বুড়ো শিকড়ের আত্মকথন
------------------------------ ------------------------------ -
রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়
১
ভূমিষ্ঠ হবার সাথেসাথেই ভ্রূণটি ভ্যাঁভ্যাঁ করে কাঁদে।আসলে ভ্রূণের প্রকাশ এরকমই, অন্ততঃ এই ব্রহ্মাণ্ড তা মানে।ব্রহ্মান্ডের অন্তর্গত প্রতিটা আকৃতিরই একটি পুনঃপ্রাথমিক শাব্দিক ক্ষেত্রফল থাকে, যেখান থেকে প্রমাণিত হয় দূরত্ব বাড়ানো নৈশব্দ-ও একটি বিপরীত শব্দের আত্মকথন।এতক্ষন, যা পড়লেন পাঠক ~ হয়তো ভাবছেন, আমরা তো বিপরীত শব্দের গল্প শুনতে অভ্যস্ত নই।তবু ঠিক এমনটাই হতে চলেছে বিশ্বাস করুন।কারণ, মাত্রাহীনতার মতো প্রলাপে বিশ্বাস ~ আদি ও অকৃত্রিম গুহামানুষের অধুনা জন্মগত অধিকার।আর, আমরা তার বংশজ আগামীর বীজ।ঠিক এরকমই বীজ থেকে জন্ম নিয়েছিল ~ মাচানতলার বটগাছ।পৃথিবীর বয়স তখন (-)৪০০০।ইনিই আমাদের গল্পের একা এবং অদ্বিতীয় কেন্দ্রীয় চরিত্র।কোনোরকম শালিশি ছাড়াই, সে দেখেছিল তার অংশানু সম ভাইবোন, বন্ধু, পরিজন, বাবা ও মা।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় একথার।প্রথমদিকে যখন সে খিলখিলিয়ে হেসে উঠতো, মা বলতো বাছা আমার সাত রাজার ধন / এক মাণিক।বাবা বলতো, আয় সোনা কোলে আয় ~ কোল থেকেই তুই বড়ো হয়ে ওঠ।পরিজনরা বলতো, সাবধানে থাকিস।সূর্যিমামার দুষ্টুমি, হাওয়াবেগের শনশনানী, বৃষ্টির ঘুমপাড়ানি চঞ্চলতা, পাখিদের ঘুমভাঙানি কিচিরমিচির তাকে মুগ্ধ করে তুলতো।সে ভাবতো, পৃথিবীটা কত্তো সুন্দর, যেনো ছোট্ট ঘরে সময়ের আহ্লাদীপনা।খেলা বলতে, সে বুঝতো শুধু ~ বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে, কে কতো উঁচুতে হাত বাড়িয়ে মেঘছানা ছুঁতে পারে।ছুমন্তর দেখতে চাইলেই আবার, কিছু বন্ধু নানান্ রকম রঙের খেলা দেখাতো।মাকে যখন সে বলতো, রঙের খেলা সে কেনো পারে না ~ বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতো, সোনা আমার রোদ আর ছায়ার ম্যাজিক দেখাবে।হিজিবিজি উষ্ণতায় চুকিতকিত খেলা সময়, আর নাতিশীতোষ্ণ মাটির সোঁদা গন্ধ মাখানো বাষ্প।এভাবেই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ এক রাত্তিরে কোথা থেকে যেনো বেড়ে গেলো আলো।উফঃ কি গরম, সীসার আস্তরণে যেনো গোটা পৃথিবী আগুনে আলোর মশাল।বৃষ্টি নামো, বর্ষা নামো।সবই যেনো ছুটিতে ঘুরতে গেছে মামাবাড়ি।রঙিন বন্ধুগুলোর বিদায়, তারপর বেশ অনেকটাসময় জুড়ে তার চোখের জল শান্ত করলো তার শরীর, সে চোখ মেলতে পারলো।আর দেখলো, সে সবচেয়ে শক্তিশালী উঁচু হয়ে উঠেছে রাতারাতির আকাশী জাদুকাঠির স্পর্শে।
চলছে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন