রানু এক জ্বর । তীর্থংকর মৈত্র । প্রচ্ছায়া । পাঁচ টাকা ।
১৯৯৭ সালে প্রকাশিত এক ফর্মার ক্ষীণতনু কাব্যপুস্তিকার ভেতর দিয়ে যে কবিকে আমরা চিনে ফেলি তা হল 'রানু এক জ্বর ' । বোধহয় একে আবিষ্কার করা বলে, সম্ভবতঃ এই প্রথম কাব্য পুস্তিকাতে তিনি এলেন দেখলেন জয় করলেন । বইটির প্রথম কবিতা তার প্রমাণ : ' আবার এসে গেল ক্ষমাহীন উড়ুউড়ু দিন/ পরদা জানালা ছুঁয়ে উড়ে যায় দীর্ঘ- দীর্ঘ- / রোগা প্রেমিকের মুখের মতো ক্লান্ত ভায়োলিন ! ' ( ' ক্লান্ত ভায়োলিন ') ফলে 'রানু এক জ্বর ' সেই কাব্য পুস্তিকা হয়ে উঠেছিল যার ভেতর দিয়ে আমরা সন্ধান করতে পারি কাব্য কোথায় যেতে পারে । পাশাপাশি: ' ব্লেডের মতো টুকরো টুকরো ছড়ানো ছিটানো এত সব ক্লান্তি/ একদিন ঠিক গিলে ফেলবো/ একদিন এক চুমুক শুষে নিয়ে/ ডেটলের গন্ধের মতো ভেসে থাকা সব কিছু বিষণ্ণতা/ আমি নির্ঘাত মরে যাব কাচের জানালা । '
( ' আমি মরে যাব কাচের জানালা ') , ' ঘাস খোঁজা ভেড়ার মতো তার স্বপ্নরা ভেসে ওঠে উঠেছিল আরো কোন দূরে ..../ আমি স্পর্শ করিনি- ' ( ' ভয়েলের মতো শান্ত এক একাকীত্ব ') -র কাছে দাঁড়িয়ে বলতে ইচ্ছে হয় ' ওয়াও ' !
কবির এই বইটির বড় দিক হল বৈচিত্র্য । প্রতিটি কবিতার সঙ্গে অসামান্য টিউনিং বজায় যেমন আছে, তেমনি তারা স্বাতন্ত্র নিয়ে থাকে ।কবি অনবরত নিজেকে ভাঙচুরের ভেতরে গড়ে তুলেছেন এসব অমোঘ কবিতা, যা ঈর্ষণীয় । তাই ' ঘোড়া প্রসবের রাত্রি ছড়ানো খড়ের মধ্যে বাতাসার চাঁদ ' ( ' আর কিছুই মনে পড়ছে না '), ' কি?আর দেবো? হতচ্ছাড়ী চাপকে দেব ছোট্ট করে! ' ( ' শাসন ') পংক্তি তন্নিষ্ঠ করে তোলে । তাই ' রানু এক জ্বর ' সংগ্রহযোগ্য ' কাব্য পুস্তিকা হয়ে ওঠে ।
তীর্থংকরের কাব্যগ্রন্থ কম। তাঁর লেখার প্রয়োজন আছে, নাহলে সুন্দর দেখবো কি করে! সুবিভারন্ঞ্জন বিশ্বাসের প্রচ্ছদ অপাংক্তেয়, ছবিটি অত্যন্ত ছোট, তাই ছাপ রাখতে পারেনা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন