মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

স্মৃতিকথা- ৩১ এই আমি চরিত্র নীলাঞ্জন কুমার ( গত মাসের পর )Nilanjan Kumar

 স্মৃতিকথা- ৩১


                              এই আমি চরিত্র

                              নীলাঞ্জন কুমার

                              (  গত মাসের পর )


                                     ।। ৩১।।





দিদির বিয়ের পর বাবা মন দিলো নতুন বাড়ি তৈরিতে। শরৎপল্লীর যে বাড়িতে আমরা অস্থায়ীভাবে বাস করতে লাগলাম , সে বাড়িতে কারেন্টের কানেকশন ছিল না । বাথরুম ছিল কমন । কষ্ট থাকলেও বাড়িওলারা বেশ ভালো ছিল । আমাদের বাড়ি হয়ে যাবার পরেও তাদের সঙ্গে সৌহার্দ বজায় ছিল । বাবা মায়ের মাথায় তখন আমার গ্রাজুয়েশন আর ছোড়দির বিয়ের ভাবনা  , সঙ্গে বাড়ির বিষয় আছে । ছোড়দি তখনও গ্রাজুয়েট হয়নি । আমার থেকে এক বছর আগে গ্রাজুয়েট হয়েছিল । আমি তখন থার্ড ইয়ারে। কিছুটা পড়ার ক্ষেত্রে মনোযোগী হয়েছিলাম । ছেলে বন্ধুর সঙ্গে মেয়ে বন্ধু জুটলো । এক বান্ধবী সে আমার থেকে কিছু বড় ছিল,  সে আমায় বায়োলজির বাংলা বই দিয়ে প্রচুর উপকার করেছিল পড়ার ক্ষেত্রে । তখনও কবিতা লেখালেখি   চলছে ।  শরৎপল্লীর বাড়ি থেকে নতুন বাড়ি দেখতে যেতাম আর পড়াশোনা করতাম । তখন পড়াশোনার ব্যাপারে একটি বেজায় সমস্যা হল আমার ঘুম । এতটাই ঘুম কাতুরে ছিলাম সন্ধ্যা ৮টার পর হুঁশ থাকতো না । একদিন তো এত ঘুম পেলো যে বিছানার পাশে যে কেরোসিন টেবিল ল্যাম্প রেখে পড়তাম তার ওপর উলটে পালটে পড়ে ল্যাম্পের ফানুস চৌচির । সেটি এখন পারিবারিক গল্প হয়ে উঠেছে । যা হোক বাবা এক ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে আমার ঘুম ছাড়ার ওষুধ আনলো শেষ পর্যন্ত ।কিন্তু তাতে অবশ্য তেমন কাজ দেয়নি । তবে আমার গ্রাজুয়েশন পাসের বিষয়ে কৃতজ্ঞতা জানাব প্রয়াত ছোড়দিকে । সে প্রতি মুহূর্তে আমার পেছনে পড়ে থেকে আমায় পড়ার বিষয় উৎসাহ দিয়ে যেভাবে সাহায্য করেছে তাতে মনে করি তার জন্যেই শেষমেশ পাস করেছিলাম । । না হলে নন গ্রাজুয়েট হয়ে থাকতে হত । ছোড়দি গ্রাজুয়েট হয়ে কিছুদিন একটি আঁকার ক্লাসে ভরতি হয়েছিল । কিন্তু এগোতে পারেনি । বাড়িতে আমাদের পোষা কুকুর গুচু কে নিয়ে তার দিন কাটতো । আর একটি চাকরি হয়েছিল আমায় গ্রাজুয়েট করানো ।
                  থার্ড ইয়ারের শেষে আমার ওপর বাড়ির কড়াকড়ি শুরু হয়ে গেল । প্রথমত কলেজের পড়াশোনা ছাড়া কোন কিছু করা যাবে না । দ্বিতীয়ত বাইরে বেশি বেরনো যাবে না । পরীক্ষার পর অবশ্যই স্বাধীন হয়ে যাব । এদিকে নিজেদের বাড়ি লিনট্রন পর্যন্ত উঠে গেছে । কিছুদিন পর ছাদের কাজ আরম্ভ হল। বাবা হন্যে হয়ে ঘুরছে টাকার সন্ধানে। বাবা এক সমবায় সমিতি থেকে লোন নিয়ে ছাদ পলেস্তারা রং ইত্যাদি কাজ শুরু করলো । এ সময় মা বাবার নাওয়া খাওয়ার সময় নেই । আমার পড়াশোনার পর আমি বিকেলে দেখতে যেতাম নতুন ঘর কতটা হল । ভালো লাগতো নতুন বাড়ি দেখে । আলাদা গন্ধ যেন পেতাম !বাবা মায়ের কত পরিকল্পনা!  কোথায় কি ফুল গান লাগানো হবে,  কোথায় ফল গান,  কোথায় কোন ঘরে কি কি লাগবে , ঘরে ঢোকার আগে গেট থেকে ঘর পর্যন্ত মোরামের রাস্তা হবে, বাগানে দুটি সিমেন্টর বেন্ঞ্চ হবে আড্ডা দেবার জন্যে ইত্যাদি ইত্যাদি । সে সময় কেটেছে বটে!  পড়া ছাড়া কোন চাপ নেই,  সংসার বুঝিনা । বাবার হোটেলে দিব্যি খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমোচ্ছি । কখনো সাইকেল করে টোটো করছি মেদিনীপুর । দুঃখ কষ্ট বুঝিনি । আসলে মা বাবা বুঝতে দেয়নি। পরীক্ষার ধরা কাটের সময় কিছু মন খারাপ যে হত না তা নয় । কিন্তু নতুন বাড়ির কথা মনে এলে সব মন খারাপ ভুলে যেতাম । আমিও স্বপ্ন দেখতাম অরবিন্দ নগরে গিয়ে কি করব , কিভাবে জীবন সাজাবো । হায়,  সে সব দিন আর ফিরে পাব না ।

                                                         (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...