
তারপরে দীননাথ বাইরে বেরিয়ে এসে লক্ষ্মীনাথের মাথায় হাত রেখে আকুলভাবে আশীর্বাদ করলেন। আদর করে ছেলের মাথার ঘ্রাণ নিলেন।
এমনিতে শাস্ত্রজ্ঞ দীননাথ গম্ভীর প্রকৃতির ব্যক্তি। তিনি সুখে বিগতস্পৃহ, দুঃখে নিরুদ্বিগ্নমনঃ। নিজের এক পুত্রের মৃত্যু শয্যার পাশে বসে একান্ত মনে ঈশ্বরের নাম স্মরণ করেছিলেন যদিও এক ফোটা চোখের জল ফেলেন নি। কিন্তু উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় পাঠাতে গিয়ে বাধা দেওয়া পুত্র লক্ষ্মীনাথের এই সাফল্যে দীননাথ আবেগিক হয়ে পড়লেন। তার চোখ জোড়া নির্মল চোখের জলে ভরে উঠল।
বি-এ পাস করার আনন্দ ভুলে লক্ষ্মীনাথ পিতার মধ্যে জীবনের মহিমাময় এক রূপ প্রত্যক্ষ করলেন।
খবরটা শিবসাগরে প্রচার হয়ে গেল। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, শুভার্থীরা লক্ষ্মীনাথকে দেখতে এল। কেউ অভিনন্দন জানাল, কেউ লক্ষ্মীনাথের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে শুভেচ্ছা জানাল, কেউ আদরের কন্ঠে ডাকল। এভাবে সদ্য বি-এ পাস লক্ষ্মীনাথকে নিয়ে বাড়িতে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হল।
অসমে বি-এ পাশ যুবকের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। প্রশাসন চালানোর জন্য ইংরেজদের শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন। আসাম গভর্ণমেন্ট বি-এ পাস তরুণদের জন্য চাকরির দরজা অবারিত রেখেছেন। অর্থাৎ ইংরেজ সরকার কোনো ধরনের পরীক্ষা অথবা সাক্ষাৎকার না নিয়েই বিএ পাস যারা করেছে তাদের চাকরি দেয়। কোনো সাধারণ চাকরি নয়। সম্মানীয় এক্সট্রা অ্যাসিস্ট্যান্টের পদ। অবশ্য প্রবেশনারি।
এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসকের তরফ থেকে লক্ষ্মীনাথের কাছে একটা চাকরির নিয়োগপত্র এল ।
সরকারের চিঠিটা প্রথমে দীননাথের হাতে এসে পড়ল। চিঠিটা পড়ে পুত্র গৌরবে গৌরবান্বিত দীননাথ লক্ষ্মীনাথকে ডেকে পাঠালেন। লক্ষ্মীনাথ এল। চিঠিটা ছেলের হাতে তুলে দিলেন। তারপর আশান্বিত ভাবে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,' বুঝেছ লক্ষ্মী বাবা, সবকিছুই প্রভু ঈশ্বরের আশীর্বাদে হয়। প্রভুর ইচ্ছায় বি-এ পাশ করলি। দয়াময় প্রভুর কৃপায় পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে হাকিমের চাকরি পেলি! ইংরেজ আমাদের রাজা। ইংরেজ প্রশাসনে অফিসার হওয়ার জন্য এই আমন্ত্রণ। আমি বড় খুশি হয়েছি। যা ভেতরে গিয়ে আনন্দের এই খবরটা মাকে গিয়ে বল।'
হাকিপমের চাকরি মানেই দায়িত্বশীল পদ। প্রচুর সম্মান। সুনিশ্চিত অর্থনৈতিক জীবন। কিন্তু ইংরেজ সরকারের উপহার হাতে নিয়ে লক্ষ্মীনাথ নির্বিকার।
'কী হল?'যা ভেতরে যা, খবরটা শুনে মা খুব খুশি হবেন।'
লক্ষ্মীনাথ ধীরে ধীরে বাবার সামনে থেকে সরে এল। মায়ের কাছে যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছে না। নিজের ঘরে এসে অবহেলায় সরকারি নিয়োগ পত্রটা পড়ার টেবিলে ছুঁড়ে দিয়ে বিছানায় বসল।
সরকারি চাকরি মানেই ইংরেজদের অধীনে কাজ করা। ইংরেজরা গ্রহণ করা শাসন নীতিগুলি কার্যকরী করার জন্য তাকে অস্ত্ররূপে ব্যবহার করবে। হাকিম হলেও তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকবে না । স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারবে না। বঙ্গের দীনবন্ধু মিত্র নীল চাষ করা ইংরেজদের অত্যাচারের কাহিনির নাট্যরূপ দিয়েছিলেন বলে 'নীলদর্পণ' নাটকটি ইংরেজদের রোষে পড়েছিল। একইভাবে 'আনন্দমঠ' রচনা করার জন্য বঙ্কিমচন্দ্রকেও ব্রিটিশদের কোপ দৃষ্টিতে পড়তে হয়েছিল। তাই হাকিমের চাকরি গ্রহণ করা মানেই লক্ষ্মীনাথ স্বাধীনভাবে সাহিত্য সেবা করতে পারবে না। হাকিমের পদে থেকে সাহিত্য সেবা করতে গেলে প্রতি মুহূর্তে সাবধান থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে–যা তার স্বভাবের বিপরীত। লক্ষ্মীনাথের কাছে স্বাধীনতা হীনতার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।
বিএ পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীনাথ হাকিমের চাকরি পেল। বাড়ির সবার মনে আনন্দ। পুত্রের একের পর এক সাফল্যে ঠানেশ্বরীর বুক ফুলে উঠে। দ্রুত ছেলের বিয়ে দিতে হবে বলে ঠানেশ্বরী নতুন করে মেয়ে দেখতে শুরু করে। অথচ বিয়ের কথায় লক্ষ্মীনাথের কোনো হেলদোল নেই। সে নিজের ঘরে বই নিয়ে মগ্ন হয়ে থাকে অথবা জোনাকীর জন্য রচনা লেখে।
নিয়োগপত্রটি পাওয়ার সাত দিন পার হতে না হতেই চাকরিতে যোগদান করার অনুরোধ জানিয়ে আরও একটি সরকারি পত্র এল। সেদিনই জোড়হাট থেকে বাড়িতে এল মেজ দাদা গোবিন্দচন্দ্র । স্নাতক ভাই হাকিমের চাকরি পেয়েছে, তাতে তিনি ভীষণ সুখী হলেন। কিন্তু হাকিমের চাকরি পেয়েও লক্ষ্মীনাথের কোনো আনন্দ উচ্ছ্বাস নেই দেখে তিনি অবাক হলেন।
'কী হল লক্ষ্মী, হাকিম হওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেও তোর মনে কোনো আনন্দ নেই কেন!' গোবিন্দ্রচন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন।
লক্ষ্মীনাথ নিস্পৃহ, নির্বিকার।
'পোস্টিং কোথায়?'
' তেজপুরে।'
' কবে জয়েন করবি'
দাদার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্মীনাথ ধীর স্বরে বলল,' জয়েন করবো না নাকি।'
' জয়েন করবি না! কেন?'
' সাদা সাহেবদের অধীনে চাকরি করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।'
'কী বললি?' ভীষণভাবে চমকে উঠে গোবিন্দচন্দ্র বললেন,' সাদা সাহেবের অধীনে তোর দ্বারা চাকরি করা সম্ভব নয়। কলকাতায় পড়াশোনা করতে গিয়ে তুই কংগ্রেসে নাম লেখালি নাকি?'
'না মেজদাদা , সেরকম কোনো কথা নয়।' সবিনয়ে লক্ষ্মীনাথ বলল,' ইংরেজ সরকারের হাতের অস্ত্র হয়ে আমি চাকরি করতে পারব না।'
'আরে, এটা কত বড় সুযোগ। তুই হাকিম হলে বাড়ির কত সুনাম! সমাজে আমাদের প্রভাব বাড়বে। আর তুই যেভাবে বলছিস, বাবা কি ইংরেজ সরকারের চাকরি করে নি? ইংরেজ সরকারের চাকরি করেই তো বাবা আমাদের লালন পালন করেছে। আমাদের পড়িয়েছে।'
লক্ষ্মীনাথ চুপ।
'শোন,লখী, তোর এই সিদ্ধান্তটা আমার পছন্দ হয় নি। এই সুযোগটা গ্রহণ না করা সাংঘাতিক ভুল হবে। দ্রুত চাকরিতে জয়েন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে নে।'
তবু হাকিমের চাকরিতে যোগদান করার জন্য লক্ষ্মীনাথ সম্মত হল না । গোবিন্দচন্দ্র হতাশ হলেন । হতাশ হয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন । এমন কি গালিগালাজ করলেন । বাড়িতে একটি উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হল । কথাটা জানতে পেরে শুভার্থীরা লক্ষ্মীনাথকে বোঝাল। এত কম বয়সে এই ধরনের একটি সরকারি চাকরি পেলে, লক্ষ্মীনাথ যে ধরনের প্রতিশ্রুতিবান তরুণ, কিছুদিনের মধ্যে প্রমোশন পেয়ে উচ্চ পদে উন্নীত হবে। তাছাড়া নাম যশের সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকবে । কিন্তু না লক্ষ্মীনাথ কার ও কথা শুনল না।
লক্ষ্মীনাথের এই অবিচল সিদ্ধান্তটি দীননাথকে চিন্তায় ফেলল। দুপুরের আহার করার পরে তিনি বিছানায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন । কিছুক্ষণের জন্য নিদ্রায় মগ্ন হন । আজ ঘুমোতে পারছেন না । লক্ষ্মীনাথকে নিয়ে তার মনে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল। উঠে বসে ডাকলেন,'লখী,লখী বাবা– ঘরে আছ কি ?'
লক্ষ্মীনাথ কাছেই ছিল ।' যাচ্ছি বাবা' বলে আওয়াজ দিয়ে সে বাবার ঘরে প্রবেশ করল ।
ছেলের দিকে তাকিয়ে দীননাথ স্নেহের সুরে বললেন,' ভাত খেয়েছিস?'
' খেয়েছি, বাবা।'
' বস, এখানে বস।'
বাবা কাছে ডাকলেন। কিন্তু লক্ষ্মীনাথ বাবার বিছানায় না বসে জানালার কাছে রাখা বেতের চেয়ারটায় বসল।
দীননাথের বয়স হয়েছে।উঁচু, মাঝারি স্বাস্থ্যের ব্যক্তি। আহার-বিহার, আচার-আচরণে সাত্ত্বিক। তবু বয়স তার শরীরটাকে কিছুটা দুর্বল করে ফেলেছে।
এবার কলকাতা থেকে বাড়িতে এসেই লক্ষ্মীনাথ বাবাকে একটু অন্যরকম দেখছে। বাবা যেন আগের থেকে স্নেহশীল হয়ে পড়েছে।
' দেখ বাবা, তুই বড় হয়েছিস। বি-এ পাশ করে বিদ্বান হলি। জ্ঞান বুদ্ধিতে তুই যে সমবয়সীদের চেয়ে অনেক পরিপক্ক সেটাও বুঝতে পারছি । কিন্তু –। দীননাথ বলতে শুরু করলেন–' সরকার দুবার করে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও হাকিমের পদটা গ্রহণ করবি না বলে স্থির করেছিস। তোর কথা বলে গোবিন্দ দুঃখ করল। তোর এই সিদ্ধান্তটা আমারও ভালো লাগেনি। হাকিমের চাকরি নিয়ে অসমে থাকবি। আমাদের কাছে এটা কত বড় কথা, কত আনন্দের কথা। এদিকে লেখালেখি শুরু করে একটা কাগজ বের করছিস - এতে খুশি হয়েছি। একটা সময়ে আমিও চর্চা করেছিলাম । তোদের নিয়ে ঘর-সংসারের ঝামেলায় সেসব আর হয়ে উঠেনি । আমি না পারলেও তুই যে আমার ছেলে হয়ে লেখালেখি শুরু করেছিস, একটা পত্রিকার সঙ্গে জড়িত রয়েছিস– এটা আমার কাছে খুব ভালো কথা। এসব করে তুই আমাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করছিস। তাছাড়া তোর কলমের যে ধার ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারবি বলে আমার বিশ্বাস। তার জন্যও তোর অসমে অসমিয়া মানুষের মধ্যে থাকাটা ভালো হবে ।'
লক্ষ্মীনাথ শুনছে। অসমে থাকার জন্য বাবা যে সমস্ত কথা বলেছে,সেগুলিকে একেবারে অস্বীকার করা যায় না। তবে অ.ভা.উ.সা.র সভা এবং জোনাকীকে কেন্দ্র করে কলকাতায় যে সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেই সবের রূপায়ণ অসমে থেকে কতটা সম্ভব? এত কম খরচে জোনাকীর ছাপা-বাঁধা অসমে সম্ভব নয়। তার চেয়েও বড় কথা হল কলকাতার যে বৌদ্ধিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশ, কলকাতায় মহানগরীয় জীবনের গতিশীলতার যে প্রাণময় আনন্দ, সেটা অসমে নেই। তবে বাবাকে এসব বলা যাবে না।
' দেখ বাবা, এন্ট্রান্স পাশ করার পরে কলকাতায় যাওয়া নিয়ে বাধা দিয়েছিলাম– পরে গোবিন্দের কথায় তোকে যেতে দিলাম।' তারপরে দীননাথ বললেন,' এভাবে বাধা দেওয়াটা যে উচিত হয়নি, তা পরে বুঝতে পেরেছিলাম। এবারও এই চাকরির কথা নিয়ে তোর উপরে জোর খাটাবো না, তবে হাকিমের চাকরি না নিয়ে কি করবি বলে ভেবেছিস?'
' ‘পড়াশোনা করব।'
' আরও পড়াশোনা করবি!'
' কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম-এ ক্লাসে ভর্তি হব বলে ভাবছি।'
' ভালো কথা। আমার এক ছেলে এম এ পড়বে এটা সত্যিই আনন্দের কথা।'
' সঙ্গে ল পড়ব।'
' একসঙ্গে দুটো!'
' এভাবে দুটোতে নাম ভর্তি করে কলকাতার অনেক ছেলে ডিগ্রি নিয়েছে।'
' কিন্তু খরচের কথাও তো রয়েছে।'
' বিলাতে থাকা গোলাপ দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে তিনিই প্রত্যেক মাসে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ টাকা করে পাঠাতেন। কলকাতায় ফিরে গিয়ে আরও কিছু টাকা চেয়ে চিঠি লিখব। অবশ্য বেশিদিন তার সাহায্যের দরকার হবে না। এবার ফিরে গিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের কোনো একজন উকিলের অধীনে আর্টিকেল ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করব। এভাবেও নিজের চলার মতো আয় হবে।'
লক্ষ্মীনাথের কথাগুলি শুনে দীননাথ গভীরভাবে চিন্তা করলেন। ছেলে নিজেকে হাকিম হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না। অসম সরকারের হাকিমের চেয়েও বড় কিছু করার কথা ভাবছে । আর কথাগুলি যে সুরে বলল,দীননাথ ছেলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখতে পেলেন। তাই দীননাথ ছেলের অসমে থেকে হাকিমের চাকরিতে যোগদান করার প্রসঙ্গটা আর তুললেন না।
' এদিকে গোবিন্দ সন্দেহ করছে, তুই নাকি কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছিস?'
লক্ষ্মীনাথ বলল,' সেটা মেজদাদার আশঙ্কা। আমি একবারই অসমের হয়ে কংগ্রেস অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। তারপরে কংগ্রেসের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। এমনিতেও আমি এখন' এ সাবজেক্ট নেশন হেজ নো পলিটিক্স' মতে বিশ্বাস করি।'
' ভালো কথা।' স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দীননাথ বললেন,'আজকাল সাহেবদের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের অনেকেই খুব খারাপভাবে সমালোচনা করতে শুরু করেছে। সাহেবরা আমাদের শোষণ করছে, লুন্ঠন করে দেশের ধন রত্ন নিয়ে গেছে বলে গালিগালাজ করছে। এসব ভালো কথা নয়। সাহেবরা হল আমাদের রাজা আর আমরা হলাম তাদের প্রজা। প্রজা হয়ে রাজার প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করাটা আমাদের ধর্ম। তাই দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য আরম্ভ করা এইসব কংগ্রেসী নেতাদের কার্যকলাপ থেকে থেকে দূরে থাকবি ।'
এভাবে উপদেশ দিয়ে দীননাথ লক্ষ্মীনাথকে পুনরায় কলকাতা যাবার অনুমতি দিলেও পুত্রের আসন্ন বিদায়ের কথা ভেবে বিষন্ন হয়ে পড়লেন।
সেটা লক্ষ্য করে লক্ষ্মীনাথের ও খুব খারাপ লাগল।
' আর শোনো, কিছুদিন ধরে অনুভব করছি– আমি যেন জীবনের অন্তিম কালে এসে পৌঁছেছি।' দীননাথের কণ্ঠস্বর গম্ভীর,' তোরা কেউ আমাদের বংশের বিদ্যার চর্চা না করলেও লক্ষ্মণ আয়ুর্বেদটা ভালোই শিখেছে। ঠিক পারবে। যা দেখছি, দয়াময় প্রভুর কৃপায় সে আমাদের বংশ পরম্পরা রাখবে। তাই ইহ জীবনে আর আমার পাবার মতো কিছু নেই। একটা অন্তিম ইচ্ছা রয়েছে গঙ্গা স্নান করার। আগে যখন গোবিন্দ-গোলাপ কলকাতায় ছিল, তখন চাকরি আর ঘরোয়া ঝামেলার জন্য যাওয়া হয়নি। এখন তুই কলকাতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিস যখন দেহ সক্ষম থাকতে থাকতে মা এবং লক্ষ্মণকে নিয়ে গঙ্গা স্নান করে আসব বলে ভেবেছি।'
' ঠিক আছে। আমি একটা ঘর ভাড়া করে ঠিক করে আপনাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে রাখব।'
এমন সময় ঠানেশ্বরী দেবী ঘরে প্রবেশ করলেন। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে তিনি পিতা-পুত্রের কথোপকথন শুনছিলেন। দীননাথের বিছানার কাছে এসে তিনি বললেন,' এত উপদেশ দিয়ে ওকে আবার কলকাতায় পাঠাচ্ছেন, আপনি ওর বিয়ের কথা বলছেন না কেন?'
লক্ষ্মীনাথ দেখল মহাবিপদ। চেয়ার থেকে উঠে সে বাইরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হল।
' তুই চলে যাচ্ছিস! একটু দাঁড়া!'
' হবে,ওকে যেতে দাও–।' দীননাথ বললেন,' ও আরও পড়াশুনা করবে। পড়াশোনা করা অবস্থায় ওকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াটা উচিত হবে না।'
' কিন্তু তার বিয়ের বয়স দেখছি পার হয়ে যাচ্ছে।'
পত্নীর দিকে তাকিয়ে মজা করার সুরে দীননাথ বললেন–' পুরুষ মানুষের আবার বিয়ে করার কোনো বয়স লাগে?'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন