শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮

গদ্য । বাংলা ।। নবপর্যায়-৫৯১ । অষ্টম বর্ষ । সংখ্যা-৪ । ১৮ -০৮-২০১৮

জলবায়ু উদ্বাস্তু 
সৌমিত্র চৌধুরী

পূর্ববর্তী প্রকাশের পর... 
কেন এমনটা ঘটল? কেন বিশ্বের সব খানে আবহাওয়া বদল হেতু ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার?  এ সবের মূল কারণ পৃথিবী গ্রহের বর্ধিত উষ্ণতা। দীর্ঘ দিন ধরে একটু একটু করে গরম হয়ে উঠেছে পৃথিবী। ধুনিক জীবন যাত্রার চাহিদা মেটাতে জ্বালানদহন করে করে ক্রমাগত তাপ শক্তি নিঃসরণ করেছে মানুষনিঃসৃত তাপে উত্তপ্ত হয়েছে বায়ুমণ্ডল।
       আরেকটু গভীরে গিয়ে বলতে হয়, ভোগ্যপন্য উৎপাদন করতে দরকার হয়েছে তাপ শক্তিকোথা থেকে এসেছে? জ্বালানি পুড়িয়েজ্বালানী আদতে রাসায়নিক শক্তি। প্রাকৃতিক জ্বালানী কয়লা, তার দহনে রাসায়নিক শক্তি রূপান্তরিত হয়েছে তাপ শক্তিতে (Thermal power)একে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ ( Thermal power)বিদ্যুৎ বিনা জীবন অচলঘরে ঘরে পথে প্রান্তরে বিজলি বাতি প্রয়োজন। বাড়িতে দরকার ফ্রিজ এয়ার কন্ডিশন ওয়াশিং মেশিনএ সবের ব্যবহার বাড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবী গ্রহের উষ্ণতা। 
       শুরু বহু কাল আগে। সেই শিল্প বিপ্লবের সময় (1760-1820) থেকে। কলকারখানায় লোহা ও অন্য ধাতু গলিয়ে গাড়ি রেল জাহাজ তৈরি হতে লাগলো। অগ্রগতির খিদে মেটাতে শক্তি যোগান দিল প্রাকৃতিক জ্বালানী (Fuel), কাঠ তেল কয়লা ইত্যাদি দহন করে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ তৈরি হয় কয়লা পুড়িয়ে। আর পেট্রল দহন করে সংগ্রহ হয় ৩৮ শতাংশ শক্তি। যত বেশী পুড়েছে প্রাকৃতিক জ্বালানি, ততই বৃদ্ধি পেয়েছে বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড এবং চারপাশের উষ্ণতা।
       উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবী গ্রহটাই ধ্বংসের মুখে। টিকবে বড় জোর আর এক শতাব্দী। কারণ যে হারে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড তাতে বর্তমান শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 2.5-5 ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। ভয়ঙ্কর কথা! তাপমাত্রা 2 ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লেই তো মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে পৃথিবীর। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রতল উঁচু করে দেবে 230 ফুট। এর পরিণাম? জলের নিচে তলিয়ে যাবে বহু দেশ।
       শুরু হয়ে গেছে বহু গ্রাম শহর দেশের অবলুপ্তি। বস্তুচ্যুত হয়ে মাথা গোঁজার আশ্রয় খুঁজছেন অসংখ্য মানুষ।  
       আমরা আগে থেকে কেন সাবধান হতে পারিনি? যথার্থ প্রশ্ন। বিশ্ব-উষ্ণায়নের পরিণাম ও কারণ বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন বহু আগে। দুই সুইডিশ বিজ্ঞানী জন টিন্ডাল (1820-1893) এবং স্যাভান্তে আরহেনিয়াস (1859-1927) [নোবেল পান 1903 সালে], বহু প্রমাণ হাতে নিয়ে মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাতাসে অধিক পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি ভবিষ্যতে পৃথিবীর ভয়ংকর বিপদ ঘটাবে কারণ, এই গ্যাসটিই বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে (Green house effect)’। 
( চলছে ...)


লেখক~ ডসৌমিত্র কুমার চৌধুরী, এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা, কলকাতা  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...