রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩

হে আমার স্বদেশ- ৩০ সন্তোষ কুমার কর্মকার মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, He Amar Swadesh

হে আমার স্বদেশ- ৩০

সন্তোষ কুমার কর্মকার

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস





  লেখক পরিচিতি-- সন্তোষ কুমার কর্মকার একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক এবং অনুবাদক।বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৫৩ সনে শ্রীকর্মকারের জন্ম হয়।পিতা কানাইলাল কর্মকার। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে সপরিবারে ভারতে চলে আসেন। প্রাথমিক শিক্ষা অসমের বরপেটায়।গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত  বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রচিত উপন্যাস গুলি যথাক্রমে গৃহভূমি, শঙ্খ ধ্বনি, পদাতিক, সুবর্ণরেখা,অ  মোর আপোনার দেশ, কালান্তরর কথকতা, শিপার সন্ধানত, ইত্যাদি। ছোটগল্প,বেশ কিছু শিশু উপন্যাস এবং অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন।২০২১ সনের এপ্রিল মাসে এই মহান লেখকের মৃত্যু হয়।১৯৯৬ সনে ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার, ১৯৯৮ সনে অসম সাহিত্য সভার সীতানাথ ব্রহ্ম  পুরস্কার এবং ২০২০ সনে সাহিত‍্যাচার্য সৈয়দ আব্দুল মালিক উপন্যাসশ্রী পুরস্কার লাভ করেন ।


   আলোচ্য উপন্যাস ' হে আমার স্বদেশ' (অ’ মোর আপোনার দেশ) অসমের অন্যতম সাহিত্যিক, ঠাকুর পরিবারের জামাই, সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।এই উপন্যাসে বেজবরুয়ার চেতনায় কীভাবে জাতীয়তাবাদ অঙ্কুরিত হয়েছিল, বেজবরুয়ার জাতীয়তাবাদের স্বরূপ, রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদের সঙ্গে  বেজবরুয়ার জাতীয়তাবাদের তুলনা, ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রেক্ষাপটে ভারত তথা অসমের নবজাগরণের উন্মেষ, জাতীয়তাবাদী বেজবরুয়ার  সংগ্রাম, অসম বাংলার সাংস্কৃতিক সমন্বয় আলোচিত হয়েছে।এই উপন্যাসের চরিত্র রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ঠাকুরবাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, বলেন্দ্রনাথ,প্রজ্ঞাসুন্দরী ,অন‍্যদিকে অসমের হেমচন্দ্র গোস্বামী, গুণাভিরাম বরুয়া,চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা -উনবিংশ শতকের অসম বাংলার অনেক স্বনামধন্য পুরুষই উপন্যাসের পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

প্রসঙ্গত বলে রাখি শ্রীমতী কর্মকার উপন্যাসটির প্রায় আড়াইশো পাতার মতো অনুবাদ করেছিলেন।তবে আমি প্ৰয়োজন অনুসারে উপন্যাসটিকে আবার নতুন করে একেবারে প্রথম থেকে অনুবাদ করেছি। বলাবাহুল্য শ্রীমতী কর্মকারের  অনুবাদ আমাকে অনেকটাই সাহায্য করেছে। এই সুযোগে আমি তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। পরিশেষে দৈনিক বাংলা পত্রিকা(অন লাইন)উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে আগ্ৰহী হওয়ায় তাদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

(ত্রিশ)

' পাপা, পাপা‐- ফটিক গাছের ফুল ছিড়ছে‐-।'

মালি কাজ করে যদিও প্রতিদিন সকালবেলা লক্ষ্মীনাথ ঝারি দিয়ে ফুলবাগানে গাছপালার চারায় জল দেয়। কখনও নিজেই ফুলবাগানের যত্ন করার কাজে যোগ দেয়। পুরনায় এভাবে চিৎকার করে ওঠায় লক্ষ্মীনাথ মাথা ঘুরিয়ে দেখল সত্যিই ঘরের কাজ করা মহিলার সাত বছরের ছেলে ফটিক নতুন করে ফোঁটা কাশ্মীরি গোলাপ গাছ থেকে ফুল ছিড়ে পাপড়ি গুলি বাতাসে উড়িয়ে খেলছে। ৩৮ নম্বর ডবসন রোডের বাড়ির সামনের দিকের ফুল বাগানটির সমান না হলেও ২২ নম্বর রোজ মেরিলেনের এই বাগানটাও খুব ছোটো নয়। তবে এটা সাজিয়ে তুলতে লক্ষ্মীনাথের খুব কষ্ট হয়েছে। ফিরিঙ্গি মালিক ফ্রাঙ্ককুম থাকার সময় জায়গাটা লতা-জঙ্গলে ভরেছিল। শ্রমিকদের দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে কোদাল চালিয়ে পাথর এবং কাঁকড় বেছে বের করে সার-জল দিয়ে জায়গাটিকে ফুলবাগানের উপযুক্ত করে তুলেছে। তারপরে নিজেই বৌ- বাজারে গিয়ে নার্সারি থেকে নানা ধরনের ফুলের চারা এবং বীজ এনে গত পাঁচ মাস অশেষ পরিশ্রম করে বাগানটাকে দর্শনীয় করে তুলেছে। অবশ্যই এই কাজে সাহায্য করেছে এই বাড়িতে আসার পরে ঘোড়ার গাড়ির জন্য নিযুক্তি দেওয়া সইস আব্দুল। সে মুর্শিদাবাদের চাষির ছেলে।গাছপালার যত্ন নিতে জানে এবং তার হাতে গাছপালা দ্রুত বেড়ে ওঠে। এত খরচ আর এত পরিশ্রম করেই ফুলবাগানের ফুটিয়ে তোলা অনুপম ফুল ছিঁড়ছে চাকরানির ছেলে ফটিক। লক্ষ্মীনাথ গর্জে উঠল,' এই হারামজাদা, তুই ফুল ছিঁড়ছিস।

অরুণা পুনরায় বলল,' পাপা ,ও রোজ ফুল ছিঁড়ে। তুমি যখন অফিস চলে যাও, ও বাগানের ফুল ছিঁড়ে সেগুলো দিয়ে খেলে।'

' ফটিক‐-!'

ফটিক ভীষণ ভয় পেল। হাতে নেওয়া ফুল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করছিল ।হন্তদন্ত হয়ে ফটিকের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্মীনাথ হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই বলল,' ওরে আমি তোকে মারব না। আয়, এদিকে আয়। একটা কথা শোন‐-।'

ফটিক দাঁড়াল। কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থেকে আড়চোখে লক্ষ্মীনাথের দিকে তাকাল। তারপর এক পা দু পা করে এগিয়ে এল। হাতের ঝাড়িটা রেখে যে গাছটি থেকে সে ফুল ছিড়েছিল, সেই গোলাপ গাছটার কাছে হাটু গেড়ে বসল। তারপরে লক্ষ্মীনাথ ফটিককে অন্যান্য গাছে ফুটে থাকা অথবা ফুটতে চলা ফুলগুলির দিকে তাকাতে বলল। ফটিক তাকানোর পরে লক্ষ্মীনাথ তাকে আদর করে বোঝাল যে গাছে ফুটে থাকা ফুল দিয়ে খেলতে নেই। ফুল অতি কোমল সুন্দর। সার- জল পেয়ে ধীরে ধীরে গাছ যখন ডাল পাতায় সজীব হয়ে ওঠে তখন সেই সজীব গাছে সবুজ পাতার মধ্যে রং-বেরঙের ফুল ফোটে। ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশটা মনোরম হয়ে পড়ে। এইরকম মনোরম দৃশ্য দেখে ফটিকের ভালো লাগেনা কি? এভাবে বুঝিয়ে বলায় ফটিক বুঝতে পারল এবং তারপরে নিজেই বলল যে সে আর কোনোদিন ফুল ছিড়বে না।

লক্ষ্মীনাথ তারপরে ফুলবাগানের জল দেওয়া কাজটা শেষ করে ফটিক এবং অরুণাকে নিয়ে বাগানের একদিকের খোলা জায়গায় দৌড়া-দৌড়ি খেলতে লাগল। খেলতে খেলতে দেখল ঘরের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটা টিয়া পাখির বাচ্চা পড়ে গিয়ে চিৎকার করছে। শব্দটা শুনে কৌতুহলী লক্ষ্মীনাথ সেদিকে এগিয়ে গেল। পাখির বাচ্চাটা কীভাবে এখানে এল বুঝতে পারল না। সে ধীরে ধীরে পাখির বাচ্চাটাকে তুলে হাতের তালুতে নিয়ে পাশের জলের কলের কাছে এল। তারপরে ছোটো একটি ডিবে এনে তাতে করে জল খেতে দিল। একটু একটু করে জল খেয়ে পাখির বাচ্চাটা সুস্থ হয়ে উঠল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পিটপিট করে তাকাতে লাগল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সেটা দেখে অরুণা আনন্দে হাত তালি দিয়ে উঠল। লক্ষ্মীনাথের মুখে ও তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল।।

এটাই লক্ষ্মীনাথের স্বভাব। সে যেভাবে ফুল ভালোবাসে, জীবজন্তুর প্রতি ও তার অসীম স্নেহ ভালোবাসা। ফটিক জীবজন্তুর উপর অত্যাচার করতে ভালোবাসত। লক্ষ্মীনাথের সংস্পর্শে তার সেই খারাপ স্বভাবটাও পরিবর্তিত হয়ে গেল।

ছোটো শিশুদের মতো লক্ষ্মীনাথ আনন্দ ফুর্তি করতেই থাকে। সুযোগ পেলেই ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে প্রত্যেককে হাসায়। আর এসব বাড়িতেও করে।

রাতের আহার খেয়ে লক্ষ্মীনাথ ডাইনিং টেবিল থেকে উঠল। রত্না এখন ও ছোটো। বুড়ি আয়াটাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। অরুণা নিজে নিজে খেতে পারে। তার খাওয়া শেষ হয়নি। এদিকে প্রজ্ঞা রান্না ঘরের সমস্ত কিছু গুছিয়ে রাখছে । রত্নার খাওয়া শেষ হলে আয়াকে খেতে দিয়ে প্রজ্ঞা খেতে বসবে। বেসিনে মুখ হাত ধুয়ে ভেতর দিকের বারান্দায় যাওয়ার দরজার পর্দাটা ধরে লক্ষ্মীনাথ অরুণা শুনতে পারার মতো বলল,' কুসুমিকা আমার প্ৰিয়তমে‐-।

অরুণা ইতিমধ্যে সাত পার করে আটে পা দিয়েছে। সুরভির মতো এত বুদ্ধিমতী না হলে ও তার বিচার বোধ কম নয়।নারী-পুরুষের প্রেম-প্রণয়ের সম্পর্কটা কিছু কিছু বুঝতে পারে। কিন্তু বাবা যে তাকে এখন মজা করার জন্যই এভাবে বলল, সে বুঝতে পারল না। তার জন্যই বাবার মুখে এভাবে শোনার পরে তার কিশোরী মনে একটা খারাপ সন্দেহ জাগল। কোনোমতে খাওয়া শেষ করেই অপরিসীম কৌতূহল নিয়ে লক্ষ্মীনাথের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,' পাপা তুমি কুসুমিকাকে ডাকছ, প্রিয়তমে বলছ! কুসুমিকা তোমার কে?'

একটুও না হেসে করুণ সুরে লক্ষ্মীনাথ বলল,' তুই জানিস না অরুণি মা। সে বড়ো দুঃখের কথা।'

' দুঃখের কথা! কুসুমিকা কেন তোমার দুঃখের কারণ হবে?'

' ওরে সে যে আমার দ্বিতীয়া পত্নী।'

সঙ্গে সঙ্গে অরুণার মনটা ক্রোধ এবং ক্ষোভে ভরে উঠল। তার মানে তার একজন সৎ মা আছে।না, সে কখন ও সৎ মা থাকাটা সহ্য করতে পারে না। কিছুক্ষণের মধ্যে তার অবস্থাটা এতই খারাপ হয়ে পড়ল যে আবেগ সামলাতে না পেরে ইতিমধ্যে খেতে বসা প্রজ্ঞার কাছে দৌড়ে এল। দুই হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগল।

পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরে বিরক্তি মাখা ক্রোধে প্রজ্ঞা বলল,' মেয়ের সঙ্গে বাপের এ কেমনধারা ঠাট্টা মশকরা, বুঝতে পারিনা বাপু।'

লক্ষ্মীনাথ হো হো করে হাসতে লাগল।

এখনও ভোলানাথের সঙ্গে করা ব্যবসার সমস্ত বিষয় নিষ্পত্তি হয়নি। তার জন্য অপেক্ষা করে না থেকে লক্ষ্মীনাথ স্বতন্ত্রভাবে ব্যবসা আরম্ভ করল। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম দিল 'আসাম বেঙ্গল স্টোর্স'। ক্লাইভ স্ট্রিটে থাকা আগের অফিসে মাঝে মধ্যে যদিও যায় নতুন কোম্পানির অধিকাংশ কাজই বাড়ি থেকে করে। ভোলানাথের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে এখন নতুন পার্টি অথবা ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে উপঢৌকন দিতে লাগে। তাই ভোলানাথের শেখানো অনুসারে একটা কুলিকে সঙ্গে নিয়ে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল কিনে আনল। বাইরের বারান্দায় সেগুলো রেখে সেগুলোকে সুন্দর করে পুঁটলি বাধল। তারপরে কালি দিয়ে সেই পুঁটলিগুলোতে নাম ঠিকানা লিখল।

তখনই সামনে গেট খোলার শব্দ হল। লক্ষ্মীনাথ ঘাড় ঘুরিয়ে আগন্তুককে দেখে আনন্দিত হয়ে উঠল। হাতের লেখনীটা রেখে বারান্দা থেকে দীর্ঘ পায়ে অতিথির দিকে এগিয়ে গেল।

' পদ্মনাথ বরুয়া। লক্ষ্মীমপুরের নাগা পর্বতের ছাত্রবন্ধু প্রিয় পদ্মনাথ। উচ্ছসিত কন্ঠে লক্ষ্মীনাথ পদ্মনাথকে স্বাগত জানাল ,' আমার কী সৌভাগ্য যে আজ আপনার সঙ্গে আমার দেখা হল?'

' আপনার সাক্ষাৎ পাওয়াটা আমার সৌভাগ্য।' শান্ত এবং কিছুটা নিরীহ প্রকৃতির পদ্মনাথ হাসতে হাসতে বলল,' সকালবেলা হ্যারিসন হোটেল থেকে আমাদের তেজপুরের হরিবিলাস আগরওয়ালা মহাশয়ের সঙ্গে বেরিয়ে ডবসন রোডের মিঃ ভোলানাথ বরুয়ার বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কপাল খারাপ, তিনি নাকি আমরা যাবার কিছুক্ষণ আগেই একটা আর্জেন্ট কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন। তখন আপনার সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবলাম। কিন্তু মনে একটি আশঙ্কা ছিল, আপনিও হয়তো ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন? আপনার সঙ্গে দেখা হবে কিনা? তবে আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই আপনার সঙ্গে দেখা হল।

' অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আপনি একা লড়াই করা মানুষ। আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতেই হবে। আসুন, ভেতরে আসুন‐-।'

লক্ষ্মীনাথ আদর করে পদ্মনাথকে ডেকে এনে বারান্দায় একটি চেয়ারে বসতে দিল। তার পাশে অন্য একটি চেয়ারে বসে লক্ষ্মীনাথ জিজ্ঞেস করল‐-' কলকাতায় কবে এসেছেন?'

' কাল সকাল দশটায় এসে পৌঁছেছি।'

' কত বছর পরে কলকাতা আসা হল?'

' অর্ধ সমাপ্ত ছাত্র জীবন ছেড়ে কলকাতা থেকে অসমে ফিরে গিয়েছিলাম। তার বারো বছর পরে আবার কলকাতা এলাম।'

' এবার কলকাতা এসে কেমন লাগছে?'

' ছাত্র জীবনের কথা মনে পড়ছে। কলে স্নান করে হোটেলে বিশ্রাম নেবার সময় সেই সব কথাই মনে পড়ছিল…।'

বলতেই পদ্মনাথ ভাবুক হয়ে পড়ল। নিজের অজান্তেই তিনি অতীত স্মৃতিচারণ করতে লাগলেন।

পদ্মনাথ তার অন্তরঙ্গ বন্ধু কৃষ্ণ প্রসাদ দুয়ারার সঙ্গে চৌদ্দ নম্বর প্রতাপচন্দ্র চ্যাটার্জি স্ট্রিটের অসমিয়া মেসে ছিলেন। সেই মেসের কাছেই কলেজ স্ট্রিটের মেস। কলেজ স্ট্রিটের উত্তরপারে মেডিকেল কলেজের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড ঘর, উত্তর দিকে কিছু দূর এগিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং ইউনিভারসিটির সিনেট হাউস, দক্ষিনে হিন্দু বা সংস্কৃত কলেজ। প্রতাপচন্দ্র চ্যাটার্জী মানে বাংলা ভাষার সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার নামে সেই রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র তখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিদিন ঠিক সাড়ে দশটার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে বসে তিনি আদালতে যেতেন। বৈদ্যনাথ প্রায় প্রত্যেক দিনই কলেজটির দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের ঘোড়ার গাড়ি আসার অপেক্ষায় থাকতেন। খুবই কাছ থেকে প্রতিভার জীবন্ত রূপ বঙ্কিমচন্দ্রকে প্রাণ ভরে দেখতেন। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দর্শন লাভ করা তার কাছে এক অন্যতম কর্ম ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরকে কখন ও কোনোদিন আকস্মিকভাবেই দেখতে পেতেন। যখনই দেখা পেতেন, তখনই পদ্মনাথ অলক্ষিতে দ্বিবস্ত্র পরিহিত মহান পুরুষের পেছন পেছন যেতেন। কলকাতার পদপথ দিয়ে কার ও প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে চটি জুতোর আওয়াজ তুলে আপন মনে যেতে থাকা বিদ্যাসাগর, যতদূর পর্যন্ত সম্ভব বিদ্যাসাগরের পেছন পেছন অনুসরণ করতেন…।

তারপরে পদ্মনাথ প্রতাপ চ্যাটার্জী স্ট্রীটে থাকার সময় বন্ধুবর কৃষ্ণপ্রসাদ দুয়ারার সহযোগিতায় 'বিজুলী' পত্রিকার প্রকাশ করার স্মৃতিচারণ করতে লাগলেন। কিন্তু লক্ষ্মীনাথ সেইসব জানে। তাছাড়া সেইসব শুনতেও চায় না। কারণ,প্রথম লিখতে শুরু করে বেনুধর রাজখোয়ার সঙ্গে পদ্মনাথ যুক্তভাবে প্রণীত যুবক-যুবতী নামের বিহু সম্পর্কিয় একটি প্রকাশ করেছিলেন । সেই পুথিটির বিষয়ে চন্দ্র কুমার আগরওয়ালার সম্পাদনায় প্রকাশিত ' 'জোনাকী'তে একটি কড়া সমালোচনা প্রকাশিত হয়। তার জন্য 'যুবক- যুবতী'র দুজন লেখক 'জোনাকী'র ওপরে ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়। তারপরেই কৃষ্ণপ্রসাদ দুয়ারার সঙ্গে একত্রে পদ্মনাথ 'বিজুলী' প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয় এবং দ্বিতীয় বছর থেকে পদ্মনাথই 'বিজুলি'র সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করে । প্রবাসে অসমিয়া ছাত্রদের মধ্যে দুটো ভাগ হয়েছিল, অনেক তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল। লক্ষ্মীনাথের কাছে সেই সমস্ত স্মৃতি মধুর নয়। তার জন্যই তাকে থামিয়ে প্রসঙ্গ বদলে বলল,' বরুয়া সাহিত্য ছাড়া আপনি কয়েকটি স্কুল পাঠ্য রচনা করেছেন–।'

' হেডমাস্টারি করে স্কুলের শিক্ষার সঙ্গে এত বছর জড়িত থেকে সেসব লেখার প্রয়োজন অনুভব করলাম।'

' ভালো করেছেন। আপনার রচনা করা ‘আদি শিক্ষা’, ‘নীতি শিক্ষা’, ‘মহারানী ভিক্টোরিয়া’, ইত্যাদি বইগুলি আমাদের উঠে আসা ছেলেমেয়েদের জন্য বড় উপযোগী হয়েছে। এখন আর কী কী লিখছেন বলুন তো?'

' চারপাশের ঝামেলায় এত জড়িয়ে পড়েছি যে 'জয়মতী' নাটক এবং 'জুরনি' কবিতা লেখার পরে সেভাবে আর লিখতেই পারিনি। তবু ভাবছি স্বর্গদেউ গদাধর সিংহের ওপরে ইতিহাসমূলক একটি নাটক লিখব। আপনি–এখন আপনি–?'

