সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

শীলাবতী নদীর অববাহিকার ইতিহাস ও কৃৃৃৃষ্টি- ৩ || মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি || প্রতি সোমবার

শীলাবতী নদীর অববাহিকার ইতিহাস ও কৃৃৃৃষ্টি- ৩
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি



১৮০০-১৮২০ খ্রিস্টাব্দে গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা এলাকায় যে নায়েক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তাতে যত্রতত্র লায়কালি গড় বা গুপ্তঘাঁটি তৈরি হয়েছিল। এইসব গড় বা গুপ্তঘাঁটিগুলিতে নায়েক বিদ্রোহীরা থাকতো তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। কথিত গড়বেতার এই গনগনি ডাঙাতেই ছিল নায়েক বিদ্রোহীদের প্রধান ঘাঁটি। যা ইংরেজরা বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দেয়। শীলাবতী নদীর তীরে অবস্থিত এই গনগনি খুলাতেই সম্প্রতি শুটিং হয়েছে জনপ্রিয় বাংলা সিরিয়াল ‘কিরণমালা’র অনেকখানি অংশ যা অনেক দর্শকই দেখেছেন বা এখনো দেখছেন। শীলাবতী অববাহিকা সেই দিক দিয়েও একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে।
   গড়বেতার গনগনিডাঙার কথা বললেই চলে আসে এখানকার দেবী সর্বমঙ্গলার কথা। শীলাবতীর তীরে গড়বেতাতে দেবী সর্বমঙ্গলা এখানে দীর্ঘদিন ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন। এখানকার দেবী খুবই জাগ্রত। এই পুজোকে ঘিরেও ছড়িয়ে আছে অজস্র লোককাহিনি যা গড়বেতার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত করেছে। এলাকার মানুষ দেবী সর্বমঙ্গলাকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা করে থাকেন। শুধু এলাকার মানুষ নন, বহু দূর-দূরান্ত থেকেও প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত ও পূণ্যার্থী ছুটে আসেন এই সর্বমঙ্গলার মন্দিরে। ভক্তিভরে দেবীর চরণে পুজো দেন তারা।
 
   গড়বেতা থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে শীলাবতী নদীর তীরেই অবস্থান করছে মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি। ঐতিহ্যের দিক দিয়ে এটিও একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় এই মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি আসলে ছিল রাজাদের আমোদ-প্রমোদের বাগানবাড়ি। যা বগড়ীর রাজা ছত্রসিংহ নির্মাণ করেছিলেন। প্রচলন করেছিলেন দুর্গাপুজোর। যা মঙ্গলাপোতার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এখানে যে ঘটটি আছে তা আসলে গড়বেতার সর্বমঙ্গলার আসল ঘট। যেটি রাজা ছত্রসিংহ নিয়ে চলে এসেছিলেন জোরপূর্বক। সেই দেবীর ঘট আর ফেরত যায়নি। সেই ঘট এখানে পুঁতে রাজবাহাদুর ছত্রসিংহ এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। দেবী সর্বমঙ্গলার ঘট এখানে পোঁতা হয়েছিল বলেই এখানকার নাম হয়েছে মঙ্গলাপোতা।
    ইতিহাস অবশ্য অন্য কথাও বলে। মঙ্গলাপোতার এই রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন রাজা গজপতি সিংহ। যাঁর রাজত্বকাল ছিল ১৩৯১-১৪২০ খ্রিস্টাব্দ। এই বংশের নবম রাজা যিনি ছিলেন তাঁর নামও রাজা ছত্রসিংহ। এই ছত্রসিংহের রাজত্বকাল ছিল ইং-১৬২২-১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দ। ইনিও মঙ্গলাপোতাতে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করতে পারেন। তা যাই শীলাবতী অববাহিকায় অবস্থিত এই মঙ্গলাপোতাতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাজবাড়ির সে বনেদিয়ানা আজ আর নেই, নেই সে আভিজাত্যও। কালের গর্ভে রাজবাড়ি প্রায় ধ্বংসের মুখে। কিন্তু ঐতিহ্য হিসাবে রয়ে গেছে এখানকার পুজো। মঙ্গলাপোতার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো খুবই বিখ্যাত। বহুদূরদূরান্তের মানুষ একসময় এই পুজো দেখতে ভিড় করতেন। এই পুজোকে ঘিরে মানুষের  উত্সারহ ও উদ্দীপনা আর আনন্দের শেষ ছিল না। এখানে ঘটস্থাপন করার ফলে দুর্গাপুজোর সময় যা কিছু হয় তা প্রথমে মঙ্গলাপোতার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোতে হয়-তারপর এখানকার তোপধ্বনি শুনে গড়বেতাতে দেবী সর্বমঙ্গলার পুজো হয়, গড়বেতার সর্বমঙ্গলার পুজোর তোপধ্বনি শুনে গোয়ালতড়ে দেবী সনকা মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় চারশো তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজোর এই নিয়মবিধি চলে আসছে এখানে। যা ঐতিহ্যের পরম্পরাকে রক্ষা করছে। মঙ্গলাপোতা রাজবাড়িতে দেবী সর্বমঙ্গলার আসল ঘট থাকা ছাড়াও এখানে আছে রাজবাড়ির নানান ইতিহাস। যা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ। আছে রাজবাড়ির ভগ্ন দেউল, লায়কলি আমলের তৈরি সুড়ঙ্গ অর্থাত্‍ লায়কালি গড়। আছে সেই তরবারি যে তরবারি দিয়ে রাজা সামসের জং বাহাদুর খয়ের মল্লকে পরাজিত করে রাজবাড়ি পুনরুদ্ধার করেন। আছে দেবী সর্বমঙ্গলার ঐতিহাসিক ঘট, কালীবুড়ি এবং রাধাকান্ত জিউ। ১৯৮০ সালে এই রাজবাড়ির অদূরেই জঙ্গল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল যশোবন্ত সিংহের নাম খোদাই করা তিনটি কামান। দু’টি ব্রোঞ্জের, এবং একটি লোহার। পরে তা কলকাতার প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালায় সংরক্ষণের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে।                         
 
   শীলাবতী নদীর অববাহিকার হুমগড় এলাকার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-এলাকায় ‘রামাইত গোস্বামী’দের বসবাস। অনেকগুলি পরিবার এখানে রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় তারা মহারাষ্ট্র থেকে বাংলায় এসে বসবাস করে। আমরা সচরাচর যেটা জানি তা হল ‘গোস্বামী’ পদবী নামধারীরা সাধারণত বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন। কিন্তু এখানকার হুমগড় এলাকার গোস্বামীরা রামের উপাসক বা রামের ভক্ত। আর রামের উপাসক বলেই এখানকার



1 টি মন্তব্য:

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...