কিছু বই কিছু কথা। নীলাঞ্জন কুমার
উটের শহর । নমিতা চৌধুরী । চেতনা । আঠারো টাকা ।
ভিন্ন ভিন্ন কবির কবিতায় আলাদা আলাদা চেতনার গুণে কবিতা জীবন্ত হয়ে ওঠে । সেই জীবনের সন্ধানে ধাবিত হয় কাব্যসম্বল মানুষজন । তাই যখন: ' দেখেছি কিভাবে স্বেদ রক্ত মাখামাখি/ বিকলাঙ্গ একটি নতুন দিন/ সাদা ধবধবে নার্সের কোলে চোখ বুজে ঘুমিয়ে রয়েছে । ' ( নিদ্রাহীনতা ') এর মতো কবিতাকণা কোন পাঠক পান , তখন তাঁর ভেতরে কেমন স্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে! কবি নমিতা চৌধুরীর 'উটের শহর ' কাব্যগ্রন্থে আছে এ ধরনের অজস্র পংক্তি, যা আজ থেকে বাইশ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল ।
নমিতার কবিতাতে আরো পাই: ' ধুলোর ক্লান্তি মেখে দরজায়/ চর্যাপদ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন / শব্দ থেকে শব্দ ঘুরে বসি '( ' পর্বান্তর ' ), 'জন্মহীন দাগের মতন - / নীলজলে গুলে যাচ্ছে সময় ' ( ' প্রজন্ম কথায় ') , ' আলতা পায়ে অন্ধবধির জানে/ প্রকৃতির বিবাহ মঙ্গল ।' ( ' তিনকন্যা '), ' সেই সব এলোমেলো ভাষা শব্দহীন/ বৃক্ষের কোটরে নিম খুন ডেকে আনে ' ( ' নিম খুন ' ) এর মতো উজ্জ্বল পংক্তি তাঁর লেখা পড়ার চাহিদা বাড়ায় ।
একথা বলা যেতে পারে, কবি এই সব নিম্নগ্রামের কবিতার ভেতরে বেছে নেন কিছু প্রত্যয়। তিনি নিঃশব্দে কিছু ম্যাজিক উপহার দেন, যার জন্যে গিলি গিলি গে, অ্যাবরা ড্যাবরা উচ্চারণ করে পাঠকের মনকে বিক্ষিপ্ত করতে হয় না । ' উটের শহর ' সেই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থ যা সত্যেরসামনে দাঁড় করাতে শেখায় , বাজারী কবিদের মতো ভান শেখায় না ।
কবির সত্যকে আবিষ্কার করা পাঠকের কর্তব্য , যা মেখে নিতে হয় মনের গোপন কোণে । হিরণ মিত্রের প্রচ্ছদচিত্র ব্যতিক্রমী । বর্তমানে তিনি এই ধরনের প্রচ্ছদ পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন। প্রচ্ছদটি অসামান্য চেতনার ফলশ্রুতি বলে ধারনা জন্মায় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন