রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২

পাখিদের পাড়া পড়শী ২/৩ পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস, Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider para porshi

 পাখিদের পাড়া পড়শী ২/৩  

পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি   

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস,  

Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider para porshi



দ্বিতীয় অধ্যায় (দুই)-গ


দ্বিতীয় অধ্যায় (দুই)গ

পুনরায় পঞ্চাশ ঊর্ধ্বের ব্যক্তি থেকেই শুরু হল।আর শেষের জন– উদয়শংকর ।

–আমি উদয়শংকর। ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের কর্মচারী– অফিসার বলে বলতে গিয়েও উদয়শঙ্কর এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল এবং তারপরে বলল – বর্তমানে আমি তিনসুকিয়ায় কর্মরত।

নিজের বিষয়ে বলার মতো উদয়শঙ্করের আর কিছু নেই। এতটুকুই । অন্যরাও নিজের নিজের পরিচয় দেবার সময় বিশেষ ব্যাখ্যা দেয়নি । শিষ্টাচার সূচক নমস্কার জানিয়ে নাম ঠিকানা এবং পেশার বিষয়ে কেবলমাত্র বলেছে।

পরিচয়পর্ব শেষ হওয়ার পরে গোলাপ গগৈ প্রকৃতির শিবিরকে কেন অনুষ্ঠিত করতে হয়েছে – উদ্দেশ্য ব্যাখ্যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাল। কিশোর চৌধুরী প্রকৃতির শিবিরে নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তার ওপরে  আলোকপাত করার সঙ্গে তারা যে একদিন প্রকৃতিপ্রেমী থেকে সাংগঠনিক কাজ কর্মে জড়িত হয়ে আজ সংগঠনের দায়িত্ব ভাগ নিতে পারার মতো গৌরব অর্জন করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করল। সঙ্গে কিশোর চৌধুরী উল্লেখ করল, প্রকৃতি সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ আপনাদের মতো সুধী   সমাজের উপর ন্যস্ত । কিশোর বলল আপনারা এই সুন্দর ভুবনকে মহাসুন্দর করে উপস্থাপন করতে সক্ষম। কিশোর চৌধুরী বিশেষ কারণে উপস্থিত থাকতে না পারা দুই সংগঠক বিকাশ বরদলৈ এবং জয়ন্ত দত্তের নাম উল্লেখ করল। বিকাশ এবং জয়ন্ত কীভাবে দিহিং পাটকাই অঞ্চলে  পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে তা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে উল্লেখ করল।

তারপরে শিবিরের প্রারম্ভিক প্রশিক্ষণ আরম্ভ করলেন সৌম্যদা।

– মানুষ নিজের জীবনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা শিক্ষানুষ্ঠান থেকে যে জ্ঞান আহরণ করে, তার চেয়েও অনেক বেশি এবং বাস্তব প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ করে মুক্ত প্রকৃতি এবং চারপাশ থেকে । মানুষের জ্ঞান আহরণের শুভ আরম্ভ হয়েছিল প্রকৃতিকে ভিত্তি করে, প্রকৃতির মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রক্রিয়ায় মানুষ ধীরে ধীরে বর্তমান পর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। বর্তমানের উন্নতির শিখরে অধিষ্ঠিত হয়েও মানুষের জীবনধারণের জ্ঞান প্রকৃতি থেকে আহরিত। জীবিকা নয় জীবনধারণের মৌলিক জীবনের শিক্ষাদাতা বা শিক্ষক বর্তমানেও আমাদের চারপাশের প্রকৃতি । 

উপস্থিত প্রত্যেকেই মৌনতার সঙ্গে সৌম্যদার কথা শুনে  চলেছে। ধীরে ধীরে নিশাচর পোকামাকড় এবং দুই একটি পাখ-পাখালির সজীব গুঞ্জন পরিবেশটাকে এক মনোহর রূপ প্রদান করেছে। দূরদূরান্ত থেকে ভেসে আসছে নিশাচর পাখির চিৎকার এবং মাদলের শব্দ। কেউ কোথাও হয়তো ঝুমুর নাচছে। কিশোরীর হাত ধরে নাচছে কোনো পরিচিত তরুণ। বারান্দায় লাগানো বাল্বের ক্ষীণ আলোতে অস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাওয়া সজীব মুখ কয়েকটিতে ফুটে উঠেছে অন্য এক আন্দোলনের জ‍্যোতিধারা। শীতকালের প্রস্তুতি হিসেবে শিবিরের চারপাশ শিশিরের ধূমায়িত রূপ ধীরে ধীরে চুম্বন করছে।

সৌম্যদা বলে গেছেন– বর্তমান পরিবেশ শিক্ষা সমগ্র বিশ্ববাসী এবং বিশ্বের জন্য এক অপরিহার্য শিক্ষা। বিশ্বের স্থায়িত্ব, পূর্ণতা এবং আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতন্ত্রকে আদর্শরূপে প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য পরিবেশ শিক্ষা অপরিহার্য। পরিবেশ শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যমের ভেতরে উত্তম, বাস্তব এবং কার্যকরী একটা মাধ্যম হল প্রকৃতি শিবির। প্রকৃতির শিবির একদিকে যেভাবে মানুষকে প্রকৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে অনেক গূঢ় তত্ত্ব অনুভব করতে শেখায়, অনুরূপভাবে প্রকৃতির মধ্যে মানুষ লাভ করে এক বাস্তব অভিজ্ঞতা। এছাড়া প্রকৃতি শিবির মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং গুনগুলির বিকাশ সাধনে সহায়তা করে। মানুষের অন্তরে বিরাজমান কিছু শুভ শক্তির বিকাশ ঘটে প্রকৃতি শিবিরে। ভালোবাসা, স্নেহ, কষ্টসহিষ্ণুতা, কর্তব্যবোধ, সহানুভূতিশীলতা, সততা, ধৈর্য এবং ছোট ছোট স্বার্থত্যাগের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে চারিত্রিকভাবে পরিপূর্ণ রূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হয় প্রকৃতি শিবিরের দ্বারা। প্রকৃতির শিবির মানুষকে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য শিক্ষা দান করে। জীবনের প্রাচুর্যের মুহূর্তে আমরা অনেক সময়ে অনেকেই নিজের উদারতা স্বাভাবিক চরিত্রকে উপেক্ষা করি। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে নিজের সামান্য সম্বলটুকু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে অন্যের জন্য ত‍্যাগের প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হতে প্রকৃতি শিবির আমাদের সাহায্য করে। প্রকৃতির শিবির এক সুসংঘবদ্ধ এবং  প্রশিক্ষণ ভিত্তিক কর্মশালা যেখানে প্রাকৃতিক শ্রেণী ঘরের আধার হিসেবে গ্রহণ করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ দান করা হয় । প্রকৃতি শিবিরে একজন প্রশিক্ষার্থী নিজের শারীরিক এবং মানসিক সামর্থ‍্য কে মূল্যায়ণ করার সুযোগ লাভ করে।

সৌম্যদা একান্তমনে নিজের অভিজ্ঞতা এবং অভিব্যক্তি সহজ সরল মনে এবং ভাষায় প্রকাশ করে গেল।

এক মুহূর্তের বিরতি নিয়ে সে পুনরায় বলতে আরম্ভ করল– বাস্তবিক অভিজ্ঞতা এবং আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে আমরা যে আদর্শগতভাবে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারি প্রকৃতির শিবির তার এক বাস্তব উদাহরণ। আমাদের পরিবেশ আন্দোলনে প্রকৃতি শিবির এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অসমের পরিবেশ আন্দোলনের বহু কর্মী পূর্ণতা অর্জন করেছে প্রকৃতির শিবির এবং তার আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে।

সৌম‍্যদার কথোপকথনে ফুটে উঠছে প্রকৃতিক শিবিরের সার্বিক প্রয়োজনীয়তা। সৌম্যদা প্রকৃতি শিবিরকে অসীম মান্যতা প্রদান করে নিজের বক্তব্য এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

অতি একান্তমনে শুনে চলেছে উদয়শংকর এবং অন্যান্যরা।

সৌম‍্যদা পুনরায় আরম্ভ করল– প্রকৃতির শিবির গুলি কোনো এক অঞ্চলকে সেই অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক সমস্যা সঠিকভাবে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতেও যথেষ্ট সহায়ক রূপে কাজ করেছে। যে অঞ্চলে প্রকৃতি শিবির অনুষ্ঠিত হয়, সেই অঞ্চল সম্পর্কে অধ্যয়নের ফলে অনেক অজানা তথ্য পরিবেশ কর্মীদের  দৃষ্টিগোচর হয়, ফলে সেই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য সামগ্রিকভাবে কাজকর্ম করা সহজ হয়ে ওঠে। প্রকৃতি শিবিরগুলোতে অরণ‍্যের  মধ্য দিয়ে ট্রেকিং, পাখির পর্যবেক্ষণ, বন্যপ্রাণী গণনা, বন্যপ্রাণীর পদচিহ্ন সনাক্তকরণ তথা গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, প্রকৃতির চিত্রগ্রহণ, বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণের যন্ত্রপাতির প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ, বক্তৃতা প্রদান, গ্রাম ভিত্তিক আলোচনা, প্রকৃতি ভিত্তিক নাটক, গান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা তথা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

উপস্থিত প্রত্যেকেই ধৈর্য সহকারে শুনে চলেছে সৌম্যদার কথা। ধীরে ধীরে শিশির পড়তে শুরু করেছে। সেদিকে কারুরেই ও  ভ্রুক্ষেপ নেই। এমন কি কেউ সময়ের কথাও খেয়াল রাখছে না।

সৌম্যদা বক্তব্য রেখে থাকার মধ্যে উঠে যাওয়া কিশোর এবং গোলাপ গগৈ ফিরে এসেছে।

কথা বলার মধ্যে সৌম‍্যদা দুজনের দিকেই তাকাল। আর চাক্ষুষ ভাষায় সৌম‍্যদা  বুঝতে পারল যে রাতের আহার তৈরি হয়ে গেছে । রান্নার মানুষগুলিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্ত করে দিতে হয় । তাড়াতাড়ি উঠে তাদের সকালের আহারের ব্যবস্থা করতে হয়।

– সকাল আটটায় আমাদের সকলের আহার গ্রহণ করে আগামীকালের কার্যসূচির জন্য তৈরি হতে হবে । আপনারা এখন রাতের আহার গ্রহণ করুন। আগামীকাল আমরা প্রকৃতি শিবিরের ব্যবহারিক দিকটির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করব‌।

শিবিরে অংশগ্রহণ করা প্রকৃতি শিক্ষার্থীরা আনুগত্যতার সঙ্গে নিজের নিজের আসন থেকে উঠে কেউ কেউ ঘরের দিকে আবার কেউ খাওয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল ।

ক্লান্তি এবং নতুন অভিজ্ঞতায় মন স্পর্শ করা সন্তুষ্টির জন্য উদয়শংকরের রাতে ভাল ঘুম হল যদিও সে সকাল বেলা তাড়াতাড়ি জেগে উঠল। উদয়শঙ্কর বিছানা ছাড়ার আগে আরও দুই-একজন ঘুম থেকে জেগে উঠে বিছানার ছেড়েছে। বাথরুমে কোনো একজন মুখ ধোয়ার সময় সে গলা ঝাড়ার   শব্দ শুনতে পেল।

বাইরে বেশ ভালো ঠান্ডা পড়েছে। পাতলা কুয়াশা আচ্ছন্ন করে রেখেছে কাজিরাঙ্গার চারপাশের পরিবেশ। মুখ হাত ধুয়ে কিছুটা হেঁটে আসার ইচ্ছা হল উদয়শঙ্করের। সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধুতে গিয়ে অঞ্জলি ভরে  মুখে জল দিতেই তার দাঁতগুলি শিরশির করে উঠল। টুথব্রাশটা বেগে ভরিয়ে রেখে হাত মুছে সে দুই হাতের তালু দুটি একসঙ্গে করে এভাবে ঘষতে লাগল যাতে হাতের তালুর উত্তাপে শরীরটা ধীরে ধীরে গরম হয়ে উঠতে সক্ষম হয়। সেই প্রচেষ্টায় কাজ হল । সে ইনারের ওপরে কালো রঙের জ্যাকেটটা পরে নিয়ে একপা দুপা করে বাইরে বেরিয়ে এল।





     















 




     















 





 








 










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...