নস্টালজিয়া ৪১
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
নস্টালজিয়া ৪১
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
ব্যক্তিগত জীবনের ছবি নিছকই নিজের কাছে জমা করে রাখার। পুরোনো অ্যালবাম খুলে দেখতে তো নিজেরই বেশি ভালো লাগে। তাকে সবার সামনে আনার তেমন তো কোনো প্রয়োজন থাকে না। তবুও আমার অতীতের কথা লিখতে ভালো লাগে, ইচ্ছে করে সবাইকে বলতে। যত বড় হয়েছি ততই বুঝতে পেরেছি যা আমার মনে হয় তা সবসময় আমার হয় না। অনেকের তাতে অধিকার থাকে। যে সমাজের ছবি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে, ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ, দ্রুত বয়ে চলেছে যে সময় নদীর স্রোতের সাথে- তাকে ধরে রাখার একটা ক্ষীণ আশা থেকে আমার এই নস্টালজিয়া লেখা। লিখতে বসে যখন কত কিছু মনে পড়ে যায় তখন খুব অবাক হয়ে যাই।
ক্লাস ফাইভে যখন পড়ি আমাদের পড়াতে আসতেন গৌরাঙ্গ মাস্টার। টিউশনি ছিল তাঁর পেশা। তখন গৃহশিক্ষক প্রতিদিন আসতেন পড়াতে এবং তাঁকে খুব যত্ন করে নিত্য নতুন জল খাবার ও চা খাওয়াতো মা। প্রথম দিকে লুচি তরকারি, চপ,সিঙাড়া, মিষ্টি এবং ক্রমশ পুরোনো হলে বাড়ির সদস্য হয়ে যেতেন তিনি। তখন মা অনায়াসে রুটি তরকারি দিতেও সঙ্কোচ বোধ করত না। বাড়ির পুজো পার্বণ অনুষ্ঠানে তাঁর আমন্ত্রণ থাকতো। গৌরাঙ্গ মাস্টারের কাছে পাড়ার অনেকেই পড়তো। তখন আমার বোন পড়তো ক্লাস টু তে। আমাদের দুজনকেই তিনি প্রত্যেকটি বিষয় পড়াতেন। বিকেলে ঠিক খেলার সময়ে পড়াতে আসতেন বলে আমার খুব রাগ হতো। কিন্তু কিছু বলার উপায় ছিল না আমাদের। দু'ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমাদের দু'জনকে সব বিষয় কীভাবে পড়াতেন এখন তাই ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই। তিনি সাইকেল নিয়ে আসতেন। পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার হলেও একটা মালিন্য ছিল তাতে। কঠিন জীবন সংগ্রামের একটা ছবি মিশে থাকত তাঁর চোখে মুখে। ঝড় বৃষ্টি শীত গ্রীষ্ম কামাই ছিল না তাঁর। আমার মনে আছে কোনো পড়া তেমন বোঝানোর বালাই ছিল না। অঙ্ক বাড়িতে করতে দিতেন। রিডিং পড়তে বলে নিজেই সবটুকু পড়ে দিতেন। মা আমাদের পড়াশোনা কঠিন শাসনে তৈরি করিয়ে রাখতো। তিনি শুধু মুখস্থ ধরতেন। তাঁর কাছে বিশেষ কিছু শেখা হচ্ছিল না বলে মাত্র এক বছরই পড়েছিলাম। তবুও বরাবরের জন্য একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল এই মাস্টার মশায়ের সঙ্গে।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
ব্যক্তিগত জীবনের ছবি নিছকই নিজের কাছে জমা করে রাখার। পুরোনো অ্যালবাম খুলে দেখতে তো নিজেরই বেশি ভালো লাগে। তাকে সবার সামনে আনার তেমন তো কোনো প্রয়োজন থাকে না। তবুও আমার অতীতের কথা লিখতে ভালো লাগে, ইচ্ছে করে সবাইকে বলতে। যত বড় হয়েছি ততই বুঝতে পেরেছি যা আমার মনে হয় তা সবসময় আমার হয় না। অনেকের তাতে অধিকার থাকে। যে সমাজের ছবি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে, ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ, দ্রুত বয়ে চলেছে যে সময় নদীর স্রোতের সাথে- তাকে ধরে রাখার একটা ক্ষীণ আশা থেকে আমার এই নস্টালজিয়া লেখা। লিখতে বসে যখন কত কিছু মনে পড়ে যায় তখন খুব অবাক হয়ে যাই।
ক্লাস ফাইভে যখন পড়ি আমাদের পড়াতে আসতেন গৌরাঙ্গ মাস্টার। টিউশনি ছিল তাঁর পেশা। তখন গৃহশিক্ষক প্রতিদিন আসতেন পড়াতে এবং তাঁকে খুব যত্ন করে নিত্য নতুন জল খাবার ও চা খাওয়াতো মা। প্রথম দিকে লুচি তরকারি, চপ,সিঙাড়া, মিষ্টি এবং ক্রমশ পুরোনো হলে বাড়ির সদস্য হয়ে যেতেন তিনি। তখন মা অনায়াসে রুটি তরকারি দিতেও সঙ্কোচ বোধ করত না। বাড়ির পুজো পার্বণ অনুষ্ঠানে তাঁর আমন্ত্রণ থাকতো। গৌরাঙ্গ মাস্টারের কাছে পাড়ার অনেকেই পড়তো। তখন আমার বোন পড়তো ক্লাস টু তে। আমাদের দুজনকেই তিনি প্রত্যেকটি বিষয় পড়াতেন। বিকেলে ঠিক খেলার সময়ে পড়াতে আসতেন বলে আমার খুব রাগ হতো। কিন্তু কিছু বলার উপায় ছিল না আমাদের। দু'ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমাদের দু'জনকে সব বিষয় কীভাবে পড়াতেন এখন তাই ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই। তিনি সাইকেল নিয়ে আসতেন। পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার হলেও একটা মালিন্য ছিল তাতে। কঠিন জীবন সংগ্রামের একটা ছবি মিশে থাকত তাঁর চোখে মুখে। ঝড় বৃষ্টি শীত গ্রীষ্ম কামাই ছিল না তাঁর। আমার মনে আছে কোনো পড়া তেমন বোঝানোর বালাই ছিল না। অঙ্ক বাড়িতে করতে দিতেন। রিডিং পড়তে বলে নিজেই সবটুকু পড়ে দিতেন। মা আমাদের পড়াশোনা কঠিন শাসনে তৈরি করিয়ে রাখতো। তিনি শুধু মুখস্থ ধরতেন। তাঁর কাছে বিশেষ কিছু শেখা হচ্ছিল না বলে মাত্র এক বছরই পড়েছিলাম। তবুও বরাবরের জন্য একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল এই মাস্টার মশায়ের সঙ্গে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন