গল্প :
নতুন ভোর
কমল কৃষ্ণ কুইলা
দিনটি ছিল ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ । একটি মন্দিরে সুন্দরভাবে পবিত্রতার সাথে নিষ্ঠাভরে প্রশান্ত ও কবিতা বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ।
এবার আমি লেখনীর মাধ্যমে প্রশান্ত ও কবিতার অতীত জীবনের কিছু মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরতে চাই । জনসমক্ষে আনতে চাই ।
প্রশান্তর বাবা পেশায় ছিলেন একজন কৃষক । মাঠে যে পরিমান ফসল চাষ হয়, তাতে টেনেটুনে বড়জোর ছয় মাস সংসার চলে যায় । চিন্তা থেকে যায় বাদবাকি ছয় মাসের । দিন মজুরি করেই চাল কিনে বাকি ছয়মাস সংসার চালাতে হয় । এভাবেই চলতে থাকে কয়েক বছর ।
একদিন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে দিনমজুরি কাজ করতে করতেই ঘরের চালের উপর থেকে নিচে পড়ে যায় । পঙ্গু হয়ে বিছানা নেয় প্রশান্তর বাবা । বিনাচিকিৎসায় বাড়িতেই পড়ে থাকতে হয় দিনের পর দিন ।
পরিবারে দ্রুত ঘনীভূত হয় দারিদ্র্যতার মেঘ । কেননা প্রশান্তর বাবা দীনেশ বাবু ছিলেন পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ।
শেষ পর্যন্ত প্রশান্তর মা সরস্বতী দেবী নিরুপায় হয়ে এক প্রতিবেশি বাবুর বাড়িতে ঝি চাকরের কাজ নেয় । বাবুরা সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটিয়ে আধসের অথবা মন হলে একসের খুদ দিয়ে খালাস । তাই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয় ।
শেষ পর্যন্ত তাই ভিক্ষাবৃত্তিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয় সরস্বতী দেবীকে ।
প্রশান্তকে দিনের পর দিন খালি পেটে স্কুলে যেতে হয় । শুধুমাত্র এক গ্লাস জল খেয়ে । কখনওবা গাছের একটি পেয়ারা খেয়ে । বারো কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটেই যেতে হত । বইপত্র সব ভিক্ষা করেই জোগাড় করতে হয়েছে তাকে । কেননা তার আর কোনও উপায় ছিল না ।
এইভাবেই দিন মাস বছর কেটে যায় । স্কুলের পাঠ শেষ করে সে কলেজে পাড়ি জমায় । শুরু হল আর এক লড়াই । রোজ চার ঘণ্টা জলপথ অতিক্রম করে কলেজে যাতায়াত করতে হত তাকে ।
এইভাবেই অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করার পর সে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে ।
এরপর পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে সে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় । পথের সম্বল বলতে মা বাবার আশীর্বাদ আর দু-টাকা ।
সে অনেক আশা নিয়ে কলকাতা এল বটে কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথাও জুটল না ।
শেষ পর্যন্ত রেল স্টেশনই হল তার একমাত্র ঠিকানা ।
স্টেশনে রাত্রি যাপন আর দিনে লেবারের কাজ করেই দুমুঠো অন্নের সংস্থান করতে হল তাকে ।
এইভাবেই বেশ কিছুদিন চলতে থাকে । অতঃপর শরীর না টানায় একদিন সে লেবারের কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ।
খবরের কাগজে কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখে সেলসম্যানের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সে ।
এইকাজ করতে করতেই একজনের সহযোগিতায় সে একটি মেগা সিরিয়ালে কাজের সুযোগ পেয়ে যায় ।
পরবর্তী সময়ে সে সমাজসেবী হিসাবে একটি এনজিওতে যোগদান করে ।
বর্তমানে সে এনজিও, ফিল্ম মেকিং এবং অফিস জব নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে ।
অনেক চেষ্টা করেও সে একজন ভালো সত্যিকারের জীবন সঙ্গিনী জোগাড় করে উঠতে পারেনি ।
এই নিয়ে সে দিনের পর দিন চোখের জল ফেলতে থাকে ।
অবশেষে ঈশ্বর তার ডাকে সাড়া দিলেন ।
এতদিন পর সে সত্যি কারের একজন সৎ নিষ্ঠাবান পবিত্র ও দরদী মনের মানুষ খুঁজে পেল ।
মেয়েটির নাম কবিতা । তার জীবনটাও দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণায় ভরা । বহুবার তাকে জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে ।
একজন নরপিশাচের পাল্লায় পড়ে মেয়েটির শেষ হতে বসেছিল । কিন্তু ঈশ্বরের অসীম কৃপায় সে বেঁচে যায় ।
কবিতা এখন প্রশান্তকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে খুবই সুখী; তার আর কোনও দুঃখ নেই ।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে নব দম্পতি সুখে ও শান্তিতে নতুন জীবন শুরু করল ।
নতুন ভোর
কমল কৃষ্ণ কুইলা
দিনটি ছিল ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ । একটি মন্দিরে সুন্দরভাবে পবিত্রতার সাথে নিষ্ঠাভরে প্রশান্ত ও কবিতা বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ।
এবার আমি লেখনীর মাধ্যমে প্রশান্ত ও কবিতার অতীত জীবনের কিছু মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরতে চাই । জনসমক্ষে আনতে চাই ।
প্রশান্তর বাবা পেশায় ছিলেন একজন কৃষক । মাঠে যে পরিমান ফসল চাষ হয়, তাতে টেনেটুনে বড়জোর ছয় মাস সংসার চলে যায় । চিন্তা থেকে যায় বাদবাকি ছয় মাসের । দিন মজুরি করেই চাল কিনে বাকি ছয়মাস সংসার চালাতে হয় । এভাবেই চলতে থাকে কয়েক বছর ।
একদিন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে দিনমজুরি কাজ করতে করতেই ঘরের চালের উপর থেকে নিচে পড়ে যায় । পঙ্গু হয়ে বিছানা নেয় প্রশান্তর বাবা । বিনাচিকিৎসায় বাড়িতেই পড়ে থাকতে হয় দিনের পর দিন ।
পরিবারে দ্রুত ঘনীভূত হয় দারিদ্র্যতার মেঘ । কেননা প্রশান্তর বাবা দীনেশ বাবু ছিলেন পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ।
শেষ পর্যন্ত প্রশান্তর মা সরস্বতী দেবী নিরুপায় হয়ে এক প্রতিবেশি বাবুর বাড়িতে ঝি চাকরের কাজ নেয় । বাবুরা সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটিয়ে আধসের অথবা মন হলে একসের খুদ দিয়ে খালাস । তাই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয় ।
শেষ পর্যন্ত তাই ভিক্ষাবৃত্তিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয় সরস্বতী দেবীকে ।
প্রশান্তকে দিনের পর দিন খালি পেটে স্কুলে যেতে হয় । শুধুমাত্র এক গ্লাস জল খেয়ে । কখনওবা গাছের একটি পেয়ারা খেয়ে । বারো কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটেই যেতে হত । বইপত্র সব ভিক্ষা করেই জোগাড় করতে হয়েছে তাকে । কেননা তার আর কোনও উপায় ছিল না ।
এইভাবেই দিন মাস বছর কেটে যায় । স্কুলের পাঠ শেষ করে সে কলেজে পাড়ি জমায় । শুরু হল আর এক লড়াই । রোজ চার ঘণ্টা জলপথ অতিক্রম করে কলেজে যাতায়াত করতে হত তাকে ।
এইভাবেই অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করার পর সে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে ।
এরপর পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে সে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় । পথের সম্বল বলতে মা বাবার আশীর্বাদ আর দু-টাকা ।
সে অনেক আশা নিয়ে কলকাতা এল বটে কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথাও জুটল না ।
শেষ পর্যন্ত রেল স্টেশনই হল তার একমাত্র ঠিকানা ।
স্টেশনে রাত্রি যাপন আর দিনে লেবারের কাজ করেই দুমুঠো অন্নের সংস্থান করতে হল তাকে ।
এইভাবেই বেশ কিছুদিন চলতে থাকে । অতঃপর শরীর না টানায় একদিন সে লেবারের কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ।
খবরের কাগজে কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখে সেলসম্যানের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সে ।
এইকাজ করতে করতেই একজনের সহযোগিতায় সে একটি মেগা সিরিয়ালে কাজের সুযোগ পেয়ে যায় ।
পরবর্তী সময়ে সে সমাজসেবী হিসাবে একটি এনজিওতে যোগদান করে ।
বর্তমানে সে এনজিও, ফিল্ম মেকিং এবং অফিস জব নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে ।
অনেক চেষ্টা করেও সে একজন ভালো সত্যিকারের জীবন সঙ্গিনী জোগাড় করে উঠতে পারেনি ।
এই নিয়ে সে দিনের পর দিন চোখের জল ফেলতে থাকে ।
অবশেষে ঈশ্বর তার ডাকে সাড়া দিলেন ।
এতদিন পর সে সত্যি কারের একজন সৎ নিষ্ঠাবান পবিত্র ও দরদী মনের মানুষ খুঁজে পেল ।
মেয়েটির নাম কবিতা । তার জীবনটাও দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণায় ভরা । বহুবার তাকে জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে ।
একজন নরপিশাচের পাল্লায় পড়ে মেয়েটির শেষ হতে বসেছিল । কিন্তু ঈশ্বরের অসীম কৃপায় সে বেঁচে যায় ।
কবিতা এখন প্রশান্তকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে খুবই সুখী; তার আর কোনও দুঃখ নেই ।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে নব দম্পতি সুখে ও শান্তিতে নতুন জীবন শুরু করল ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন