মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বুড়ো শিকড়ের আত্মকথন । রাহুল গঙ্গোপাধ্যায় । বাংলা । নবপর্যায়- ৬০৮ । ০৪-০৯-২০১৮

বুড়ো শিকড়ের আত্মকথন

রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়


ধপধপে সাদা ধোঁয়ায় ভয় পায় না, এমন কেউ নেই।কিন্তু আমাদের নায়ক কিছুটা আলাদা।তার কৌতূহল যতোটা গভীরে, ততটাই আকাশ উচ্চতায়।কেউকেউ অবশ্য আছে, যারা চূড়ায় উঠে আকাশ ধরতে পারে।হাত বাড়িয়ে ধরতে পারে চাঁদের মতো কিছু।তখন বেশ লাগে।বুড়ো হলেও তার আনন্দ, তার প্রশ্ন, তার উত্তর আজও একইরকম।পৃথিবীর বয়স যতো বাড়ে, সেও তার মতো ইতিহাস গুছিয়ে রাখে কোটরে।কোটরে থাকা জীবিতরা সাহায্য করে তাকে, রোজ তার মাথা / পিঠ চুলকে দেয়।গল্প শোনে।এভাবেই কিছুকাল চললো।তারপর, হঠাৎ একদিন সেই ধপধপে সাদা ধোঁয়া।ছোটোবেলায় দেখা বাজ পড়া গনগনের তুলনায়, এ যেনো ভীষনই আলাদা।যদিও চোখে ছানি পড়লেও, অনুভূতি কিন্তু ঠাওর করতে পারে সবকিছুই।অংশগুলোকে তিলতিল করে জোড়া লাগাতে থাকে সে, কিন্তু কোন এক অজানা কারনে পুরোটা হয়েও হয় না।তাহলে এটাই সভ্যতার অতিআধূনিক অভিমুখ? সে দেখে সবকিছুতেই যন্ত্রাংশের সমষ্টি।বিয়োগের পরিবর্তন যদিও কিছু মানুষ করতে চায়, তবে সংখ্যায় কম।সে দেখেছে সেই মানুষগুলোর একসাথে আওয়াজ "রাস্তা নয়।ফ্যাক্টরি নয়।জল চাই।জমি চাই।অরণ্য চাই"।মাঝেমাঝে বড়ো একাত্ম বোধ করে, আমাদের বুড়ো নায়ক।ধপধপে সাদা ধোঁয়া।কতো তরল লাল।কতো আদমশুমারি কম।কতো প্রত্নতাত্ত্বিক কঙ্কাল।এসব পেরিয়ে বেশিরভাগই হাত বাড়িয়ে দখল করতে চায়, তার কোটর।এখন ঝুরিগোছা থেকে দোলনা নেই, বরং তার গুঁড়িতে লাল রং / ঘন্টা / পাথর।এতদিন সে মাটির সাথে খেলা করতে করতে শুষেছে নোনা খনিজযুক্ত জল।সে পেয়েছে বুকভরা আদর, দিয়েছে প্রাণ ভরা সোঁদা নিশ্বাস।আজকাল সবই যেনো এলোমেলো।কলসি ভর্তি জল তার শিকড়ের শেষ বিন্দুতে পৌঁছাবার আগেই কেমন যেনো মুলরোমগুলোকে তীব্রভাবে কামড়ে ধরে।এই মাটিতে মিশে গেছে মাংসমজ্জার লসিকাকোষ, ঘড়ি বলছে টিকটিকটিক্।এবার তারও দখল করার পালা।কিন্তু সে তো আশ্রয় দিতে শিখেছে, দখল করতে শেখে নি।মাটি / নদী / আকাশ / মেঘ / বৃষ্টি ~ ক্রমশঃ আড়াল থেকে হাসে।বলে, আজকাল তারাও ফিরে পেতে চায় জমি।মানুষ নাকি বলে, মাচানতলার বুড়ো বটের গুঁড়িতে ঈশ্বরের অধিবাস।কিন্তু সেই ধপধপে সাদা ধোঁয়া।মাটি / নদী / পাহাড় / আকাশ / মেঘ / বৃষ্টি / শেকড় ~ কেউই জানে না 'ঈশ্বর' কথার অর্থ কি।তবে কি শুধু মানুষই জানে? প্রশ্নগুলো জমাট বাঁধে।ক্রমশঃ জারন-বিজারনের রসায়নে একেএকে জড়ো হয় পরমাণু আকৃতির চুম্বকে।বুড়ো নায়ক জানে, দখল করার পরেও একদিন খুঁড়ে বার করা হবে তাকে, তার ইতিহাস, তার সাক্ষ্য দেবার ইতিকথা।আগামীর মানুষ হয়ে উঠবে স্বচ্ছ স্ফটিকে রূপান্তরিত ~ এই বিশ্বাস নিয়েই বুড়ো বট ডুবে যায় পৃথিবীর গোপন কোটরে।পৃথিবীর বিপরীত বেগ, বিপরীত উষ্ণতা ফিরিয়ে দেয় তার শৈশব।
[এক নতুন ভোরবেলায় ~ মাচানতলাবাসীরা দেখে বুড়ো নায়ক ডুবে গেছে, পৃথিবীর কেন্দ্রীভূত গহ্বরে, আর রেখে গেছে ছোট্ট অঙ্কুর : আগামী মানুষ ও সময়ের ভরসায়।প্রমাণিত সম্পাদ্য পড়ে থাকে এক কোনে, ?-চিহ্ন মিশে যায় আরেক ?-চিহ্নে]

##### সমাপ্ত ######



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...