' গতবছর ব্যবসা নিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলাম, বুঝেছেন। ভোলাদার কাছ থেকে আলাদা হয়ে এখন ও কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারিনি। তার মধ্যে গতবছর' কৃপাবর বরুয়ার কাগজের পুঁটলি' আর এই বছর(১৯০৫) সেই জোনাকির তৃতীয় বছরে প্রকাশিত আমার উপন্যাস' পদুম কুঁয়রি' বই আকারে প্রকাশ করলাম।'

' ভালো করেছেন। আপনার পদুমকুঁয়রি' একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এটি আমাদের অসমিয়া সাহিত্যের একটি অমরপুঁথি।'

' কতটা অমর জানি না। তবে বাংলার ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হওয়া রমেশচন্দ্র দত্তের মারাঠি বীর শিবাজীর সঙ্গে আকবরের সংগ্রামকে নিয়ে লেখা' মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত', অন্যদিকে জাহাঙ্গীরের সময় রাজপুতদের পতনের কাহিনি নিয়ে লেখা' রাজপুত জীবন সন্ধ্যা'র মতো যে লিখতে পারিনি সে কথা জানি। তার বাইরে বিক্ষিপ্তভাবে এটা-ওটা লিখছি। তবে মনটা এখন ও সুস্থির হতে পারেনি। কলকাতার বাঙালি কবি সাহিত্যিকদের যেভাবে একান্ত মনে লেগে সরস্বতী দেবীর বন্দনায় ব্রতী হতে দেখি, সেটা আমার দ্বারা হয়নি। এমনকি অসমে থেকে অসমিয়া ভাষার জন্য আপনি যে নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা করে যাচ্ছেন – সেটাও আমার দ্বারা সম্ভব হয়নি ।'

' বেজবরুয়া মহাশয়, প্রকাশিত পুঁথির সংখ্যার তালিকায় আমি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আপনার কাজের ধার বেশি। আমার একান্ত কামনা আপনার কাজ সচল থাকুক। আপনার হাতে অসমিয়া ভাষা সাহিত্য সমৃদ্ধ হোক এবং ঘুমিয়ে থাকা অসমিয়া জাতি জেগে উঠুক।'

' এদিকে এখানে লর্ড কার্জনের পার্টিশন অফ বেঙ্গল পলিসিটার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে, তার জন্য বেঙ্গলের সর্বস্তরের মানুষ সরব হয়ে উঠেছে– জানেন তো?'

' জানি। পত্রপত্রিকায় পড়েছি। এই বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক বিষয়। এটা নিয়ে বাঙালির বৌদ্ধিক মহলে কেন এত টানাহেঁচড়া চলছে বুঝতে পারছি না। বাঙালির মনীষা যতই উন্নত হোক না কেন, পরাক্রান্ত ব্রিটিশ রাজ শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালি কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।'

' বরুয়া, কার্জনের পার্টিশন অফ বেঙ্গল পলিসি নিয়ে সমগ্র বেঙ্গলে প্রতিবাদের জোয়ার উঠেছে। এখন কলকাতার যেখানেই যাবেন, সেখানেই কেবল এই আলোচনা। এমনিতেও আপনি যদি পলিসিটা ভালোভাবে লক্ষ্য করেন, বাঙালি হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে বাঙালি জাতিকে দুর্বল করে তোলার সঙ্গে কার্জন আমাদের অসমের ও সর্বনাশ করতে চলেছে।' পদ্মনাথ চুপ। চিন্তিত। লক্ষ্মীনাথ কথাগুলি যেভাবে ভাবছে, পদ্মনাথ সেভাবে ভাবতে পারছে না। আসলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রতি পদ্মনাথের আস্থা- আনুগত্য লক্ষ্মীনাথের চেয়ে বেশি। রাজভক্ত পদ্মনাথ ব্রিটিশ কোনো অন্যায় করতে পারে বলে ভাবতেই পারে না। অবশ্য কৃপাবর বরুয়া হিসেবে রম্য রচনা লেখার সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারকে সমালোচনা করলেও প্রকাশ্যে লক্ষ্মীনাথ ও ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করে না।

পদ্মনাথকে চিন্তিত দেখে লক্ষ্মীনাথ তারপরে কণ্ঠস্বরটা একটু নামিয়ে এনে বলল,' এই ইস্যুটার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী বাঙালিরা যেভাবে জড়িতহয়ে পড়েছে, তাতে যদি ভারতের জাতীয়তাবাদী শক্তি গুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতিটা জটিল হয়ে পড়বে।'

চমকে উঠার মতো পদ্মনাথ বলল,' পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়বে মানে?'

' সমগ্র দেশ জেগে উঠলে মুষ্টিমেয় ব্রিটিশকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হবে।'

' কিন্তু আপনি জেনে রাখুন, কার্জন বেঙ্গলকে পার্টিশন করেই ছাড়বে।'

'না বরুয়া, পরিস্থিতিটা সত্যিই জটিল হয়ে পড়েছে। বেঙ্গল জেগে উঠছে। পার্টিশন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেঙ্গলী, সঞ্জীবনী, ইংলিশ ম্যান, স্টেটসম্যান, পাইওনিয়ার ইত্যাদি পেপারগুলির সম্পাদকরাও কার্জনের এই পলিসির বিরোধিতা করেছে। এমনকি লন্ডন থেকে প্রকাশিত 'ডেইলি নিউজে' দেখছি কার্জনের এই পলিসিকে অদূরদর্শী রাজনৈতিক জ্ঞানের পরিচায়ক বলে মন্তব্য করেছে। এভাবে বঙ্গকে ভাঙার জন্য ব্রিটিশ সরকার আমাদের পরাধীনতার সুযোগ নিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করছে। তার ফলটা কিন্তু আমরা অসমিয়াদের ভোগ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নাই কি?'

' দেখুন বেজবরুয়া, আমার বিবেচনায়‐-।' গম্ভীর কণ্ঠে পদ্মানাথ বলল,' রাজনৈতিক পরাধীনতার চেয়েও সাংস্কৃতিক পরাধীনতা অধিক ভয়াবহ। রাজনৈতিক পরাধীনতা জন্মস্বত্বের অধিকার গ্রাস করে। সাংস্কৃতিক পরাধীনতা একটা জাতির আত্মাকে ধ্বংস করে। আমরা এখনও আমাদের সাংস্কৃতিক পরাধীনতা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের ভাষার সাহিত্য বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। তাই পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার আগে আমাদের সাংস্কৃতিকভাবে স্বতন্ত্র- স্বনির্ভর হতে হবে।'

' কলকাতা আছি যখন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের কথা শুনতে হবে। সেদিন আমাদের বিএ জগন্নাথ বরুয়ার কথায় আমাদের ভোলাদাদাও আমাদের কিছু একটা করা উচিত বলে বলল। কথাটা আমাকে বিরক্ত করেছিল। তবে আপনি একটা বড়ো ভালো কথা বললেন। এ কথা আমার ও মনের কথা। এখন আমি' এ subject nation has no politics' কথাটার অর্থ আরও ভালো করে বুঝতে পারছি। যাই হোক বরুয়া অনেকদিন পরে দেখা হল । আপনি আমাদের এখানে দুপুরের আহার গ্রহণ করলে খুবই খুশি হব।'

' কিন্তু আমাকে যে ক্লাইভ স্ট্রিটে গিয়ে মিঃ ভোলানাথ বরুয়ার সঙ্গে দেখা করতে হবে।ল' ভাত খেয়ে যাবেন।' ‘ভাত খেয়ে গেলে হয়তো বরুয়ার সঙ্গে দেখা হবে না। আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি, সেটাতে সফল হলে পরে আপনার এখানে এসে রন্ধন বিদ্যায় পারদর্শিনী আমাদের বৌদির রান্না তরকারির স্বাদ গ্রহণ করে যাব।'

' উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন, আপনার উদ্দেশ্যটা না জানলে হয়না।'

মিঃ বেজবরুয়া প্রত্যেকেই ছেড়ে দেওয়া ' বন্তি' এখন নিভতে চলেছে । ‘বন্তি’ জ্বালিয়ে রাখার শপথ নিয়ে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে করে তেজপুর থেকে যোরহাট,নগাঁও, গুয়াহাটি ঘুরে ঘুরে এখন এই কলকাতা উপস্থিত হয়েছি।'

তারপরে পদ্মনাথ তেজপুর ঘাটে সাক্ষাৎ করা দেশহিতৈষী বিএ জগন্নাথ বরুয়া দান করা ১৫০ টাকা, সোমেশ্বর বরমহুরি দেব দান করা ১০০ টাকা.. ইত্যাদি বলতে চাইছিলেন। কিন্তু লক্ষ্মীনাথের শোনার ধৈর্য হল না। কারণ বারান্দায় সাজিয়ে রাখা ফলের পুঁটলি গুলি আজকেই পাঠাতে হবে। দীর্ঘ পদক্ষেপে ভেতরে প্রবেশ করে প্রজ্ঞাকে ডেকে অতিথিকে জল পান দেবার জন্য বলল।

জল পান খাওয়ার পরে লক্ষ্মীনাথ পকেট থেকে দশ টাকার দুটি নোট বের করে বলল,' বরুয়া,বি বরুয়া কোম্পানি থেকে পার্টনারশিপ উঠিয়ে নেওয়ার ফলে ভোলা দাদার বাড়িটাও ছেড়ে দিতে হল। তারপরেই এই বাড়িটা কিনলাম। নিজের মতো করে চালানোর জন্য বিজনেস টাকে নতুন ভাবে আরম্ভ করতে হচ্ছে। ভোলা দাদা থেকে নগদ টাকা না পাওয়ার ফলে ক্যাপিটাল এমনিতেই কম। মেসার্স গ্রেগোরি এন্ড জনস কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিজনেস করছি। তাই অনেক সংকটের মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ইচ্ছা থাকলেও'বন্তি'র জন্য বেশি করে দান করতে আমি অক্ষম।'

' হবে। সামর্থ্য অনুসারে সাহায্য।'

পদ্মনাথের ভিক্ষার ঝুলিতে দশ টাকার দুটি নোট ভরিয়ে দিয়ে লক্ষ্মীনাথ বলল' আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন যখন 'বন্তি' নিভে যেতে পারে না।'

' বন্তির শিখা প্রজ্বলিত করে রাখার জন্য টাকা ছাড়াও আপনার লেখনি থেকে নির্গত সঞ্জীবনী তেল লাগবে। এই ক্ষেত্রে নিশ্চয় আপনার সাহায্য পাব।'

' আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।'

পদ্মনাথ বিদায় নেবার জন্য চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তখনই পাশের ঘর থেকে জ্ঞানদাভিরাম বেরিয়ে এসে বলল,'মিঃ বরুয়া আই ডু রিকগনাইজ ইউ এট ওয়ান্স।'

জ্ঞানদাভিরামের দিকে তাকিয়ে পদ্মনাথ বলে উঠল, 'তুমি! আমাদের একসময়ের ফ্রেন্ড, ফিলোসফার এন্ড গাইড স্বর্গীয় গুণাভিরাম বরুয়া স্যারের সুযোগ্য পুত্র জ্ঞানদাভিরাম! কী সৌভাগ্য আমার! আজ এখানে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হল। তোমার অসুখ শুনেছিলাম। এখন ভালো আছ তো?'

' আছি আর কী কোনোরকম।'

' অসুখের জন্য বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়া হল না‐।'

' আবার যাব।' লক্ষ্মীনাথের দিকে তাকিয়ে জ্ঞানদাভিরাম বলল,' দাদা আমার যাবার জন্য বন্দোবস্ত করছে।'

' আচ্ছা আসছি। আবার দেখা হবে।'

' দাঁড়ান, একটু দাঁড়ান‐-।'

বলেই জ্ঞানদাভিরাম দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করল। কিছুক্ষণ পরেই দশ টাকার একটি চেক লিখে এনে পদ্মনাথের হাতে দিল।

সাদরে দান গ্রহণ করে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে পদ্মনাথ বলল,' পিতৃহীন জ্ঞানদাভিরামের এই দানের মূল্য দশ টাকার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এই চেকটিতে আমি স্বর্গবাসী রায়বাহাদুর শ্রীযুক্ত গুণাভিরাম বরুয়া স্যারের আশীর্বাদ দেখতে পাচ্ছি। আমি ধন্য হলাম। আমাদের 'বন্তি'র আলো আরও বৃদ্ধি পাবে।'

'


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...