কিছু বই কিছু কথা- ১৮৭ । নীলাঞ্জন কুমার
কবিতা শিল্পিত ভালোবাসা। বঙ্কিম মাহাত । কালবেলা । দশ টাকা ।
কিছু কিছু কবি আছেন যাঁদের কবিতা সারা জীবন ধরে ক্লিশে অক্সিজেন নেওয়ার ধারাবাহিকতাকে ভুলিয়ে দিয়ে আবার নতুন করে অক্সিজেনের স্বাদ জাগিয়ে তোলে । তাঁদের বহু লাইন আপন মনে উচ্চারিত হয় মুখে এমনি এমনিই। বঙ্কিম মাহাত সেই কবি যাঁর ভেতরে আছে শুদ্ধতা, যা পড়তে পড়তে আরো পড়ার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে । কবি তাঁর কাব্যগ্রন্থ ' কবিতা শিল্পিত ভালোবাসা ' যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে, যেখানে অর্ধ শতাব্দীর আগের বহু কবিতা স্থান পেয়েছে, সেখানে খুঁজতে খুঁজতে পরশপাথর পাবার মতো লাইন আবিষ্কারের আনন্দ পাই, তখন ট্রেডল মেশিনে ছাপা বইটি তন্নতন্ন করে পড়ে ফেলি । কবির সঠিক উচ্চারণ: ' কবিতা শব্দটি কানে গেলে তাই চেতনার বিস্ফোরন ঘটে / শুকিয়ে যাওয়া শিরাগুলো অকস্মাৎ রক্তের প্লাবনে কেঁপে ওঠে ।। ' ( 'কবিতা রক্তের অন্য নাম ') , ' সময়ের ছড়া কেটে শতাব্দীর যন্ত্রণায় নিজেকে হত্যার বড়ো অপরাধ নেই । ' ( ' শিল্প হোক ভালোবাসা ') , ' প্রেমের আকাশে লক্ষ নক্ষত্রকে জোড়াতালি দিয়ে শিল্প গড়তে পারতাম/ অথচ বর্শায় বিদ্ধ করে আমরা তারাদের বিনষ্ট করছি ' , -র মতো এক বুক ভালোবাসা দেবার মতো লাইনগুলো বুঝিয়ে দেয় কবির ক্যারিশমা ।
কবির কবিতাতে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করার দিকটি হলো, শব্দকে তাঁর আয়ত্বাধীন করে পংক্তি গড়ে তোলা । ' শবদে শবদে বিয়া ' কি করে দেওয়া যায় তা শিখতে হয় কবির কাছ থেকে । সে কারণে তাঁর কবিতা আত্মীয় করে নিতে ইচ্ছে হয় এধরনের পংক্তির কল্যাণে: ' আমরা যা কিছু বলি তাই স্বীকারোক্তি, কিন্তু অতঃপর/ স্বগতোক্তি করে যাব গভীর বিশ্বাসে ।। ' ( ' অধুনা সমস্ত কথা ' ) , ' প্রেমের শপথ যেন স্মৃতি হয়ে গেছে , সব নায়িকারা ছবির মতোন/ স্মৃতিতে আনন্দ নেই স্মৃতি যেন নিষিদ্ধ রমনীসহ সহবাসতুল্য ঘোর পাপ । ' ( ' কবিতা সৃষ্টির কাল ')।
বইটির ভেতরের এত সাবলীল কবিতা খুব বেশি পাওয়া যায় না, এ সত্য । সে কারণে কবির প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে । নবীন দাসের প্রচ্ছদ অতি সাদাসিধে ভাবে তুলে ধরেছে বইটির মেজাজ , যা শিল্পগুণে অনবদ্য ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন