সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

দুর্গাপূজার লোকাচার সুগত পাইন । বাংলা-৬৪৯ । ১৫-১০-২০১৮


দুর্গাপূজার লোকাচার
সুগত পাইন


 (২)
দুর্গাপূজাকে কলির  অশ্বমেধ  বলা হয়ে থাকে।  শাস্ত্রীয়  বিধি  বিধান  অনুসারে  এই পূজা  অনুষ্ঠিত হয়।  কিন্তু পূজা  প্রচলনের সেই  আদিপর্বে এই পূজা  কেবল  লোকসমাজের  মধ্যেও  প্রচলিত  ও সীমিত  ছিল।  পূর্বে  উল্লিখিত  চৈনিক  বিবরণ  গ্রন্থ থেকে জানা যায়  অযোধ্যা অঞ্চলের ডাকাতরা  শরত  কালে  সুপুরুষ  বলি দিয়ে দেবী দূর্গার পূজা  করত।  জীমূত বাহন  ও তাঁর গ্রন্থে দুর্গাপূজাকে শবর জাতির পূজা  বলে উল্লিখিত  করেছেন।  পুরাণবিদ  আচার্য যোগেশ চন্দ্র রায় বিদ্যানিধি ও শবর জাতির পালিত  ‘শবরওৎসব’  কে আমাদের  ‘শারদোৎসবের’ বীজ  বলে মন্তব্য করেছেন। সুতরাং দেবীদুর্গার পূজা প্রচলনের সূচনালগ্নে যে তা মূল ধারার পূজা  ছিল না সে বিষয়ে সকলেই একমত। ধীরে ধীরে এই পূজা বৃহত্তর  সমাজে  অনুপ্রবিষ্ট  হয়েছে।  নানা পৌরাণিক  ও শাস্ত্রীয়  বিধি আচার এর সঙ্গে যুক্ত  করা হয়েছে।  বর্তমানের  দুর্গা পূজারবিধি  ভালোভাবে  লক্ষ্য করলে তার মধ্যে বহু অসংলগ্নতা ও আগন্তুক আচার দৃষ্ট হয়।  আবার বহু  লৌকিক আচারের  আর্যীকরণ ঘটেছে।  তবে  তার অন্তর  থেকে লৌকিক  স্বভাবকে  চিরতরে  মুছে  ফেলা সম্ভব হয়নি।  দুর্গাপূজার এরকমই  কিছু  শাস্ত্রীয় নামধারী  লৌকিক  আচার সম্পর্কে আমাদের  অনুসন্ধান  নিয়েই  এই প্রবন্ধ।
দুর্গাপূজার লোকাচারের  সবচেয়ে  বড় উদাহরণ হল দেবী  দূর্গার প্রতিমাটি।  যেখানে আমরা দেবী দূর্গার পুত্র ও কন্যারুপে লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক গণেশকে  দেখতে পাই। বস্তুত কার্তিক  গণেশ  দেবীর পুত্র হলেও লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে কোন পুরাণেই দেবীর  কন্যারুপে  কল্পনা করা হয়নি।  বরং দেবীর রূপভেদ রুপেই  নির্দেশিত হতে দেখি।  দুর্গাপূজায় শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠ  অবশ্য পালনীয়  বিধি গুলির  অন্যতম।  সেখানেও লক্ষ্মী  সরস্বতী ও দুর্গাকে  এক দেবীশক্তিরই রূপভেদ রুপে  বর্ণ্না দৃষ্ট  হয় –
“লক্ষ্মী  লজ্জে মহাবিদ্যে  শ্রদ্ধে পুষ্টি  স্বধে  ধ্রুবে।
সেধে সরস্বতী বরে  ভুতি  বাভ্রবি  তামসি (১১/১২, ২৩)
কালিকাপুরাণে  ও দবীভাগবত পুরাণে কুমার কার্তিকের জন্ম কথা আছে।  তারকাসুর বধের  জন্য শিব  ও শক্তির মিলনে কুমার কার্তিকের জন্ম হয়।  তবে দেবী স্বয়ং  পুত্রকে  লালন পালন করতে পারেননি।  ছয়জন  কৃত্তিকা  দ্বারা দেবীর এই জ্যেষ্ঠ সন্তান লালিত  পালিত  হাওয়ায় এঁর নাম হয় কার্তিক।  ‘ব্রহ্মবৈরর্তপুরান’ থেকে জানা যায় এই  কারনে দেবীর মনতুষ্টি (সন্তান পালন না  করতে পারার কারনে)  না হওয়ার তিনি দেবাদিদেবের কাছে দ্বিতীয়  সন্তানের প্রার্থনা করেন।  পার্বতীর এই কনিষ্ঠপুত্র ই গণেশ ।  এই হল পুরাণ কথা।  তবে  লোককাহিনী  অনুসারে গণেশকেই  জ্যেষ্ঠ ও কার্তিকে কনিষ্ঠ রুপে কল্পনা করা হয়।  ময়ুর বাহন  কার্তিক ও মষিক বাহনগণেশের পৃথিবী  পরিক্রমার  প্রতিযোগিতার  গল্প আমরা সবাই জানি।  দেবী দূর্গার মর্ত্যাবতরণ কে আমরা তাঁর পূত্র কন্যা   সহ  বাপের বাড়ি আমার রূপক হিসাবে  কল্পনা করতেই  অভ্যস্ত ।দুর্গা  প্রতিমার চালচিত্রে দেবীর  শংখপরা মহাদেবের ভিক্ষা, নন্দীর  পোটলা বাঁধা – ইত্যাদি চিত্রগুলই  লৌকিক  ভাবনাজ্জাত। সুতরাং একথা  বলা যেতেই  পারে যে বঙ্গদেশে  দেবি দুর্গার প্রতিমা  নির্মাণে লৌকিক  ভাবনার প্রভাব  সুস্পষ্ট।
চলছে ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...