শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০

নস্টালজিয়া ৯ || পৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট

নস্টালজিয়া ৯
পৃথা চট্টোপাধ্যায়


আমার ছোটবেলার দিনগুলো নিত্য নতুন আনন্দের আয়োজনে আপনা থেকেই সাজতো। প্রায় প্রতিটি দিনেই কী ভাবে যে আনন্দের উৎস মুখ খুলে যেত আজও তার হদিস মেলেনি।  রাত্রে শুতে যাওয়ার সময় ভাবতাম কাল তো  নতুন কিছুই নেই,  শুধু পড়াশোনা,  স্কুল আর বাড়ি। কিন্তু,  পরদিন ঘুম থেকে উঠতেই মা  যখন  বলতো , আজ থেকে ঝুলনযাত্রা শুরু হচ্ছে। ব্যস ! মনের আগল যেত ভেঙে , তোলপাড়  শুরু হতো আনন্দে। ঝুলন সাজাতে হবে, চার-পাঁচ দিন ধরে ঝুলন থাকবে! আমাদের দেওয়াল আলমারিতে যত খেলনা পুতুল সেই সকালেই সব নামাতাম। বিভিন্ন মেলা থেকে কেনা অনেক ধরনের মাটির পুতুল ছিল আমাদের। লালবাগকে মেলার শহর বললে কিছু ভুল বলা হতো না। তখন সারা বছর জুড়ে কত রকমের মেলাই না হত আমাদের ওখানে।  রথের মেলা, মহরমের মেলা, বেড়ার মেলা, ঈদের মেলা,স্নানযাত্রার মেলা, শ্মশান কালীর মেলা ইত্যাদি। জানলার কাছে একটা চৌকিতে ঝুলন সাজাতাম।সেখানে মাটি মাখানো কাপড় দিয়ে পাহাড় তৈরি করে নিচে গাছের ডালপালা পুঁতে বনভূমি করতাম। ঘাসসুদ্ধ মাটির চাপ তুলে এনে বসাতাম খেলার মাঠ,  জমি করতে।  বাটিতে জল দিয়ে পুকুর করতাম।  তাতে কিছু জলজ পাতা রাখতাম।  প্লাস্টিকের হাঁস সেই জলে ভাসাতাম, কলসি কাঁখে মেয়ে বসাতাম সেখানে জল আনতে। এই ঝুলনে অনেক দৃশ্য সাজাতাম আমরা, যার যেমন খেলনা পুতুল থাকত সেইমত। বাজারে ফলমূল,  শাকসবজি বিক্রেতা, বিয়ে বাড়ি, ফুটবল খেলা, গ্রামের দৃশ্য , জুতোর দোকান ইত্যাদি। এখানে প্রতিটি দৃশ্যই আমাদের চেনা জীবন থেকে নেওয়া হতো। একটা সুন্দর দোলনায় ঝোলানো হত রাধাকৃষ্ণকে।দোলনাটি আমরা ফুল দিয়ে সাজাতাম আর একটা দড়ি বেঁধে মাঝে মধ্যে আড়াল থেকে সুতো দিয়ে টানতাম সেই দোলনাটি।বন্ধুরা পাড়ায় একে অন্যের ঝুলন সাজান  দেখতে যেতাম। কার ঝুলন বেশি সুন্দর সাজানো হয়েছে দেখতাম।আমার মামার বাড়ি গোকর্ণে মানুষ ঝুলন হতো, তাও দেখেছি। নশিপুরের রাজবাড়িতে সুন্দর ঝুলন সাজান হত এবং সেই সময় ভিতরটা দর্শকের জন্য খুলে রাখা হতো।নশিপুরে খুব বড় ঝুলনের মেলা হত। এই রাজবাড়ির ভিতরে দশদিকে ছিল দশাবতারের মূর্তি আরও অনেক দেবতার মূর্তি। এইদিন আমরা ঘুরে ঘুরে সব দেখতাম। রাজবাড়ির নির্দিষ্ট পুরোহিত থাকতেন এবং তখন নিয়মিত পূজার্চনা হত দেখে বোঝা যেত। এরপর আমরা মেলায় পাঁপড়,  জিলিপি, বাদামভাজা আরও টুকটাক কত কি খেতাম। কোনো কিছু কেনাকাটার বায়না ছিল না আমাদের। দু একটা  মাটির পুতুল ছাড়া কিছু কিনতামও না। মেলায় বেড়ানোর নির্মল আনন্দে মন প্রাণ ভরিয়ে আমরা যখন  ঘরে ফিরতাম তখন ঝুলন পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় চরাচর ভেসে যেত।

1 টি মন্তব্য:

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...