মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০

নস্টালজিয়া ৫ || পৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট

নস্টালজিয়া ৫
পৃথা চট্টোপাধ্যায়


ছোটবেলার দিনগুলো যে এতো আনন্দের মুঠোয় ভরা ছিল তখন বুঝতে পারি নি। আজ লিখতে বসে মুঠো খুললেই তা ফুলঝুরির মতো ছড়িয়ে পড়ে । আমার এই আনন্দের ফল্গুধারা ছিল আমার ঠাকুমা যাকে আমি ও অন্য ভাই বোনেরা  'দাদা' বলেই ডাকতাম। আমিই প্রথম ঠাকুমাকে এই অদ্ভুত নামে (কারণ দিদি হলে তবু মানাত) ডাকতে শুরু করেছিলাম ।' দাদা ' শব্দটি আমি প্রথম বলতে শিখি ,কিন্তু আমার দাদা বা ঠাকুর্দা না থাকায় আমার প্রথম উচ্চারিত শব্দটি  ঠাকুমা সাদরে গ্রহণ করে এবং তাকেই দাদা বলা শুরু করি। গঙ্গাস্নান করতে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেলায় যাওয়া সিনেমা দেখতে যাওয়া সব কিছুতে তার সঙ্গ ধরতাম । তাহলে মাও খুব একটা কিছু বলতে পারত না, মায়ের অমত ধোপে টিকতো না।শুধু বলতো লেখাপড়াটা মন দিয়ে করতে তাহলে তারও মুখরক্ষা হবে মায়ের কাছে। শ্যামবর্ণ হলেও ঠাকুমার মুখের গড়নটি ভারি মিষ্টি ছিল। টিকালো নাক, হাঁটু ছাড়িয়ে কোঁচকানো চুল ।আমি তার মাথায় চুল বেঁধে বিনুনি করতে শিখেছিলাম। সকাল থেকে অ-দরকারি  সব কাজ সেরে একটু বেলা করে গঙ্গাস্নানে যেত ঠাকুমা।  আমি এবং পাড়ার দুতিন জন আমার বন্ধু তার সঙ্গ ধরতাম ।স্নানে যাবার আগে অসাধারণ দুটো গোলারুটি বানিয়ে চা দিয়ে খেত। আমার জন্যেও বরাদ্দ ছিল একটা। তার সঙ্গে কোথাও যাওয়া মানেই অবাধ স্বাধীনতা, অগাধ মুক্তির স্বাদ । জলে যতক্ষণ খুশি সাঁতার,  ঝাঁপাঝাঁপি করা যেত। স্নান সেরে অপেক্ষা করত আমাদের জন্য,  কখনো একটুও বকাবকি করত না বা মায়ের কাছে নালিশ করে বকা খাওয়াতো না। নশিপুর রাজবাড়ির রথযাত্রা আর ঝুলনের মেলায় যেতাম তার সাথে, অনেকটা রাস্তা হলেও হেঁটে যেতাম অনায়াসে। রিক্সা বা টাঙ্গা  (ঘোড়ার গাড়ি) করে যেতে পছন্দ করতো না,  হেঁটে গেলে পথে অনেকের সাথে দেখা আর গল্প  হোতো সেটা তার খুব ভালো লাগত।পৌষ মাসে যেতাম কিরীটেশ্বরীর মেলায়। নৌকায় চড়ে গঙ্গা পার হয়ে হলুদ সর্ষে খেতের মাঝখানে পথ ধরে  আমি আর ঠাকুমা যে কতবার গেছি এই মেলায় আমার আজও সেই দিনগুলো ছবির মত  মনে পড়ে। ঠাকুমা  ঠিক যেন আমার বন্ধুর মতো ছিল ।  কত বৃষ্টিঝরা অন্ধকার রাতে তার কোল ঘেঁষে আমি  রূপকথার রাজকন্যা-রাজপুত্র-দৈত্যর গল্প, সুয়োরানি দুয়োরানির গল্প, আলিবাবা-চল্লিশচোরের গল্প, টুনটুনির গল্প, ফিঙেপাখির গল্প শুনেছি। সেই স্বতঃস্ফূর্ত বাল্যকালে এখনকার  বাচ্চাদের মতো টি ভি দেখা,  গেম খেলা,  কার্টুন দেখা এসব কৃত্রিম আনন্দের জোগানের দরকার ছিল না আমার শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতে । ঠাকুমার হাতের  রান্না ছিল অনন্য,  খুব সাধারণ নিরামিষ রান্নাও তার হাতের ছোঁয়ায়  অমৃত লাগত। কুল, তেঁতুল, আমের আচার করতো দারুণ,  আমচুর করে রোদে দিত শুকোতে , আর সেই আমচুর তৈরি হবার আগেই কুলো থেকে বারবার শেষ হয়ে যেত।

1 টি মন্তব্য:

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...