রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ৬২ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক বিভাগ

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

৬২.
' হাতে পাঁজি মঙ্গলবার ' একটা লোককথা চালু আছে। আজ কিন্তু শনিবার , আপনাদের পাতে পড়বে রবিবার। মঙ্গলবার থেকে কয়েক ঘর এগিয়ে।
আমার হাতে যে পাঁজিটি আছে সেটি ' সম্মিলিত সূচি ',
কবিতাপাক্ষিক-এর মুদ্রিত সূচিপত্র। সেখানে অনুসন্ধান করে দেখলে জানা যাবে দুজন তরুণতম কবির নাম। একজন রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় অপরজন সুমিতেশ সরকার। এই দুজন সব থেকে বেশি বার বা বেশি সংখ্যায় কবিতা লিখেছিল কবিতাপাক্ষিক ১ থেকে ১০০ সংখ্যার মধ্যে
আজ সুমিতেশ-এর দিন। বা আজ সুমিতেশ-কথা। কিংবা একে ' কথাসরিৎসাগর ' ও বলতে পারি ।আমি সুমিতেশ এই নামটির একদিকে রাখি রানাঘাট আর অন্যদিকে দেনা ব্যাঙ্ক। সুমিতেশ-এর রানাঘাটকে আমি চিনি না।আমি দেবাশিস চাকী-র রানাঘাটকে চিনি। কিন্তু দেনা ব্যাঙ্ক আমার সুপরিচিত।ওই ব্যাঙ্কের বেশ অনেকগুলি শাখার সঙ্গে আমার গভীর তথা নিবিড় পরিচয় ছিল। এর সবটার জন্য বন্দুকটা রাখা ছিল সুমিতেশ-এর কাঁধে। আমার আঙুল যে ট্রিগারে ছিল , এটা বুক বাজিয়ে বলাটা শোভন নয়। বরং চোখ বন্ধ করে বলতে পারি সুমিতেশ-এর পাণ্ডুলিপি। যতটা সুন্দর এবং মনোহর করা যায় পাণ্ডুলিপি , এটা সুমিতেশ -এর চর্চার বিষয় ছিল। গোটা গোটা অক্ষর , বিভিন্ন রঙের কালি ব্যবহার করত সুমিতেশ। সুমিতেশ -এর কবিতা চোখ-কে তৃপ্ত করত। আর মন-কে !
মনের কথা মন বলতে যাবে কেন ! বরং সুমিতেশ - এর কবিতা কিছুটা পড়া যাক।
তখন যে কোনো কবিসম্মেলনে বা কবিতাপাঠের আসরে সুমিতেশ তার ' চেকপোস্ট ' কবিতাটি পাঠ করত। কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল কবিতাপাক্ষিক২১ -এ।
ওই সংখ্যার বা ' এই পক্ষের কবি ' ছিল সুমিতেশ  । ওই সংখ্যায় তার চারটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল । এর আগে কবিতাপাক্ষিক ১৪ -তে ও সুমিতেশ ছিল এই পক্ষের কবি । ওই সংখ্যাতেও ওর পাঁচ পর্বের ভ্রমণকাহিনি ছাড়াও অন্য তিনি কবিতা ছিল । এথেকে অনুমান নয় , সিদ্ধান্তে আসা যায় সুমিতেশ সরকার আমার পছন্দের কবি ছিল।
এখন সুমিতেশ -এর প্রিয় ' চেকপোস্ট ' কবিতাটির কয়েক লাইন :।
যে ভাষায় কথা বলছি আজ
                           তার নাম বাংলাভাষা
 আমি দেখতে পাচ্ছি
একটা অস্বচ্ছ আলো এসে পা রেখেছে
              আমাদের সবুজ লতা-গুল্ম ঘেরা উঠোনে
এই কবিতাটির সম্পদ হল আন্তরিকতা। ভেতর থেকে উঠে আসা আন্তরিকতা। ঋত্বিক ঘটক-এর ট্রেনের থেমে যাওয়ার মধ্যে কেবলই যে হতাশা ছিল , আমি মনে করি না। আমি মনে করি আন্তরিকতা ছিল। ভালোবাসাও ছিল ।
 আরো কয়েকটি কবিতার উদ্ধৃতি :
১. প্রিয় শহরের সীমান্তরেখায় যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে
তাদের কোনো ডাকনাম নেই ( সীমান্তরেখা ॥ কপা ৪২-৪৩ )
২. আমাদের সমুদ্র ভাবনায় কোনো গুপ্তহত্যা নেই
( সমুদ্রসম্বন্ধীয় কিছু মধ্যবৃত্ত ভাবনা ॥ কপা৪২-৪৩ )
আরো অসংখ্য সুমিতেশ রচিত পঙ্ ক্তি তুলে আনতে পারতাম , তা না করে কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা জুড়ে দিতে চাইছি। যেমন
সুমিতেশ-এর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের দপ্তরে খুব বেশি হাজিরা দিতে হত না , কারণ অফিসের টিফিনের সময় কিংবা ছুটির পর আমাদের ঠিক দ্যাখা হয়ে যেত প্রায় প্রতিদিন।
সুমিতেশ প্রথমে ছিল দেনা ব্যাঙ্কের ভল্টে। যে ভল্টে টাকা থাকতো  টিনের বড়ো বড়ো বাক্সে। ওখান কাজের ধরন আলাদা। আমাদের কথাবার্তার পক্ষে আদর্শ। অনেকদিন ওখানেই ছিল।রাইটার্স থেকে হাঁটাপথ। পর সেখান থেকে শ্যামবাজার ব্রাঞ্চ।ওখানে যাতায়াতের জন্য ট্রাম কিংবা মিনি। তারপর আমাদের এপাড়ার কাগজপট্টির ভেতর।
একটা কাজ সুমিতেশ বেশ কয়েকবার করে দিয়েছিল, বইমেলায় প্রদত্ত ব্যাঙ্ক ড্রাফ্ট বা পে-অর্ডার।

এটা না-বলাটা দোষণীয় হবে , সুমিতেশ বলেছিল : আপনি ' সাক্ষাৎকার ' পেয়ে গেছেন। কোথা থেকে পেয়েছিলাম সুমিতেশ সেটা জানত না। আমি জানি ।সুমিতেশ- রজতেন্দ্র - অংশুমান- অনিন্দ্য রায় প্রমুখ তরুণ কবিদের সহচার্য আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল সাক্ষাৎকার কিংবা নোটবই- এর কবিতাগুলি।
আগামীকাল রজতেন্দ্র-কথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...