কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার
জবরদখল । নাসের হোসেন । কবিতা পাক্ষিক । কুড়ি টাকা ।
সদ্য প্রয়াত হয়েছেন যে সব কবি, তাঁদের মধ্যে যাঁদের মৃত্যু বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে তার মধ্যে কবি নাসের হোসেন একজন । ১৯৯৮ সালে শুভ বিজয়ার দিন নাসের নিজের হাতে তুলে দিয়েছিল ওঁর সে সময়ের সদ্য কাব্যগ্রন্থ ' জবরদখল ' । সে সময় বইটি পড়ে বুঝে ফেলেছিলাম তাঁর কবিসত্ত্বা। বড় অসম্ভব অনুপ্রেরণার তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটির ' জবরদখল ' কবিতার শেষ পংক্তি: ' ক্রান্তিপথ তার নির্বিভেদ সীমানায় ছড়িয়ে রাখছে/ শুকনো মরণশীল চিহ্ন ও চিহ্নিতগুলিকে ' । পাশাপাশি আরো পাই তাঁর এ ধরনের অনবদ্য পংক্তি:
' পা ফেলে ছোপ ছোপ শরীর নিয়ে সে মিলিয়ে যাচ্ছে দিগন্ত/ থেকে দিগন্তে ' ( ' অভিমান ') , নীলাভ ঢেউ শুধু আছড়ে পড়ে আছে তটে, আস্তে আস্তে অন্ধকার/ হয়ে যায়, অশ্বত্থ গাছে কথা বলে ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী ' ( নীলাভ ঢেউ) ।
কবি নাসের হোসেন কি কারণে গুরুত্বপূর্ণ কবি তা এই পংক্তি বুঝিয়ে ছাড়ে সচেতন পাঠকবর্গকে । নাসের সেই প্রিয়তার কবিতা দিয়ে ঘিরে রাখে আমাদের, আমরা পড়ে চলি আর পড়ে চলি, মনে মনে বলি যেন না ফুরোয় ! কবির এই বইটিতে ছড়িয়ে বাস্তবতা, কাঠিন্য, ভালোবাসা, শৈথিল্য যা আন্তরিক হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাব্যময়তায় । তা পাই: ' বালকটি ঐ মাছগুলোকে নিয়ে পাশের পুকুরে ছেড়ে আসতে যাচ্ছে, সে জানে না আপেক্ষিকতা, জীবন ও আজীবনের দ্বন্দ্ব, সে শুধু মুক্তি জানে ' ( রঙিন মাছ) , ' নীল আকাশ স্বচ্ছ মেঘ দু ' চারটে সীগাল, আর/ একটানা চুমুর শব্দ ভেসে আসছে সেই ঘনবদ্ধ প্রিজমের থেকে ' ( প্রিজম) - এর ভেতরে ।
নাসেরকে নিয়ে অনেক কথা লেখার এখনো অনেক বাকি , অনেকেরই । নাসের কবিতার মধ্যে দিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকবে । থাকতেই হবে। বইটির প্রচ্ছদ ( শিব চৌধুরী কৃত) একদম দাগ কাটে না ।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন