রুদ্র কিংশুক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রুদ্র কিংশুক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শিক্ষক দিবসের বিশেষ গদ্য || গোপন মিনার ৫ || রুদ্র কিংশুক

ন্যানো টেক্সট || গোপন মিনার ৫

রুদ্র কিংশুক 


সঙ্গে ওনার ছাত্র কবি অশোক কুমার মোহন্ত

খুব অল্প বয়সে আরামবাগের কাছাকাছি লোহাই নামের এক প্রতন্ত গ্রামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নাম প্রফুল্লকুমার মিত্র। জয়েন করার কয়েকদিন পরেই দেখলাম প্রেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি কড়া বক্তব্য রাখছেন। কোন ছাত্র আম কাটার ছুরি এনেছে সঙ্গে এবং অন্য কোন ছাত্র মাস্টারমশায়ের কাছে সেটি রিপোর্ট করেছে। অনেককটা কৌতুক বশত:। মাস্টারমশাইয়ের বক্তব্য:  তোমরা আজকাল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে স্কুলে আসছো।  এটা অত্যন্ত অপরাধমূলক। অপরাধীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হবে।
 মানুষটির শরীর খুবই দুর্বল। ওজন ৪০/৪২। সস্তা ছিটের জামা ও ধুতি । বহু পুরাতন একটি সাইকেল ।সেটি কেবল তাঁরই কথা শোনে। ক্রমে ক্রমে দেখলাম ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং এলাকার মানুষ তাঁকে খানিকটা সমীহ করে। তিনি কাউকেই ভয় করেন না এবং জোড়-হস্ত হওয়া তাঁর অভিযানে কোথাও লেখা নেই। তিনি আস্তে কথা বলেন কিন্তু তার মধ্যে এক ধরনের দৃঢ় প্রত্যয়। ধীরে ধীরে জানা হলো তিনি বাংলা সংস্কৃত ইংরেজি --- তিন ভাষাতে সমান দক্ষ। শুধু তাই নয়। স্কুলে যে কোন মাস্টারমশাইয়ের অনুপস্থিতিতে ক্লাসে গিয়ে তিনি সেই বিষয়টি পড়িয়ে আসার যোগ্যতা রাখেন। বাংলা-ইংরেজি ইতিহাস দর্শন এবং  গণিত--- সব বিষয়ে তাঁর গভীর আগ্রহ।  আস্তে আস্তে তাঁর ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা পড়লাম। প্রধান শিক্ষকের অফিস দোতালায়। স্টাফ রুম একতলায়। মাঝে মাঝে তাঁর ডাক আসতো। আলপনাদি অথবা মিনু এসে  বলতেন: আপনাকে বড়বাবু ডাকছেন।
আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতাম: কিছু বলছেন স্যার?
 উনি মৃদু মৃদু হেসে বললেন: আরে না না, কতক্ষণ তোমাকে দেখি নি। বেলুন একটু চা কর তো।
তারপর নানান গল্প।রাজনীতি-সমাজনীতি। তিনি মনের দিক থেকে খুব আপটুডেট মানুষ।
একবার জ্বর হলো। একটা ভাড়া বাড়িতে থাকি। স্কুলের কাছেই। সঙ্গে আরো দুজন নতুন সহকর্মী। জয়ন্ত আর গোপাল। সন্ধ্যেবেলায় ফল হাতে আমাকে দেখতে এলেন হেডমাস্টারমশাই। প্রথমে কপালে হাত রাখলেন। যেন আমার পিতা। মৃদু স্বরে বললেন: কেমন আছো গো?
 আমি বললাম: আবার আপনি কষ্ট করে!
 উনি বললেন: বাবা মাকে ছেড়ে বাড়ি থেকে কত দূরে আছো! আমি আসবো না!
এখন তিনি আর আমার সহকর্মী নন। রোগ ক্লান্ত' শিশুটির পাশে তিনি হয়ে উঠেছেন তার অভয় দাতা পিতা। আস্তে আস্তে তিনি আমাকে ভালোবাসার জালে বেঁধে ফেললেন।

 একবার একটি ছাত্রকে খুব কড়া শাসন করেছিলাম। তখন স্কুল-কলেজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেছে। মাস্টারমশাইয়ের দাপটে আমাদের স্কুলটা ছিল খানিকটা এসবের বাইরে। তো, আমার সেই অপরিণামদর্শিতার কারণে সেটা ঘটে গেল। অভিভাবক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আমার বিচার করতে এলেন। আমি খুব লজ্জিত, হয়তো কিছুটা ভীত। হেডমাস্টারমশাই আমাকে ডেকে পাঠালেন। আলপনাদি  মজা করে বললেন:
বড়বাবু ডাকছেন। আপনার বিচার হবে।
 আমি ছুটে গেলাম করে অফিসে। বেশ কিছু লোক। আমি খুব সংকুচিত। মাস্টারমশাই ধীর গলায় বললেন:
 এই তরুণ শিক্ষক আমার স্কুলের সম্পদ। একজন শিক্ষকের জ্ঞান আন্তরিকতা যা যা গুণ থাকা আবশ্যক, সব এর মধ্যে  আছে। স্কুলের দরকার একে। আপনাদের ছেলেকে বরং অন্য স্কুলে ভর্তি করান। আমি টিসি দিচ্ছি। স্কুলের অভাব নেই।  আমি আমার ১০০০ ছেলেমেয়েকে বঞ্চিত করতে পারিনা। তারপর বহু তর্জন গর্জন করে তাদের স্কুল থেকে বিতাড়িত করলেন এই শর্তে আর কোনদিন স্কুলে এসে স্কুলের ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করবেন না।
মনে মনে আমি ওনার পায়ে প্রণাম জানালাম। উনি আমার গায়ে হাত দিয়ে মৃদু স্বরে বললেন: সমাজ খুব দ্রুত বদলাচ্ছে বাপু।
 ওই স্কুলে বেশি দিন ছিলাম না। কিন্তু ওই বিদ্যালয় আর ওই অতিশীর্ণকায় মাস্টারমশাইকে আজও ভুলতে পারিনি।  সংকোচের বিহ্বলতায় যখনই ম্রিয়মাণ হতে চেয়েছি,  স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে  তাঁর   স্মৃতি।
তিনি ছিলেন আমার সহকর্মী, তার চেয়েও অধিক আমার শিক্ষক। আজ শিক্ষক দিবসে তাঁকে প্রণাম জানাই । যতদূরেই থাকুন, ভালো থাকুন। এই ভেড়ুয়া মানুষে  ভ‍রা  মেরুদণ্ডহীন সমাজে আজও আপনার প্রয়োজন আছে।

শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

চিহ্নের কবিতা || রুদ্র কিংশুক || কবিতা

চিহ্নের কবিতা 
রুদ্র কিংশুক

১.
চিহ্ন সমুদ্রে গান ওঠে

আমি তার আভোগের ঐশ্বর্যে মুগ্ধ পাখি, ডানামোড়া

 আমি জানি জয় নয়, পরাজয় নয়
তোমার পাঠানো পদ্ম-শালুকে
জন্মান্তরের প্রতিশ্রুতি
দিনার শাহি পীরের মাঠ,
তার সূর্যাস্তের গৌরব,
 তোমার সৃষ্টি-গভীর বাতাবী মগ্নতা

তোমারই অজ্ঞাতে তোমারই সংকেতে
 ডিমে তা, নতুন ভাবনা-বিশ্ব,
 কত সহজেই তুমি সব কিছু ভেঙে দেবে আবার

 গোলাপ তুমি কি আগুনই কেবল,  আলো নও?

২.

জন্মদিন এলে কীভাবে শুভেচ্ছা জানাই শুভেচ্ছা জানাই কীভাবে শুভেচ্ছা জানাই শুভেচ্ছা জানাই
আকাশ চুম্বনের ইশারায় উচ্ছলিত ঝরনা

তুমি বুদ্ধিমতি, সাবধানে থেকো, দেবী সরস্বতী
 পাঠ করো এই গুম্ফালিপি,
 যুগান্তরে আলো কমে আসে
চরাচরে ছায়ার মিছিল ইথারে ইথারে

 সূর্য যদি নিভে যায় কাল
প্রবল জলোচ্ছাসে ঢেকে যায় চরাচর
আমাদের দেখা হবে ইথারে
শূন্যের হাহাকার কীভাবে ধরতে তোমায়, বলো!

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || ডিমা মাহমুদ-এর কবিতা

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
ডিমা মাহমুদ-এর কবিতা


ডিমা মাহমুদ(Deema Mahmood, 1972)  মিশরের তরুণ কবি।  তাঁর পড়াশোনার বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স এবং স্ট্যাটিস্টিকস।  দীর্ঘদিন ধরে তিনি সৌদি অ্যারিবিয়ার  কলেজ অফ এডুকেশন এবং কলেজ অব হেলথ সার্ভিসেস এই দুই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সায়েন্স ম্যাথমেটিক্স এবং স্ট্যাটিসটিকস পড়ান। বিদ্যায়তনিক পেশার বাইরে তিনি একজন ভয়েস ওভার,  অডিও ন্যারেটর এবং ডাবিং অ্যাক্টর এবং ডাবিং অ্যাক্টর। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ  ব্রেইড অব স্পিরিট। ২০১৭ তে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ আই পিক কোয়ারেলস ওভার আ ভায়োলিন। তাঁর অনেক কবিতা ইংরেজি ফরাসি স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজ ভাষায় অনূদিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে তিনি মিশরের কবিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১.
ভ্রুণ হয়ে ওঠা

আমি নিজেই পাক খাই আরম্ভের তৃণ খাওয়ার আশায়
আমি হয়ে উঠি একটি ভ্রুন
এবং উঠি ধূসর প্লাসেন্টার ধূসর দুধের উপর দুধের উপর উপর
 আমি সেই অনন্তকে উদ্ধার করি কিছুক্ষণ আবার মায়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকি
হয়ে উঠি তার সাথে এক কক্ষপথ ও মহাশূন্যের ভেতর ভেতর ভেতর ।

আমি মানুষের সমস্ত রকমের তলানি থেকে মুক্ত হয়ে উঠি
মুক্ত হই মানুষের সমস্ত  থেকে
সমস্ত জেলমলম ও ডাই থেকে।

আমি হয়ে উঠি আর চলতে থাকি মিথ ও ভবিষ্যৎবাণী ছাড়াই।

২.
ছুঁড়ে ফেলা

আমি ছুঁড়ে ফেলছি,
 হ‍্যাঁ, ছুড়ে ফেলেছি !

আমি অভিশাপ দিই সেই জিনকে যা আমাকে বেঁধেছে মানব জাতির সঙ্গে
আর হস্তান্তর করেছে এই কেওসের কাছে

 আমি যদি হতাম একটা ঘেয়ো অথবা সিরাজী বেড়াল
একটা পাগলাটে অথবা হৃষ্টপুষ্ট কুকুর
 আমি কেয়ার করি না,
আমি যদি হতাম একটা ছোট পাখি
অথবা একটা মাছি জীবাণু সহ ময়লার স্তূপের একটা একজোড়া ডানাসহ
দূরে উড়ে যাবার জন্য এবং আমার আত্মাকে টেনে বার করার জন্য
 এই পচাগন্ধ ছাড়া মানুষের পাগলাটে গর্ত থেকে

 হায়...
 আমি প্রস্থানের পথ খুঁজি ‌
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এবং বমিতে ভাসছি।
 মোটা ফেনা আমার গলা টিপছে এবং তাকে থামানোর কোন পথ নেই!

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || পানাগিয়োটিস জানেটাটোস-এর কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা
 রুদ্র কিংশুক 
পানাগিয়োটিস  জানেটাটোস-এর কবিতা


পানাগিয়োটিস জানেটাটোস (Panagiotis Tzannetatos, 1989)  জন্মেছেন গ্রিসের সেফালোনিয়া দ্বীপে।  তিনি পড়াশোনা তিনি পড়াশোনা করেছেন ট্যুরিজিম বিজনেস এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির ইতিহাস বিষয়ে।  ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ পোয়েমস, ২০১৫- তে প্রকাশিত হয় দ‍্য এজ অব পিপল, ২০১৮-তে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। খবরের কাগজ ও অনলাইন পত্রিকায় তিনি লেখেন কবিতা ও প্রবন্ধ।  ইংরেজি স্প্যানিশ ও ফরাসি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতা বাংলা ভাষায় এর আগে অনুবাদ  ক‍রেছেন  কবি উজ্জ্বল ঘোষ।

প্রতিবিম্বন
এই সন্ধ্যাও উড়েছিল,
 অনিমন্ত্রিত যখন সে এসেছিল।
 স্মৃতি যা বয়ে আনে সবই অনাহূত,
সময় যা তুমি মনে রাখতে চাও না।
 এখন যখন আলো কমে এসেছে
 অন্ধকারের ভেতরেও আমি পরিষ্কার দেখছি রাস্তার অই দিকের সমস্ত দাগ।
 এই শরীরে থাকা পূর্বেকার প্রতিবিম্বন
সময় যার দিকে আমি তাকাতে সাহস করেছিলাম
 ছায়া ও তাদের নাচ
 দেয়ালের ও আয়নার উপর ।
আর তখন আবার আমি দেখলাম মানুষ
কীভাবে বদলায় নিজেকে অন্ধকারে
 স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
 আর তখন আবার একবার আমি দেখলাম অনাহূত স্মৃতি নিজেই ফিরছে বর্তমানে।
প্রতিশোধ নিতে সেই সমস্ত স্বপ্নের উপর
যারা বেঁচে উঠতে পারেনি।

২.
রাতের জীবন ছিল স্বর্গে

আমি একটা ছোট বেসমেন্ট ভাড়া করেছি,
 আকাশের সঙ্গে বিছানা পাতবো বলে,
কারণ আকাশ ছাড়া কে আর রাতের বেলা
 শান্তিতে ঘুমাতে পারে ।
বছরের এই সময় জানালার বাইরে পারিজাত গোলাপ ফোটে
 জানালার বাইরে ।
 ভালোবাসা জন্ম নেয়
 ভালোবাসা মরে যায়
যেমন করে পরগাছা যা জন্মায় স্বাস্থবান  শিকড়ের উপর ।
কার আর ক্ষমতা আছে হাত দিয়ে এইসব কিছু তুলে ধরার
শব্দকে অন্ধকারে  নিরাবরণ মনে হয়।
 যখনই তুমি তাদের স্পর্শ করতে চেষ্টা করো
দাগ থেকে যায় পিছনে।
 আমি দরজা খুলি চলে যেতে দিই
সমান দূরত্ব দিয়ে যা আমাদের জুড়ে রাখে।
 একটা কংক্রিট দেওয়াল পিছনে উঠে
যা আলাদা করে দেয় আবেগকে পাপের ভিতর থেকে
ঈশ্বর ও মানুষের, একই  শরীরছ তারা বসবাস করার আগে
 দিনের শেষে  ভয় ফিরে আসে ভালোবাসার কাছে
কারণ এই জগৎ পরিবর্তনশীল আর রাত্রির সবকিছু,  যার প্রয়োজন হয়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || ইয়ানিস লিভাদাস-এর কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
  ইয়ানিস লিভাদাস-এর কবিতা


ইয়ানিস লিভাদাস (Yannis Livadas, 1969) গ্রিসের নিরীক্ষামূলক কবিতার অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি সনেটের এক নতুন  আঙ্গিক 'ফিউশন-সনেট- এর উদ্ভাবন করেন। তাঁর কবিতার নতুন প্রকরণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন 'অর্গানিক এন্টিমেটাথিসিস' (organic antimetathesis) যে ভাবনার ভেতর গঠনগত বৈপরীত্য,  বাক‍্যবিন‍্যাসের তুলনা এবং অর্থের অনির্দিষ্টতা-বোধের সমন্বয় ঘটেছে। তাঁর কবিতা যথার্থ অর্থেই পোস্টমডার্ন টেক্সট যাদের অর্থ সর্বদাই বহুকেন্দ্রিক ইশারা উৎসাহিত।

১.
সমন্বয়


দুইটি অস্তিত্বের মধ্যবর্তী সম্পর্ক:
 তাদের ভেতরে সেই শূন্যতার পিছলে পড়া

 জানালাগুলোর মধ্যে দিয়ে তুমি দেখো 
আত্মার শার্সিগুলোকে।

সব কিছু   সাধারণ  কঠিন হয়ে ওঠে।

২.
আমার হাড়গোড়গুলো আমার সমাধির স‍্যুপে

আমি সব চেয়ারেই বসি 
কারণ উপযুক্ত কোন জায়গা নেই
 শিল্পের জন্য 
যা প্রতিষ্ঠিত
২০০৮,২০১১ অথবা ২০১২তে;

শুকিয়ে ওঠা আমার জামা থেকে ঝরা  জলফোঁটা।

 সন্ত জেনেভিয়েভের সুর।

 আমার নির্মম মাথা হেফাজত হিসাবে মঞ্জুর
 আত্মার নির্দেশ দ্বারা।

 কী ভয়ানক অভিজ্ঞতা;

আমার হাড়গোড় স‍্যুপের ভেতর 
কবরের ভেতরের 
কাদা সহ।

৩.
বলেছিলাম যার প্রতীক আমরা 

বাক্যের শব্দটি
 যা সব কিছুর সমাধান কিছুর সমাধান 
আছে সেখানে

 যথেষ্ট অনভিপ্রেত 
যথেষ্ট সমাপ্তি হিসাবে 
যদিও সম্পূর্ণতায়
 সমন্বিত কিনা

 বিরক্তিতে 

ধ্বংস করে স্থৈর্য 
একদা বলা হতো
 যার প্রতীক আমরা।

রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০

বুলগেরিয়া আধুনিক কবিতা || রুদ্র কিংশুক || সাশো সেরাফিমোভ-এর কবিতা

বুলগেরিয়া আধুনিক কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
সাশো সেরাফিমোভ-এর কবিতা


সাশো সেরাফিমোভ (Sasho Serafimov, 1953) জন্মেছেন বুলগেরিয়ার দেবরিচ শহরে। সোফিয়াতে অবস্থিত স্লাভিক ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি সোশ্যাল পেডাগোগিতে ডিগ্রি লাভ করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছয়। এছাড়া তিনি ছোটদের জন্য লিখেছেন অনেক গল্প। তাঁর লেখা নাটক দ‍্য টেলার অব টেলস গোল্ডেন ডলফিন ইন্টারন্যাশনাল পাপেট থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হয়েছে।

১.
লোকজ্ঞান

স্বদেশ বিষয়ে এত গভীর টান যে
 আমি তাকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছিলাম। আশ্চর্য নয়!
আমি আর দেশকে ভালবাসি না,
 আমার কাজকে না,
আমার স্বপ্নগুলোকে না,
ভালোবাসি না আমার ইতিহাস,
আমার বিশ্বাস,
 আর তবুও আমি বেঁচেবর্তে আছি
 অন্যদেরও ভাবতে দাও
কি কঠিন কাজ এটা
 ঈশ্বরহীনের ভালোবাসা।

২.
জীবনের ইতিহাস

 চিন্তা করো না পৃথিবী ঘুরছে।
 প্রত্যেকেই নিজের জায়গা নেবে।
 প্রত্যেক টুপির জন্য থাকবে একটা হ্যাঙার।
 প্রত্যেক গাধার জন্য --- একটা আরাম কেদারা।‌
 উল্লাস করো আর চুম্বন দাও।
ক্ষুধার্ত দেখবে রুটি,
 পিপাসার্ত জল,
বিষন্ন মানুষ আবিষ্কার করবে আনন্দ ।
কিন্তু ভদ্রমহোদয়গণ, মৃত্যুকে ভুলবেন না।
সেও আমাদের সঙ্গে বসতে চায়।
মানুষের ভেতর সে আরাম পায়।
তার ক্ষমতা আছে জোড়া দেয়ার আর ভেঙে ফেলার
অশ্রু, যন্ত্রণা  ও ধুলো সহ ।

জীবনের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত।
মহাকাল সেটাই সত্য বলে জানায়।

৩.
গুজব

আমার মনে পড়ে একজন কবিকে
প্রথম বুলগেরিয়া রাষ্ট্র থেকে ।
তিনি ভবিষ্যৎ ঘোষণা করলেন যে
 একটা দ্বিতীয় বুলগেরিয়া রাস্ট্র হবে।
 যখন আমি তার লেখা পড়ছিলাম
রাস্ট্র শেষ, এখন সে রপ্তানি হয়ে গেল।

এখন আমি শুনি একজন নতুন কবি এসেছেন, কোন নতুন  রাষ্ট্র সম্বন্ধে কিছু শুনিনি।


শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || এলেনা পলিগেনি-র কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
এলেনা পলিগেনি-র কবিতা


এলেনা পলিগেনি (Elena Polygeni, 1979)- র জন্ম গ্রিসের পাট্রাস শহরে। তিনি একজন কবি, অভিনেত্রী এবং সংগীতজ্ঞা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ:

 লেটার্স অন আ ব্ল্যাকবোর্ড ২০০৯
 মাই সরো ইজ আ ওমেন ২০১২
দ্য ল্যান্ড অব প্যারাডাক্সিকাল থিংকজ ২০১৪
সেকেন্ড অব   এলাইভ মোমেন্টস ২০১৭

তাঁর কবিতা সুইডিশ ও ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।


১.
স্বর্গ অপার্থিব শরীরের সমান অদৃষ্ট

 আমরা সবাই নিজেদেরই চারপাশে ঘুরপাক খাই ভাস্বর শরীরের মতো। আমাদের কেন্দ্রীয় অক্ষ আলাদা করে দেয় প্রয়োজন থেকে আকাঙ্ক্ষাকে এবং তখনও শান্তি ভিক্ষা করে। আমাদের অন্যান্য গ্রহগুলো আমাদের কাছে অপরিচিত। তাদের নিজেদের দুর্ভাগ্যের চারদিকে ঘুরপাক খাওয়া, তাদের নিঃসঙ্গতা। বাকিটা সহজভাবে উজ্জ্বল আলো।  পার্থিবতার হাতের স্পর্শে সবকিছুই এক, কিছু আগের, দমবন্ধ শয়তানিভাবে। মন লাভ করে বাহ্যিক সংকেত, যা সে পুনরায় চালনা করে আগ্রহসহ। অভ্যাসমতোই পাল্টে ফেলে প্রতীকে। সবকিছু বাঁচার ক্লান্তিতে ভরে ওঠে,  তবুও মৃত্যুকে ভয় পায়। জলের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ আমাদের মনে করায় অস্তিত্বের ঋণ, যার কাছে কয়েকটা ব্যতিক্রম অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত। কক্ষটি বৃত্তাকার, তা কখনোই কেউ এড়িয়ে যায় না, প্রস্থানবিন্দুতে আবার প্রত্যাবর্তন; আর সেখানে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে না।

২.
বিজয়ের গান

সব স্থানে সব দেশে আর সব বাড়িতে সব যুগ ধরে আর সব চুম্বনে আর টেবিলে আর চিতা প্রজ্জ্বলনে আর আলোকোজ্জ্বলতার নিচে আর পর্দার পিছনে আর লেপের তলায় আর ছদ্মবেশের আড়ালে আর শ‍্যাম্পেন পানে আর গানের ভেতর আর গাড়ির ভেতর আর ঝকমকে বিজ্ঞাপনের নিচে আর রুফটপে আর বাইরের ব্যালকনিতে আর তাঁবুর ভেতরে আর হাসির ভেঙে পড়ায় আর যুদ্ধ লাগানোয় আর আইন ভাঙায় আর জনগণের উপর আর রক্তদাগে থুতু ছিটানোয় আর সমাধান আবিষ্কারে আর উন্নয়ন ও উতপ্ত শব্দের ভাগাভাগিতে আর বিছানার উপর আর ক্লান্ত ঠোঁটে আর গাড়িঘোড়ার ভেতর আর প্রাসাদ নির্মাণে আর কার্পেটের উপর আর স্কুলে আর জাহাজে আর রাকেট আঁকড়ে ধরায়  আর সীমাবদ্ধতা দেখানোয়, হাতে হাতে, আর জয়গীতিতে আর আহত মাথায় আর সমস্ত গলিতে আর শহরের সমস্ত স্কোয়ারে, রাতে ও দিনে,  ভেলভেটের ভেতর, যন্ত্রণা সজ্জিত আরেকটি নতুন করাসহ, প্রতিশ্রুতি আহ্বান করে, নতুন কাদায় আর এক নতুন করাতসহ,  গৌরবে হেটে যায় আর সমস্ত গোপন স্থানে, দুঃখকে ডাকে আর শব্দের দূরে দুঃখের বাইরে আর শীতের দূরে

সর্বদা

সর্বদা

ঘাতকেরা

 উৎসব করে।

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || ভাসিলিস আমানাটিডিস-এর কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 
ভাসিলিস আমানাটিডিস-এর কবিতা


ভাসিলিস আমানাটিডিস (Vassilis Amanatidis, 1970)-এর জন্ম উত্তর-গ্রিসের এদেসা শহরে। তিনি বড়ো হয়ে উঠেছেন থেসালোনিকি শহরে যেখানে তিনি বর্তমানে থাকেন। অ্যারিস্টোটল ইউনিভার্সিটি অব থেসালোনিকি থেকে তিনি পাঠ নিয়েছেন নিয়েছেন ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্ব বিষয়ে।  তিনি থেসালোনিকি সেন্টার অফ কন্তেম্পরারি আর্ট আর্ট আর্ট  প্রতিষ্ঠানে আর্ট কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি একজন দক্ষ অনুবাদক । ই ই কামিংস, জয়েস ক‍্যারল  ওটস প্রমূখ প্রখ্যাত লেখকদের রচনা তিনি অনুবাদ করেছেন গ্রিক ভাষায়। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা সাত। তাঁর কবিতা এবং ছোটগল্প বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, সুইডেন, ইতালি এবং রাশিয়ার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও কোন সংকলনে প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছে।

১.
তারা নতুন মৌ-কুঠুরি বানাচ্ছে

 কেউ না লক্ষ্য করে পারবে না না পারবে না না না লক্ষ্য করে পারবে না না পারবে না না না
 যে যখন মৌমাছিরা পোড়ে
 তারা হয়ে ওঠে নরম লাল ভেলভেটের মত
 ভঙ্গুর যেন নীল চোখের খোলা তারা
 আর তারপর তারা মরে

 আগুন আসার আগে
যা গলিয়ে দেয় মৌ-কুঠুরি
এবং মৌচাকের শেষ স্বপ্নগুলির উত্তোলন। প্রকৃতপক্ষে মুহূর্তের জন্য, বাতাসে
 মৃদু আলোড়ন
যখন তারা বাষ্পীভূত হয়।
 আর যেহেতু মৌমাছিদের স্বপ্নে
 ফুলের সৌরভ
বহুক্ষণ পরেও
পরবর্তী চাকের বৃথা চেষ্টা
 বাগানের কোনো
উঁচু স্থানে।

২.
অসম্ভব কবিতা

 একটা পাখি আছে যে
রাতের বেলা গাছের ওপর বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না গাছের ওপর বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না
 ডানা ভাঁজকরা, নিশ্চল
সে ঘুমায় শূন্যে

কেউ তাকে ধরে রাখে না উচ্চতায়

 দিনের বেলার উড়ান তাকে ক্লান্ত করে
সে ডানা ঝাপটায় কারণ
পায়ের অভাব, অপরিণত
কীভাবে সে জানবে অন্যেরা মাটি স্পর্শ করে
 এভাবেই সে ডানা ঝাপটায়

 কিন্তু রাতের বেলা শান্ত হয়ে
সে ঘুমায় লম্বভাবে
একটা ছোট্ট সোজা কফিন
মাটির স্পর্শ না করেই তুমি এমনকি বলতে পারো
 সে শুয়ে আছে

দিনের বেলা সে আবার উড়ান দেয়
ভাসিলিস আমানাটিডিস (Vassilis Amanatidis, 1970)-এর জন্ম উত্তর-গ্রিসের এদেসা শহরে। তিনি বড়ো হয়ে উঠেছেন থেসালোনিকি শহরে যেখানে তিনি বর্তমানে থাকেন। অ্যারিস্টোটল ইউনিভার্সিটি অব থেসালোনিকি থেকে তিনি পাঠ নিয়েছেন নিয়েছেন ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্ব বিষয়ে।  তিনি থেসালোনিকি সেন্টার অফ কন্তেম্পরারি আর্ট আর্ট আর্ট  প্রতিষ্ঠানে আর্ট কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি একজন দক্ষ অনুবাদক । ই ই কামিংস, জয়েস ক‍্যারল  ওটস প্রমূখ প্রখ্যাত লেখকদের রচনা তিনি অনুবাদ করেছেন গ্রিক ভাষায়। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা সাত। তাঁর কবিতা এবং ছোটগল্প বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, সুইডেন, ইতালি এবং রাশিয়ার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও কোন সংকলনে প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছে।

১.
তারা নতুন মৌ-কুঠুরি বানাচ্ছে

 কেউ না লক্ষ্য করে পারবে না না পারবে না না না লক্ষ্য করে পারবে না না পারবে না না না
 যে যখন মৌমাছিরা পোড়ে
 তারা হয়ে ওঠে নরম লাল ভেলভেটের মত
 ভঙ্গুর যেন নীল চোখের খোলা তারা
 আর তারপর তারা মরে

 আগুন আসার আগে
যা গলিয়ে দেয় মৌ-কুঠুরি
এবং মৌচাকের শেষ স্বপ্নগুলির উত্তোলন। প্রকৃতপক্ষে মুহূর্তের জন্য, বাতাসে
 মৃদু আলোড়ন
যখন তারা বাষ্পীভূত হয়।
 আর যেহেতু মৌমাছিদের স্বপ্নে
 ফুলের সৌরভ
বহুক্ষণ পরেও
পরবর্তী চাকের বৃথা চেষ্টা
 বাগানের কোনো
উঁচু স্থানে।

২.
অসম্ভব কবিতা

 একটা পাখি আছে যে
রাতের বেলা গাছের ওপর বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না গাছের ওপর বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না না বসে ঘুমাবে না
 ডানা ভাঁজকরা, নিশ্চল
সে ঘুমায় শূন্যে

কেউ তাকে ধরে রাখে না উচ্চতায়

 দিনের বেলার উড়ান তাকে ক্লান্ত করে
সে ডানা ঝাপটায় কারণ
পায়ের অভাব, অপরিণত
কীভাবে সে জানবে অন্যেরা মাটি স্পর্শ করে
 এভাবেই সে ডানা ঝাপটায়

 কিন্তু রাতের বেলা শান্ত হয়ে
সে ঘুমায় লম্বভাবে
একটা ছোট্ট সোজা কফিন
মাটির স্পর্শ না করেই তুমি এমনকি বলতে পারো
 সে শুয়ে আছে

দিনের বেলা সে আবার উড়ান দেয়

বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০

বুলগেরিয়ার আধুনিক কবিতা || রুদ্র কিংশুক || একাতেরিনা যোসিফোভা-র কবিতা

বুলগেরিয়ার আধুনিক কবিতা
রুদ্র কিংশুক 
একাতেরিনা যোসিফোভা-র কবিতা

একাতেরিনা যোসিফোভা (Ekaterina Yosifova, 1941)- র জন্ম কায়ুসটেনডিল শহরে। সেইন্ট ক্লিমেন্ট ওহরিডস্কি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি রুশ দর্শনে ডিগ্রী লাভ করেন। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা এবং পত্রিকা সম্পাদনাকে নানান সময়ে  তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১২-র অধিক। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত  'দিস স্নেক' কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পেয়েছেন ইভান নিকোলভ অ্যাওয়ার্ড। এটি বুলগেরিয়ার একটি জাতীয় কবিতা পুরস্কার। তাঁর কবিতা মেসিডোনিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান এবং স্লোভেনিয়ান ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কবিতা কর্মের জন্য অনেকগুলি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। বর্তমানে তিনি বুলগেরিয়ার সোফিয়া শহরে বসবাস করেন।


১.
সাদা সাপ
 আর আমি যদি ঠিক কল্পনা করি
 যেটা আমি করতাম আমি যদি
সচেতন সরীসৃপ হতাম!---- বলতে গেলে,
 আমিই তুলে নিতাম আপেলটা
আমি কোন অজ্ঞ মেয়ের হাতে তা দিতাম না, আদমের চেয়ে অনেক কম; তারপর
 আমি তা খেতে আরম্ভ করতাম, একাই,
 একটু একটু করে;
সচেতনতা, জ্ঞান,
সাবধানতা।

২.
আমরা চেষ্টা করেছিলাম

 সাঁতার কাটা
 দুজনেই একটা হাতে
 আমার বাম হাত, তার দক্ষিণ,
 তার বাম আমার কোমর জড়ানো,
আমার দক্ষিণ তার কাঁধে,
এটা নয় যে আমরা চেষ্টা করিনি।

৩.
 ভূগোল জানা দরকার নেই

বিষয়টা অনুবাদে নয়, তারা এক কথায়
 বিশ্বাস করতে চায়নি, যে দেশটা
তাদের সেনারা দখল করেছিল
 আশঙ্কায়
সে দেশটা তাদের তাদের সীমান্তের কাছে নয় এবং এমনকি
সেটা অন্য এক মহাদেশে।
 আমরা তাদের দেখালাম মানচিত্র।
তারা একবার তাকাল তার দিকে।
 মেয়েটি বলল: এটা কি বুলগেরিয়ার বুলগেরিয়ার কি বুলগেরিয়ার বুলগেরিয়ার মানচিত্র?
 তারা বিরক্তিকর ভাবে হাসলো হাসলো।
 সবকিছু তাদের কাছে আবার অর্থপূর্ণ হলো।

৪.
 গুলি !

