জামিরলেবুর গাছ || ছোটোদের জন্য গল্প
রুদ্র কিংশুক
আমাদের বাড়ির কিছুটা দূরেই কালিপদ বিশ্বাসের বাড়ি। ওই বাড়িতে একটা ঢেঁকিশাল ছিল। আমার মা ওই বাড়ি থেকে ধান ভেনে আনতো। ঢেঁকিতে পার দেয়া এবং মাকে সাহায্য করার জন্য থাকতো আমাদের গ্রামের কোন মাসি পিসি। এই কাজের বিনিময়ে তারা পেত কিছু ভাতের চাল এবং মুড়ি। এই ধানভানার কাজে আমি প্রায়ই মায়ের সঙ্গী হতাম । ঢেঁকিতে পার দেয়ার শব্দ আমার খুব ভালো লাগতো। আমি খুব আশ্চর্য্য হয়ে দেখতাম কীভাবে ক্রমে ক্রমে সোনালী ধানের ভেতর থেকে বার হয়ে আসে সাদা আকাশের মতো চাল।
মায়ের সঙ্গী হওয়ার আরও একটা উদ্দেশ্য একটা উদ্দেশ্য আমার ছিল। ওই বাড়িতে ঢেঁকিশালের কাছে ছিল একটা জামিরগাছ। সবুজ পাতায় পাতায় ভরা একটা লেবুগাছ। আমি গাছের কাছে গিয়ে পাতার গন্ধ নিতাম বুক ভরে। কখনো কখনো দেখতাম গাছের ডালগুলো ফুলে ফুলে ভরে গেছে। এক আশ্চর্য গন্ধে ভরে থাকতো লেবুতলা। বাড়ি ফিরতে আর ইচ্ছে করতো না। মাস দুয়েক পর গিয়ে দেখতাম ডালে ডালে সবুজ ফল। তারপর ধীরে ধীরে সেই ফল পেকে উঠত। কখনও কখনও সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরতাম একটা লেবু হাতে। বাড়িতে বাবা দেখা মাত্র বকাবকি করত।
বলত: জামির খাসনি। খুব টক ।জ্বর আসবে। আমি লেবু লুকিয়ে রাখতাম। আর গোপন জায়গা থেকে মাঝে মাঝে বার করে গন্ধ নিতাম। মনে হতো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গন্ধ আছে অই লেবুর বুকে।
কতকাল পার হয়ে গেলো। সে বাড়িটা এখনো আছে। লেবুগাছটা আর নেই। কিন্তু মনে মনে আমি এখনো তাকে দেখি। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে সে দাঁড়িয়ে আছে । তার ডালে ডালে সেই আশ্চর্য ফুলগুলো হাসছে । বহুদূর থেকে আমি বলি: জামিরলেবুর গাছ আমি তোমাকে ভুলিনি। আবার একদিন নিশ্চয়ই আমাদের কোথাও দেখা হবে। সেদিন যেন তুমি আমায় চিনতে পেরো।
সুন্দর গল্প।সূক্ষ্ম ছেলেবেলার অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।
উত্তরমুছুনSir, Osadharon!!!
উত্তরমুছুন