বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

দুর্গাপূজার লোকাচার সুগত পাইন । বাংলা-৬৫১ । ১৭-১০-২০১৮


দুর্গাপূজার লোকাচার
সুগত পাইন



 (৪)
মহাসপ্তমীর  প্রাতে  নবপত্রিকার স্নান  ও মণ্ডপে স্থাপনের  পর দেবীর মূল পূজার সূচনা হয়।  নবপত্রিকা কি? 
“রম্ভা কচ্চী  হরিদ্রা  চ জয়ন্তী  বিল্বদাড়িম্বৌ।
অশোক  মানকশ্চৈব ধান্যেতি নবপত্রিকা।।“
কলা,  কচু,  হলুদ, জয়ন্তী, বেল,  ডালিম,  অশোক,  মান ও ধান -  এই নয়টি  গাছকে  শ্বেত  অপরাজিতা লতার দ্বারা বন্ধন করে বস্ত্রাবৃত  ও সিন্দুরাদি  দ্বারা  ভূষিত  করে দেবীর  দক্ষিণে  গণেশের  পাশে স্থাপন  করা হয়।  সাধারণ  লোকে একে  গণেশের  বৌ বা  কলা বৌ  বলে থাকে।  পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের  সময় মস্ত্র উচ্চারিত হয় -  “নবপত্রিকাবাসিন্যৈঃ  নব্দুর্গায়ৈঃ নমঃ নমঃ।‘  এর থেকে  সহজেই  বোঝা যায় যে এই নয়টি  বৃক্ষলতায়  নয়জন  দেবী  অবস্থান  করছেন।  এঁরা হলেন -  কাদলীতে  - ব্রহ্মানি,  কচুতে – কালিকা,  হ্লুদে -  দুর্গা  জয়ন্তীতে – কার্ত্তিকী,  বিল্বশাখায় – শিবা, ডালিমে -  রক্তদন্তিকা,  অশোকে শোকরহিতা,  মানকচুকে  চামুন্ডা,  ধানে দেবী  লক্ষ্মী।  বৃক্ষলতায় দেবতার অস্তিত্ব কল্পনা প্রাক্‌  আর্যযুগের  অর্থাৎ লৌকিক ।  ে প্রসঙ্গে হরপ্পা  উৎখনন  কেন্দ্র থেকে  আবিস্কৃত  একটি অসম  চতুষ্কোণ  ফলকে  খোদিত  নারীমূর্তির কথা মনে পড়ে যায়।  ফলকটিতে দেখা যা য় মুর্তির মাথা ভূমি স্পর্শ করেছে,  পদদ্বয়  আকাশের  দিকে প্রসারিত  । মুর্তির যোনীদেশ থেকে  শষ্যপল্লব  নির্গমনশীল ।  এই নারীমূর্তির সঙ্গ বৈদিকযুগের  দেবী  শাকম্ভরীর  ভাবনাগত  সাদৃশ্য আছে।  মার্কন্ডয় পুরাণে শাকম্ভরী দেবী দুর্গারই নামভেদ।  সেখানে বলা হয়েছে দেবী  তাঁর দেহ থেকে  উৎপন্ন  শাক (শস্য)  দ্বারা  এই জগত  পালন করেন,  তাই তাঁর  এই নাম –
“ততোহহমখিলং লোকমাত্মদেহসমুদ্ভবৈঃ।
ভ্লিষ্যামি সুরাঃ  শাকৈরাবৃষ্টেঃ  প্রাণধারকৈঃ।।
শাকস্তরীতি  বিখ্যাতিং তদা খাস্যামহংভূবি>’’
-সেকান অতিবৃষ্টের সময়ে আমি আমার নিজদেহ  থেকে  বনির্গত শস্য সমূহের  দ্বারা  সমস্ত  জগতবাসীর ভরণপোষণ  করব,  এই কারণে আমি শাকম্ভ্রী নামে আখ্যাত হব।
নবপত্রিকা প্রকৃতবিচারে  শস্যবধূর  প্রতীক।  আবার  অনেকে একে  কৃষি সভ্যতার নিদর্শণ হিসাবে গ্ণ্য  করার  পক্ষপাতী।  ‘দেবীমাহাত্ম্য’ গ্রন্থ  থেকে জানা যায় শরৎকালে  শস্যসম্পদের  বৃদ্ধি কামনায়  বঙ্গদেশে শাকম্ভরীদেবীর  অর্চনা হত।  রামায়ণ  ও কোটিল্যের অর্থশাস্ত্র  এও শস্যধিষ্টাত্রী  দেবীরুপে শাকম্ভরীর উল্লেখ  আছে।  উক্ত  আলোচনা থেকে  বোঝা  যায়  নবপত্রিকা বা  কলা বৌ  আসলে লৌকিক  আচার, জাত।  পরবর্তীকালের পৌরাণিক  ভাষ্য  দ্বারা প্রাচীন  লৌকিক  বৃক্ষলতার  পূজার  সঙ্গে  দুর্গাপূজাকে  মেলাবার  সচেতন প্রয়াস  মাত্র।  এই প্রসঙ্গে  ড.  শশিভূষণ দাশগুপ্তের  মন্তব্যটি  স্মরণীয় “এই শস্য বধুকেই  দেবীর  প্রতীক  গ্রহণ করিয়া  প্রথমে  পূজা  করিতে  হয়,  তাহার  কারণ শারদীয়া  পূজার  মূলে বোধ হয় এই শস্য  দেবীর  পূজা।  পরবর্তীকালের বিভিন্ন দুর্গা পূজার  বিধিতে  এই নবপত্রিকার বিভিন্ন ব্যাখ্যা  দেওয়া  হয়েছে ...  বলা  বাহুল্য ে সবই হ ইল। পৌরাণিক  দুর্গাদেবীর  সহিত  এই শস্য  দেবীকে  সর্বাংশে  মিলাইয়া  লইবার  একটা  সচেতন  চেষ্টা>”
চলছে ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...