কার্ডিগানের পকেটের ভেতর দিয়ে
যার সেলাইটা আগোছালো
 তুমি শূন্যে গুলি ছুড়লে নিচ থেকে ওপরে
 হুড়োহুড়িতে
কেউ তোমার দিকে তাকাল না,
কেউ সন্দেহ করল না তোমাকে
কেউ মনেও রাখলোনা তোমাকে। এটা খুবই সুবিধাজনক
একজন বুড় মহিলা হওয়া।

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

নূপুর || রুদ্র কিংশুক || কবিতা

নূপুর
রুদ্র কিংশুক


শূন্যতা থেকে শূন্যতার দিকে
নূপুর বেজে উঠছে
 মহাশূন্যপাত্রে ঝরে পড়ছে উপলরাশি
তুমি তাকে অশ্রু বলতে পারো
কোথাও অন্ধকারে একাকী বারবেট ডাকে
 তার ডাক অপস্রিয়ানয়মান দিগন্তরেখা
আমি কিছুতেই পৌঁছতে পারি না
অথচ বর্ষা আসে
 কদম গাছের ডালে সাজানো নক্ষত্র
 কস্তুরীমৃগের সিগনাল ডেকে নিচ্ছে
 ঘূর্ণাবর্তের দিকে

কিছু কথা থাকে
বুকের ভেতর থেকে বাইরে আনা যায় না
 বর্ষার দুরন্ত বাতাস  যদি তাকে চিরতরে
 বিস্মৃতির দিকে নিয়ে যায়!

রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || আঞ্জেলিকি সিগোরু-র কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 
আঞ্জেলিকি সিগোরু-র কবিতা


আঞ্জেলিকি সিগোরু (Angeliki Sigourou, 1973)-র  জন্ম আথেন্সে। তাঁর লেখাপড়ার বিষয় ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য। এছাড়া তিনি চর্চা করেছেন আধুনিক এবং ধ্রুপদী নৃত্য।  ফরাসি এবং অ্যারাবিক ভাষা থেকে তিনি গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিপুল পরিমাণ সাহিত্য। মাহমুদ দারউইস এবং নাগিব মাহফুজের লেখা তাঁর লেখা তাঁর মাহফুজের লেখা তাঁর লেখা তাঁর অনুবাদে গ্রিক পাঠকদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। বর্তমানে তিনি গ্রিক দ্বীপ সাইরসের বাসিন্দা।  তিনি আধুনিক নৃত্যের শিক্ষক হিসেবেও কাজ করে চলেছেন। তাঁর প্রতিষ্টিত নৃত্য সংগঠনের নাম আক্রপোদিতি।

১. রঙগুলি

এবং রঙগুলি এসেছিল। আগে তাদের অস্তিত্ব
 ছিল না। আর আমরা
তাদের বিশ্বাস করতাম
 তাদের চূড়ান্ততা  আর বৈপরীত্যে
সমস্ত রঙের সম্মিলনে এবং আলাদাভাবে প্রত্যেককেই
 আমরা বিশ্বাস করি

 রঙের মেঘ
সমুদ্র
গাছ
রক্ত
সূর্য
দিনের আকাশ
 রাতের আকাশ
কাঠ
জল
মাটি
আগুন

এজগতের সাফল্য
             তার পছন্দ করা গভীরের রঙ
 মহান গভীরের রঙ
     যদিও উপরে আকাশ নীল আর লাল
আর হয়তো এখানে সেখানে  সবজে সোনালী
 তাই গভীর পাপ নীরবে বাড়ে বাড়ে
 যাতে আমরা দেখতে পারি নতুন স্বর্গের স্বপ্ন
 জ্ঞানের
সংযমের
বিশুদ্ধ রঙের
 অপরাধ ছাড়া
আমার মিথ্যাগুলোকে যত্ন সহকারে নিও
আর গভীরে রঙ দিয়ে
 সত্যের উপরটা রাঙিয়ে দিও

                   স্বর্গের কোন রঙ নেই
                     সমুদ্রেরও
                     না এটা মিথ্যা

২. সিন্দুক

এই কারাগারের ভেতর থেকে আমি লিখি
আমি যে কখনো কারাবন্দি হইনি
আমার চারদিকে আমি এখন তাকাই এবং দেখি
 কারাগার ছাড়া কিছু না
এবং আমি তারপর আমার ভেতরে তাকাই
এবং কারাগার ছাড়া কিছু দেখিনা
 কারাগার যা তোমাকে শেখায় কীভাবে
লিখতে হবে
কীভাবে হতে হবে শব্দের প্রতি প্রতিরক্ষাসমর্থ
 কারাগার যা তোমাকে শেখায়
ভেতরে ঢোকা বাতাসের চেয়ে
 বাতাস যা বার হচ্ছে সর্বদায়
 বেশি
কারাগার -----সব কিছু যা আমি ভয় পেয়েছি
 হতে পারতো কারাগার
কুড়িটি আঙ্গুল যা যা দেখতে
লৌহদন্ডের মত
আমি ভাবতাম তাদের ক্ষমতা আমাকে
 বন্দী করার
আমি ভাবতাম তাদের অপারগতা
 আমাকে বন্দী করার

বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন চিন্তাচেতনার কবিতা || রুদ্র কিংশুক || ক্লেওমেনিস পাপাইওয়ানু-র কবিতা

গ্রিসের নতুন চিন্তাচেতনার কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
ক্লেওমেনিস পাপাইওয়ানু-র কবিতা


ক্লেওমেনিস পাপাইওপানু (Kleomenis Papaioannou,1990) গ্রিসের সামপ্রতিক কবিদের প্রতিনিধি। সারা পৃথিবীতে ছন্দ-অলঙ্কার- প্রতীক বর্জনের মধ্য দিয়ে কবিতার যে নতুন হয়ে ওঠা তার অভিঘাত একালের গ্রিক কবিতারতেও পরিলক্ষিত। পাপাইওয়ানুরকবিতাও সেই নিরীক্ষাপ্রবনতার চিহ্ন বহন করে। পাপাইওয়ানু পড়াশোনা করেছেন পেন্টিওন ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ইতিহাস বিষয়ে। তাঁর প্রথম কবিতা গ্রন্থের নাম 'লেটার অন এ ফুলিশ হার্ট হার্ট ফুলিশ হার্ট হার্ট এ ফুলিশ হার্ট হার্ট ফুলিশ হার্ট হার্ট'।


সীমা নেই

 সীমা ছিল না কোনো
সীমারেখা আমি অগ্রাহ্য করেছিলাম
 আমি উল্লঙ্ঘন করেছিলাম আইন-কানুন সীমান্তের পাশ দিয়ে আমি গিয়ে ছিলাম
 আর সবকিছু আমি
ভেঙে ফেলে ছিলাম
ছিঁড়ে ফেলেছিলাম
 ভেঙে ফেললাম
 প্রতিবাদ করলাম
 নিন্দা করলাম
উলটপালট করলাম
 কেড়ে নিলাম
কাটলাম
মুক্ত করলাম
 মুছে দিলাম
ধ্বংস করলাম
 বাতিল করলাম
 আর পোড়ালাম তোমাকে পেতে

 তোমার কাছে গোপন করছি না
আমি ভেঙে ফেললাম বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তোমাকে পেতে

রবিবার, ২ আগস্ট, ২০২০

গ্রিসের নতুন চিন্তা-চেতনার কবিতা || রুদ্র কিংশুক || দিমিত্রিস স্টেনোস-এর কবিতা

গ্রিসের নতুন চিন্তা-চেতনার  কবিতা
রুদ্র কিংশুক 
দিমিত্রিস স্টেনোস-এর কবিতা


দিমিত্রিস স্টেনোস (Dimitris Stenos, 1989)-এর জন্ম গ্রিসের পিরায়িউসে এবং বর্তমানে তিনি পেরামার বাসিন্দা। ভেলিওস আর্ট স্কুলে তিনি শিল্প-কলার পাঠ নিয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ রেমন‍্যান্টস অব ফিয়ার (Remnants of Fear, 2013)। বিভিন্ন প্রিন্ট এবং অনলাইন ম‍্যাগাজিনে তাঁর কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

১.
জন্ম

কিছু একটা জন্মেছে আমার ভেতর
এটা বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে
আর কাঁদছে আমাকে অসহনীয় দেখে।

 ২.
কাচ

শেষ পর্যন্ত কাজ পুতুলটাকে ভাঙতে দাও
 শিশুটিকে দাও স্বাধীন হতে ভেতর থেকে
 মনের বাইরে ভাবতে
 খোলামুখওলা কালোছায়া।

৩.
এলিউসিস

তার হাতগুলো
 আকাশ থেকে ঝুলছিল ।
তার হৃদয়
রক্তাক্ত হামা দিয়ে ঢুকলো এলিউসিসে
তার চোখ ছিন্নভিন্ন করলো ভোর।
 মৃত আবেগগুলো
 সূর্যাস্ত মুছে দিল অ্যালকোহলে।

৪.
অভিজ্ঞতা

চোখের জল হল একটা নালা
 তিক্ত বিষ
আমি লাভ করলাম তিক্ত অভিজ্ঞতা
আমি জানি কে কাঁদে ঘুমের ভেতর।
যখনই সে কাঁদে
আমার চোখের উপর
একটা মাকড়সা ঢালে ফোঁটা ফোঁটা বিষ।

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০

ইসোল্ট গন-কে নিবেদিত কবিতা || রুদ্র কিংশুক || কবিতা

ইসোল্ট গন-কে নিবেদিত কবিতা
রুদ্র কিংশুক



১.

আগস্ট, তোমার জন্মদিন এসে গেল
আমার ব্যক্তিগত ইস্টার
আপেলগাছের মাথায় অন্ধকার
রেজারেকশন, অ্যানেকডোটাল চাঁদ উঠছে

গ‍্যালওয়ের নতুন দ্বীপে আমাদের তরুণ অভিযান
টেগরের কবিতা আমাদের বাতিঘর
হ্যাজেলউডের ভেতর মৌচাক
অবিশ্রান্ত শিশির
এই সেই ইনিসফ্রি
কবিতা আমাদের টেনে এনেছে এতদূর

নির্জনতার ভেতর ঘুমানো
তোমার কচি বাতাবি দুটি
তুমিই আমার আরাধ্য মিউজ
তোমাকে অনুবাদ করি
দূর্জ্ঞেয়  গেইলিক থেকে প্রাঞ্জল আলোয়
তবু    স্পষ্ট হয়না সবটুকু অন্ধকার
কবিতা শরীরে

তুমি জানো কেবল টেগর কবি
তোমার আগুন পেলে আমিও কি
ফোটাতে পারি না ফুল, মিউজ?

২.
মাদাম ব্লাভাটস্কিকে তুমি জানো
দূর্জ্ঞেয় অন্ধকার তাকে ঘিরে রাখে
তুমি অন্ধকারে পা রাখলে জ্বলে ওঠে আলোদ্বীপ
যা কিছুই স্পর্শ্ব  কর
হয়ে ওঠে লাল ও লালাবির উর্মিমালা

ফরাসিরা যাকে বলে আমুর, তুমি বল গ্রা
একই অর্থ, তবু দুটি দ্বীপের মধ্যবর্তী ঊর্মিত সমুদ্র
অনুবাদ এমনই জটিলতাপ্রসবী খেলা
চোখে যেভাবে দেখো,হাতের তালুর ভেতর তার রূপান্তর

অবিরল অন্ধকার , ওলি-বুল আকাঙ্ক্ষা
বেজে চলে চিরকাল তবু
শূন্যতার ভেতরে এইভাবে অনুবাদ
তোমাকে নির্মাণ করি
তোমাকে টেনে আনি
জন্মান্তরের বর্ষাকালে
তোমার জন্মদিনে এই ছিহ্ন পদাবলী
লামুর পুর ভ‍্যু । 

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০

গোপন মিনার || রুদ্র কিংশুক || ন্যানো টেক্সট

গোপন মিনার
রুদ্র কিংশুক


 আমাদের প্রাইমারি স্কুলটা ছিল গ্রামের প্রায় বাইরে। স্কুল বাড়ির পিছন থেকে শুরু দিগন্তব্যাপী ধানক্ষেত। গ্রাম থেকে বার হয়ে আসা একটা রাস্তা পশ্চিমমুখী হয়ে স্কুল বাড়িটার সামনে দিয়ে চলে গেছে অনেক দূরে,  যেখানে বাঁকানদীর জলধারা এসে পড়েছে খড়িনদীর জলে। কুল-বেল- তেতুলের সন্ধানে সেই ভুত-প্রেত-সর্পরাজ‍্যে ইতিমধ্যে কয়েকটি অভিযান ঘটে গেছে।

 আমাদের মাস্টারমশাই দুজন। মণিবাবু আর জগদীশবাবু। মণিবাবু নবদ্বীপ থেকে আসতেন। জগদীশবাবু গ্রামেই থাকতেন।  স্কুল থেকে তাঁর বাড়িটা দেখা যেত। গাছপালা আর বন জঙ্গলে ঢাকা বাড়িটা ঠান্ডা ছায়াছায়া।  শুনেছিলাম আমাদের মাস্টারমশাই আগে নাকি বিমান চালাতেন। কেউ কেউ বলত তিনি নাকি যুদ্ধের সময়ও বিমান চালিয়েছেন। মাঝে মাঝে তিনি মণিবাবু অর্থাৎ আমাদের হেডমাস্টারমশাইকে নানান দেশের গল্প বলতেন। বুলগেরিয়া নামের একটা দেশের কথা তখনই বোধ হয় শুনেছিলাম। জগদীশবাবু গ্রামে থাকায় আমাদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধা ছিল বেশি। রাস্তাঘাটে যখন যেখানে তিনি আমাদের পেতেন সেখানেই তাঁর শাসন চলত। হাতের কাছে পাওয়া গাছের ডাল-পালা যা পেতেন সেটাই প্রয়োগ করতেন আমাদের পিঠে। তাঁর অতর্কিত আবির্ভাব আমাদের বেশ সন্ত্রস্ত করে রাখত। আমাদের অবস্থাটা ছিল অনেকটা সুন্দরবনের মধু ওয়ালাদের মতো।  স্কুলে লেখাপড়ার কোন চাপ ছিল না। বাইরে থেকে লোকজন এলে মাস্টারমশাইদের তর্জন-গর্জন কিছুটা দেখা যেত। নইলে তাঁরা আমাদের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। স্কুল থেকে দূরে আমাদের জল খেতে যেতে হতো। দিনে বেশ কয়েকবার। জল খেতে গিয়ে সেখানে কচুফুল তোলা এবং এ ওর গায়ে জলবিছুটি লাগিয়ে দেয়া। স্কুলে ফিরে অভিযোগ, প্রতি-অভিযোগ, তার বিচার, সাজা ঘোষণা এবং তা কার্যকরী করা। বিচারপ্রার্থী সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এইসব করতে করতেই দুপুর। এবার বাড়িতে দুপুরবেলা সবাই মিলে হৈ হৈ করে খেতে যাওয়া। সে সব শেষ করে স্কুলে ফিরে সমবেত নামতা এবং স্কুল ছুটি।
হেডমাস্টারমশাই না এলে, প্রতিদিনের রুটিনের সঙ্গে আরও কিছু সংযোজন থাকত। প্রথমে নাম ডাকা এবং ধমকধামক। এরপর গ্রামের মাস্টারমশাই বাড়ি যেতেন স্নান এবং দ্বিপ্রাহরিক আহার সম্পন্ন করতে।   বেশিরভাগ দিন দেখতাম তিনি বাড়ির উঠানে গাছের তলায় একটি ঘাসদড়ি-বোনা খাটে শুয়ে আছেন। তাঁকে ডেকে তুলতে হতো এবং কল থেকে এক ঘটি জল দিলে তিনি মুখ ধুয়ে খানিকটা জল খেতেন। তারপর আমাদের দু-তিনজনকে সঙ্গে করে স্কুলে ফিরতেন। ততক্ষণে বিচারপ্রার্থী সংখ্যা অগণিত। হাতে সময় কম, তাই আজ কোর্ট মুলতুবি।

 এসব দিনগুলোতে দুটো জিনিস খুব ভালোভাবে হতো। প্রথমেই তিনি সবাইকে চোখ বুজে ধ‍্যান করতে বলতেন। চোখ খুললেই পিঠে পড়তো কাঁচা কঞ্চি। কেউ চোখ খুলছে কিনা দেখার জন্য তিনি পুলিশ নিয়োগ করতেন। আমাদের প্রার্থনার মন্ত্রটি খুবই গভীর ও তাৎপর্য বহনকারী:

বিদ্যে দাও, বুদ্ধি দাও
ভালো দেখে বউ দাও।

 ছেলেমেয়ে সবাইকে নির্বিশেষে একই  মন্ত্র আওড়াতে হতো। প্রায় আধ ঘন্টা চল্লিশ মিনিট। তারপর শুরু হতো সমবেত নামতা। সমবেত নামতাধ্বনিতে স্কুলবাড়ির ছাদটা পর্যন্ত কেঁপে উঠত। মাথা ঝাঁকিয়ে হাত-পা ছুঁড়ে সেই নামতাপাঠ যেন কোন  শব্দব্রহ্মকে আহবান! ছড়ি হাতে পায়চারি করতে করতে পুরো ব্যবস্থাটা পরিচালনা করতেন আমাদের পাইলট মাস্টারমশাই। এই নামতাটা শুনে বাড়িতে মায়েরা বুঝতেন হীরের টুকরোদের এবার বাড়ি ফেরার সময় হলো।

একটু দূরেই খড়িনদী, যেখানে নদীসেচ প্রকল্পের অফিস।  বড়ো বড়ো মোটরে জল তুলে সেই জল পাঠানো হতো বিস্তীর্ণ মাঠের ভেতর, ধান চাষের জন্য। আমি প্রায়ই সেই বড়ো লোহার পাইপের ওপর খালি গায়ে উপুড় হয়ে পাইপ জড়িয়ে শুয়ে থাকতাম। বুকের নীচে বহমান শীতল নদীর জলস্রোতের মৃদু শব্দ শুনতাম। সেই গান বুকের মধ্যে আজও স্পন্দিত হচ্ছে!

 আজ বহুদূর থেকে আমাদের সেই স্কুলবাড়িটা আর মাস্টারমশাইদের প্রণাম জানাই। সেই পবিত্র প্রাঙ্গণই আমাকে শিখিয়েছে  বিরাট বায়োস্কোপের  মতো আমাদের এই পৃথিবী!

বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০

গোপন মিনার: বর্ষার ভাবনা || রুদ্র কিংশুক || ধারাবাহিক বিভাগ

গোপন মিনার: বর্ষার ভাবনা 
রুদ্র কিংশুক

পর্ব ৩

ছোটবেলায় আমরা থাকতাম একটা মাটির বাড়িতে। মোট তিনটে ঘর। টালির  চাল। চালগুলো খুব পুরনো হয়ে এসেছিল।  তাই এখান সেখান দিয়ে চাল ভেদ করে বৃষ্টির জল পড়ত। আমার কাজ ছিল সেই সমস্ত জায়গায় বাটি, গামলা বা অন্যান্য পাত্র পেতে দেওয়া, যাতে ঘরের মেঝে না ভিজে যায়, বিছানাপত্র শুকনো থাকে। এই কাজটা ছিল আমার কাছে খুব  আনন্দের ব্যাপার। একেকটা পাত্রে একেক রকম শব্দে বৃষ্টিফোঁটা  পড়তো। পাত্রগুলো জলে ভরে গেলে জলভরা পাত্রের ভেতরে বদলে যেত বৃষ্টিপতনের গান। মাঝে মাঝে বৃষ্টিফোঁটায় হাত ছড়িয়ে দিতাম।  হাতের ওপর বৃষ্টি পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তো মেঝের ওপর। খুব আনন্দ হতো। আসলে আনন্দ প্রতিমুহূর্তে পথ খোঁজে কীভাবে সে আমাদের শরীরের ভেতরে ঢুকবে। তারও তো একটা বন্ধু চাই। আমি ছিলাম বৃষ্টির উচ্ছল বাতাসের সেই ছোট্ট বন্ধু। ও, আমার অল্পে-খুশি মন, কত দূরে তুমি চলে গেছো।
[21/07, 5:34 pm] Kobi Rudra Kingshuk: মাঝে মাঝে বাড়ির জানালায় বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। দেখতাম আশেপাশের বাড়ির উঠানের বৃষ্টির সম্মিলিত জলধারা কীভাবে পথঘাট ভাসিয়ে মাঠে গিয়ে পড়ছে।  অথবা কোন পুকুরে নামছে  আর তার চারপাশে লাফালাফি করছে বৃষ্টির আনন্দ-মশগুল মাছেরা।

 রাতের বেলা ঘন অন্ধকার।  চারদিকে বাঁশবন আর সবুজ গাছপালা ঢাকা গ্রামটা অন্ধকারের পেটের ভেতর সেঁদিয়ে যেত। একদিন একটা তীব্র হ্যাজাকের আলোয় মায়রাপুকুরের  পাড় আলোকিত হয়ে উঠল। একটা লোক এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।তার পিঠে বস্তা, হাতে একটা লম্বা লাঠি। লাঠির মাথায় একটা জাল। দেখে মনে হল কোন সুদূর পৃথিবীর মানুষ। কোন রাক্ষস-খোক্শ-একানরে।  ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম। আবার চোখধাঁধানো আলোয় অই অদ্ভূত দৈত্য-দানোকে দেখার ইচ্ছে। মাঝেমাঝে জানালায় উঁকি দিচ্ছি। বাবা বলল:
ভয় কীসে! ওতো আমাদের সুরেন। রামেশ্বরপুর থাকে। তোদের সুরেনকাকা।  ব্যাঙ ধরতে এসেছে। ব‍্যাঙ ধরে কলকাতা চালান করে।
 আমাদের সুরেনকাকা কীর্তনের দলে দোহার। বাঁশি বাজাতে পারে। আড়বাঁশি মুখে সু্রেনকাকা শ্যামসুন্দর।   কলকাতার খিদে আজ আমাদের বাঁশিবাদক সুরেনকাকাকে কংস সাজিয়েছ।

কত যুগ পর এই বর্ষার অন্ধকার রাতে সুরেনকাকাকে মনে এলো। বর্ষার এলোমেলো বাতাসে কার পায়ের ঘুঙুর নীরবে কাঁদে। বড়ো মায়া চারিদিকে, প্রিয়!

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || ভালেরিয়া রুজো-র কবিতা

বিশ্বদুনিয়ার নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 
ভালেরিয়া রুজো-র কবিতা


ভালেরিয়া রুজো(Valeria Rouzeau, 1967)-র জন্ম ফ্রান্সে। ১৯৮৯- তে প্রকাশিত  তাঁর প্রথম কবিতার।  ১৯৯৯-তে প্রকাশিত তাঁর কবিতা বই ' পা রুভোয়ার' (Pas Revoir) ফরাসি কবিতা জগতে একটি বিশেষ সংযোজন। নিরীক্ষামূলক ও নতুন চিন্তাচেতনার চেতনার অভিসারী তাঁর কবিতা। ভালেরির পড়াশোনার বিষয় সাহিত্য অনুবাদ। অনুবাদশাস্ত্রে তিনি মাস্টার ডিগ্রী লাভ করেছেন। ফরাসি কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে তিনি পেয়েছেন প্রি গিয়ম আপোলিন‍্যার (Prix Guillaume Apollinaire) পুরস্কার।

১.
আমি লিখছিলাম

 আমি তোমাকে লিখতাম পোস্টকার্ড
 প্রত্যেক দিনের জন্য
শুক্রবারে দুটো রবিবারের জন্য ।
নীল ফুলগুলো রঙিন হতে পারত
 তুষারে
 শেষ যেটা তুমি দেখেছিলে।

 তোমার আঙ্গুল নিশ্চয়ই কেঁপেছিল
  যখন তুমি ধরেছিলে
 রুটি, কয়েকটা টুকরো নিশ্চয়ই
পড়বে
তুষারের ওপর ।

কিন্তু সোমবারের কার্ড রয়েছে
তার
খামে, তোমার পকেটে কফিনে
ভল্টে
মাটিতে, বাবা ভিত‍রে জড়ানো।

২.
ইডেন

 সকাল চারটেয় চাঁদের আলোয় সে যায়
আদমের বেশে আমার প্রেমিক গোলাপের গন্ধ নিতে যায়
যে গোলাপ ফুটেছে উঠানের ধূসরে
 সকাল চারটের চাঁদের আলোয় খোলা গোটা শহর তাকে দেখছে গোলাপসহ
আমি তখন উঠলাম তার গলায়
 আইভিলতার মতো,
গোলাপ

সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০

গ্রিসের নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || চ্লোয়ি কৌটসৌমবেলি-র কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
চ্লোয়ি  কৌটসৌমবেলি-র কবিতা


চ্লোয়ি কৌটসৌমবেলি (Chloe Koutsoumbeli, 1962) জন্ম নিয়েছেন গ্রিসের থেসালোনিকি শহরে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলে রাখা যাক যে, এই শহরটি নামকরণ হয়েছে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের বোনের নাম অনুসারে। কৌটসৌমবেলি  আরিস্ততল ইউনিভার্সিটি থেকে পাঠ নিয়েছেন আইন বিদ্যার এবং আঠারো বছর ধরে কাজ করেছেন একটি অর্থসংস্থা । এদিক থেকে তাঁর মিল জীবনভর ব্যাঙ্ককর্মী গ্রিক মহিলা কবি কিকি ডিমাওলার সঙ্গে। কৌটসৌমবেলির কবিতায় প্রাচীন গ্রিক মিথ-পুরাণের ব্যবহার ও বিনির্মাণ দেখা যায়।

১.
হলুদ ট্যাক্সি

না, মশাই, আপনি অন্যকারো সঙ্গে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন
সে লোক আমি ছিলাম আমি ছিলাম না
হলুদ ট্যাক্সিতে
কখনোই আমি আপনার সঙ্গে পিছন সিটে বসে ছিলাম না
বরফও পড়েনি, আমি সে ব্যাপারে নিশ্চিত
আর না আমার চুলেও পড়েনি বরফকুচি
 বরং উল্টো, আমার তখন চুলই ছিল না
 আপনি কখনোই আমাকে চুম্বন করেননি, অন্যথায় আমার
 মনে থাকতো
আর আপনি যদি আমায় চুম্বনও করতেন, আমি যেকোন উপায়ে সেখানে থাকতাম না
আর ড্রাইভার একটি বারের জন্যও মাথা ঘোরাতো না
সে নীরবে পার হয়ে যেত হ্রদ শেষ পর্যন্ত
 আর তৎক্ষণাৎ হাল ডুবে যেত
 চারদিকের কালো জলে

২.
পেনেলোপি

পেনেলোপি এতক্ষণে জানে
 যে তাকে দেরি করিয়েছে
 সে অসহিষ্ণু সাইরেন্স নয়
নয় বুড়ো সার্সি
তার চালিত আকাঙ্ক্ষা সহ
নয় নষ্ট-হওয়া নোসিকা
ভুল বয়সের সঙ্গে সেলাই করেছে সাদা মোজা আর স্কুল বালিকার স্কার্ট
নয় মানুষখেকো ল‍্যাস্টিগোনিয়ানরা,  নয় পদ্মগুলো
যারা তাকে তার তার কাছ থেকে দূরে রেখেছিল
নয়, হয়তো, পসেইদনের শ্রমিক-সংগঠনীয় ক্রোধ হুংকার
আর গুলিয়েফেলা পুরনো সাথিদের সঙ্গে

প্রাচীন পৃথিবীতে
এতক্ষণে সকাল সকাল অন্ধকার নামতো
 পৃথিবী এতটা চ্যাপ্টা ছিল না
এবং মানুষ মাঝে মাঝে হারিয়ে যেত

রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

অনন্য দ্রাঘিমা: অন্য ভাষার কবিতা || রুদ্র কিংশুক || মারি-ক্ল‍্যার বাঁকুয়ার-এর কবিতা

অনন্য দ্রাঘিমা:  অন্য ভাষার কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 
মারি-ক্ল‍্যার বাঁকুয়ার-এর কবিতা


মারি-ক্ল‍্যার বাঁকুয়ার (Marie-Claire Bancquart, 1932-2019)জন্ম  ফ্রান্সের  আভেরোঁ-তে। কবি,  ঔপন্যাসিক ও বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক মারি-ক্ল‍্যার বাঁকুয়ার সাম্প্রতিক ফরাসি কবিতায় বিশিষ্ট নাম। সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি লাভ করেছেন আকাদেমি ফ্রাঁসে কর্তৃক প্রদত্ত বিশিষ্ট সাহিত্য পুরস্কার গ্রাঁ প্রি দ‍্য লা ক্রিতিক লিতের‍্যার।
কোন কোন সমালোচক তাঁর কবিতার নতুনত্ব ও সমৃদ্ধির কথা ভেবে তাঁকে শার্লে  বোদল‍্যার-এর সঙ্গে তুলনা করে থাকেন।


১.
দু'হাজার বছর হলো এখন

দু'হাজার বছর হলো এখন ,আহত পা
দেবতার আশ্চর্য ভালোবাসা পা টেনে টেনে চলেছে।

 তার বয়স হলো। শিগগির
তাকে দেখা যাবে না। উড়োজাহাজের পথ ছাড়া
 গমক্ষেতের চিহ্নায়নে
 যা দেয় এক প্রাচীন
স্যাংচুয়ারি হদিস।

সে আকাঙ্ক্ষা করে আদর যত্নের ভাষা,
 খোলা তৃণভূমি,সুলভ শরীর ,

আর শব্দেরা অস্বীকার করে, আর অন্য কোথা তার ইতিমধ্যে মৃত্যুতে
 সূর্যের নিচে এক রোগাটে পার্পল ফুল ছাড়া।

 সে তবুও এখনো সর্বত্র দেবতা সাজতে পারে,
 সন্ধ্যার জীর্ণ হৃদয়।

সে ভাবে ফুল খসে যাবে
 হালকা
একটা শতাব্দী থেকে পরবর্তীতে প্রার্থনা সহ।

২.
 আমার কথা বললে আমি ভালোবাসি এক বৃদ্ধকে

আমার কথা বললে, আমি ভালোবাসি এক বৃদ্ধকে
 যে থেকে গেছে একজন ছুতোর
ধর্মশাস্ত্রের দাবি পূরণ করেই।

 একটা কার্ডখণ্ড থেকে
পাকাচুলো জিসাস
 খোদাই করে
 ভারী হাতে
একটা ক্রুশকাঠ বহু হাত বিশিষ্ট।

 মেয়েরা জলপাই ম্যারিনেট করছে
বার্থডে ডিনারের জন্য ভেড়ার মাংস
 যা কখনোই গসপেল থেকে আসবে না।

তাঁর বয়স ছেষট্টি, প্রভু নন
কিন্তু তিনি তাঁর ছেলের ছেলের হাত ধরেছেন
 এবং তাঁর মৃত্যু দ্বিগুণ পুরনো,
 ফিসফিসানি
যে এই কাঠ থেকে তিনি তৈরি করেছেন ঘুঘু পাখিদের বসার আলনা।

শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০

অনন্য দ্রাঘিমা:অন্য ভাষার কবিতা || রুদ্র কিংশুক || পোল স্কারোঁ-র কবিতা

অনন্য দ্রাঘিমা:অন্য  ভাষার কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
পোল স্কারোঁ-র কবিতা 


বাঙালি পাঠকের সঙ্গে পোল স্কারোঁ (Paul Scarron, (1610-1660)-র প্রথম পরিচয় ঘটান বিশিষ্ট লেখক কমলকুমার মজুমদার (১৯১৪-১৯৭৯) তাঁর 'গোলাপ সুন্দরী' (বাংলা ১৩৮৯) উপন্যাসে।  উপন্যাসের নায়ক বিলাস টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে স‍্যানেটোরিয়ামে ভর্তি হয়। সেখানে অন্য রোগীদের সঙ্গে তার দেখা হয় আর একজনের  যার নাম চেট্টি  যে সর্বদা মৃত্যু ভাবনায় আচ্ছন্ন। জীবনের চারিদিকে সে  আসন্ন মৃত্যুর উপস্থিতি টের পায়।তাই প্রতিনিয়ত সে তার প্রিয় এপিটাফটি উচ্চারণ করে। সেটটির এই উচ্চারণ তার ব্যক্তিগত থাকে থাকে না। এপিটাফটি ক্রমশ হয়ে ওঠে স্যানেটোরিয়ামে একটি সর্বব্যাপী উপস্থিতি। কমলকুমার বাঙালি পাঠকদের এতটাই শিক্ষিত ভাবতেন যে উপন্যাসে শিক্ষিত ভাবতেন যে উপন্যাসে এপিটাফটি বাংলা বর্ণিকরনে ফরাসি ভাষাতেই উদ্ধৃত।

স্কারোঁ ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক। নানান দুর্ভাগ্যের শিকার এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন স্কারোঁ। তাঁর শরীরের উপরাংশ  চিরতরে বেঁকে চুরে গিয়েছিল। পা দুটো ছিল আসার, পক্ষাঘাতগ্রস্ত । শারীরিক এবং মানসিকভাবে  একজন বিপর্যস্ত মানুষ। এই দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর লেখায়। এখানে তাঁর  এপিটাফটির সঙ্গে একটি নাতিদীর্ঘ কবিতার অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো।

১.
অগ্নি পাত্রে রাখা সৌন্দর্য

সে সৌন্দর্য অগ্নিপাত্রে রাখা
 স্টিলের হৃদয়
 তুমি আমাকে রেখেছো পাশে
 রক্ত-আগুনে হয়েছে সঠিক সমন্বয়।
হায় প্রেম, আমায় তুমি করলে গ্রহণ
 ইঁদুরকে নেয় বেড়াল যেমন।

২.
 এপিটাফ

ঈর্ষা নয়,  করুনাই  করো আজ তাকে
যে এখন এখানে একা ঘুমিয়ে আছে ,
বহু মৃত্যু ছুঁয়েছিল মৃত্যু পূর্বে যাকে
যে মরণ অন্তর্গত জীবনের কাছে।

পাশ দিয়ে চলে যাও, যাবে তুমি যদি
শব্দ নয়, ভেঙো নাকো ঘুম, যত্নে আরো
আজই এসেছে প্রথম সে রজনী আদি
ঘুমাচ্ছে প্রথম আজ হতভাগ্য স্কারোঁ।

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...