সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০

সৌমিত্র রায় - এর জন্য লেখা গদ্য || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক বিভাগ

সৌমিত্র রায় - এর জন্য লেখা গদ্য
প্রভাত চৌধুরী



৬৩.
রজত বা রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আমার কাছে যে সমস্ত ডকুমেন্ট আছে, তা দিয়ে সম্পূর্ণ উপন্যাস না হলেও শারদীয় সংখ্যার জন্য একটা নভেলেট লেখা হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র রজতেন্দ্র নয়, নয়ের দশকের আরো কুড়িজন কবির সম্পর্কেও তা লিখে দিতে পারি। সেসব গল্পকথা অল্পতেই সেরে রাখতে চাইছি।
রজতেন্দ্র আমার ছেলে রাজা বা গৌরবের সহপাঠী।মিত্র স্কুলের।হরিশ পার্কের পাশে মিত্র , সেখানের।
রজতের বাবা এবং জ্যাঠারা সব গানজগতের মহাজন।সেসব পরে বলছি।রজতের ঠাকুরদা ডা: নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেই সময়ের দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার CMOH বা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা।থাকতেন অফিসের কাছাকাছি চৌরঙ্গীতে।অফিসের বরাদ্দ বাড়িটি উনি কিনে নিয়েছিলেন।মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার পরে হোমিওপ্যাথি শেখার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। বিলেত যাবার কারণে পরিবার ওনাকে ত্যাজ্য করেছিল।  রজতের বাবা প্রভাতভূষণ ছিলেন প্রকৃতই একজন সংগীতসাধক। রেডিওতে একাধারে রবীন্দ্র নজরুল এবং আধুনিক গান গাইতেন। খুব গ্রহণযোগ্য সংগীত- শিক্ষক ছিলেন। বড়ো জ্যাঠা রেবতীভূষণ ভক্তিগীতি গাইতেন। মেজজ্যাঠা বিজয়ভূষণ ডাক্তারি করলেও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মীরাবাঈ সিনেমায় তাঁর অবদান ছিল।আর ন- জ্যাঠা বিমলভূষণ তো সুপরিচিত সংগীতজ্ঞ। তাঁর সম্বন্ধে বহু গল্প বাজারে চালু আছে।কাজী নজরুলের খুব ঘনিষ্ট ছিলেন উনি।
এহেন পরিবার থেকে রজতেন্দ্র কবিতায় চলে এল। আবার নাটকেও।
এবার কবি রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়-কে দ্যাখার চেষ্টা করি। সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের দ্যাখানোর চেষ্টাও করি।
কবিতাপাক্ষিক-এর অষ্টম সংখ্যায় রজতেন্দ্র-র প্রথম প্রকাশিত হয় একটি কবিতা। 28 অগাস্ট 1993। আর কবিতাপাক্ষিক ১৫ -তে ' এই পক্ষের কবি ' ছিল রজতেন্দ্র।ওই সংখ্যার অপর দুজন , পূণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত এবং জহর সেনমজুমদার ও এইপক্ষের কবি ছিল।প্রকাশকাল : 11 ডিসেম্বর ,1993।
ওই সংখ্যায় প্রকাশিত রজতের 'দ্বীপ ' কবিতাটির প্রথম এবং শেষ , এই দুটি লাইন উদ্ধৃত করছি :
হরিণের অস্থি দিয়ে , গন্ধ দিয়ে গড়ে তোলা দ্বীপ
....       ...      ...
অদূরে লাগানো হবে অ্যাক্রিলিক নিয়নের আলো

এই যার শুরু একমাত্র তারই অধিকার আছে ' বাজার করিবার সহজ উপায় ' -এর মতো কবিতা লেখার।  কিংবা ' আনারস ও হেমিংওয়ে '' কিংবা ' গীতা ঘটক ' শীর্ষনামের কবিতাগুলি লেখার। আমি যে বাংলাকবিতার নতুন মানচিত্র নির্মাণের কথা বলি , তার কারণ আমার হাতে যে তাসগুলি আছে , তার মধ্যে অন্যতম প্রধান তাসটি হল: রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
বাজার করিবার সহজ উপায় - এর ৮ নম্বর উপায়টি হল : ঘাটশিলায় বেড়াতে গিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া টিয়াপাখির পালকটি বাজারে যাওয়ার আগে বুক পকেটে রেখে দিন।এতে করে বাজার করার সময় আপনার মন হালকা ও ফুরফুরে থাকবে।
রজতেন্দ্রর আগে এহেন বিধান অন্য কেউ দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।
আরো কয়েকটি কবিতার লাইন :
১. শ্রদ্ধেয় অমরেন্দ্র চক্রবর্তী-র ভ্রমণ পত্রিকার প্রচ্ছদে
     মূর্ধণ্য-এর একটি চমৎকার ডানা আছে।( বাঘ )
২.  হেমিংওয়ে , বাঁহাতে একটা ড্রেসড আনারসের
       ঝুঁটি আর ডানহাত আমার কাঁধে রেখে হোটেলের
        এসি রুমে দুলকি চালে ঢুকে গেলেন। (আনারস
        ও হেমিংওয়ে )
 ৩. ... ডানহাতের প্রথম তিনটি আঙুল নেচে নেচে
         যাচ্ছে যেন বল্গাহরিণ
এইসব কবিতাই আমার যুদ্ধাস্ত্র। এইসব নিয়েই আমার যুদ্ধ  আধুনিকদের বিরুদ্ধে।
আগামীকাল যশোধরা-র কথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...